![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094907.925.png)
বিপর্যয়কে আড়াল করা ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাকৃতিক কারণে প্রাচীন শহর যোশীমঠ এখন বিপন্ন। আপাতত যোশীমঠের বিভিন্ন বাড়ি শহরটির ধসে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের বিবৃতি দিতে বারণ করা হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন ডেকে আনার কারণে আসা বিপর্যয়কে লঘু করে দেখানোতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের স্নেহধন্য উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। চিন সীমান্ত এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাক্যাম্পের ২৫ থেকে ২৮ টি শিবিরে ফাটল দেখা যাওয়ায় কিছু সংখ্যক জওয়ানকে সরিয়ে নেওয়া হলেও নাকি যোশীমঠকে নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ধামি। আপাতত ফাটল ধরা ইমারত ভেঙে ফেলা নিয়ে হোটেলমালিকদের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ পরিবার পিছু দেড় লক্ষ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিয়ে সামাল দিলেও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানেন পর্যটনের সুবিধার জন্য উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশবিরোধী নির্মাণ সর্বনাশ ডেকে এনেছে যোশীমঠের। কেমন করে অস্বীকার করা হবে ইণ্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট, যেখানে বলা হয়েছে ২৭শে ডিসেম্বর থেকে ৮ ই জানুয়ারির মধ্যে যোশীমঠ ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গেছে। কোন সন্দেহ নেই, উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পরিবেশরক্ষার বিষয়ে উদাসীনতা এই পরিণতির জন্য অনেকখানি দায়ী ! বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর থেকে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে যতক্ষণ না গত ১২ ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি যতক্ষণ না তাদের রিপোর্ট পেশ করছে ততক্ষণ যেন যোশীমঠ নিয়ে কোন মন্তব্য বা বিবৃতি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কোন দপ্তরের আধিকারিকের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আওলি রোপওয়ের প্ল্যাটফর্মে ফাটল ধরেছে! গত ১৪ ই জানুয়ারি কেঁপে উঠেছে উত্তরকাশী। রিখটার স্কেলে তিনের কাছাকাছি কম্পনের মাত্রা। কিন্তু এত কম মাত্রার ভূকম্পনেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমানসে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094915.824.png)
গাড়োয়াল হিমালয়ের ভিত নড়ে গেছে। কারণ সুড়ঙ্গের পর সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হয়েছে পাহাড়ে ডিনামাইট ফাটিয়ে হরিদ্বার হৃষিকেশ দেহরাদুন থেকে উত্তরকাশী যোশীমঠ পৌঁছনোর রাস্তা সুগম করার জন্য। কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বনাঞ্চল! চারধামের অন্যতম বদ্রিনাথধামের প্রবেশ পথ যোশীমঠের বিপর্যয় আটকানোর পথ বন্ধ হচ্ছে ক্রমশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি উপেক্ষা করে চালিয়ে যাওয়া হয়েছে পাহাড়ি রাস্তার সম্প্রসারণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094920.987.png)
০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম লক্ষ্য ছিল চীন সীমান্তে যাওয়া সবক’টা ট্রেক রাস্তা— মিলাম গ্লেসিয়ার থেকে শুরু করে পঞ্চচুল্লী বেস ক্যাম্প। এরপর হাত পড়েছে চারধামের (যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ) দিকে। চারধামের রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনা। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংস করায় অল্প বর্ষণেই ধুয়ে যাচ্ছে টন টন মাটি! আলগা হচ্ছে পাথর, জমা হচ্ছে নদীখাতগুলোতে! নাব্যতা কমছে মন্দাকিনী থেকে অলকানন্দার।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094926.507.png)
তেহরি বাঁধের বিরোধিতা করায় পরিবেশরক্ষা আন্দোলনের নেতা সুন্দরলাল বহুগুণাকে কম বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়নি। ২০২১ সালে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু হিমালয়ে পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয় বুঝিয়ে দিয়েছে তিনি ভুল ছিলেন না। লকডাউনপর্বে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইআইএ ২০২০ আইন জারি করে কার্যত উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করার ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094932.603.png)
