প্রথম পর্ব — পাহাড় ও বনজঙ্গল ঘেরা ভিটেতেই আদিবাসীদের পুরুষানাক্রমে বসবাস ও তাদের জীবন জীবিকা ।তাদের আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা হচ্ছে বনজঙ্গল ।এখানেই তারা সাবলীল ভাবে জীবনযাপনে করতে অভ্যস্ত ।আদিবাসীদের সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠান, উৎসব সবই হয় বনজঙ্গল ঘিরে ।স্বাধীনসত্বা ও তাদের অধিকার নিয়েই বাঁচতে চায় সরলমতি আদিবাসীরা।এই সাঁওতাল আদিবাসীরাই পরাধীন ভারতের ব্রিটিশদের ভিতকে নড়িযে দিয়েছিল।”সাঁওতাল বিদ্রোহের ” দিকনির্দেশই ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জন ।দেশ স্বাধীন হল ।কিন্তু থেকে গেল বঞ্চনা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ,বনজঙ্গল থেকে উচ্ছেদ, জমিদারের জুলুম,আর কৃষকের উপর শোষন । স্বাধীন দেশে আদিবাসীরাও  জঙ্গলে বসবাস করার অধিকার হারাতে থাকল ।এমনকি খাদ্য সংগ্রহের অধিকারও সরকার কেড়ে নেওয়া শুরু করল।বন –পাহাড় যাদের জীবন সেই সাঁওতাল আদিবাসীদের আজ উৎখাত করার গভীর চক্রান্ত চলছে ।আদিবাসিদের “বনাঞ্চলের অধিকার ” রক্ষার জন্য বামপন্থীরা সংসদের ভিতরে ও বাইরে আন্দলোন শুরু করে ।বামপন্থীদের তীব্র আন্দোলনের চাপে  ইউ পি এ সরকার ২০০৬ সালে “বনাঞ্চল অধিকার “আইন পাশ করতে বাধ্য হন ।**দুদিক থেকে আদিবাসীরা আজ বিপন্ন** ।১ ) ২০০৬ সালে যে আইন হল তা প্রয়োগের জন্য ২০০৮ সালে নিয়মাবলী তৈরি হয় ।আইনে বলা হয় যে, আদিবাসীদের বনাঞ্চলের অধিকার দেওয়া হবে ,আদিবাসী ছাড়া অন্যান্য যারা বনে বসবাস করে তাদের আইনের অধিকার পেতে হলে, তিনপুরুস ধরে  (৭৫ বছর )বনের উপর নির্ভর করে আছে তা তাদের প্রমাণ করতে হবে ।নিয়মাবলী অনুযায়ী রাজ্যে রাজ্যে আবেদন জমা পড়ে ।২০১৮ সাল অবধি যা তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ আবেদনই বাতিল বলে গণ্য করা হয়েছে ।

পশ্চিমবঙ্গে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ৬১ শতাংশ আবেদন গৃহীত হয়েছে ।২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করার পর অধিকাংশ  আবেদন বাতিল হয়ে গেছে ।আদিবাসীদের এই জন্মাবধি অধিকার রক্ষার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি কোনও দায়িত্ব পালন করে নি ।ফলে সব আবেদনই প্রায়ই বাতিল হয়ে যায় ।সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় দেয় –যাদের আবেদন বাতিল হয়েছে তাদের সবাইকে উৎখাত করতে হবে ।আইনে এটাও বলা আছে, “যতক্ষণ না রাজ্য সরকার ঘোষণা করছে সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ততদিন পর্যন্ত একজনকেও উৎখাত করা যাবে না ।কোন রাজ্য সরকারই ঘোষণা করেনি যে কাজটা সম্পূর্ণ হয়েছে ।তা সত্ত্বেও আদিবাসীদের উৎখাত চলছে ।মুখ্যমন্ত্রী বলছেন জঙ্গলমহল হাসছে ।জঙ্গলমহল আজ কাঁদছে।  ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল  পর্যন্ত জঙ্গলমহলে যখন চরম নৈরাজ্য চলছে ঠিক তখনই মাওবাদীদের কার্যকলাপ যেমন বেড়েছে তেমনই আর এস এস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ “বনবাসী কল্যাণ আশ্রম “ঘাঁটি  গেড়ে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রীস্টান হয়েছিল তাদেরকে হিন্দুত্বে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে ।ঐ সময় থেকেই এখন পর্যন্ত আর এস এসের শাখা প্রশাখা তিনগুণ বেড়েছে আমাদের রাজ্যে ।ঐ সময়েই মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, “মাও –ফাউ” বলে কিছু নেই ।আদিবাসীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের বনাঞ্চলের অধিকার থেকে যেমন উৎখাত করা হয়েছে তেমনই চরম দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিযাশীল শক্তিসহ অতি বিপ্লবী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিঙ্গুরের কারখানাকে ধ্বংস করে বেকার যুবক যুবতীদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিলেন ।২৭ দিন হাই রোডের উপর মাচা বেঁধে লম্ফঝম্প করে সব শেষ করে দিলেন ।তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার মাচা গুঁড়িয়ে দিয়ে ৯০ ভাগ হয়ে যাওয়া ন্যানো কারখানাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত।”গণতন্ত্র ” কে মর্যাদা দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ করেনি ।সিঙ্গুরের মূল ইস্যু কি ছিল ,কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না ।মমতা ব্যানার্জি ও মিডিয়া মিথ্যাচার করে মানুষজনকে ভুল বোঝাতে সমর্থ হলেন ।

মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হলেন ।ঐ মমতা ব্যানার্জি “দেওচা –পাঁচামি কয়লা খনির খোলা মুখ “নিয়ে কি করছেন ।তাঁর এই দ্বিচারিতা মানুষ ধরে ফেলছেন ।ঐ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আদিবাসীদের সংঘাত শুরু হয়েছে ।ঐ এলাকায় বিরোধীদের কার্যক্রমে রাশ টানা হচ্ছে ।আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন অংশ জোট বেঁধে আন্দোলন শুরু করেছে ।এই প্রকল্পের মধ্যে যা জমি অধিগ্রহণ করা হবে তার বেশীরভাগই আদিবাসীদের ।২০০৬ সালে যে আইন হয় তাতে কি আছে দেখা যাক ।** আদিবাসীদের বনাঞ্চলে জল –জঙ্গল –জমির অধিকার দেওয়া হয়েছে ।** আইন মোতাবেক বনাঞ্চলে কোন শিল্পস্থাপন করতে হলে এবং আদিবাসীদের পুনর্বাসনের বিষয় থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মধ্যে গ্রামসভার মিটিং ডেকে প্রকল্পের অনুমতি নিতেই হবে –একপ্রকার বাধ্যতামূলক ।**সরকারের তরফে লিখিতভাবে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের প্যাকেজ গ্রামসভাকে জানাতে হবে ।** পুনর্বাসনের সমস্ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জমি   অধিগ্রহণ করা যাবে না ।সবজান্তা মুখ্যমন্ত্রী এইসব আইন জানেন না ।সব জেনেও মুখ্যমন্ত্রী বলপূর্বক পুলিশ পাঠিয়ে আদিবাসীদের ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করছেন ।

আদিবাসীসহ ঐ এলাকার মানুষজন বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন ।আদিবাসীদের সংগঠনগুলি সহ অন্যান্য সংগঠন ,জনবিজ্ঞান সংগঠনগুলি আওয়াজ তুলেছে ২০০৬ সালের আইন মোতাবেক সরকারের কার্যক্রম ঠিক করতে হবে ।মমতা ব্যানার্জির কাছে জানতে চাই জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সিঙ্গুরের গাড়ি কারখানাকে ধ্বংস করে কোন  কায়েমী স্বার্থ রক্ষার জন্য ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মধ্যমণি হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একাই এই প্রকল্প করবেন বলে আবেদন করলেন মমতা ব্যানার্জি ।আসলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি –২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবেদন অনুমোদন করে ছাড়পত্র দিলেন কেন্দ্রীয় সরকার ।ছাড়পত্র পাওয়া মাত্রই মমতা ব্যানার্জি অগণতান্ত্রিক ভাবে কাজ শুরু করে দিলেন দেওচা –পাঁচামি –দেওযানগঞ্জ –হরিণশিঙা কয়লা খনির খোলা মুখের কাজ ।[তথ্য সংগৃহীত ] ১৫৷০৯৷২০২২