রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার দার্শনিক প্রভাব একজন নিতান্তই সাধারণ গ্রাম‍্য গৃহস্থের জীবনে ঠিক কতটুকু তা সাজাদপুরের মানুষ একটি ওষুধের দোকানের মালিক হরিদাস বসাক সম্পর্কে যাঁদের জানা আছে তাঁদের কাছে হয়ত অবিশ্বাস্য ঠেকবে না, বাকিরা ভাববেন গল্পকথা! কিন্তু সত‍্যের সে দায় নেই। সাজাদপুরে পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনা করার জন‍্য রবীন্দ্রনাথ কে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল। কবির স্মৃতিবিজড়িত জায়গার বাসিন্দা হিসাবে অধিকারবোধ থেকেই রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখেছিলেন হরিদাস বসাক। সে চিঠির উত্তর রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পাওয়ার পর আত্মভোলা এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের আদর্শের প্রতি আনুগত্য বা অনুরাগে এতটাই নিবেদিত প্রাণ হয়ে পড়েছিলেন যে দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অগ্রাহ‍্য করে রয়ে গিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গে। কারণ, যে ঠিকানায় তাঁর প্রাণের রাজার চিঠি আসে সেই ঠিকানা বদলানো যায় না। এই অনমনীয় মনোভাবই একজন সাধারণ রবীন্দ্রপ্রেমী হরিদাস বসাক কে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও প্রেরণাদাতায় রূপান্তরিত করে যিনি নিজের পুত্রকে ভারতে মেঘালয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে পাঠিয়ে দিতে পারেন নির্দ্বিধায়। পাকিস্তানের সেনাদের আক্রমণে হরিদাস বসাকের দোকান পুড়ে যাওয়ার সময় রবীন্দ্রনাথের চিঠিটিও নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু তাতে ভেঙে না পড়ে হরিদাস আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যান স্বাধীন বাংলাদেশের জন‍্য। এই সত‍্য ঘটনা অবলম্বনেই “রাজার চিঠি” নাটক প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের জাগরণী থিয়েটার ঢাকা। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা চেতনা,সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির উর্ধ্বে অবস্থিত সাংস্কৃতিক আবেগ এই নাটকের আধার। আজ সিরাজগঞ্জের শহীদ এম এম মনসুর আলি অডিটোরিয়ামে নাট‍্যালোকের পাঁচদিন ব‍্যাপী নাট‍্যোৎসবের দ্বিতীয় দিনে রাজার চিঠি দেখানো হয়েছিল ।

