নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঐতিহাসিক সন্দেহ নেই। শুধু অনেকটা দেরি হলো এটাই আফসোস। কারণ এরমধ্যে লোকসভা সহ বিধানসভাগুলির একের পর এক নির্বাচন হয়েছে যেখানে কর্পোরেট পুঁজি স্বার্থসিদ্ধির জন্য একতরফা সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। যে কারণে সুপ্রিম কোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, নির্বাচনী বন্ড এ দেশের স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতেই এই বন্ডের মাধ্যমে অনৈতিক ও অসংবিধানিক উপায়ে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করলে বিপদ এতটা বাড়তো না। এখন নির্বাচনী বন্ডের জমানায় আমি আপনি ভাবছি সরকার আমরা তৈরি করছি। আড়াল থেকে হাসছে আদানি-আম্বানি সহ ছোট বড় কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা, যারা গোপনে এইসব রাজনৈতিক দলকে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ যুগিয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অসম লড়াইয়ের আবহে ঠেলে দিয়েছে। আমরা যতই বলি এই নির্বাচন ( সে লোকসভা বা বিধানসভা যাই হোক ) একটা নীতির লড়াই, আদতে লুটেরা পুঁজির সর্বগ্রাসি আধিপত্য একে ক্রমশঃ অসম পুঁজির লড়াইয়ে পরিণত করেছে। ফলে, মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যদিয়ে ঘটছে না। উল্টে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়েছে। চরম বৈষম্যের শিকার আমজনতার দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে অথচ তা প্রকাশের সুযোগ নেই। পুঁজির সৌজন্যে বেড়ে চলা সরকারি বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়ছে– দুবেলা দুমুঠো ঠিকমত না খেতে পাওয়া মানুষের মুখ, ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া গরিব কৃষকের যন্ত্রণা, গতর খাটা মানুষের ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার ক্ষোভ আর সীমাহীন বেরোজগারির মুখে পড়া বেকার যুবক যুবতীর হতাশা। ধান্দার ধনতন্ত্রে এই নির্বাচনী বন্ডও যে আসলে একটি লুট করবার শক্তিশালী হাতিয়ার– একথা সিপিআইএম দল প্রথম থেকে বলবার চেষ্টা করেছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সেই বক্তব্যকেই সিলমোহর দিয়েছে।

কথায় বলে, দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না। বিজেপিও এই বন্ড চালু করার সময় বহু ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় অর্থবিলের মাধ্যমে ঘুর পথে এই বন্ড চালু করেছে। কি বলেছিলেন তখন মোদি ও তার পারিষদ দল? নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনুদান সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার জন্য নাকি নির্বাচনী বন্ড চালু হচ্ছে। যিনি অর্থ দিচ্ছেন তার পরিচয় যদি গোপন থাকে তাহলে বিসমিল্লায় গলদ থাকছে এতো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আদতে এই গলদ এক চরম অস্বচ্ছতার জায়গা তৈরি করেছে যা সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণও তাদের রায়ে উল্লেখ করেছেন। যখনই ব্যক্তি ও কর্পোরেট অনুদানকে এক পাল্লায় ফেলা হয়েছে, আসল ধান্দা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কর্পোরেট পুঁজি লুটের লাইসেন্স পেতে গোপনে শাসকদলকে অর্থ যোগাবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। নির্বাচনী বন্ড ১০০০ বা তার গুণিতকে কেনা যায়। অথচ তথ্য বলছে এখন পর্যন্ত এই বন্ডের ৯৮ শতাংশই এসেছে এক কোটি বা তার বেশি অনুদানের মাধ্যমে। এতো আর ব্যক্তিগত অনুদান হতে পারে না। আমাকে আপনাকে সর্বস্বান্ত করার লক্ষ্যে কর্পোরেট পুঁজির খেলা। রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পুঁজি এভাবে তার স্বার্থসিদ্ধি করতে পারে না। তাই রাষ্ট্র পরিচালনা কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা আগেভাগে ঠিক করে নিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার দখল নিয়েছে লুটেরা পুঁজি। এহেন বিপদ এদেশে অতীতে কখনো ঘটেনি যা মোদি সরকারের ‘বিকশিত ভারতে’ আমরা লক্ষ্য করলাম। নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার যদি সত্যিই স্বচ্ছতার প্রশ্নে কাজ করত তাহলে রাজনৈতিক দলগুলির অনুদান সংগ্রহের প্রশ্নে চালু আর্থিক লেনদেনের আইনেই তা সুনিশ্চিত করা যেত। ২০০০ টাকার বেশি কেউ অনুদান দিলে তা চেকের মাধ্যমে দিতে হতো। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে জানা যেত কে দিচ্ছেন। বর্তমান আইনে কুড়ি হাজার বা তার বেশি কেউ অনুদান দিলে প্যান কার্ড জেরক্স সাথে দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই আয়কর সংক্রান্ত বিষয়টিও স্বচ্ছতার সঙ্গে সামনে আসতে পারে। এর মাধ্যমে হিসাব বহির্ভূত অর্থাৎ কালো টাকা কেউ অনুদান হিসাবে দিচ্ছেন কিনা তাও ধরা পড়বে।

