আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি, রবিবার সারা রাজ্য জুড়ে ১০৮ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, গত ১৯ ডিসেম্বর এবং ১২ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতা পৌরসভা সহ আরো চারটি পৌরসভার নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়েছে এবং সেগুলির ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। গণতন্ত্রের উৎসব হলো নির্বাচন কিন্তু রাজ্যের বর্তমান শাসকশ্রেণীর বদান্যতায় এই নির্বাচন পরিণত হয়েছে গণতন্ত্রের ‘উৎ-শব’ এ। ২০১৭ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পৌরসভাগুলির পৌর ভোট হচ্ছে এখন চার বছর পরে আদালতের হস্তক্ষেপে । কিন্তু এমনটা একেবারেই হওয়ার কথা ছিল না, আমাদের রাজ্যে ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বচ্ছ স্থানীয় প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন পঞ্চায়েত ও পৌরসভা সংক্রান্ত আইন সংশোধন ক’রে নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল। সংবিধান সংশোধনের আগেই মহিলা, তপশিলী জাতি এবং আদিবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করেছিল। যা সেই সময় ভারতের কোথাও ছিলনা। স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর হলেন আপনার সবচেয়ে নিকট নির্বাচিত ব্যক্তি। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই চার বছর ধরে জোর করে নির্বাচন আটকে রেখে, অগণতান্ত্রিকভাবে পৌরসভাগুলোর মাথায় প্রশাসক বানিয়ে বসিয়েছিলেন তার পছন্দের তৃণমূলের কিছু নেতাকে। স্বাভাবিকভাবেই বিগত চার বছরে পৌর এলাকার প্রত্যেকটি মানুষকে প্রত্যেকটা দিন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটা বাড়ির সামনে ভাঙ্গা রাস্তার সমস্যা হোক, বৃষ্টি হলে জল জমে যাওয়ার সমস্যা হোক, পানীয় জলের সমস্যা, নালা নর্দমা নিকাশি সমস্যা বা ময়লার স্তূপের সমস্যা হোক বা সামান্য একটা ইনকাম সার্টিফিকেট, ওয়ারিশান সার্টিফিকেট, বার্থ বা ডেড সার্টিফিকেট, মিউটেশন বা কোন কিছু পারমিশনের জন্য বারবার ছুটতে হয়েছে পৌরসভা, পৌরসভা থেকে BDO , SDO অফিসে। এই ভোগান্তির একমাত্র কারণ এ সময়কালে ওয়ার্ড গুলোতে কোন নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলনা এবং কোন পৌরসভায় কোন নির্বাচিত পৌরবোর্ড ছিল না। মানুষ নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারেননি একইসঙ্গে দিনের পর দিন দুর্বিষহ যন্ত্রণার মুখে পড়তে হয়েছে মানুষজনকে। কিন্তু শুধুমাত্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য আমাদের রাজ্যের তৃণমূল সরকার গণতন্ত্রকে, মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে প্রকাশ্য দিবালোকে টুঁটি টিপে হত্যা করেছে। এমনকি এই সময় শেষ যে চারটি পৌরসভার ভোট হল তাতে স্পষ্ট শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের মনে ক্ষোভ জমেছে, ফলে ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য তৃণমূলের নেতা নেত্রী থেকে প্রার্থীরা পর্যন্ত বল্গাহীন সন্ত্রাস চালিয়েছেন – ভোটের দিন বুথ দখল, রিগিং, ছাপ্পা ভোট এমনকি ভোটের আগে ভয় দেখিয়ে, আক্রমণ করে, অপহরণ করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের সবচাইতে বড় হাতিয়ার নির্বাচিত হওয়ার ও ভোট দেওয়ার অধিকার। সেই অধিকার আজ সশস্ত্র তৃণমূলী দুষ্কৃতী বাহিনী কেড়ে নিচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশবাহিনীর একাংশ এই কাজে ওদের সহযোগীতা করছে অথবা নীরব সমর্থন করছে। নিজের ভোট নিজে দিতে পারাটাই এইসময় আমাদের রাজ্যের  মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে কোন কন্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায় এই তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা, নবান্ন অভিযানে শহীদ হয়েছেন যুবনেতা মইদুল মিদ্যা, সাম্প্রতিক কালে প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আনিস খানকে হত্যা করা হলো পুলিশ পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে তার নিজের বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে। তৃণমূল এখন আর নিজের দলের দুষ্কৃতীদের উপর ভরসা রাখতে পারছে না তাই পুলিশকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত জায়গায় নীল-সাদার সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এমনকি