১৯৯১ সালের উপাসনাস্থলে স্থিতাবস্থারক্ষার আইনটির কথা আজ নতুন করে আবার উঠছে। ওঠার কারণ বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদকে ঘিরে যা ঘটছে তা নিয়ে সঙ্গত আশঙ্কা। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের বহিঃপ্রাচীরের সঙ্গে একেবারে সংলগ্ন এই মসজিদটির নাম জড়িয়ে রয়েছে মোগলসম্রাট ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে। ইতিহাস যেটুকু বলে, তা এই যে প্রথমে ঔরঙ্গজেব আকবর বা জাহাঙ্গীরের মতো বিশ্বনাথের মন্দিরটির পৃষ্ঠপোষকতাই করেছিলেন, মন্দিরের ব্রাহ্মণদের কোনোভাবে বিরক্ত না করার ফতোয়া দিয়েছিলেন ইসলামের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা-সংক্রান্ত অনুশাসনের উল্লেখ করে।

পরে মন্দিরটি ঘিরে রাজনীতির ঘনঘটা দেখা দেয়। কাশীর বিদ্রোহী হিন্দু জমিদারেরা এবং রাজপুত রাণা জয়সিংহ এঁরা সবাই শিবাজিকে সাহায্য করছিলেন; আবার এঁরা সবাই ছিলেন ঐ মন্দিরের পৃষ্ঠপোষক। মন্দিরটি ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরির বাদশাহি সিদ্ধান্ত ধর্মীয় কারণে না, রাজনৈতিক ক্ষমতা জারি রাখার প্রয়োজন থেকেই। ঔরঙ্গজেব যেখানে পেরেছেন মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ে ইসলামের একাধিপত্য প্রসার করতে চেয়েছেন এটা ইতিহাস বলে না।

ঔরঙ্গজেবের আমলে যেমন মন্দির ভাঙার বেশকিছু নজির রয়েছে, তেমনই আবার সব মোগলসম্রাটরাই বহু হিন্দু ধর্মস্থলের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন। আকবরের অনুদানে কাশী মথুরা বৃন্দাবনে বহু নতুন মন্দির গড়ে ওঠে। হিন্দু রাজন্যদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক না রেখে দেশশাসন করা যাবে না একথা আকবর ও অন্য মোগল সম্রাটেরা ভালোই জানতেন। বস্তুত কাশীবিশ্বনাথের মন্দির বারংবার আক্রমণকারীদের কবলে পড়েছে প্রাক্‌-মোগল যুগেও। পরে তার পুনর্নির্মাণেও কিন্তু কোনো শাসক বাধা দেয়নি। পঞ্চদশ শতকে ভাঙা মন্দির আকবরের আমলে সম্রাটের অনুদানেই টোডরমল নতুন করে তৈরি করেন। হিন্দু রাজন্যেরা মোগল আমলে অনেক নতুন মন্দিরও গড়েছেন যা সম্ভব হত না সম্রাটদের প্রচ্ছন্ন উৎসাহ ও বদান্যতা ছাড়া।

কাশীর সমন্বয়ী ‘গঙ্গা-যমুনি’ সংস্কৃতির ছত্রছায়ায় মন্দিরের পাশাপাশি কিছু মসজিদও আবার তৈরি হয়েছে। আধুনিক ভারতে সেগুলি সুরক্ষিত এমন কি আমরা বলতে পারি? অথচ ১৭৮০ সালে ঔরঙ্গজেবের হাতে ভাঙা মন্দিরের সংস্কার যখন রাণী অহিল্যাবাঈ হোলকার করলেন তখন মসজিদটিকে অক্ষত রেখেই তিনি তা করেন। উনিশ শতক পর্যন্তও বহু হিন্দু রাজন্যের দানে সমৃদ্ধ হয়েছে এই তীর্থস্থান। সেসময়ে পাশে মসজিদ থাকায় তাঁরা কেউই কোনো অসুবিধা বোধ করেননি।