সিপিআইএম দলের কর্মীরা প্রায়শই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহ করেন। পার্টি অফিস তৈরি বা গ্রন্থাগার বা সমাজবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তৈরির জন্য অনেক সময় অল্প হলেও কিছু শুভানুধ্যায়ী সহৃদয় ব্যক্তি কুড়ি হাজার বা তার বেশি অর্থ পার্টিকে দান করেন প্যান কার্ডের তথ্য দিয়ে। এখানে কোনো অজুহাতেই দাতার পরিচয় গোপন করা হয় না। এর পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্যও কোনদিন কাজ করেনি। তাই একমাত্র সিপিআইএম দলই এ কথা বলবার স্পর্ধা দেখিয়েছে যে, এই অনৈতিক নির্বাচনী বন্ডের অর্থ তারা কখনো অনুদান হিসেবে নেবে না শুধু তাই নয়, এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে তারা সামিল হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই জয় তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিপিআইএম দলের আপোষহীন সংগ্রামের জয়। এখন বাজারি সংবাদমাধ্যম গুলিও এ কথা মানতে বাধ্য হচ্ছে। সিপিআইএমের বিরুদ্ধে যতই কুৎসা হোক এই সত্যকে আড়াল করা যাবে না। এক্ষেত্রে যারা দাতার পরিচয় গোপন করাকে সমর্থন করে তারা আর যাই হোক সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করেনা একথা হলপ করে বলা যেত পারে। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও সেই বার্তা পরিষ্কার। শুধু তাই নয়, কোর্ট বলেছে এই তথ্য গোপন করা আদতে তথ্যের অধিকার আইনের পরিপন্থী।

সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ কর্তৃক নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা রদ করার রায় একথা আবার প্রমাণ করলো, কর্পোরেটকুলের বন্ধু বা শ্রেণী স্বার্থবাহী কোন রাজনৈতিক দল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অসহায় শ্রমজীবী মানুষের কখনো বন্ধু হতে পারে না। বরং বন্ধু সেজে পুঁজির জোরে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতা দখল করে, স্বৈরাচারী ও বলগাহীন লুটের ব্যবস্থা কায়েম করবার জন্য। মোদি-মমতার শাসনে গত এক দশকে দেশ বা রাজ্যের সার্বিক অবস্থা লক্ষ্য করলে একথা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। বিজেপি এখন সাফাই গাইছে, যে রাজনৈতিক দল শাসন ক্ষমতায় থাকবে তারা নাকি এই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের প্রশ্নে কিছুটা বাড়তি সুবিধা লাভ করবে। ঠিক যেমনটা ওরা করেছে। গত পাঁচ বছরে বিজেপি এই নির্বাচনী বন্ড থেকে ৬৫৬৪ কোটি টাকা পেয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ১১৩৫ কোটি টাকা আর আঞ্চলিক দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ১০৯৬ কোটি টাকা। এছাড়াও জে ডি ইউ, বি জে ডি, ওয়াই এস আর সি পি, এন সি পি, ডি এম কে সহ অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নাম এই তালিকায় আছে। বিজেপির দাবি আংশিক সত্য। ক্ষমতায় থাকলেই রাজনৈতিক দল কর্পোরেট মালিকদের সাহায্য পায় এমনটা সবক্ষেত্রে নাও হতে পারে। বামপন্থীদের সঙ্গে যেহেতু কর্পোরেট গোষ্ঠীর স্বার্থের সংঘাত ঘটে তাই বামপন্থী সরকারের ক্ষেত্রে এ কথা আদৌ প্রযোজ্য নয়। তবে এখন শুধু সরকারে থাকলেই কর্পোরেট মালিকরা টাকা দেয় এমনটা বলা ভুল হবে। আসলে এই মালিকরা তাদের পছন্দের শাসক দলকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সরকার গঠনে ও সরকারি ব্যবস্থায় টিকিয়ে রাখার জন্য যাবতীয় অনুদান আইনি ও বেআইনি পথে সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে সরকারি রথ চলে বণিক কুলের দেখানো পথ ধরে। আমজনতার স্বার্থ সেখানে গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। ভুললে চলবে না, ঠিক একই কারণে হিটলার কে জার্মান সংসদে জয়ী করে আনা ও একনায়ক হিসেবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তৎকালীন জার্মান বনিক কুলের একটা বড় ভূমিকা ছিল। এটাই বড় বিপদের যা ঘটছে এদেশে এখন। মোদিকে সামনে রেখে উগ্র হিন্দুত্বের শক্তি আর কর্পোরেটর মিশেল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়ভার নিয়েছে। আমি আপনি তথৈবচ।