এর জন্য রাষ্ট্রীয় খুনও করা হচ্ছে। সবকিছু থেকে স্পষ্ট তৃণমূল মানুষের স্বাধীন এবং স্বাভাবিক মতামত প্রকাশ কে ভয় পায় তারা জানে শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ তাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করবে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বেশকিছু পৌরসভা, পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা বিরোধীদলের দখলে থাকতো, কারন তখন ভোট হতো, তখন এখনের সরকারের বসে থাকা ব্যক্তিরা বহু আন্দোলন করেছেন কারন তখন গনতন্ত্র ছিল। এখন ফ্যাসিস্ট কায়দায় সেই নাৎসি জার্মানির গুপ্ত পুলিশবাহিনী গেস্টাপোর অনুকরনে গড়ে তোলা হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ার বাহিনী গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য।

শুধু নির্বাচন একমাত্র বিষয় নয় করোনা মহামারী মহামারীর করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত হয়েছে সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের রাজ্যও। এসময়কালে আমাদের রাজ্যে গতবছর ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল সরকার কিন্তু এই সময়ে সবথেকে বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা স্বাস্থ্যব্যবস্থা কর্মসংস্থান এসবের কোন দিকে তাদের কোন নজর নেই দু বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ রাখার পর আমরা দেখতে পাচ্ছি পৌর এলাকায় বস্তিবাসী দরিদ্র শ্রমজীবী অংশের মানুষদের পরিবারের বহু ছেলেমেয়ে পড়াশুনো ছেড়ে ছোটখাটো কাজ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে আবার মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিভাবে এই সমস্যাগুলি প্রকট হয়েছে গ্রাম্য এলাকাতেও কিন্তু এই সমস্যার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সরকারের তাদের হিসেব অনুযায়ী বিয়ের আগে মেয়েদের কন্যাশ্রী দেওয়া হচ্ছে বিয়ের সময় রুপশ্রী দেওয়া হবে বিয়ের পরে তাকে লক্ষীর ভান্ডার দেয়া হবে, এবার সেই মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ হলো কিনা, তার 18 বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিনা, পথে-ঘাটে ওই মেয়েটি নিরাপদ কিনা এসব বিষয় ব্যয় করার মতন সময় সম্ভবত ওনাদের নেই। আমাদের রাজ্য সরকারের ধারণা অনুযায়ী মাসে শুধুমাত্র কিছু ভাতা এবং বিভিন্ন ‘শ্রী’ প্রকল্পের নামে মানুষের কাছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পৌঁছে দিলেই সারা রাজ্যে অভূতপূর্ব উন্নতি সম্ভব। অথচ বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষিত বেকার বসে আছে যাদের কর্মসংস্থানের প্রয়োজন শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলো ধুঁকছে যেখানে অবিলম্বে শিক্ষকদের নিয়োগ প্রয়োজন প্রত্যেকটি সরকারি সংস্থায় ভ্যাকেন্সি রয়েছে যেখানে নিয়োগ প্রয়োজন কিন্তু এসব দিকে তাকানোর বা শোনার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এ পৌরসভাগুলোর কথাই যদি ধরা যায় কর্মসংস্থানের জন্য বামফ্রন্ট সরকারের আমলে গঠিত হয়েছিল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন।
২০২০ এর জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে রাজ্যের ৭ টি কর্পোরেশন ও ১১৯ টি পৌরসভার মোট ৭৯হাজার ৩৯৭ টি পদের মধ্যে মাত্র ৩৭হাজার ৮৩টি পদে কর্মী নিযুক্ত আছেন।  বর্তমানে পৌরসভাগুলোতে শূণ্যপদের সংখ্যা ৪২হাজার ৩১৪টি। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি পদ খালি। অর্থাৎ, ৪২  থেকে ৪৫ হাজার যুবক-যুবতীর কাজের সুযোগ কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল পৌরসভাগুলিতে নিয়োগ বন্ধ করে। বেশিরভাগ পৌরসভাই চলছে চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী শ্রমিক বা কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করে। ফলে  শ্রমিক কর্মচারীদের কাজেরও নিরাপত্তাও নেই আর মজুরীও পাচ্ছে মূল বেতনের ১/৩ ভাগ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য অর্থ ও পেনশনও দিতে পারছে না তৃণমূল সরকার ও তাদের পরিচালিত অনেকগুলো পৌরসভা, খোদ কলকাতা পৌরসভায় অর্থের অভাবে পেনশন দেওয়া বন্ধ এমন নোটিশ ঝুলেছে। এইসব চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগগুলিতেও ব্যাপক স্বজনপোষণ দুর্নীতি এবং দলবাজি এবং প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় ভাতা বন্ধ করে দেওয়া, চাকরি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে শাসক দলকে সমর্থন করতে। তৃণমূলের আমলে পৌরসভাগুলো হয়ে উঠেছে তোলাবাজ, দুর্নীতিবাজ, সমাজবিরোধীদের আখড়া। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এক একজন নেতা কোটি কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তির মালিক হচ্ছে, বেআইনি প্রোমোটারি রাজ কায়েমের মাধ্যমে বেআইনিভাবে জলাশয় ভরাট করা, যথেচ্ছ বৃক্ষছেদন, শিশুদের খেলার মাঠ দখল করে তাতে বিল্ডিং বানানো, পারমিশন ছাড়াই বড় বড় কনস্ট্রাকশনের কাজ ইত্যাদি অনৈতিক কাজকর্মকে নিজেদের সংস্কৃতি রূপে ঘোষণা করেছে শাসকদল। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বস্তি গুলোতে বসবাসকারী মানুষদের উন্নতির জন্য আলাদা করে পৌরবাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হতো, বস্তি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছিল স্কুল গড়ে তোলা হয়েছিল স্বাস্থ্য কেন্দ্র বস্তি উচ্ছেদ নয় বস্তির মানুষকে দেওয়া হয়েছিল তাদের জায়গার অধিকার , বসবাসের অধিকার। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল স্ব সহায়ক দল যেখানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং রাজ্য সরকার থেকে অর্থ সাহায্য ও ঋণ প্রদান করে স্বনির্ভর বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ খুলে দিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। বর্তমানে এসবই কেবল কল্পনামাত্র তৃণমূলের আমলে এসব বিষয়কে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি প্রকল্প গুলির জন্য বরাদ্দ টাকা পকেটস্থ হয়েছে বিভিন্ন নেতাদের, প্রোমোটার নেতার প্রয়োজনীয়তায় বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে, মানুষের মাথার উপর থেকে ছাদটা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, পায়ের তলা থেকে মাটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এই আমলে উন্নয়ন তো হয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের। দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়েছে তাদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আম্ফান ঝড় যখন আসলে বলল আমাদের রাজ্যের উপর রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ বহু মানুষ সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে আশা রেশন ত্রিপল এবং ক্ষতিপূরণের টাকা সব কিছু নিজে দুর্নীতি হল। নেতারা আর্থিক দুর্নীতি তো করলেন সঙ্গে রেশনের চাল থেকে ঘরের ত্রিপল সবই চুরি করলেন।


করণা মহামারীর সময় বামপন্থী ছাত্র যুবরা তৈরি করলেন রেড ভলেন্টিয়ার্স টিম এর মাধ্যমে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই শহরে সারাদিন রাত ধরে তারা রোগীকে ভর্তি করানো রোগীর বাড়িতে খাওয়ার ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছিলেন, যখন দাঁড়িয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির নেতৃত্বরা ক্ষমতার অলিন্দ অবস্থানের জন্য বারবার দলবদল করছে রাতে এক দলের হয়ে কথা বলছে তো দিনে অন্যজনের হয়ে কথা বলছে। তৃণমূলের বিধায়ক এমপি কাউন্সিলর পঞ্চায়েত এরা যখন দরজায় খিল দিয়ে ভেতরে দুর্নীতির হিসেব কষতে ব্যস্ত রেশনের চাল চুরি করতে ব্যস্ত, ত্রাণের ত্রিপল চুরি করতে ব্যস্ত, 100 দিনের কাজ থেকে আম্ফান ঝড়ের ক্ষতিপূরণ সোজা পথে ঘুরপথে কিভাবে নিজেদের পকেট এ আনা যায় সেই আলোচনায় ব্যস্ত। তখন বিধানসভা ভোটে শূন্য আসন পাওয়ার পরেও বামপন্থী রেড ভলেন্টিয়ার্স মানুষের কাছে প্রাণবায়ু অক্সিজেন নিয়ে ছুটে গেছে, গরিব মানুষের জন্য মাসের পর মাস শ্রমজীবী ক্যান্টিন-বাজার চালিয়েছে বামপন্থী রেড ভলান্টিয়ার বাহিনী, এই সময়েই দুর্গত প্রবাসী শ্রমিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বামপন্থী কর্মীরা। বামপন্থী কর্মীরা পরিবহনসহ অন্যান্য পরিষেবার কাজেও যুক্ত থেকেছে, বহুবার আক্রান্ত হতে হয়েছে শাসক দলের হাতে তবুও লড়াই থামেনি। তৃণমূলের নেতারা ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি করেছেন, তৃণমূলের পরিচয় ব্যবহার করে সারা রাজ্য জুড়ে ভেজাল ভ্যাকসিন এর ব্যবসা হয়েছে শাসকদলের হাত মাথায় নিয়ে রাজ্যজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ভুয়ো IPS, IAS ; ঠিক সেই সময় রেড ভলেন্টিয়ার্সদের একমাত্র লক্ষ্য থেকেছে মহামারী কে হারাতে হবে মানুষকে বাঁচাতে হবে মানুষকে জেতাতে হবে।


