সুভাষ রায়, রানাঘাট: এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ আই এর উদ্যোগে গত ১১ই আগস্ট রানাঘাটের পূর্বপাড়ে শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবসে রক্তদান শিবির ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নদীয়া জেলার ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন নেতৃত্ব এবং সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সুমিত দে। এরপর ছাত্র ও যুব সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন পূর্বপাড় ইউনিটের আহ্বায়ক কমরেড মধুমিতা শিকদার এবং ডিওয়াইএফআই পূর্বপাড় ইউনিটের সভাপতি সিদ্ধার্থ কুন্ডু। অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা ভাষ্যে কমরেড সুমিত দে বলেন রক্তদান শিবিরের আয়োজন বামপন্থী ছাত্র যুব সংগঠনের বরাবরের স্বাভাবিক কর্মসূচি। শিবিরে কিছু নির্দিষ্ট অংশের মানুষ উপস্থিত হন কিন্তু এসএফআই ডিওয়াইএফআই রক্তদান শিবির কে রক্তদান উৎসব বা আন্দোলনে পরিণত করেছে গোটা দেশজুড়ে। চারিদিকে রক্তের যে হাহাকার এবং রক্ত নিয়ে যে কালোবাজারি চলছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজকের এই কর্মসূচি বিকল্প পথ দেখাবে।

আজকের দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুমিত দে বলেন যাদের বুকে নাথুরাম, তারা ক্ষুদিরাম কে অনুভব করতে পারবে না। ক্ষুদিরাম অনুভব করেছিল যে দেশকে এবং দেশের মানুষকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে হবে তাদেরকে সসম্মানে বাঁচার অধিকার দিতে হবে অন্যদিকে নাথুরাম, এবং তার যে সংগঠন যাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন ভূমিকা ছিল না বরং ব্রিটিশদের দালালি করেছিল সেই নাথুরাম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, যার মত পথ নিয়ে আমাদের কিছু মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু যার ডাকে আসমুদ্র হিমাচল স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল সেই গান্ধীজিকে হত্যা করেছিল। এবং তাদেরই উত্তরসূরী এই আরএসএস-বিজেপি সরকারি শাসন যন্ত্র কে ব্যবহার করে আজকে নাথুরামকে আইডল করে গোটা দেশে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরীর মধ্যদিয়ে, দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের যে দায়বদ্ধতা তাকে অস্বীকার করে একটা মনুবাদী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

ভারতবর্ষের যে বৈচিত্র ‘বিভিদের মধ্যে যে মিলন’ তাকে ধংস করে এক দেশ এক ভাষা একদল এক ধর্ম, একটা মৌলবাদী চেহারা দিতে চাইছে। সাধারণ মানুষের স্বাধীন ভাবে বাঁচার ও মত প্রকাশের যে অধিকার, তাকে খর্ব করতে চাইছে। এর বিকল্পে দাঁড়িয়ে আজকে শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর সেই আত্ম বলিদান সেই আত্মত্যাগ আজকে স্মরণ করার ও অনুসরণ করার গুরুত্ব অপরিসীম। যে বিশ্বাস করত ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান’ হলো ভারতবর্ষের শাশ্বত চেহারা, চিরন্তন ঐক্য। তিনি আরো বলেন “সারে ঝাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা” গানের রচয়িতা শেখ ইকবাল কে এবং তার সমস্ত রচনা এবং জীবনী কে এই সরকার আজকে ব্যান করে দিতে চলেছে শুধুমাত্র সে একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী হওয়ার অপরাধে। এই যে বীভৎস আক্রমণ, মত প্রকাশের অধিকারের ওপরে, দেশের শিল্প-সংস্কৃতির ওপরে নামিয়ে আনতে চাইছে এই স্বৈরাচারী সরকার তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে গেলে ক্ষুদিরামের মত শহীদদের আমাদের আরো বেশি করে অনুসরণ করতে হবে, তাদের চিন্তাধারা সমাজের সমস্ত অংশে বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে, ছাত্র যুবদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বিকল্প ভাষ্যে, কর্মসূচিতে ছিনিয়ে নিতে হবে অধিকার, রক্ষা করতে হবে দেশের সংবিধান, মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার।