‘রামজন্মভূমি’র জিগির তুলে ১৯৮৬ সাল থেকে বিজেপি’র রাজনৈতিক শক্তির অকল্পনীয় বিস্ফোরণ হয় এবং অনেকগুলি প্রাচীন ধর্মস্থলকে ‘হিন্দু স্বাভিমানে’র নামে দখল করার প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। আদবানির কুখ্যাত ‘রথযাত্রা’র সময় থেকেই অযোধ্যাতে মসজিদ ভেঙে রামমন্দির গড়ার সংকল্প জারি করে করসেবকেরা বলতে শুরু করেছে, ইয়ে তো পেহ্‌লি ঝাঁকি হ্যায়/ কাশীমথুরা বাকি হ্যায়!এই সহিংস অভিযানের গতিরোধ করার অন্যতম উপায়হিসাবেই ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির পক্ষ থেকে এমন একটি আইনের দাবি উঠছিল। উপাসনাস্থলে স্থিতাবস্থারক্ষার আইনটি সংসদে পাশ হয় ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ রাজীব-হত্যার পরে নরসিংহ রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে যে কংগ্রেস সরকার ঐবছরের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠিত হল তার প্রথম দিকেই।

কী ছিল এই আইনের খশড়ায় বিজেপি যেকারণে প্রতিপদেই তার রূপায়ণের তীব্র বিরোধিতা করেছিল? এর তিন নম্বর ধারায় বলা ছিল কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বা গোষ্ঠীর কোনো উপাসনাস্থলকে অন্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর উপাসনাস্থলে রূপান্তরিত করা যাবে না। আর চার নম্বর ধারার (১) উপধারায় আরো বিশদভাবে জানানো হয় যে ১৯৪৭ সালের

১৫ই অগাস্ট কোনো উপাসনাস্থলের স্বীকৃত চরিত্র যা ছিল তাকেই তার স্থায়ী চরিত্র বলে মান্যতা দেওয়া হবে। সময়সীমাটির তাৎপর্য এই যে এইদিন ভারত স্বাধীনতালাভ করেছিল। তার আগেকার পর্বে ধর্ম নিয়ে যত বিবাদ সংঘাত হয়েছে সেগুলিকে পিছনে ফেলে সামনে এগোনোর সংকল্পগ্রহণের মুহূর্ত বলে ধরা হয়েছিল এই তারিখটিকে।

চার নম্বর ধারার আরো কয়েকটি উপধারা ছিল। যথা, চারের (২) উপধারায় বলা হয়, ধর্মস্থান নিয়ে ঐতারিখের আগে থেকে চালু মামলাগুলির সমাপ্তি ঘটবে আইন প্রবর্তিত হবার সঙ্গে সঙ্গে; যদি এমন কোনো মামলা চালু থাকে যেখানে ঐ তারিখের পরে কোনো ধর্মস্থলের চরিত্র পরিবর্তন করার অভিযোগ রয়েছে তাহলে চারের (১) উপধারা মোতাবেক তার নিষ্পত্তি করতে হবে; চারের ৩নম্বর উপধারার(ক) (খ) (গ) (ঘ) (ঙ)তে আরো বলা হয়, এই আইনের আওতায় আসবে না প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন-সংক্রান্ত আইনে (১৯৫৮) সুরক্ষিত ঐতিহাসিক স্মারকসৌধগুলি, বা সেই মামলাগুলি যার ইতিমধ্যেই কোনো আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, যেখানে উভয়পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে বিবাদের নিষ্পত্তি করে নিয়েছে, বা যেখানে পারস্পরিক সম্মতিতে এমন রূপান্তর ঘটেছে, বা যেখানে আইনি সময়সীমা পেরিয়ে যাবার ফলে নিষ্পত্তিটি নিয়ে নতুন মামলা ওঠার সম্ভাবনা নেই।

এর পরে (৫) নম্বর ধারা। সেখানে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ নামে প্রচলিত উপাসনাস্থলটির ক্ষেত্রে এই আইনটি প্রযোজ্য হবেনা। এই আইনে সমাপ্তি ঘটবে না ঐ বিশেষ উপাসনাস্থলটি নিয়ে চালু মামলাগুলিরও। এর পরের তিনটি ধারায় রয়েছে আইনভঙ্গজনিত শাস্তির কথা যার সর্বাধিক মাত্রা তিন বছর কয়েদ এবং উপযুক্ত জরিমানা; আর আছে অন্যান্য চালু আইনের সঙ্গে এর সম্পর্কের কথা। কিন্তু (৫) নম্বর ধারাটি নিয়ে কিছু প্রশ্ন সংসদের অভ্যন্তরেই সেসময়ে উঠেছিল।