এখানে কোন রাজনৈতিক দল এ ধরনের চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে কতটা বাড়তি সুবিধা লাভ করছে সেই তথ্য জানবার থেকেও যে দুটি বিষয় সর্বাগ্রে জানা জরুরী তার প্রথমটি হল, রাজনৈতিক দলগুলির এভাবে গোপনে অনৈতিক উপায়ে অর্থ সংগ্রহ ব্যবস্থায়, নির্বাচকমন্ডলী অর্থাৎ যাদের স্বার্থ দেখবার জন্য এই দলগুলি নিবেদিত প্রাণ বলে দাবি করে সেই আমজনতার এতে কি লাভ হচ্ছে? নাকি কেবলই তারা প্রবঞ্চনার শিকার? বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করার ব্যবস্থায় তা কি আরো বাড়ল? দ্বিতীয় জরুরী প্রশ্নটি হল, বিজেপির কথামত যারা শাসক দলকে এ হেন বাড়তি অর্থ যোগান দিচ্ছে সেই সব কর্পোরেটকুল কোন শর্তে একাজ করছে? সাধারণ মানুষের স্বার্থ কি এতে আদৌ সুরক্ষিত হচ্ছে? যদি তা না হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কতটা? এই বন্ডের বিনিময়ে রাজনৈতিক দলগুলির ফায়দা লোটার কারণে সাধারণ মানুষকে ঠিক কতটা মূল্য চোকাতে হচ্ছে? গণতান্ত্রিক সার্বভৌম সাধারণতন্ত্রের দেশ এই ভারতবর্ষ এতে কতটা নিরাপদ? এর উত্তর পাওয়া যাবে তখনই যখন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এইসব দাতাদের তালিকা নির্বাচন কমিশন মারফত জনসমক্ষে প্রকাশিত হবে। ওই তালিকায় থাকা কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলির গত দশ বছরের ভূমিকা ও তাদের মোট সম্পদ বৃদ্ধির হার লক্ষ্য করলেই দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্কটা পরিষ্কার হবে।

 কোনো স্বার্থ ছাড়া কর্পোরেট সংস্থাগুলিযে এক কানা কড়িও দেয়নি সে কথা আদালতও স্বীকার করেছে। সব দেখেশুনে মনে হয় নির্বাচনী বন্ড আসলে এদেশে নতুন এক বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। যাতে বাধা না হয় তার জন্য কোম্পানি আইন ও আয়কর আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনও করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। তদানীন্তন নির্বাচন কমিশন এর বিরোধিতা করেছে। রিজার্ভ ব্যাংকও এভাবে বন্ড চালু করার বিষয়টিতে সম্মতি দেয়নি। তবু মোদি সরকার মরিয়া হয়ে প্রায় একতরফা, অনুদান সংগ্রহের নামে এই অসাংবিধানিক বিনিয়োগ ব্যবস্থা চালু করেছে। এই বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, আয় সুনিশ্চিত শুধু না, সম্পদ বৃদ্ধির হার কয়েক গুণ বেশি।

উপরের এই প্রশ্নগুলির উত্তর আমাদের জানা নেই এমনটা নয়। বরং আমরা চাই সাধারণ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন যা তাঁদের প্রকৃত শত্রু এবং মিত্র চিনতে সাহায্য করবে। নির্বাচনের আগে যখন এইসব শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা হেলিকপ্টারের ধুলো উড়িয়ে এপাড়া ওপাড়া ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যার বুলি আওড়ান তখন আমরাই প্রশ্ন তুলি এই হেলিকপ্টারের তেলের পয়সা যোগাচ্ছে কে? তার এই বিনিয়োগের মূল্য হিসেবে আমাদের কতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে? তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জনজোয়ার না জনখোঁয়াড় যাত্রার নামে কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল তাঁবুর প্রদর্শনী ও দেদার মোচ্ছব করেন তখন আমরাই প্রশ্ন তুলি– এই বিশাল পরিমাণ অর্থ আসছে কোথা থেকে? কারা দিচ্ছে শুধু নয় কেন দিচ্ছে তাও জানা দরকার।

