প্রকৃতির খামখেয়ালীপনায় আমরা আজ অতিষ্ঠ ।আইলা -আমফান -ইয়াস -অতি বন্যা জনজীবনে নামিয়ে এনেছে এক একটা দুর্যোগের আঁধার ।ফি বছর লেগেই আছে দুর্যোগের ঘনঘটা ।প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে মানবজাতির উপর কারন মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে তার লোভলালসা চরিতার্থ করার জন্য ।এযাবতকালে জীববৈচিত্রের ওপর চরম আঘাত নেমে এসেছে ।আদিকাল থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের নানা বৈচিত্র্যময় প্রজাতি সারা পৃথিবী জুড়ে অবস্থান করছে ।উভয় কুলের আন্তঃসম্পর্ক সমৃদ্ধ করেছে ধরিত্রীকে ।শৃঙ্খলিত এই পারস্পরিক শুক্ষ সম্পর্কের রজ্জুতে টান ফেলেছে মানুষ ।প্রাণীদের বৈচিত্রের শৃঙ্খলা ভেঙে বিশৃঙ্খলা এনেছে মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে ।যার জেরে নেমে এসেছে বিপর্যয় ।কৃষিতে পুঁজির অনুপ্রবেশের ফলে বৈচিত্র্যময় বহুমুখী কৃষিপদ্ধতি আজ অবলুপ্তির পথে ।তার প্রভাব পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর ।প্রকৃতি পরিবেশ জীববৈচিত্র আমাদের জীবনযাত্রায় তিনটিই অপরিহার্য ।বায়ুদূষন ,শব্দ দূষণ, দৃশ্যদূষণ,নদী দূষণ সব মিলিয়ে পরিবেশ কলুষিত।প্রায় সব নদীর চরেই শহরের বর্জ্য ফেলা হয় ।তার থেকেই পরিবেশ দূষণ মারাত্নক আকার ধারণ করছে ।সরকারের কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই।সাঁতরাগাছি  এলাকার আবর্জনার স্তূপের দুর্গন্ধ ও পোড়া ধোঁয়া বায়ুদূষন করছে ।বড়ো বড়ো শহরের পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জায়গায় যে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তাতে যেভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার ধোঁয়া গ্রাস করছে পরিবেশকে ।দূষণের গ্রাস মহান মানুষদের নামাঙ্কিত সৌধকেও ছাড়েনি।কলকাতার নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যান এখন জঞ্জালের মুক্ত ভ্যাট। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ -বিরোধী সংগ্রামের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলা।

শ্বেতাঙ্গ সরকারের কারাগার থেকে মুক্তির কয়েক মাস পরেই কলকাতা সফরে আসেন ।১৯৯০ সালের ১৮ ই অক্টোবর ইডেন গার্ডেন্সে আয়োজিত হয় তাঁর ঐতিহাসিক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান ।ম্যান্ডেলার প্রতি সম্মান জানিয়ে তখন কলকাতা ময়দানে মেয়ো রোড এবং জওহরলাল নেহরু রোডের সংযোগস্থলে নির্মিত হয় “নেলসন ম্যান্ডেলা “উদ্যান ।আজ সেই উদ্যান  জঞ্জাল ভর্তি  ভ্যাটে পরিণত হয়েছে  ।একজন মহান ব্যক্তিত্বকে যেমন চূড়ান্ত অপমান করা হচ্ছে তেমনি পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ।নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে ।জলাশয় ভরাট করে উঠছে আকাশচুম্বী ফ্ল্যাট ।বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে যে বনসৃজন হয়েছিল ২০১১ সালের পর তা সাফা করে দিয়েছে বর্তমান পঞ্চায়েতের কর্মকর্তাদের দল কাটমানির লোভে ।নতুন করে তারা আর বনসৃজন করেনি ।ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের অনেকটাই পরিবর্তন ঘটে গেছে ।তবে “সবুজের অভিযান”,”পরিবেশ বাঁচাও কমিটি ” নামে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে ।

