চত্তির মাসের গরমে কোন অন্ধ ভক্তকে বলতে হবে না, বানিয়া ফকির সাধু। না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা! ভোটের উঠোনে হাটের মাঝে ইলেক্টোরাল বন্ডের ভান্ড ফাটবে, কোন রামলালা জানতেন? ভারতবাসী বলছে এর চেয়ে কম খরচে শিক্ষিত ফকির হিমালয়ের গুহায় ভাড়া পাওয়া যায়। নর্মদা ছেড়ে নর্দমা থেকে ফকির আনব কেন? বাংলায় ‘সততার পোতিকে’র কারখানায় তালা পড়ে গেছে। বাঙালি মান্নিয়াকে সৎ বলে না, তাতে মান্নিয়ার রোজগার পাতি কমেনি। ফকিরেরও দু মুঠো অন্ন জুটে যাবে। ভক্তদের উচিৎ ভোটের বাজারে বিনা তর্কে, চৌকিদার যে চোর তা মেনে নেওয়া। বোকাদের গোয়েন্দা গল্পের মত টানটান থ্রিল। অপরাধীকে বুর্বক চিনতেই পারবে না। চোর তবু শাহজাহানদের নিয়ে মান্নিয়ার ঘরকন্না চলছিল। সৌকত ভালই বোম বানায়, সৌগত বোমের ফর্মূলা বলে, আনারুল পুলিশ ডাকে, আরাবুলের জগের ফাঁকে। চৌকিদার সৎ প্রমাণ হলে ভক্ত দুটো ভোট বেশী দেবে? বরঞ্চ কমে যাবার সম্ভাবনা। ভক্ত প্রণামী দিয়ে কাজ করে, ফকির সাদরে গ্রহণ করেন। কর্পোরেট প্রণামীকে বলি ইলেক্টোরাল বন্ড, জেমস বন্ড নয়।

ভক্তরা দেবতাকে তিন রূপে পূজো করেন। ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। সেটাকেই মান্নিয়া সহজ করে বলেন- এপাং, ওপাং, ঝপাং। অনেকগুলো ল্যাম্পপোষ্টের তারে বাঁধা তিনটি আসন। কখনও নীল, কখনও সাদা বা গেরুয়া সজ্জা। যখন তিনি নিয়োগ দুর্নীতি, পাচার প্রক্রিয়া, আলাঘরে পিঠের জ্বালা দেখতে পান না, তখন পোশাসনিক পোধান। তখন তিনি এপাং। যখন তিনি গোয়া, মেঘালয় থেকে আগরতলা ঘাসফুল বীজ ছড়াতে যান, যখন ভাইপো, বালু, পার্থর বান্ধবীদের খাটের তলাটা দেখতে পান না, তখন তিনি সভানেত্রী ওপাং। যখন পারিবারিক কোন্দলে কপাল ফাটে তো মুখ ফোটে না, তখন ভূতের ধাক্কা ঝপাং। ইতিহাস বলে ঝপাং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক। যেমন সৃষ্টি, রক্ষা ও বিনাশ। সুর ধরেছে পটাঙ। বাঁচতে হলে পটাঙের মত সুর ধরতে হবে। রাজ্যে পৌনে চার কোটি মহিলা ভোটারের ২.১৫কোটি ভান্ডারী, ৮৭লক্ষ কণ্যাশ্রী, ১৭.২৫লক্ষ রূপশ্রী, ২০লক্ষ বিধবা ভাতা এবং ১১.৬৫লক্ষ বার্ধক্য ভাতার অন্তর্ভুক্ত। মোট সাড়ে তিন কোটি। নিজের পায়ে কোন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন? তাহলে মান্নিয়ায় ফায়দা হল কী?

মানুষ যখন কোন সৎ ফকিরকে চাইছে না, তখন সততার পেছনে সময় নষ্ট করবেন না। বিজ্ঞাপনে সরকারী অর্থের অপচয় করে কী লাভ? মনমোহন সিং কথা কম বলতেন। তাঁর সময়ে এ.রাজা, কালমাদি, কানিমোঝি, রামলিঙ্গা রাজু, সঞ্জয় চন্দ্র, বিনোদ গোয়েঙ্কা, সুব্রত রায়ের জেল হয়েছে। সরব মোদীর কালে বিজয় মাল্য, ললিত মোদী, নীরব মোদী, সঞ্জয় ভান্ডারী, যতীন মেহতা, মেহুল চোক্সি থেকে বিনয় মিশ্রের মত দেশপ্রেমিকরা ভারতছাড়ো আন্দোলনে। যখন সবচেয়ে বেশী সৈনিক শহীদ, ফকির বলছেন, শত্রু তাঁকে দেখে কাঁপছে। সবচেয়ে বেশী চাষী আত্মহত্যা করলে বলেন কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সিবিআই, ইডি, নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যাঙ্ক কত্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে ফেললে পুরাতন ইতিহাস খোঁড়েন। লাখ টাকার স্যুট পরেও তিনি ফকির। জেল খাটার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কুণাল ঘোষ বলেছেন সুদীপ ব্যানার্জী মোদীর সাথে সেটিং ডিপ্লোম্যাসি করতেন। নোটবন্দী থেকে লকডাউনে সরব মোদীর আস্ফালনে মানুষ নীরবে মরেছে। তবু আপনাকে সৎ চৌকিদার বলার প্রয়োজন কী? দিদির সততার পোতিক লাগছে না।