লক্ষণীয় যে খশড়া আইনের মধ্যেই উপাসনাস্থলটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ’ বলে। এর যুক্তিটা কী? আসলে ব্যাপারটা এই যে ১৯৪৯ সালে চোরাগোপ্তা পদ্ধতিতে রামলালার মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত হবারা পরে তা ভিতরে রেখেই শান্তিরক্ষার্থে মসজিদে তালা দেওয়া হয়। সেকারণে মুসলিমদের সেখানে নামাজ পড়া এমনিতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৬ সালে এলাহাবাদ কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে যখন মসজিদের তালা খুলে দেওয়া হয় রামলালার নিত্যপূজাকে বৈধতা দিয়ে, তখন ‘রামজন্মভূমি’র কিংবদন্তিও একধরনের আইনি মর্যাদা পেয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে খোদ নেহরুর নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার মসজিদের অভ্যন্তর থেকে মূর্তিগুলি সরায়নি; আর ১৯৮৬ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তালা খোলার আদেশকে বিনা বাক্যব্যয়েই মেনে নিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় প্রশ্ন যা তখনই উঠেছিল, তা হচ্ছে ১৯৯১এর আইনে ব্যতিক্রমী (৫)নম্বর ধারাটির কী প্রয়োজন ছিল? ওটি বাদ দিয়ে কি খশড়াটি করা সম্ভব ছিল না? সরকারপক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এই উপাসনাস্থলটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক আবেগ এমনই তুঙ্গে রয়েছে যে আদালতের আওতা থেকে তাকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি আরো বিস্ফোরক হতে পারে। নতুন সরকারের আশু প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক উত্তাপ কমিয়ে আনা, এবং তারা মনে করেছিল সংসদে আইন প্রণয়নের চাইতে আদালতের মীমাংসার ওপর ভরসা রাখা উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে বেশি কার্যকরী হতে পারে।

উদারপন্থীরা হয়তো এটা ভাবতে পারেননি যে বিজেপি ও তার চালক সঙ্ঘপরিবার যদি সংসদে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রণীত আইন না মানে, তাহলে আদালতের হুকুমের অপেক্ষা তারা করবে এমন আশা করারও কোনো কারণ নেই। এমনও হয়তো কেউ কেউ মনে করেছিলেন যে একটি ব্যতিক্রম রেখে যদি আরো বড়ো ধ্বংসের প্রকল্পকে ঠেকিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি? দূরদৃষ্টি থাকলে তাঁরা বুঝতেন, এটাতে সেই তাণ্ডবের শেষ হবে না, এটা সর্বনাশের সূত্রপাত।

হিন্দুত্বের জিগিরে মানুষকে এককাট্টা করে ক্ষমতার শীর্ষে পৌছানোর এমন সুযোগ থেকে বিজেপি ও সংঘপরিবারকে সংসদীয় রীতিনীতি বা আদালতের নির্দেশের কথা তুলে থামানো যাবে না। সরাসরি রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ করেই শুধু এ গতি ঠেকানো যেত, এমনকী ১৯৯২এর ডিসেম্বরেও সে সুযোগ ছিল। আমরা জানি, নরসিংহ রাওকে জ্যোতি বসু সেই পরামর্শই দিয়েছিলেন, তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি, বিনাবাধায় মসজিদ ভাঙতে দিয়েছিলেন।

সত্যি সত্যিই বর্তমান মোদি-জমানায় সংঘপরিবার পুনরায় এই জিগির তুলতে শুরু করেছে যে কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির-সংলগ্ন মসজিদের সংস্পর্শে প্রাচীরগাত্রের হিন্দু দেবদেবীরা কলুষিত হচ্ছেন। পাঁচজন হিন্দু মহিলা মামলা রুজু করেছেন মসজিদের ভিতরে তাঁদের পুজোর অধিকার দিতে হবে এই আরজি নিয়ে। বাবরি মসজিদের মতোই এমসজিদের তলা থেকেও হিন্দুর গৌরব পুনরুদ্ধারে আজ হিন্দুত্ববাদীরা কৃতসংকল্প। ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই এর ভিতরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। একটি শিবলিঙ্গ বেরিয়েছে এমন রবও উঠেছে, যদিও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওটা মসজিদের ভিতর ‘ওজু’ করার জায়গায় স্থাপিত একটি ফোয়ারার মুখমাত্র।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াকফ কমিটির আর্জিতে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ নিয়ে এইসব বিপজ্জনক উদ্যোগ ঠেকাতে কোনো রায় দিতেও পারতেন। তাঁরা কিন্তু বল ঠেলেছেন বারাণসীর দেওয়ানি আদালতের কোর্টে; এবং সম্প্রতি এই আদালতের বিচারপতি রায় দিয়েছেন, পাঁচ মহিলার ভজনপূজনের আবেদনে শুনানির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে, হিন্দুত্ববাদীরা যাকে নিজেদের জয়ের অভিমুখে এক বড়ো পদক্ষেপ বলে মনে করছে।