বামপন্থীদের ক্ষমতায় থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য কর্পোরেট মিডিয়া বারবার প্রচারে তুলে এনেছে আমাদের রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী বিজেপি। কিন্তু মানুষ তাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন তৃণমূল বিরোধিতা করে বিজেপির হয়ে যারা নির্বাচিত হলেন তাদের মধ্যে বেশ কিছুজন হঠাৎ আবার তৃণমূলে চলে গেল, উল্টোদিকে বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা নীতির বিরুদ্ধে যেসব মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিলেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে তৃণমূলের নেতাটি চললেন বিজেপিতে। আসলেই দুটি দল কখনো আলাদা নয়, এর আসলে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কেন্দ্রে যেমন আরএসএস-বিজেপি আচ্ছে দিন এর নামে একটা জুমলা রাজ কায়েম করা হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে সারাদেশে, কর্পোরেটদের স্বার্থে দেশের সব সরকারি লাভজনক সংস্থাগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে , সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে আমাদের রাজ্যে তাদেরই প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে তৃণমূল – PPP মডেলের নাম করে রাজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্পোরেট আদানির মতন সংস্থা তাদের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে, স্পেশালিটি হাসপাতাল বানানোর নামে বৃহৎ পুঁজিকে স্বাস্থ্য নিয়ে নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, একইসঙ্গে উত্তরপ্রদেশে যেমন প্রতিবাদীদের হত্যা করা হয়ছে বারবার, কৃষক আন্দোলনের ওপর আক্রমণ চালানো হয়ছে, হত্যা করা হয়ছে, আমাদের রাজ্যতেও প্রতিবাদ করলেই আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে, কৃষক আন্দোলন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোন ভূমিকা নেই রাজ্যে বারবার কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও রাজ্যের কৃষি আইন কে কর্পোরেটদের ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে তাদের পছন্দ মতন সংশোধিত করেছে তৃণমূল, নারী নিরাপত্তা তৃণমূলের আমলে তলানিতে এসে ঠেকেছে বিভিন্ন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এসমস্ত ক্ষেত্রে দোষীদের বেশিরভাগই তৃণমূল আশ্রিত। সাম্প্রতিকালের আনিস খানের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গকে উত্তরপ্রদেশের সমান পর্যায়ে নিয়ে গেছে।


তাই একটা কথা স্পষ্ট মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে, এবং মানুষ যে এগিয়ে আসছেন তার প্রতিফলন এত লুম্পেনবাজির পরেও চারটি পৌরসভা ভোটের ফলাফল বামপন্থীরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন। সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে নতুন করে রাজ্যকে সাজিয়ে নিতে হবে ড্রপআউট হওয়া প্রত্যেকটা বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হবে, প্রত্যেকটি শিক্ষিত ছাত্র-যুব হাতে একটি কাজের ব্যবস্থা করতে হবে, বাংলা জুড়ে কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা ও শিল্পের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে, সার্বজনীন উন্নত গণচিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, দুর্নীতি-স্বজনপোষণ-তোলাবাজি মুছে ফেলতে হবে, নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, প্রত্যেকের মত প্রকাশের অধিকার কে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে সর্বোপরি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাই তাদের নীরব প্রতিবাদ করতে হবে ইভিএম বক্সে, নিজের ভোট নিজে দিতে হবে তৃণমূল-বিজেপি কে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং এর শুরুটা হবে একদম স্থানীয় প্রশাসন থেকেই যেমন নিজের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচন থেকেই। আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১০৮ টি পৌরসভায় পৌর নির্বাচন মানুষের উপর আস্থা রাখি মানুষই একমাত্র ইতিহাস রচনা করতে পারেন তারা অবশ্যই ইতিহাস রচনা করবেন।

লেখকঃ – রণিত বেরা

(লেখকের নিজস্ব মতামত)