আমরা সামনের দিকেই যাই ভবিষ্যতের ভাবনা নিয়ে ।নানান কাজের মধ্যে আমরা অতীতকে ভুলে যাই ।অতীতকে স্মরণে রাখতেই হবে ।সেইজন্য অতীত ও বর্তমানের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পটভূমি বিশ্লেষণ করেই ভবিষ্যতের পথ চলা ঠিক করা উচিত বলে আমার মনে হয় ।


আমাদের রাজ্যে বর্তমানে যা চলছে, তারই প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের  পাতা থেকে কয়েকটা বিষয় তুলে ধরলাম ।এখন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যে খেলা চলছে ,সেটা কি অস্বাভাবিক ঘটনা? না ,স্বাভাবিক ঘটনা ।কারন দুটো দলেরই শ্রেণি চরিত্র ও শ্রেণি স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নীতি প্রায় একই ।তার সঙ্গে আছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনর রাজনীতি ।দুটো দলের ক্ষমতালোভী দেরি দলবদল একটা স্বাভাবিক রীতিনীতি ।বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভয়ংকর ক্ষমতালোভী ,তা নীচের তথ্য থেকেই বোঝা যাবে ।ক্ষমতার জন্য উনি অনেক কিছুই করতে পারেন ।নীচের তথ্য ও সত্য দ্বন্দ্বিক পদ্ধতিতে অনুধাবন করলেই বুঝতে পারা যাবে যে, উনি কি প্রকৃতির মহিলা ।দেখা যাক, ইতিহাসের পাতায় তথ্য ও সত্য কি বলছে ।তারপর বিচার ও বিবেচনার ভার আপনাদের ।
ক্ষমতার অলিন্দে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী
—————————————-
** ১৯৮৪ –১৯৮৯ এই সময়ে কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য ।
** ১৯৯১–দ্বিতীয়বার লোকসভার সদস্য কংগ্রেসের
** পি ভি নরসিমা রাও মন্ত্রীসভায ১৯৯১ – ১৯৯৩ মমতা ব্যানার্জি ছিলেন ক্রীড়া ও নারী কল্যাণ দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রী ।
** ১৯৯৩ সালেই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী থাকাকালীন মহাকরণ দখলের হিংসাত্মক অভিযানে নেতৃত্ব দেন মমতা ব্যানার্জি ।
**কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে  ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করেন মমতা ব্যানার্জি ।
** ক্ষমতার অলিন্দে ঢোকার বাসনায নেত্রী ভীরে গেলেন বি জে পি র সঙ্গে ।
** ১৯৯৮ –১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেযীর ১৩ মাসের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায উনি ছিলেন রেলওয়ে সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেযারপারসন।
**১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে বি জে পি র সঙ্গে জোট বেঁধে সাংসদ হয়ে মিঃ বাজপেযীর মন্ত্রীসভায মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী হন।
**২০০১ এর মার্চে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বি জে পির ঘর ছেড়ে কংগ্রেসের ঘর করতে চলে এলেন ।
**২০০১ এ কলকাতা করপোরেশন নির্বাচনে বি জে পি র সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের পুনরায জোট হয় ।তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত মুখার্জি মেয়র ও বি জে পি র মিনাদেবী হলেন ডেপুটি মেয়র
* ২০০৩ সালে ৮ ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাজপেযী মমতাকে আবার মন্ত্রীসভায ঢোকালেন ।মন্ত্রী হলেন বটে, কিন্তু দপ্তরহীন মন্ত্রী ।তাতেই উনি খুশী ।যেমন হোক ক্ষমতা  তো বটে*
* ২০০৩ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে আর, এস ,এস এর মুখপত্র “পাঞ্চজন্য র সম্পাদক তরুণ বিজয়ের লেখা একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা ব্যানার্জি ভাষন দিলেন ।বলেছিলেন, “আপনারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক ।আমি জানি, আপনারা আমাদের দেশকে ভালোবাসেন।” স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যারা ধরিয়ে দেয় ব্রিটিশ সরকারকে ,আদালতে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়, মুচলেকা দিয়ে যারা জেল থেকে বেরিয়ে এসে ব্রিটিশ প্রভুদের পদলেহন করে, তারা তো দেশপ্রেমিক হবেই।বাঃ মমতাদেবী বাঃ*
**এইচ ভি শেষাদ্রী,মোহন ভাগবত ,মদনদাস দেবী ,বি জে পির সাংসদ বলবীর পুঞ্জ র উপস্থিত তে মমতাদেবী বলেন, “একসঙ্গে এতজন আর এস এস নেতাদের সঙ্গে আমি আগে বৈঠক করিনি, তবে ব্যক্তিগত ভাবে কয়েকজনের সাথে দেখা করেছি ।”
** কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি আর এস এস কে সমর্থন করবেন, একথাও তৃণমূল সুপ্রিমো খোলাখুলি জানিয়েছিলেন ।প্রত্যুত্তরে বলবীর পুঞ্জ ভাষনে বলেন, “হমারি মমতাদি,সাক্ষাত দুর্গা “।(সূত্র –দ্য টেলিগ্রাফ ১৬৷৯৷২০০৪ )
** অবশেষে দপ্তর পেলেন মমতা ব্যানার্জি ২০০৩ সালের ৯ ই জানুয়ারি, কয়লা ও খনি দপ্তর।
* ২০০৪ ও ২০০৬ সালে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও বি জে পি র ঘরেই ছিলেন মমতা ব্যানার্জির দল।*
**সিঙ্গুরে টাটার কারখানা ও বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে মমতা ব্যানার্জি মাওবাদী, মৌলবাদী, বিচ্ছন্নতাবাদী সহ সমস্ত প্রতিক্রিযাশীল শক্তির সাথে জোট গঠন করে ।
**আন্দোলনের নামে বিধানসভার অভ্যন্তরে মমতা ব্যানার্জি নিজে তার নেতা কর্মীদের নিয়ে ভাঙচুরের নেতৃত্ব দেন ও তান্ডব চালায় ।আসবাবপত্রসহ মূল্যবান সামগ্রী ও নথি নষ্ট করে দেন ।সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেন মমতা ব্যানার্জি ।
**২০০৬ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ধর্মতলার অনশন মঞ্চে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বি জে পি র সর্বভারতীয সভাপতি রাজনাথ সিং।২৬ শে ডিসেম্বর অনশন মঞ্চে এলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর প্রতিনিধি কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী ।
** ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধে ।
**২০১১ সালের ১৩ ই মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিলো ।১৪ ই মে আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় পাতায় লেখা হয়েছিল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আশীর্বাদ ও পরামর্শ মমতা ব্যানার্জির প্রতি।