লোভের বশে ধর্মীয় পর্যটনের নামে পরিষেবার অতি উৎপাদন, বাস্তুতন্ত্রের সাথে যা কিনা সঙ্গতিহীন, এই বিপদ, এই মহামৃত্যুভয় ডেকে এনেছে। অর্থনৈতিক অধোগতি যে বিপুল অংশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে, সেই নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দেয় অলৌকিক/অতিমানবিক শক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা। এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় কর্পোরেট মদতপুষ্ট রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতা। তাই বাসস্থান, পানীয় জলের সমস্যার তুলনায় অগ্রাধিকার পায় কেবল-কারে চাপিয়ে “দেব দর্শনের” ব্যবস্থাপনা। আর এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। মোদির ‘ডবল ইঞ্জিন’ এর অবিমৃষ্যকারীতার ফল ভোগ করছে গোটা দেবভূমি। একদিকে মোদীর ‘হিন্দু জাগরণের’ স্বপ্নের মহা কর্মযজ্ঞ- চারধামের রাস্তা চওড়া করানো, অন্যদিকে চীন জুজু দেখিয়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে চীন সীমান্তে যাওয়া সবকটা রাস্তায় একটার পর একটা প্রজেক্ট। অসংখ্য টানেল। অসংখ্য ছোট বড় বাঁধ। হিমালয়ের মতো নবীন ভঙ্গিল পর্বতে। যেখানে ভূ-কম্পন যে কোনোও সময় হতে পারে। অরুণাচল থেকে কাশ্মীর অবধি যে কোনোও জায়গায়। যে কোনোও সময়ে। সরকার বাহাদুরের সর্বগ্রাসী লোভ শেখেনি ২০১৩ সালের ‘হিমালয়ান সুনামি’ থেকে। প্রায় পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল গাড়োয়াল রেঞ্জ।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094938.045.png)
সরকারের স্বল্পকালীন মুনাফার জন্যে এই ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন এতোগুলো মানুষ। ২০২১ এর রিপোর্ট বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্তত ১২৮টি ধসের মুখে পড়েছে চামোলি-যোশীমঠ এলাকাটি। ২০২১ সালে তপোবন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছেই কাদা-ধসের বন্যায় তলিয়ে গিয়ে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারমধ্যে বেশীরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক ছিলো। কিন্তু ডবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকার শিক্ষা নেয়নি। শিক্ষা নেয়নি ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ের থেকে। শিক্ষা নেয়নি ১৯৭০ সালে ধৌলিগঙ্গায় আসা হড়কা বান থেকে। যার ফলে পাতাল গঙ্গা, হেলং থেমে টাক নালা অবধি বড় ভূ-ভাগকে একদিকে হেলিয়ে দিয়েছিলো। আবার অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আরোও ‘উন্নয়ন’! আর এইসবের পরিণাম – তলিয়ে যাচ্ছে যোশীমঠ। গোটা এলাকাকে ‘সিঙ্কিং জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094943.736.png)
ধসের কারণে শহরের গান্ধী নগর, লেওর বাজার, নৃসিংহ মন্দির, সিংহধার, মনোহর বাগ, জেপি কলোনি, বিষ্ণুপ্রয়াগ, সুনীল, পরসারি, রবিগ্রাম সর্বাধিক আক্রান্ত। ছোট্ট পাহাড়ি শহরে ইতিমধ্যে ৬৮০ টি বাড়িকে বিপর্যস্ত চিহ্নিত করেছে সরকার। তারমধ্যে স্কুল-কলেজ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সব আছে। ক্ষেত,জমি, সারা জীবনের কামাইয়ে গড়া বাড়ি ধুলো হয়ে যেতে দেখতে হচ্ছে। হিমালয়ের এই তীব্র শীতে খোলা আকাশ ঠিকানা হচ্ছে অসংখ্য মানুষের। কিন্তু যোশীমঠের অধিবাসীরা বহুদিন ধরেই ভূ-ধ্বসের থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে আর্জি জানিয়ে আসছে। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন গাড়োয়ালের অফিসার এমসি মিশ্রের নেতৃত্বে এক কমিটি বলেছিলো, হিমালয়ের বিপজ্জনক ধ্বসপ্রবণ এলাকার উপরে গড়ে উঠেছে শহরটি।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094950.115.png)