এই সংগঠনগুলি যেমন বনসৃজন করছে তেমনি লুপ্ত প্রায় গাছ লাগানোর প্রয়াস নিচ্ছে ।একশ্রেণীর মানুষের লোভ মুনাফার জন্য প্রকৃতির উপর যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তাকে সারিয়ে তোলা খুব কঠিন ।তার জন্য চায় লাগাতার আন্দোলন ।বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনের তীব্রতা বাডছে।আমাদের সামনে ভয়ানক বিপদ হল নদী দূষণ বিশেষ করে গঙ্গানদীর দূষণ ।দূষণের তীব্র মাত্রায় গঙ্গার জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ বিপন্ন হচ্ছে আর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের দিকে আগিয়ে যাচ্ছে ।অথচ গঙ্গা দূষণ রোধে কেন্দ্রীয ও রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে ।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না ।খাল, বিল,নদী,জলাশয় সংস্কার না হবার কারণে  বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।যেমন হুগলির ডানকুনি খাল।খালের দুধারে  খাটাল,গরু মোষের গোবর পলি আর দূষিত জল মিশে আজ ডানকুনি খাল গোবর নদীতে পরিণত হয়েছে।এইরকম অনেক খাল, জলাশয়, ছোট ছোট নদী সংস্কার না হবার কারণে যেমন নিকাশির সমস্যা বেড়েছে তেমনি জীব বৈচিত্রের বাসভূমির সংকট তীব্র হয়েছে ।এই সব খাল,জলাশয়ে, ছোট ছোট উপনদীগুলিতে ছোট ছোট কাঁকড়া, ঘুসো মাছ (ছোট চিংড়ি ),কৈ,ল্যাঠা,চ্যাং,চুনোপুঁটি আজ বিলুপ্তির পথে ।

দুষিত ও নোংরা জলের কারনে জলজ উদ্ভিদ ও ঐ সমস্ত মাছের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে ।ছোট প্রজাতির মাছগুলি মাকর জাতীয় পোকা ও মশার লাভা খেয়ে আমাদের উপকার করত ।এখন ঐ সব প্রজাতি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে শোষক পোকা, মাকর, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মশার সংখ্যা বেড়েছে ।শব্দবাজির দৌরাত্ম্য লাগামছাড়া ।ডিজের দাপাদাপিতে ছোট ছোট পোকামাকরের বংশ যেমন লোপাট হয়ে যাচ্ছে তেমনি মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ।প্রতিবাদ করতে গেলে মারধর এমন কি খুনোখুনিও হয়ে যাচ্ছে ।প্রশাসন নির্বিকার ।আসলে বর্তমান লাগামছাড়া উদারীকরন ও ক্রোনি পুঁজির দাপটে কর্পোরেট শাসকের মদতে বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ ধ্বংস করে নিজেদের পুঁজি ও মুনাফা বাড়াতে চাইছে ।ওদের  পুঁজির পাহাড় হচ্ছে আর প্রকৃতির ভারসাম্য উত্তরোত্তর বদলে যাচ্ছে ।*ইদানিংকালে বজ্রপাত বেড়ে গিয়েছে ।পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯–২০ সালের চেয়ে  ২০২০–২১ সালে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে ।সম্প্রতি পাঁচটি জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ।গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় ।পৃথিবীর উষ্ণতা দু ডিগ্রি বেড়েছে গ্রীন হাউস এফেক্টের কারনে ।তাই বিপদ ঘনিয়ে মাথার উপর বিস্তার করছে কালো মেঘ*।দূষণ ও বাস্তুতন্ত্রের বিনাশে উষ্ণতা বাডছে তার জেরে বেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ ।দেশ ও রাজ্যের প্রশাসনের মাথায় যারা আছেন তারা কর্পোরেট পুঁজির দালালি করছেন আর অরণ্য প্রাণীরা হারিয়ে যাচ্ছে ।উদ্ভিদ কূলও বিলুপ্তির পথে ।

***দাদা, দিদির সরকার বলছে এটাই তো বিকাশ আর উন্নয়ন***

তথ্য সংগৃহীত ৪ /৭ /২২