এই নাটক বাংলাদেশের বাইরের দর্শকদের কতখানি স্পর্শ করবে বলতে পারবো না কিন্তু সিরাজগঞ্জের দর্শকের চোখে জল দেখেছি।এবং হরিদাস বসাকের পুত্র চন্দন বসাক স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন নাটক দেখতে। নাটক শেষে মঞ্চে উঠে অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে নিজের কৃতজ্ঞতা জানান। “যা মঞ্চে দেখলাম সবটাই আমার বাবার কাছে শোনা এবং নিজের চোখে দেখা।” বিশেষভাবে প্রশংসা করলেন হরিদাস বসাকের চরিত্রের অভিনেতা স্মরণ সাহার এবং নির্দেশক রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তনী দেবাশিস ঘোষের প্রতি। নাট‍্যকার মাহফুজা হিলালির চন্দন বাবুর কন‍্যাসমা তাই তাঁর গবেষণা করতে সুবিধা হয়েছে নিঃসন্দেহে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটক, প্রকৃতির প্রতিশোধ গীতিনাট‍্য বিভিন্ন কবিতা এবং গানের ব‍্যবহার হয়েছিল রূপক হিসাবে! নাটক হিসাবে খুব উচ্চমানের না হলেও সংস্কৃতিকর্মী হিসাবে আবেগ দর্শকাসনে বসে আমাদের স্পর্শ করেছিল। বাংলাদেশের দর্শকও নাটকের “মেসেজ” নিয়ে মাথা ঘামান। সেই কারণে পৌঁছনোর পর রাতে হোটেলের সামনে চায়ের দোকানে কয়েকজন নাট‍্যপ্রেমী দর্শকের সঙ্গে কথোপকথনে বার বার ঘুরে ফিরে আসছিল এই সময়ের নাটকে সামাজিক বক্তব্য তুলে ধরলে তা সরাসরি রাজনৈতিক প্রচার হয়ে যাবে কিনা – তাই নিয়ে নানা মতামত। বুঝলাম, সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের নাট‍্যকর্মী ও সাংবাদিকরা কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের থিয়েটার দেখেন। এবং এপারে এসেই দেখেন। “যাই বলেন ভাই, আপনাদের থিয়েটার আমাদের এখানকার থিয়েটার থেকে অনেক উন্নত মানের!” স্পষ্ট স্বীকারোক্তি তাঁদের। বললাম, “আপনাদের দেশে সংগঠিত নাট‍্যচর্চা সঠিকভাবে শুরু হয়েছে তো চল্লিশ বছর আগে! কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের আমলেও কিন্তু বহু বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও প্রগতিশীল নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বাংলা নাটকের ইতিহাস শহীদ মুনীর চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আবদুল কাদির,নুরুল মোমেন,শাইদ আহমেদ, কল‍্যাণ মিত্র প্রমুখকে বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব নয়। ” বাংলাদেশের নাট‍্যবন্ধুরা জেনে খুশি হলেন রামেন্দু মজুমদার, আলি যাকের আমাদের পশ্চিমবঙ্গে রীতিমতো জনপ্রিয়। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর নৌকা চড়ার অভিজ্ঞতা বাগাই মাছ খাওয়ার মতোই মনোহর! মমিন ভাইয়ের বাড়িতে প্রথম দিন খাওয়ার সময়ই আলাপ হয়েছিল নাট‍্যকার অধ‍্যাপিকা ডঃ মাহফুজা হিলালির সঙ্গে। ঝকঝকে ব‍্যক্তিত্ব,উদারচেতা রবীন্দ্রপ্রেমী এই বিদুষী নাট‍্যকার হিসাবে জনপ্রিয়। এই নাট‍্যোৎসবে তাঁর রচিত তিনটি নাটক তিনটি পৃথক দলের প্রযোজনায় অভিনীত হয়েছিল। দুটি নাটকের আধার শেক্সপিয়র ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা। মাহফুজার চরিত্রের অন‍্যতম বৈশিষ্ট্য নাটকের দলের সঙ্গে সহকর্মী অথবা সহযোদ্ধার মতোই মিশে যাওয়া।” বুদ্ধিজীবী” সুলভ চেনা নাকউঁচু ব‍্যাপারটা একেবারেই নেই। আমাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আড্ডায় বিনয়ী শ্রোতার ভূমিকায় বেশি দেখলাম। পাঁচদিনের নাট‍্যোৎসবে দুজন ভারতীয় নাট‍্যকারের নাটক অভিনীত হয়েছে। একজন উৎপল দত্ত অন‍্যজন মনোজ মিত্র। আমাদের গড়িয়া একত্রে উৎপল দত্তের পূর্ণাঙ্গ নাটক “ঠিকানা” র প্রযোজনা উপস্থাপনা করলেও মনোজ স‍্যারের জনপ্রিয় একাঙ্ক “পাখি “মঞ্চস্থ করেছে বাংলাদেশের ব‍্যতিক্রম নাট‍্যদল।

আমাদের পরিচালক ভাস্কর সান‍্যালের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় একজন সাধারণ বৃদ্ধা চায়ের দোকানকে কিভাবে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের সহায়তায় ব‍্যবহার করেছেন এবং গ্রেফতার হওয়ার পর হানাদার পাক ফৌজের অত‍্যাচারেও অনমনীয় ছিলেন সেই সত‍্য ঘটনার ভিত্তিতে গ্রন্থিত আমাদের শ্রদ্ধেয় নাট‍্যশিক্ষকের এই নাটক বাংলাদেশের মাটিতে অভিনয় করবার। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে প্রশংসিত হলেও আমাদের আগ্রহ ছিল বাংলাদেশের দর্শক কেমনভাবে গ্রহণ করবেন আমাদের এই নাটককে। সেই তাগিদ থেকেই আমাদের দলের প্রতিটি শিল্পীই চেষ্টা করেছিলেন নিজেদের উজাড় করে দিতে। আমরা এবার রূপসজ্জার কোন পেশাদার শিল্পী কে নিয়ে যেতে পারিনি। নিজেদের মেক আপ নিজেরাই করেছেন একত্রে র শিল্পীরা। এমনকি হানাদার ফৌজের অত‍্যাচারে ক্ষতবিক্ষত মুখ ও নিজেরাই সৃষ্টি করেছেন তাঁরা। এই প্রথম শব্দ প্রক্ষেপকের দায়িত্ব পালন করলেন আমাদের বন্ধু প্রদীপ বর্মণ। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার কারণেই সফল হলেন। বাবলু সরকার ও তার কন‍্যা দেবলীনাকে আলোক সম্পাতের কাজে তেল খাওয়ানো মেশিনের দক্ষতায় সহায়তা করেছেন বাংলাদেশের আলোকশিল্পী জীবন সাহা ও তাঁর টিম। ঠিকানা র কেন্দ্রীয় চরিত্র রশিদা নানীর ভূমিকায় প্রমিতা ব‍্যানার্জী এবার বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয়ও জয় করলেন। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সী যুবতী প্রমিতা যেভাবে সত্তর বছর ছুঁই ছুঁই গ্রাম‍্য বৃদ্ধার চরিত্র জীবন্ত করে তুললেন তা দেখে সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন। পরিচালক ভাস্কর সান‍্যাল নিজে,ধ্রুব মুখোপাধ‍্যায়, অরিজিৎ ভট্টাচার্য,সুমন সাহা অলোক ব‍্যানার্জী সহ সবাই নিজেদের চরিত্রে উজাড় করে দিয়েছিলেন। শেষ দৃশ‍্যে যখন রক্তাক্ত দেহে রশিদা নানী গান ধরলেন “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি-” গোটা অডিটোরিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে গলা মিলিয়েছিল। মঞ্চে উঠে এসে প্রমিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ডঃ জান্নাত আরা তালুকদার হেনরি বললেন “আমার বাবা,শ্বশুর এবং বড় ভাসুর সহ সাতাশজন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন আমার পরিবারে – আমি আজ ইতিহাস প্রত‍্যক্ষ করলাম আপনাদের অভিনয়ে।

