এবারে একটু এলোমেলো কথা বলতে হচ্ছে। সংস্কৃতিতে কারা লুটেপুটে খাচ্ছে বুঝতে হলে সরলরেখায় যাওয়া যাবে না, নিজেদের কথাগুলোকেও একটু এলোমেলো করতে হবে।। দিল্লি যাচ্ছিলাম রাজধানীতে। বিপুল পরিমাণ মালপত্র নিয়ে কামরায় উঠলেন এক তরুণী এবং বাহুজোড়া বজরঙ্গজির ট্যাটুসহ দশাসই চেহারার যুবক। জানা গেল সংগীতসৃষ্টির এইসব জগঝম্প যন্ত্রপাতি নিয়ে তাঁরা চলেছেন দিল্লি। নির্মীয়মান সেন্ট্রাল ভিস্টার সদ্যোনির্মিত ‘এম্ফিথিয়েটারে’ (তরুণী অবশ্য বললেন, ওটা মোটেও এম্ফিথিয়েটার নয়, জাস্ট একটা খোলা মঞ্চ, পিছনে রাষ্ট্রপতিভবনের সিঁড়ি থাকায় ওরকম একটা এফেক্ট হয়েছে) মঙ্গল পাণ্ডে বিষয়ক গীতিনাট্য জাতীয় কিছু পরিবেশন করতে। আরো জানলাম, তাঁদের দলের বাকিরা অন্য ট্রেনে যাচ্ছেন, প্রতি সপ্তাহেই নাকি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন সব সাংস্কৃতিক দলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্টায় অনুষ্ঠান পরিবেশন করার জন্য। আর এর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে খোদ ভারত সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রক। যাবতীয় খরচ তাদেরই।

আরো কথাবার্তার পরে বোঝা গেল, মেয়েটি সত্যিই কলকাতারই কোনো নাট্যদলের শিল্পী, আর তার সঙ্গী শিল্পী-টিল্পী নয়, কিন্তু ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পুরোটাই তার। আমারই পাড়ার কাছাকাছি টালিগঞ্জে সে বিজেপির একজন কর্মী, ফোনে তার কথোপকথন থেকে জানতে পারলাম ওখানে হনুমানজির প্রসাদ কোথায় পাওয়া যায়। মেয়েটি অবশ্য শুধু ‘দিদি’কে নিয়ে নয়, ‘মোদি’কে নিয়েও ঠাট্টার সুরে কথা বলছিল, সেটা সে গায়ে মাখছিল না, শুধু যখন বলা হল, ওখানে তো তোরা ভোটেও জিততে পারিসনি, সে গোঁগোঁ করে জানাল আসলে বাঙালিদের দিয়ে ঠিকমতো কাজ করানো যাচ্ছে না। তাতে বুঝলাম সে অবাঙালি, তবে পশ্চিমবঙ্গই তার ঘরবাড়ি, বৌবাচ্চা নিয়ে এখানেই তার অনেকদিনের বাস। তার অন্য কিছু পেশা আছে কিনা তা উহ্য; কিন্তু নিশ্চয়ই সেন্ট্রাল ভিস্টাতে শিল্পীদল নিয়ে যাবার মতো কাজ থেকেই সংসার চালানোর টাকা তার উশুল হয়। মনে হল ভালোভাবেই হয়। আর যে শিল্পীরা যান তাঁরা সবাই কিছু বিজেপির রাজনীতির অংশীদার নন, কিন্তু সরকারের আমন্ত্রণে সেন্ট্রাল ভিস্টায় প্রোগ্রাম করার সুযোগ শিল্পীর কাছে লোভনীয়, সেখানে কিছু দর্শক তো পাওয়াই যায়। তদুপরি মজুরিটা যাই হোক, দিল্লিভ্রমণের সুযোগ-টুযোগ মিলিয়ে ধরলে প্রাপ্তি খারাপ নয়। আর মঙ্গল পাণ্ডে মানে দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান, সেই উপরি গুরুত্বটাও তাঁরা একসঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন।