১৯৯২এর কর সেবকরা কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করেনি, আজ তারা সে ধৈর্য দেখাচ্ছে, কারণ ধৈর্য ধরতে তাদের অসুবিধা নেই। বারাণসী খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনক্ষেত্র এখন। ইতিমধ্যেই গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করার নামে বিশ্বনাথের গলির বহু ছোটোখাটো মন্দির, সাধুর আখড়া, দোকানপাটকে বুলডোজারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে মসজিদভাঙ্গার সব প্রস্তুতি করে রাখা হয়েছে। বিগত আশির দশকের সঙ্গে আজকের তফাৎ এইখানে যে এখন হিন্দুরাষ্ট্রের প্রবক্তা সেই বিজেপি-আর এস এস-এরই হাতেই এখন রাষ্ট্রশক্তি। সংসদে তাদের প্রায় একচ্ছত্র প্রতাপ। আদালতের রায় অনেক ক্ষেত্রে তাদের অনুকূলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে রাজনৈতিক উদারপন্থীরা কিন্তু এখনও বুঝছেন ধর্মীয় ব্যাপার নিয়ে কোনো সংঘাতে না যাওয়া। এতে যদিও ক্রমেই তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন তবু। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে, নাগরিকত্ব আইনের নামে নাগরিকত্বের অধিকারহরণ নিয়ে, বাবরি মসজিদের জমিতে রামমন্দিরের ভিত্তিস্থাপন নিয়ে, এমনকী বিলকিস বানোর ধর্ষক ১১ খুনিকে রেহাই দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁদের নৈঃশব্দ্য বা দ্বিধাগ্রস্ততা পর্বতপ্রমাণ।

প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থলে স্থিতাবস্থা আইনটির কথা আদালতকে মনে করানো কতটা কার্যকরী। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে যে আইনটি সংবিধানসম্মত কিনা এবং তা নাকচ হওয়ার দাবিও উঠছে। কোনো উদারপন্থী দল নয়, কমিউনিস্টরাই একমাত্র বারাণসীর আদালতের রায়টির সমালোচনা করছেন ১৯৯১এর আইনটির প্রসঙ্গ তুলে।

আইনটির প্রসঙ্গ কেন জরুরি? দেশের সব আইনই শাসকশ্রেণির পক্ষ থেকে একটি নীতিগত প্রতিশ্রুতি যে ক্ষমতায় আসীন হয়েও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত কতগুলি সীমানাকে তারা মেনে চলবে। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক উদারপন্থীরাই এই প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত বোধ করতে পারেন।

সংখ্যায় ন্যূন হয়েও কমিউনিস্টরা তো এমন কোনো মুগ্ধবোধে মগ্ন নয় যে তারা মনে করবে সংবিধান ছুঁয়ে শপথ নিয়েছে বলেই ফ্যাসিস্ট শাসক আইন মেনে চলবে। আইনের প্রসঙ্গ তোলা তাই তাদের অসহায়তার অভিব্যক্তি নয়। তা আসে কমিউনিস্টদের এই বিশ্বাস থেকে যে জনমুখী আইনগুলি যখন তৈরি হয় তখন তার পিছনে থাকে সাধারণ মানুষের এই আশা যে সংঘাত বা অশান্তির মধ্যে না গিয়েও আদালতের মারফৎ সমস্যার ফয়সালা করা যায়।

বিজেপি-আর এস এস এবিশ্বাসের ঘোর বিরোধী বলেই আইনটির নামও ভুলিয়ে দিয়ে সব হিন্দুকে তারা সম্ভাব্য করসেবকে পরিণত করতে চায়। কিন্তু এমন বিকল্পও যে হতে পারে তা মানুষকে বারংবার মনে করিয়ে দেওয়া তাদের প্রতিরোধী চেতনাকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের অন্যতম হাতিয়ার।

[ঐতিহাসিক তথ্যগুলির উৎস ‘কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরঃ মিথ বনাম ইতিহাস’, বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়; শিকড় থেকেঃ একটি সমকালীন রচনাসংকলন, সম্পাদক মালিনী ভট্টাচার্য, দেবযানী সেনগুপ্ত, আর বি এন্টারপ্রাইসেস, কলকাতা,২০২২।]