কী ছিল সেই পরামর্শ? “প্রথম রাতেই বিডাল মেরে দিন “।আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে লিখছেন এই কথা বলে মোদির উচ্ছ্বসিত পরামর্শ, “আদরণীয় মমতা বোন,প্রথমেই আপনাকে আমার অভিনন্দন ।আপনার কাছে আমার গগনচুম্বী প্রত্যাশা ।কিন্তু, প্রথমেই বলি, আমার নিজের অভিজ্ঞতা এই কথাটা বললাম ———–আপনি একজন দৃঢ়চেতা মুখ্যমন্ত্রী, আপনার বুদ্ধিমত্তা —–উপর আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা, কিন্তু প্রশাসনে কঠোরতা খুব আবশ্যক ।এই কঠোরতা শুরুতেই আপনার কাছ থেকে প্রত্যাশা করি ।”


**২০১৪ র ৩০ শে জানুয়ারি ,কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বি জে পি র নির্বাচনী প্রচার সভায় নরেন্দ্র মোদী মমতা ব্যানার্জিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “৩৫ বছর ধরে যে দল এই রাজ্যকে শেষ করেছে, সেই দলকে বিদায় করেছেন আপনি ।এর জন্য অভিনন্দন জানাই ।(এই সময়, ইন্টারনেট সংস্করণ ৬ ৷২৷২০১৪)
** ঐ সময়ে তৃণমূল -মাওবাদী জোট জঙ্গলমহলে অস্থিরতা, নৈরাজ্য, এবং হত্যালিলা চালিয়েছিল ।ইতিহাসে তার পরিসংখ্যান আছে ।মাওবাদীদের অন্যতম শীর্ষ নেতা কিষেণজি টেলিভিশনেই  ঘোষণা করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতা ব্যানার্জিকেই তিনি চান।আনন্দবাজার পত্রিকার ২০০৯ সালের ৪ ঠা অক্টোবর সংখ্যায় এই মর্মে কিষেণজির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল ।২০১০ সালের ৯ ই আগস্ট লালগড়ে রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গুরুত্বপূর্ণ একটি সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন ।৫ ই আগস্ট কিষেণজি সংবাদমাধ্যমকে জানান ,মমতা ব্যানার্জির সমাবেশ মাওবাদীরা সমর্থন করছে ।


** কামতাপুরী বিচ্ছন্নতাবাদী হিংস্রতায সি পি আই  (এম ) এর ৬০ জন নেতা কর্মীরা খুন হয়েছিলেন ।কে এল ও বন্দুকবাজরা ২০০২ সালের আগস্টে জলপাইগুড়ির  ধূপগুড়িতে সি পি আই  (এম )অফিসে হামলা চালিয়ে পাঁচজন পাটি নেতাকে খুন করে ।কে এল ও নেতা টম অধিকারী সেই খুনের নেতৃত্ব দেন ।টম অধিকারী ও তাঁর সঙ্গীরা ২০০২ সালে ভূটান থেকে ধরা পড়ে ।দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর ২০১১ সালের আগস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায ও বদান্যতায টম অধিকারী সহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জেল থেকে মুক্তি পান।


**কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী জুড়েই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত অতীতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে ।কিন্তু কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের কার্যকলাপ কোনদিনই থেমে থাকেনি ।নৈরাজ্যবাদী,বিচ্ছন্নতাবাদী ও প্রতিক্রিযাশীল শক্তির মিলিত জোটের এক গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবাংলায বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করে বেকার যুবক যুবতীদের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে, শিল্প ও কৃষিকে উদারীকরনের রাস্তায় লাগাম ছেড়ে দিয়ে, আধা ফ্যাসিস্ট শক্তি পশ্চিমবাংলায তথা গোটা দেশে তাদের কার্যকলাপ চালাচ্ছে ।বামপন্থী রা সংসদীয় সংখ্যায় শূণ্য হতে পারে, কিন্তু বামপন্থীদের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই, শ্রমিক -কৃষক ও ছাত্র যুবদের লড়াই থেমে থাকেনি, থাকবে না, এই লড়াই চলছে, চলতেই থাকবে, আরও তীব্র হবে মানুষের লড়াই।


তথ্য সংগৃহীত