আপনার বাড়তি গ্যারান্টি দেবারও প্রয়োজন নেই। বিদেশে সঞ্চিত দেশী কালাধন আনার কথা ছিল। দেশের ব্যাঙ্কে নিজের কালাধন দেখে চমকে উঠছেন। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫লাখ জমা করার প্রয়োজন নেই। দরকার নেই বছরে ২কোটি কর্ম-সংস্হানের। নিজের ধূর্ত মুখের ছবি দিয়ে সরকারী বিজ্ঞাপনে জনগনের করের টাকার অপচয় বন্ধ করুন। আমরা কেবল জানতে চাই কোন মামারা আপনাদের ঘুষ দিয়ে জনগনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙেছেন। নারদে যেমন শৃগালেরা ঘুষ নিয়েছেন কিনা সেটা জনগনের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন ছিল নরেন মোদীর সরকার কি তদন্ত করে শাস্তি দিতে পারবে? উত্তর, না। নরেন মোদীর লালসাকৃষ্ণ এথিক্স দাঁড়াতে পারবে না। বোকা ভক্তরা বলেছিল, দেখবেন এবার কী হয়! নরেন মোদীর দৌড় ভারতবাসী দেখেছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও উনি কাপুরুষ, অকর্মণ্য। বাংলায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ব্যাপমের ছায়া। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ মদত না থাকলে সীমান্ত পেরিয়ে গরু, কয়লা পাচার অসম্ভব ছিল। অনুব্রতরা ছিলেন সার্ভিস প্রোভাইডার মাত্র। শাহী ব্যবসা এখনও চলছে বহাল তবিয়তে।

ব্যাঙ ডাকে গ্যাঙ গ্যাঙ, হাতির কত বড় ঠ্যাং। মিডিয়া দুই প্রকার – গোদি মিডিয়া আর দিদি মিডিয়া। দুজনেই গ্যাঙ গ্যাঙ করে বলছে, তাদের হাতির কত বড় ঠ্যাং। চোরের কি ঠ্যাং বড় হতে পারে না? জিরো জিরো সেভেন ইরেক্টোরাল জেমস বন্ড না আসলে চোরদের ঘোমটা প্রকাশ্যে খুলত না। চোরকে চৌকিদার বলতাম। আঞ্চলিক তৃণমূল সর্বভারতীয় হয়ে গেল রূপোর মেডেল পেয়ে। কংগ্রেস ব্রোঞ্চ। সবার উপরে উন্নতশির বানিয়া কুলতিলক ফকির মহারাজের সোনার মেডেল। ঘোমটা খোলার ব্যাপরেও এপাং, ওপাং, ঝপাং। এপাংরা চুরিতে অংশ গ্রহণ করেনি। বামদলগুলি বিরোধিতা করেছে এবং খুব সম্ভবতঃ বিএসপি অনুদান পায়নি। ওপাংদের মধ্যে ডিএমকে, এডিএমকে, আপ, এসপি, জেডিএস, এনসিপি, জেডিইউ সহ দশটি রাজনৈতিক দল হিসাব দাখিল করেছে। ঝপাং কেসে নরেন মোদীর ৮,২৫০কোটির বিজেপি, মমতার ১,৭১৭কোটির তৃণমূল ও রাহুলের ১,৪২২কোটির জাতীয় কংগ্রেস পেছনের কাপর মাথায় তুলে ঘোমটা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে চারআনার হিসাব পেয়েছি। বারোআনা ঘাপলা মোদী-মমতার।        

এপাং-ওপাং-ঝপাংরা স্বেচ্ছায় দুর্নীতির হিসাব দেবে না। বোকা ভক্ত ভোট দিলে কীসের আইন কীসের আদালত? সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ককে আর কোন অজুহাতের আশ্রয় না নিয়ে আগামী ১৩ই মার্চ, বিকেল ৫টার মধ্যে রেফারেন্স নম্বর সহ সম্পূর্ণ তালিকা পেশের হুকুম দিয়েছে। তারপর প্রশ্ন উঠবে, মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’এর ১,৩৬৮কোটি, কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা হায়দ্রাবাদের ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’এর ৯৬৬কোটি দানের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে। সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। সিবিআই বা ইডি সে তদন্ত যে করবে না তা বলাই বাহুল্য। পুলওয়ামার বিস্ফোরণের পর ১৮ই এপ্রিল, ২০১৯, পাকিস্তানী বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্হা ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ কোন ফকিরকে ৯৫লাখ ভেট দিল? সেই ফকিরের জীবদ্দশায় তদন্ত শেষ হবে না। নারদে ১৩জন অভিযুক্তের ২জন বিচারের এক্তিয়ারের বাইরে। ফকির শেষ ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করবেন। জনতাকেও সত্য উন্মোচনে জানতে হবে মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য কিছু নাই। কার মৃত্যু?