আজকের পশ্চিমবঙ্গে এটা কোনো বিরল অভিজ্ঞতা নয়। ক্ষমতাসীন দলগুলি সাংস্কৃতিক কাজকর্মে উৎসাহ দেবে, পছন্দসই লোকদের রাজধানীতে অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেবে এতো স্বাভাবিক কথা; সেদিক থেকে দিল্লিতে গদিয়ান বিজেপি যেকোনো রাজনৈতিক দলের রীতিই অনুসরণ করছে। তাহলে অভিজ্ঞতাটা মাথার পিছনে এলার্ম বেল বাজায় কেন? বজরঙ্গি তরুণটি তেমন ভীষণ জঙ্গিধরনের তো নয়, বেশির ভাগ সময়টাই তো সে ঘুমিয়ে কাটাল। আর পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হবার কারণ নিশ্চয়ই এই নয় যে এখানকার লোক নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে রাম, গণেশ বা হনুমানের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। এসব উপাদানমাত্র; দাঙ্গা বাধাতে হলে তার জন্য স্থানীয় উপাদান খুঁজে নেওয়া আর এমন কী? কেউ যদি মনে করেন বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতিতে তেমন কিছু থাকতে পারে না, তাহলে তাঁর সঙ্গে আমি একমত নই। যা হোক, এ তরুণীও এত ভোলেভালা নয় যে তাকে দিল্লি যাবার সুযোগ করে দিয়ে হনুমানপুজোতে প্রণোদিত করা যাবে। এমনকী বিজেপি সরকারের কল্যাণে  দিল্লি যাওয়া হচ্ছে বলেই আগামী নির্বাচনে ভোটটি বিজেপির বাক্সে দেবার পাত্রীও সে নয়। বরং সবদিক বিবেচনা করে তৃণমূলের বাক্সে মতদান করাটাই এখনো পর্যন্ত তার পক্ষে স্বাভাবিক মনে হতে পারে বামেদের প্রতি কিছু অনুক্ত সহানুভূতি থাকলেও। আমরা তো ধরেই নিই যে এই শ্রেণির ‘অরাজনৈতিক’ কমবয়সীদের একাংশের ভোট আপাতত বামেরা পাবে না। সে আর আমাদের পক্ষে নতুন বিপদ কী?   

আসলে যেটা বলতে চাইছি সেটা ভোটের রাজনীতি নিয়েই নয়। সেন্ট্রাল ভিস্টায় শিল্পীদের এনে বিজেপি সবার মতোই ভোটের রাজনীতি করছে, আমাদেরও এই ধুমধাড়াক্কায় চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে। কিন্তু এরই ফাঁকে যে মাটির তলায় সরকারের আড়ালে থেকে আর এক ঘুণ-ধরানো রাজনীতির পরিচর্যা করে চলেছে আর এস এস, তার হালহকিকত নিয়ে আমরা কি যথেষ্ট অবহিত আছি? লক্ষ্যণীয় যে এই কার্যক্রমের বরাত ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার হাতে দিয়ে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিন্ত নয়, যে সংস্কৃতি দপ্তর আজ আর এস এস-এর ঘাঁটি বললে ভুল হয় না (শিক্ষাদপ্তরও তাই), তারাই আছে এর সর্বময় কর্তৃত্বে। দ্বিতীয়ত দিল্লির নির্মাণের ইতিহাসে এই তথাকথিত ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ তো একান্তভাবেই মোদীসরকারের অবদান, যা তৈরির জন্য তাদের শত শত গাছ কাটতে হয়েছে, আগেকার নানা নির্মাণকে ধুলোয় গুঁড়িয়ে দিতে হয়েছে, লকডাউনের মধ্যে হাজার হাজার পরিযায়ীর শ্রম ব্যবহার করে কাজ এগিয়ে নিতে হয়েছে, যার স্বার্থে অনেক সমালোচনা চোখের পাতা না ফেলে সরকার হজম করে নিয়েছে। এই নিজস্ব পরিসরে শিল্পীদের এনে তাদের দিয়ে প্রচার করিয়ে এই নতুন ‘ঐতিহাসিক’ পরিসরটিকে তারা বৈধতা দিতে চাইছে শুধু তাই নয়, সরকারের এই উদ্যোগ আগের ইতিহাস মুছে ভারতের ইতিহাস লেখার যে একবগ্‌গা প্রক্রিয়া আর এস এস শুরু করেছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গমাত্র।