এই নাটক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিনয় করা উচিত।” স্বতঃস্ফূর্তভাবে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি গান ধরলেন “সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে!” নাটকে শেষে মেক আপ তুলে, সেট খুলে যখন ফেরার উদ‍্যোগ নিয়েছি তখন মঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে প্রবীণ নাট‍্যপরিচালক আলাউদ্দিনভাই বললেন “সামনেরবার ঠিকানা র শো করতে এলে আপনাদের ড্রেস আমার দল দিয়ে দেবে। ” বললাম “মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য কে আপনারা যেভাবে অন্তরে ধরে রেখেছেন সেটা সত‍্যিই প্রশংসনীয়!” পাকা চুলে হাত চালিয়ে আলাউদ্দিনভাই বললেন নিজেদের “স্বাধীনতার জন‍্য লড়াই করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধার শংসাপত্র বা সরকারি সুবিধা নিতে চান নি -এমন মানুষের সংখ‍্যা বাংলাদেশে নেহাত কম নেই। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে ধর্মীয় মৌলবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে সেটা যথেষ্ট চিন্তার। ঐ বাইশটা বছর আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। ” মমিনভাই আলাউদ্দিন ভাই শুনে খুশি হলেন পশ্চিমবঙ্গেও আমরা মৌলবাদ বিরোধিতার সামাজিক কর্মসূচি হিসাবে ” মঙ্গল শোভাযাত্রা”র আয়োজন করি। মমিনভাই বললেন ” আমাদের নাট‍্যোৎসবে উদিচীও কিন্তু আছে।”মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মতোই রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকদের অহংকার। ওঁরা রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলনী সংগঠন তৈরি করেছেন সারা দেশে রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চা ছড়িয়ে দিতে। সিরাজগঞ্জে এই সংগঠন পরিচালনা করেন ডঃ জান্নাত আরা তালুকদার হেনরি,যাঁর কথা আগে লিখেছি। ওঁদের বিশ্বাস সাংস্কৃতিক কর্মসূচি দিয়ে মৌলবাদের সামাজিক প্রতিরোধ সম্ভব। ধর্মীয় মৌলবাদকে নিজেদের দেশের স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের বৃহত্তম অংশ। তাঁদের আন্তরিকতায় সন্দেহ না থাকলেও সর্বাত্মক মৌলবাদ বিরোধিতা বাস্তবে কতটা সম্ভব হবে বুঝতে পারলাম না।

কারণ শহরের শিক্ষিত সমাজে উদারমনস্কতা মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটলেও মফস্বলে হিজাব বোরখা সহ ধর্মীয় চিহ্ন বহন করার প্রবণতা দেখেছি এমনকি কমবয়সীদের মধ‍্যেও। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ এই ধর্মপ্রাণ মানুষদের ব‍্যবহার করে নিজের চোখেই দেখেছি,তাই ভয়। প্রগতিশীল সংস্কৃতিচেতনা থিয়েটারের দলগুলো ছাড়া বাঁচিয়ে রেখেছে। বামপন্থীদের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল বলে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সাফল‍্য ব‍্যর্থতা অনেকটাই আওয়ামী লীগ নির্ভর। অনেকের মুখেই শোনা গেল,উন্নত ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প না থাকার কারণেই আওয়ামী লীগ মৌলবাদ বিরোধী মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। কিন্তু অস্বীকার করার জায়গা নেই বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষ মৌলবাদ বিরোধিতাকে সামাজিক কর্তব‍্য হিসাবে বিবেচনা করে বলে আশা জেগে থাকে। ভোর রাতে বেনাপোলগামী বাস ধরলাম। বিদায় জানাতে তখনও হাজির মমিন বাবু এবং তাঁর নাট‍্যদলের কয়েকজন কর্মী। চোখে জল এলো এমন আন্তরিক আতিথেয়তা দেখে।