একই সাথে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সংক্রমণ এবং এর প্রতিরোধে সরকারি ব্যবস্থার চরম দেউলিয়াপনার কঠোর সমালোচনা করেন। এবং ছাত্র যুবদের আহ্বান জানান এই ডেঙ্গু মোকাবিলায় এবং রক্ত তথা প্লেটলেটের যোগানে ছাত্র যুবরা যেন আরো এগিয়ে আসে। এদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফেরিওয়ালা প্রযোজিত নাটক ‘মাটি’ এবং সৌমেন রায়’র গণসংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে আলাদা মাত্রা যোগ করে। সন্ধ্যায় শিক্ষা বিষয়ক এক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এসএফআই এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৃজন ভট্টাচার্য সহ নদিয়া জেলা এসএফআইয়ের সম্পাদক এবং সভাপতি। সৃজন অনুষ্ঠানের কৃতী প্রতিযোগীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন ছোট ছোট কুঁড়ি দের ফুল হয়ে ফোটবার পথে কাঁটা হল বর্তমান শাসকরা, তারা শিশু মননে ধর্মীয় বিদ্বেষ হানাহানি একের বিরুদ্ধে অন্য কে লড়িয়ে দেওয়া এবং একা বাঁচার তত্ত্বকে প্রোথিত করতে চাইছে, এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছাত্র যুবদের লড়াই করতে হবে। উপস্থিত অভিভাবকদের স্মরণ করিয়ে দেন এই বাংলা চৈতন্যের বাংলা, হরিচাঁদ গুরুচাঁদের বাংলা, লালন ফকিরের বাংলা, নজরুল-সুকান্ত-রবীন্দ্রনাথের বাংলা একে রক্ষা করার দায়-দায়িত্ব আমাদের। তিনি আরো বলেন বিজেপি পরিচালিত একটি মিডিয়া তাদের ওয়েবসিরিজে ক্ষুদিরাম কে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে, মাস্টারদা সূর্যসেনকে লুণ্ঠনকারী ডাকাত হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল, কিন্তু ছাত্র যুবদের লাগাতার আন্দোলনে ওই সংস্থা বাধ্য হয় ক্ষমা চেয়ে ওয়েব সিরিজটি বন্ধ করে দিতে। তাই আপনারাও সাথে থাকুন যাতে যেকোনো সামাজিক অন্যায়ের প্রতিরোধে ছাত্রদের এই লড়াই আরো সুসংহত এবং সংগঠিত হতে পারে।

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্র নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জেলা নেতৃত্ব কমরেড দেবাশীষ চক্রবর্তী, রানাঘাটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্পাদক কমল ঘোষ, প্রাক্তন যুব নেতৃত্ব কৌশিক ব্যানার্জী, অয়ন মিত্র সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এই দিনের এই রক্তদান শিবিরে মোট ৩২ জন রক্তদাতা রক্ত দান করেন এবং শহীদ ক্ষুদিরাম বসু আত্ম বলিদান দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ সিকদার, রিপন সাহা, প্রিয়াঙ্কা সরকার তন্ময় সরকার রক্তদাতাদের স্মারক ও সার্টিফিকেট দিয়ে সম্মানিত করেন।

এই অনুষ্ঠানে রেড ভলেন্টিয়ারদের সংবর্ধিত করা হয় উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআই রানাঘাট লোকাল কমিটির সম্পাদক অমিত চক্রবর্তী সভাপতি সায়ন্তন রায় এসএফআইয়ের সম্পাদক দেবদত্ত সভাপতি পৃথ্বীশ রায় সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ডিওয়াইএফআই পূর্বপাড় ইউনিটের সম্পাদক ও লোকাল কমিটির সদস্য কমরেড সুনিতি মন্ডল।