যে শিল্পীদলগুলিকে সেন্ট্রাল ভিস্টায় এনে অনুষ্ঠান করানো হচ্ছে তারা এর ফলে সবাই বিজেপির সমর্থক হয়ে যাবে আর এস এস তা ভাবছে না। যারা এই সুযোগটুকু নিয়েও সরকারের থেকে রাজনৈতিক দূরত্ব রাখার মতো বুদ্ধি ধরে, আর এস এস জানে তারাও কিন্তু ফিরে গিয়ে জনাবর্তে এই বার্তা ছড়াবেঃ ‘কোথায় প্রোগ্রাম করে এলে?’ ‘সেন্ট্রাল ভিস্টায়’। ‘কেমন সেন্ট্রাল ভিস্টা?’ না, ‘এইরকম’। ‘এরা তো সংস্কৃতিকে একটা জায়গা দিচ্ছে তাহলে! সবটাই হনুমানপুজো বা গোমাতার সেবা নয়! নিজের মতোই তো প্রোগ্রাম করলে তোমরা!’ ‘তা তো বলতেই হবে। সাম্প্রদায়িক কিছু না,  দেশাত্মবোধক জিনিস! সিপাহি-অভ্যুত্থানের শহিদ মঙ্গল পাণ্ডেকে নিয়েই তো করলাম!’ ‘তবেই দ্যাখো, লোকে যা বলে তা নয়; সব সরকারেরই ভালোখারাপ থাকে, এদের আগে যারা ছিল তাদেরও কি ছিল না?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এইভাবে দিল্লিতে সাংস্কৃতিক পরিসরহিসাবে সেন্ট্রাল ভিস্টার জায়গা তৈরি হবে অন্য সবকিছুকে সরিয়ে, সরকারের সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা সাধারণের চোখে অবধারিত সত্যের চেহারা নেবে, আপনি বিজেপি-সমর্থক না হলেও তাকে ঐ সাংস্কৃতিক স্বীকৃতিটুকু দিতে কার্পণ্য করবেন না, অন্যদিকে আপনার বন্ধু সিপাহি-অভ্যুত্থান নিয়ে যে প্রোগ্রামই করে থাকুনঐ অভ্যুত্থানের সাভারকারি বয়ানের প্রচারটাই সেন্ট্রাল ভিস্টার সামগ্রিক নির্মাণ সুনিশ্চিত করবে। একমাত্র যদি না আপনার বন্ধু সরাসরি সাভারকারি বয়ানের প্রতিবাদ তাঁর অনুষ্ঠানে আনার সাহস দেখান। সেটা হলে সরকারের বাহু মঞ্চ থেকে তক্ষুনি তাঁকে উৎপাটিত করবে দেশদ্রোহীর মার্কা মেরে। আর এস এস-এর কুক্ষিগত সাংস্কৃতিক পরিসর ছাড়া অন্য পরিসর থাকবে না; শুধু তাই নয়, আপনিও সেই পরিসরের অংশ হয়ে পড়বেন, অন্যকে এই কৈফিয়ৎ দেবেন যে ওখানে খারাপ কিছু তো হচ্ছে না। দশ-বারো বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস আর এস এস-এর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালোভাবেই একই কাজ করেছে এরাজ্যে। তারা সর্বধর্মসমন্বয়ের তকমা এঁটে আরো সহজেই সাংস্কৃতিক পরিসরগুলির দখল নিয়েছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ উদারবাদীদেরও সহজেই তার আওতায় নিয়ে এসেছে।