২০০০ সালে গড়ে উঠলো উত্তরপ্রদেশ ভেঙ্গে নতুন পাহাড়ি রাজ্য। সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তৈরি হয়েছে রাস্তাঘাট, নতুন জনবসতি। সঙ্গে একের পর এক জলাধার। এরপর হিন্দুত্বের জিগির তুলে নরেন্দ্র ‘মোদির কর্পোরেট বন্ধুরা টাকা কামানোর জন্যে গড়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তারপর শুধু ২০২২ এই বিদ্যুতের দাম বেড়েছে চারবার। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধ উড়িয়ে এই অঞ্চলে বড় বড় হোটেল নির্মাণ তাও বটেই, ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাযুক্ত তপোবন বিষ্ণুগাঢ় প্রকল্প, যোশীমঠ শহরের নীচে চারলেনের বাইপাশ গড়া হয় ডিনামাইট দিয়ে ভারী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। এরফলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান পুরো শহরটিই হেলে গেছে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T094955.653.png)
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, যোশীমঠ যেখানে অবস্থিত সেখানে কয়েক শতাব্দী আগে জনবসতি ছিলো। সেটিও ধ্বসের কারণে শেষ হয়। এরপর সেই ধ্বস অর্থাৎ আলগা মাটির ওপর নতুন শহরটি গড়ে ওঠে। ফলে সেটি যে কোনোও সময় বিপজ্জনক। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার সেই ভঙ্গুর শহরের নীচ থেকে এনটিপিসি তপোবন বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গ গড়েছে। তাও বিপর্যয়ের এক কারণ মনে করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিকভাবে একথা প্রমাণিত পাহাড়্গুলোর মধ্যে নবীন হল ভঙ্গিল পর্বত হিমালয়ের গঠনপর্ব এখনো চলছে। আর এর ওপর গাড়োয়াল হিমালয়ের এই অংশ ধ্বস, ভূ-কম্প প্রবণ হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে দুর্বল ও ভঙ্গুর। বেশি ভার বইতে পারে না। তা সত্ত্বেও লাগাতার তৈরি হয়েছে-হচ্ছে বড় বড় প্রকল্প। মুনাফার লোভে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T095003.550.png)
কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে বাজার অর্থনীতির মূল সমস্যা হল মুনাফা লুঠের প্রয়োজনে উন্নয়নের সামনে বনাম প্রকৃতি বা পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নটাকে উপেক্ষিতই হতে হয়েছে। এতটাই নিষ্ঠুর সেই লোভ যে তুতিকোরিনে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আসা মানুষ খুন হয়েছেন বুলেটে। আর এইবার ‘বিকাশের’ নামে তীর্থদর্শনের পর্যটন শিল্পের অজুহাতে ধর্মীয় আবেগে ভর করে গোটা হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে বিপর্যয় নামিয়ে আনার, বিপজ্জনক খেলায় নেমেছে আরএসএস-কর্পোরেট চালিত বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।
EIA ২০২০ আইনের সুযোগ নিয়ে বাস্তুতান্ত্রিকভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলের খুব কাছে কোনো প্রোজেক্ট করতে গেলে আগে যেখানে নিয়ম ছিল ১০ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রোজেক্ট-এরিয়া হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পারমিশন লাগবে। সেটা ব্যাসার্ধ কমিয়ে ৫ কিমি করা হয়েছে। অর্থাৎ বাস্তুতান্ত্রিকভাবে সংবেদনশীল এলাকার মাত্র ৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে শিল্প-প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন ই যথেষ্ট। ফলত বাস্তুতান্ত্রিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি এলাকায় জঙ্গল সাফ করে একটার পর একটা প্রকল্প গড়া হবে। যেমন হয়েছিল বলসারানোর ব্রাজিলে- পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনে। কর্পোরেট বান্ধব বোলসেরোনোর বন্ধু নরেন্দ্র মোদির সরকার সবচেয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, ‘ইকোলজিক্যাল হট স্পট’ গুলোকে। এর অন্যতম হিমালয়,পশ্চিমঘাট, উপকূল অঞ্চল ইত্যাদি। সেইরকমই এখন বিপন্নতায় ভুগছে উত্তরাখণ্ডের মানুষ। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে উত্তরাখণ্ডের মানুষকে অবৈজ্ঞানিকভাবে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কড়া মাসুল তো দিতে হচ্ছেই। সাথে প্রত্যেকদিন উচ্চ বিদ্যুৎমাশুলও গুনতে হচ্ছে।
যোশীমঠের ওপরের গ্রামগুলোতে বসবাসরত বেশীরভাগ মানুষই পর্যটন ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। এই বিপর্যয়ের ফলে তাদের অঞ্চল ছাড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের বেশীরভাগের কাছে পরিচয়পত্র বা জমি-জমার কাগজ নেই। প্রান্তিক পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎও তাই অনিশ্চিত। দুনিয়া জুড়ে ঘটে চলা জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি উপকূল বা দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেঘোর হওয়ার চিত্র। এখন বাদ যাচ্ছে না হিমালয়ও।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T095010.706.png)
