দুয়ারে সরকার নয়, মমতা ব্যানার্জি দুয়ারে খুনিদের পৌঁছে দিচ্ছেন। মধ্যরাতে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে ছাত্রনেতা আনিস খানকে খুনের প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারে আসার এক বছরের মধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে প্রকাশ্যে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা নৃশংসভাবে খুন করে সিপিআই(এম) নেতা কমরেড প্রদীপ তা এবং কমরেড কমল গায়েনকে। এদিন সিপিআই(এম)’র পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির উদ্যোগে চামারদিঘিতে (ছয়মাইল) তাঁদের স্মরণ সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়েই সেলিম বলেছেন, পরিবর্তনের নামে জল্লাদবাহিনী ক্ষমতায় এসে বসেছে। যে পুলিশ তৃণমূলকে জেতানোর জন্য ভোট লুটে সাহায্য করে, সেই পুলিশই বাড়িতে ঢুকে ছাত্রনেতাকে খুন করেছে। লুটের পথে কাঁটা মনে করলেই তাদের খুন করতে হাত কাঁপে না তৃণমূলের। শহীদ প্রদীপ তা, কমল গায়েন থেকে আনিস খান পর্যন্ত সেই ধারাই চলছে। 

এদিন বর্ধমান পৌরসভার বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থনে কালীবাজার সার্কাস ময়দানে একটি সমাবেশেও ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম। সেখানেও তিনি বলেছেন, বিরোধী শূন্য ভারত চায় মোদী, বিরোধী শূন্য উত্তর প্রদেশ চায় যোগী। মমতা ব্যানার্জিও বিরোধী শূন্য বাংলা চাইছেন বলেই পৌরসভার ভোট লুট করাচ্ছেন তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী দিয়ে। প্রতিবাদীদের হয় খুন, নয় জেলে পুরছে তৃণমূল। এই মুহূর্তে দেশের সামনে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির ট্রেন যদি বিজেপি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে তার প্ল্যাটফর্ম হলো তৃণমূল। দুই শক্তিকেই পরাস্ত করতে হবে বাংলার মাটিতে। 

২০১২সালের ২২ফেব্রুয়ারি দেওয়ানদিঘিতে তৃণমূলীরা খুন করে কমরেড প্রদীপ তা এবং কমরেড কমল গায়েনকে। এদিন তাঁদের স্মরণ সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, শহীদ কমরেড প্রদীপ তা’র কন্যা পৃথা তা। সভায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কীভাবে লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম করেছে তার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, কাজ হারিয়ে, না খেতে পেয়ে মানুষ মরছে, আর আম্বানি আদানিরা ফুলে ফেঁপে উঠছে। কেন্দ্র বিক্রি করছে রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, খনি, বিমান বন্দর আর তৃণমূল সরকার স্কুল কলেজ দুদিন পরে হাসপাতালও বিক্রির পরিকল্পনা করছে। বামফ্রন্ট সরকার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সময় কিছু দালাল বাধা দিয়েছিল। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুন করতে আনিসদের খুন করছে।

সেলিম বলেছেন, আনিসের খুনিদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন পুলিশ লাঠি চার্জ করে থামাতে পারবে না। পুলিশ দিয়ে মিছিল ভাঙলে মিছিল আরও লম্বা হবে। প্রদীপ তা, কমল গায়েন, আনিস খানদের খুন করলেও তাঁদের আদর্শ ও লড়াই মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবে। শহীদের মৃত্যুকে আমরা স্মরণ করি চোয়াল শক্ত করে মানুষের অধিকার ও হক আদায়ের লড়াইকে শক্তিশালী করার শপথ নিতে। 

আনিসকে ইচ্ছা করে খুন করা হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, খুনিদের শাস্তি? মুখ্যমন্ত্রী খুনিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তৃণমূলের গোটা দলটাই দুষ্কৃতীদের নিয়ে তৈরি। ভাড়ায় কিছু বুদ্ধিজীবী নিয়ে সামনে শো করা হয়। এরা শুধু কমিউনিস্ট ও প্রতিবাদী মানুষদেরই খুন করছে না, এরাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নকেও খুন করছে। এই অন্যায় বেশি দিন চলতে পারে না। লাল ঝান্ডার লড়াই সংগ্রামে নতুন নতুন প্রদীপ তা, কমল গায়েন, আনিস খানরা জন্ম নেবে। 

এদিন স্মরণসভায় শহীদ প্রদীপ তা’র মা ছায়ারানি তা তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ তা’র পেনশনের অর্থ থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও গণশক্তির তহবিলে ১০হাজার টাকা সাহায্য করেছেন। এই অর্থ এদিন তাঁর ছেলে প্রবীর তা তুলে দেন মহম্মদ সেলিমের হাতে। প্রদীপ তা’র স্ত্রী চিত্রলেখা তা এবং কমল গায়েনের স্ত্রী কাকলি গায়েনও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ভাতাড়ের পাটনা গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক শেখ আসাদুল গণশক্তি’র তহবিলে এক হাজার টাকা দান করেছেন। এদিন স্মরণ সমাবেশে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি, পার্টিনেতা অমল হালদার ও অচিন্ত্য মল্লিক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বর্ধমান শহরে নির্বাচনী সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা তাপস সরকার, বামফ্রন্টের নেতা অরুণ চ্যাটার্জি, কামালউদ্দিন মণ্ডল প্রমুখ। 

Source- Ganashakti