ইলেক্টোরাল বন্ড তোলাবাজীর সামান্য অস্ত্র মাত্র। যেখানে তৃণমূলের হিসাবে এখন পর্যন্ত ১,৭১৭কোটি বলা হচ্ছে। বনগাঁর শঙ্কর আঢ্য একাই রেশন কেলেঙ্কারিতে ২০,০০০কোটি বিদেশে চালান করেছে। ইলেক্টোরাল বন্ড কেবল চোরদের নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করছে। চুরির পরিমাণ ধারণা দিতে পারছে না। আরজেডি মাত্র ৫৫কোটি টাকার বন্ড পেয়েছে, যে টাকা তৃণমূলের মন্ত্রীর বান্ধবীর খাটের তলায় মজুত থাকে। ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে জনগনের চোখের সামনে দিয়ে অন্ধ করে ফকিরের বেশে অর্থ-কাম পকেটে ঢোকাবার প্রযুক্তির বৈপ্লবিক ফন্দি বানিয়া বৈজ্ঞানিক ছাড়া সাত দশকে কোন শাসকের মস্তিষ্কে আসেনি বা আসার কথাও নয়। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। শীর্ষ আদালত এই পদ্ধতিকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। সেক্ষেত্রে চোরকে বামাল ফেরৎ দেওয়া উচিৎ। এই সমান্য অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক স্তরের চোরদের ক্ষেত্রে অসুবিধার বিষয় নয়। হয়ত অন্য ভাবে সেই ফকির হাত সাফাই করে দেবেন, কিন্তু মানুষ অবৈধ প্রতারক ও গোপন চোরদের যোগ্য স্বীকৃতি দেখতে চায়।

মোদীকে করাচির সংস্হা ঘুষ দিলে মমতাকেও রাঁচির প্রতিষ্ঠান ঘুষ দিতে পারে। আমরা বঙ্গবাসী সেই বাংলাপক্ষ প্রেমিকদের জানতে চাই। পূর্বে খননকার্ষে বিভিন্ন শেল কোম্পানির কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। তারপর ফকিরি নির্দেশে খননকার্য পরিণতি পায়নি। শোনা যায়, কোদালে মাটির সাথে চায়ের কেটলি উঠতে দ্রুত মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। এবার আদালতের নির্দেশ থাকলেও যে তদন্ত প্রক্রিয়া সংগঠিত হবে, তা দূরাশা। দুর্নীতির পরতে পরতে শাহী চূণ-সুড়কির মিশেল। মনমোহনের সময়ে দলের চোররা কারাগারে যেত, মোদীর জামানায় বিদেশে যায়। মোদী-দিদি CAA নিয়ে তরজা শুরু করে দেবেন, যাতে জেমস বন্ডকে পাবলিক দেখতে না পায়। মোদী কি সন্দেশখালির শাহজাহানের কিস্যা বা গোসাবার সুব্রত মন্ডলদের গল্পের খোঁজ রাখতেন না? রাখতেই হত, নইলে কাটমানির সঠিক হিস্যার হিসাবে দেদার গরমিল হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল। মোদী কি জানেন না, ২১এ বিধানসভা আর ২৩এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে কত জন দলীয় কর্মী খুন হয়েছেন? ২৪এ দিদি কত জনকে হত্যা করবেন? ফকির মোদী সব জানেন।

খুন না হলে ঘন্টা খানেকের সান্ধ্য মজলিশ জমবে কেমন করে? মানুষ নবান্নের বুড়ি নম্বর ওয়ান নিয়ে আলোচনা করুক কিংবা হুগলীর দিদি নম্বর ওয়ান, ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে আলোচনা না করলেই হল। আগুনখেকো গোদি ইউটিউবাররা একটাও ভিডিও বানায়নি। ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে…. রামমন্দিরে সটান শুয়ে পড়লে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে দুর্নীতির তথ্য ভ্যানিশ হয়ে যাবে না। আদালত যা অবৈধ রায় দিয়েছে, তা অবৈধ। অবৈধ কর্মে যে লিপ্ত সে দুষ্কৃতি। গেরুয়া বসনেও দুষ্কৃতি, সাদা শাড়ি, হাওয়াই চপ্পলেও দুর্বৃত্ত। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের একটা যোগাযোগ থাকে, থাকবে। নিচের তলার ভক্ত উপরের ফকিরবেশী সীতাহরণ দশানন চোরের জন্য মূল্যবান জীবন খোয়াবেন না। পিসিমণির ধন শাহজাহানের আলাঘরে আত্মসমর্পণ করেও বাঁচতে পারবেন না। মোদী-দিদির কেবল সেটিং নয়, এপাং-ওপাং-ঝপাং বন্ডে যুক্ত। ওনারা বলবেন, আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং। আপনি ড্যাং ড্যাং হবেন কেন? আপনি স্বাধীন মানুষ। চোর ধরা মুক্ত মানুষ। ভোট চাইলে গলায় গামছা দিয়ে প্রশ্ন করুন। আপনিই জেমস বন্ড।