এতে সন্দেহ নেই যে এগুলো সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন নমুনা। ভয়ের জমানার আধারশিলা এটাই। ধর্মীয় চেতনা তার একটি উপাদান, নানাবিধ পরিচিতিসত্তার রাজনীতিও তাই, কিন্তু তার সারমর্ম মানুষের চিন্তাচেতনার ক্ষেত্র জুড়ে ব্যাপক পরোক্ষ আধিপত্য – এন্তোনিও গ্রামশির ভাষায় ‘হেজিমনি’– কায়েম করা, আমার চিন্তা কর্তাদের চিন্তা থেকে আলাদা বা বিপরীত কিছু হতে পারে সেই বোধটাই ক্রমে দূরীভূত করা। সত্যিই কর্তারা কী ভাবেন তা বলা মুশকিল, কিন্তু আমাদের মনোভাবের সঙ্গে তাঁদের মনোভাব মিলছে এটা মনে ভাবতে পারাতেই একটা আরাম আছে।

উগ্র ধর্মীয় মনোভাব যাদের নেই অযোধ্যার রামমন্দিরে তাদেরও নীরব সম্মতি থাকে কারণ তারা মনে করে মসজিদ ভাঙাটা খারাপ হলেও একদল আবেগে উন্মত্ত অবোধ মানুষ যখন তা করেই ফেলেছে তখন রামমন্দির তৈরির মধ্য দিয়ে ঐ পরিচ্ছেদে পূর্ণ ইতি টানলে খারাপ কী? নাহয় অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ জিনিষ ভেঙেই সেন্ট্রাল ভিস্টা হয়েছে, কিন্তু সেখানে তো এখন শহিদ মঙ্গল পাণ্ডেকেই দেখানো হচ্ছে। আমাদের অসুবিধা কোথায়? কাশ্মীরে অসংসদীয় পদ্ধতিতে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি। কিন্তু এমনিতেও তো সেখানে কোনো উন্নতি ঘটছিল না, সরকার যদি মাথা উড়িয়ে দিয়ে মাথাধরা সারাতে চায় তাতে শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান তো হতেও পারে। সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ আর কিছু নয়, এই প্রয়োজনীয় সম্মতির পরিবেশ তৈরি করা।

আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে খুব তুচ্ছ এবং সাধারণ কিছু ঘটনাও এই পরিবেশ তৈরিতে শাসকের চোখে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ যেন বিশাল রাজহস্তীর শান্তি বিঘ্নিত করে দিচ্ছে কিছু ক্ষুদে পোকা। যেমন, গুয়াহাটির রাজপথে মোটরবাইক চেপে চলেছেন শিবঠাকুর, পিলিয়নে মা দুর্গা। হঠাৎ বাইকের তেল ফুরিয়ে বিপত্তি। তেল ভরা হল না কেন তা নিয়ে দুজনের ঝগড়া। চারিদিকে লোক জমে যায়, বেরিয়ে পড়ে শিবদুর্গার সংসারের কেচ্ছা। এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তার ওপর পেট্রলডিজেলের যা দাম, টাংকি ফুল করতে গেলে তেলনুনচালডাল কেনার পয়সা থাকে না। তর্কাতর্কির মধ্যে আসে পুলিশ, রুলের গুঁতো মারতে মারতে শিবঠাকুরকে পোরে হাজতে। এ অবশ্য সাজা পুলিশ নয়, হিমন্তবিশ্ব শর্মার পুলিশ। নইলে আর এমন বুদ্ধি! শিবঠাকুরের নামে মামলা দায়ের হয় শিবভক্তদের মনে আঘাত লেগেছে বলে।