আমরা এই আড়াইদিন বুঝতেই পারিনি আমাদের মধ‍্যে রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয়তা নেই। আমরা বেশিরভাগ সময় থিয়েটার নিয়ে কথা বলেছি। মমিন বাবু এমন একজন মানুষ যিনি চঞ্চল চৌধুরী মোশাররফ করিমদের মঞ্চাভিনয় নিয়ে কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন। গর্ববোধ করেন বলা বাহুল্য।আমাদের বন্ধু কমিউনিস্ট নেতা শমীক লাহিড়ী প্রায় বছর চারেক আগে একটি সভায় বলেছিলেন ফ‍্যাসিস্টরা নির্বাচনের মাধ‍্যমে সরকারে এলে শাসন রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করার চেষ্টা করে। ভারতে বিজেপিও একই চেষ্টা করবে। করার প্রমাণ পেয়েছি হাতেনাতেই। বাংলাদেশে যাওয়ার সময় পেট্রাপোল সীমান্তে যাঁরা অভিবাসনের দায়িত্ব ছিলেন তাঁরা প্রথমবার বাংলাদেশে যাওয়া যাত্রীদের ২০০০ সালের আগেকার নথিপত্র চেয়ে কয়েকজনকে রীতিমতো হেনস্থা করলেন। এন পি আর এর ফরমান চালু হয়ে গেছে বোঝা গেল। জাল পাসপোর্ট ও চোরাচালান আটকানোর সঙ্গে ২০০০ সালের আগেকার নথির সম্পর্ক থাকার কথা নয় কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমার যখন পালা এলো তখন পুলিশি জেরা। আধার কার্ড চলবে না। ভোটার কার্ডের নম্বর দেখিয়ে বললাম দেখুন এটা কবেকার! অফিসার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বললেন তেমন ব‍্যবস্থা নেই। তাহলে আপনারা শুধু সন্দেহের বশে জেরা করছেন? অফিসার কতকটা বিরক্ত হয়েই বললেন,ঠিক আছে যান। ফেরার দিন বেলা আড়াইটে থেকে সন্ধ‍্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পেট্রাপোল সীমান্তে অভিবাসন বিভাগের হাতে আটক রইলাম। ভারতে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশের নাগরিক ও দেশে ফিরতে চাওয়া ভারতের নাগরিক একইরকম হেনস্থার শিকার।

অল্পসংখ‍্যক বি এস এফ এর সেপাইদের সাধ‍্য কি অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের ধাক্কাধাক্কি সামলায়? তাঁদের মধ‍্যে মহিলা শিশু রোগী সবাই রয়েছেন। ধৈর্য্যচ‍্যুতি ঘটে কমবয়সীরা ব‍্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা বাড়ল। হিমশিম খাচ্ছিলেন জওয়ানেরা। শোনা গেল সার্ভার নাকি ডাউন ছিল বলে বিপত্তি। অস্বস্তি হচ্ছিল বাংলাদেশের নাগরিকদের নানা বিরূপ মন্তব্য শুনে। কিন্তু কি কৈফিয়ত দেবো ওঁদের। এই পর্ব শেষ করে যখন বেরিয়ে বনগাঁ স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম আমাদের দেখে বোঝা মুশকিল থিয়েটার করতে গিয়েছিলাম না যুদ্ধ করতে। কিন্তু ক্লান্তি বিরক্তি ভোলার জন‍্য মমিনভাই ও বাংলাদেশের নাট‍্যবন্ধুদের স্মৃতি যথেষ্ট ছিল। ঠিকানা দেখার পর উচ্ছ্বসিত দর্শকদের মঞ্চে উঠে আসা এই জীবনে ভুলব না। সত‍্যিই কাঁটাতার আমাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি।

( ভ্রম সংশোধন – গত কিস্তিতে ভুলবশতঃ গত তিনবছরে ঠিকানা নাটকের ছাব্বিশ টি শো হয়েছে লিখেছিলাম প্রকৃতপক্ষে আমাদের নাটকটির ছেচল্লিশটি শো হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। বাংলাদেশের শো টি সাতচল্লিশ নম্বর। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন‍্য দুঃখিত।)