আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬তম জন্মদিবসকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে পালন করবে বামফ্রন্ট। মঙ্গলবার বিকালে বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে একথা জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
এদিন একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর এইবছর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। বামফ্রন্ট মনে করে, কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজীর চিত্র ও কর্ম সমন্বিত ট্যাবলোটি বাতিল করে দেশের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী সংগ্রামের মহান ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেছে। রাজ্য সরকার প্রেরিত এই ট্যাবলোটিকে প্রদর্শন না করার সিদ্ধান্ত অবশ্যই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত বলে রাজ্য বামফ্রন্ট মনে করে। বামফ্রন্ট এই অনৈতিকতার তীব্র বিরোধিতা করছে এবং ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যাবলোটি প্রদর্শনের দাবি করছে।
২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজে কেরালা, তামিলনাডু এবং পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো বাতিল কেন্দ্রের মোদী সরকার বিভিন্ন মহল থেকেই সমালোচিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার এই প্রসঙ্গে নেতাজীকে অবমাননার অভিযোগও করেছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার নিজেরা কী করেছে? সারা বছর এরাজ্যে নেতাজীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করা হয়নি। এমনকি, নেতাজীর কন্যা অনিতা পাফ জার্মানি থেকে সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণে কখনও কখনও কিংবদন্তী স্বাধীনতা সংগ্রামীর ঐতিহ্যকে আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয়। গত বছর সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধন কলকাতার সব জায়গায় খুব বড় করে উদ্যাপন করা হয়েছিল। তখন বাংলায় নির্বাচন ছিল। এইবছর সে রকম কিছু নেই বলেই হয়তো বিষয়টি আর গত বছরের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
বামফ্রন্ট সরকার ২৩ জানুয়ারিকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানালেও তা গৃহীত হয়নি। তখন কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক ছিল তৃণমূলও। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বামফ্রন্ট সরকার নোটিফিকেশন জারি করে এরাজ্যে ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস হিসাবে পালনের ঘোষণা করেছিল এবং সেই বছর তা দেশপ্রেম দিবস হিসাবে রাজ্যজুড়ে পালিতও হয়েছিল। কিন্তু তারপর? তৃণমূল সরকার আসার পরে এই উদ্যোগ চাপা পড়ে গেছে।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা ফরিদ মোল্লা একটি মামলা দায়ের করেছেন জনস্বার্থে। তাঁর আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস উদযাপনের যে নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছিল তা নিয়ে এখন রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? তাঁর আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জির বক্তব্য, রাজ্য সরকার তো সেই নোটিফিকেশন বাতিল করেনি! তাহলে সেই অনুসারে রাজ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?
দিল্লির ট্যাবলো নিয়ে বক্তব্য প্রচারে ব্যস্ত থাকলেও রাজ্য সরকারের আইনজীবী এই মামলায় কিন্তু জবাব দিতে সময় চেয়েছেন আদালতের কাছে। আগামী ২১ জানুয়ারি মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
সুত্র- গণশক্তি