২০০০ সালে উত্তরপ্রদেশ ভেঙ্গে আলাদা পাহাড়ি রাজ্য- উত্তরাখণ্ডের জন্ম। কথা ছিলো ছোট পাহাড়ি অঞ্চলের সার্বিক উন্নতি। কিন্তু এই ক’বছরে দেখা যাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেহরাদুনের জনসংখ্যা, রাজ্যের প্রায় ৬০% এর বেশী। সমস্ত জনসংখ্যা ও উন্নয়ন কেন্দ্রীভূত দুন উপত্যকা, সমতলের হরিদ্বার কেন্দ্রিক। ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়, আর্থিক অনিশ্চিয়তার ফলে ওপরে পাহাড়ি জনপদ গুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর উন্নয়নের চাপ। অতীতে তেহরি বাঁধ করতে গিয়ে বহু মানুষকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে দেরাদুনে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T095014.882.png)
এরপর কেদারনাথ, যোশীমঠ বিপর্যয়। সংখ্যা বাড়ছে। কর্ণপ্রয়াগ, মুসৌরিতেও ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে। এদিকে জনসংখ্যার চাপ নিতে পারছে না দুন উপত্যকাও। ছোট পাহাড়ি নদী গুলো নালায় পরিণত হচ্ছে। কাটা পড়ছে বনাঞ্চল। ওপরে পাহাড় ভাঙ্গতে শুরু করলে, নদীর প্রকৃতি পরিবর্তন হলে আর কতোদিন থাকবে দেরাদুন, হরিদ্বার? শুধু হিমালয়ের ওই অংশই নয়, গোটা হিমালয় সংকটে। মানুষের অপরিকল্পিত উন্নয়নের প্রভাবে। উত্তর সিকিমের অতি সংবেদনশীল ভূ-কম্পন জোনের অন্তর্গত মঙ্গনে বা তিস্তার ওপরে নানা স্থানে গড়া হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাঁধ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানে বাঁধ ভাঙ্গলে সিকিম, দার্জিলিং এর অস্তিত্ব থাকবে না।
বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট বলছে , “যোশীমঠে আজ যা দেখা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই আমরা তেমন কোনও দৃশ্য নৈনিতাল, উত্তরকাশী কিংবা চম্পাওয়াতের মতো শহরে দেখতে পারি।”
যোশীমঠকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য এলাকা (subsidence zone) বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে চামোলি জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই, ধস প্রবণ এলাকা থেকে ৬০টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যোশীমঠের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন এলাকার মানুষ। পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায়, তার অঙ্ক কষছে প্রশাসনও।
কিন্তু, আতঙ্কের বোধহয় এখানেই শেষ নয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যোশীমঠের মাটি যেভাবে বসে যেতে শুরু করেছে, ঠিক তেমনটাই ভবিষ্যতে হতে পারে উত্তরকাশী কিংবা নৈনিতালেও।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/01/image-2023-01-19T095020.256.png)
মানুষের এই প্রবল চাপ তো বটেই, এছাড়াও, পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র বহু সময়েই প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখেও পড়ে। যেমন, হঠাৎ মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, ধস। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই সবই শহরগুলির ভূমিস্তরে বড়সড় রদবদল ঘটিয়ে দেয়।
কোনও ভাবে জল ঢুকে পড়ে কিংবা প্রবল কম্পনে হঠাৎ করেই সরতে শুরু মাটির স্তর। বসে যেতে শুরু করে গোটা এলাকা। মাটি বসে যাওয়ায় (land subsidence) বাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা, সর্বত্রই দেখা দিতে শুরু করে ফাটল। দিনে দিনে ফাটল আরও চওড়া হতে থাকে। বাড়তে থাকে ফাটলের সংখ্যা।
নৈনিতালের ভূ-প্রকৃতি পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞেরা শোনাচ্ছেন আতঙ্কের কথা। তাঁর দাবি, ২০০৯ এবং ২০১৬ সালের ভূমিধসের ঘটনা বিচার করে দেখা গিয়েছে, নৈনিতাল শহরের ৫০ শতাংশ এলাকাই ভূমিধসের উপরে গড়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট বলছেন, “যোশীমঠে আজ যা দেখা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই আমরা তেমন কোনও দৃশ্য নৈনিতাল, উত্তরকাশী কিংবা চম্পাওয়াতের মতো শহরে দেখতে পারি। এই সমস্ত শহরও অনেকাংশে ধসের মতো নরম মাটির উপরে তৈরি। ফলে সামান্য কম্পনেই এখানে ধস বা মাটি বসে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।