 ২০১৯-২০ অর্থ বর্ষ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু হওয়ার পর মোদি সরকার ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপ লাইন নীতি ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, নৌবন্দর, সড়কপথ, রেলপথ সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ও সরকারি সম্পদ বেসরকারি কর্পোরেট মালিকদের হাতে নামমাত্র মূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখন জানা দরকার যে বা যারা সরকারের সৌজন্যে এসব দখল করলো, নির্বাচনী বন্ডে তাদের বিনিয়োগ কতটা? অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এদেশের বাজারে পেট্রোল-ডিজেল রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার পেছনে যে চক্র কাজ করে নির্বাচনী বন্ড তহবিলে তাদের অনুদান কতটা?

এদেশের ব্যাংক, বীমা, টেলিযোগাযোগ, আইটি ক্ষেত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে বিপুল পরিমাণ বেসরকারি বিনিয়োগ সুনিশ্চিত করা হয়েছে তার বিনিময়ে এইসব বিনিয়োগকারী নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কতটা চাঁদা যুগিয়েছে শাসক দলকে? কৃষি  এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পের নাভিশ্বাস তোলার ক্ষেত্রে দায়ী যে সমস্ত কর্পোরেট ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অর্থ যোগানের প্রশ্নে তারা কতটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে? ওরা বিনিয়োগ করেছে বলেই শাসকদলের সৌজন্যে চাষী ফসলের দাম পায় না, চাষের খরচ বাড়ে। রেশন ব্যবস্থা দুর্বল হয়। ওদের শর্ত মেনেই ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ কমে, স্বাস্থ্য শিক্ষায় বরাদ্দ সহ ভর্তুকি কমতে থাকে। সরকার পাশে থাকার কারণেই বৃহৎ কর্পোরেট ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি ছোট ও মাঝারি শিল্পের বকেয়া অর্থ বেমালুম গায়েব করে দেয়। বেকারের সংখ্যা বাড়িয়ে বন্ধ হয়ে যায় এইসব ছোট ও মাঝারি শিল্প গুলি।  খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার পেছনে এই নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থার একটা বড় ভূমিকা আছে। সঙ্গত কারণেই জানা দরকার কে কতটা বিনিয়োগের মাধ্যমে কতখানি সর্বনাশ বা লুট করবার লাইসেন্স পেয়েছে?

উচ্চ আদালত বলেছে বলে নয়, রাজনৈতিক দল যারাই এই অসাংবিধানিক সুবিধা ভোগ করেছে তাদের প্রত্যেকের এখন জবাবদিহি করার পালা। এই তহবিলের পয়সায় নির্বাচনের আগে মানুষ ঠকানোর চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন দিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না। তারচেয়ে বরং সাহস থাকে তো বলুক কারা তাদের বন্ডের মাধ্যমে কত টাকা জুগিয়েছে? এর পেছনে কি কি শর্ত কাজ করেছে? বিজেপি তো বারবার দাবি করেছে, কালো টাকা উদ্ধার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। এতে নাকি দাতা গ্রহীতার মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হবে। বেশতো তাই সই। আপনাদের কথাই মেনে নিলাম। এবার আদালতের নির্দেশ আপনারা মানুন। মানুষকে জানতে দিন, বুঝতে দিন প্রকৃত সত্য কি। আপনাদের কথা আর কাজের মধ্যে ফারাক কতটা? আর তা যদি না করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার নতুন কায়দা কানুন বানান, মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবেনা।

একে হিন্দুত্বের নামে রাম মন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির, কৃষ্ণ মন্দিরের ধুয়ো তুলে জনজীবনের জীবন জীবিকার জরুরী ইস্যু গুলোকে আড়াল করবার চেষ্টা, অন্যদিকে কর্পোরেটের এই আগ্রাসন– এ  দু-এর যাঁতাকলে পড়ে মানুষ আজ বিপর্যস্ত। তাই সর্বত্র আওয়াজ উঠেছে দেশকে বাঁচাতে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটানো জরুরী। সর্বগ্রাসী কর্পোরেট মিডিয়ার সৌজন্যে মোদি যতই নিজেকে অপরাজেয় প্রতিপন্ন করবার চেষ্টা করুন না কেন, এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি আশঙ্কার মধ্যে আছে সঙ্ঘ পরিবার সহ মোদি ও তার পারিষদবর্গ। তাই লোকসভা নির্বাচনের  নিয়ে পথে নামতেই হবে।