প্রশ্ন হল, হঠাৎ এই সাজা শিব অসমে বিজেপির রাজ্যপাট কী এমন টলিয়ে দিল! সাংস্কৃতিক মুখোস খুলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দাঁতনখ বার করল কেন? মহারাষ্ট্রের দুই জনপ্রিয় ‘র‍্যাপ’ শিল্পী রাজ মুঙ্গাসে ও উমেশ খাড়ের নামে পুলিশি মামলা হয়ে গেল কেন? উত্তরপ্রদেশে স্থানীয় হিন্দি কাগজের একাধিক ‘চুনোপুঁটি’ সাংবাদিক আততায়ীর হাতে খুন হয়ে যাচ্ছেন কেন? যদিও সেটা আরেক জমানার বিষয়, তবু আমাদের মনে পড়বে সফদর হাশমির হত্যাকাণ্ডের কথা। এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই শিল্পীরা যতক্ষণ নির্দিষ্ট জানাচেনা পরিসরে সমভাবাপন্ন মানুষদের মধ্যেই তাঁদের প্রতিবাদ সীমিত রাখছেন ততক্ষণ ফ্যাসিবাদীরা তা গ্রাহ্যের মধ্যে আনে না। কিন্তু যেই তাঁরা সেই নিরাপদ গণ্ডির বাইরে প্রকাশ্য জনপরিসরে ‘বিপজ্জনক শ্রেণি’ তথা জনসাধারণের কাছাকাছি চলে আসেন তখনই শাসকের টনক নড়ে।

সফদর হাশমি শহরের দীক্ষিত দর্শকের মঞ্চে নাটক না করে বস্তির খোলা প্রাঙ্গণে হাজির হয়েই সাহিবাবাদের মালিককুলের দুচোখের বিষ হয়েছিলেন। একইভাবে গুয়াহাটির শিল্পী, মুম্বাইয়ের দীনহীন র‍্যাপ শিল্পীর ক্ষমতা যেটুকুই হোক, জলের মধ্যে মাছের মতো আমজনতার সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্কটাকেই ভয় পায় শাসক। ফ্যাসিবাদের বিষঝাড়ার কাজে এঁদের ছাড়া চলে না। মমতার সরকার গত কয়েকবছর ধরে সুনিপুণভাবে আমাদের রাজ্যে এইধরনের শিল্পীদেরও খাঁচায় পোরার চেষ্টা করে চলেছে বহালভাতা এবং সরকারি প্রোগ্রামের লোভ দেখিয়ে। গরিব শিল্পীদের পক্ষে এহাতছানি অগ্রাহ্য করা শক্ত। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সবাইকে কীর্তনগাইয়েতে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্যে পটুয়ার গ্রাম পরিণত হচ্ছে ‘লোকসংস্কৃতি গ্রামে’, তা বিশ্বের সাংস্কৃতিক বাজারের অংশ বনছে। কিন্তু সেইসব পরিসরে এমন শিল্পী এখনো আছেন যাঁরা মানুষের চেতনায় প্রয়োজনীয় আঘাত হানতে পারেন, ‘বিপজ্জনক’ হয়ে উঠতে পারেন। তবে এও আমি কখনোই মনে করি না যে এমন উন্মুক্ত জনপরিসরের শিল্পীদের দিয়েই শুধু ফ্যাসিবিরোধী লড়াই পূর্ণতা পাবে। তাই ‘ভদ্রলোকি’ সংস্কৃতির প্রাঙ্গণে সত্যিকারের শিল্পী যাঁরা আছেন তাঁদেরও নিরাপদ গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। অদীক্ষিত জনসাধারণের সান্নিধ্যে না পৌঁছলে এই কঠিন লড়াইয়ে নিজেদের ভূমিকা তাঁরা পালন করতে পারবেন না।