পশ্চিমবঙ্গের মুখ‍্যমন্ত্রীর গুণমুগ্ধ সাংবাদিকরা তাঁর ” জননেত্রী মমতা ব‍্যানার্জী”হয়ে ওঠার প্রধানতম কারণ হিসেবে পুরোন অভিজাত কংগ্রেসী রাজনীতির চেনা ছবির পরিবর্তন ঘটিয়ে নবীনতর প্রজন্মের ব‍্যতিক্রমী নেত্রী  শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘর ও গাড়ি থেকে নেমে গ্রামনগরের ধূলোকাদায় মাইলের পর মাইল হেঁটে মানুষের মাঝখানে মিশে যাওয়ার “প্রতিবাদী ভাবমূর্তি” গড়ে ওঠার কথা যখন বলেন তখন স্বভাবতই তাঁরা প্রিয় নেত্রীর  ব‍্যর্থতার দিকটি সযত্নে আড়াল করেন। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বঞ্চনা করার জন‍্য  কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রভাবিত করতে মমতা ব‍্যানার্জী তাঁর মাতুলালয়ের জেলা বীরভূমের বিখ‍্যাততম পূর্বসূরির মতোই সক্রিয় ছিলেন। তাঁর সাফল‍্য বলতে কেবল এটুকুই। পশ্চিমবঙ্গের কোন সমস‍্যা যা নিয়ে তিনি “আন্দোলন আন্দোলন খেলে ” সংবাদ শিরোনামে আসতেন তার কোনটিই তিনি সমাধান করেন নি। ১৯৯২ সালে হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা  বাবরি মসজিদের কাঠামো ভেঙে দেওয়ার পরে মমতা ব‍্যানার্জী সাম্প্রদায়িক শান্তি ও সংহতি প্রচারের চেয়ে বেশি সচেষ্ট ছিলেন বামফ্রন্ট সরকার বিশেষত সিপিআইএমের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন‍্য সেই সময় তিনি বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা  করার বদলে  বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনা করে কার্যত সাম্প্রদায়িক অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছিলেন যাতে তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্ব উৎসাহ  না দেওয়ায় সেই অপপ্রয়াস খুব বেশি দানা বাঁধতে পারেনি। কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা ব‍্যনার্জির হঠকারী ও উচ্চাকাঙ্খী রাজনৈতিক কর্মসূচি  ১৯৯৩ সালে “মহাকরণ অভিযান”।

সশস্ত্র অনুগামীদের দিয়ে মিছিল করিয়ে প্ররোচনামূলক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসতে বাধ‍্য করলে গুলিচালনা ও প্রাণনাশের ঘটনা ঘটে। এবং গণমাধ‍্যমের সযত্ন প্রশ্রয়ে ন‍্যক্কারজনক ঘটনাকে ভর কররেই মমতা ব‍্যানার্জী তাঁর পশ্চিমবঙ্গের “অবিসংবাদিত  লড়াকু নেত্রী “র ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন। সেই সময়  কতটা ঠিক কতটা অন্ধ ছিল গণমাধ‍্যম তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ মমতা ব‍্যানার্জীর বহুল প্রচারিত ভুয়ো ডক্টরেট ডিগ্রির খবর প্রথম দ‍্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হলেও তা নিয়ে মমতা ব‍্যানার্জী নিজের  কৈফিয়ত ” না জেনে প্রতারিত হওয়া”র তত্ত্বেই আস্থা রেখেছিল মিডিয়া। ঘটনাচক্রে মমতা ব‍্যানার্জীর প্রথম নির্বাচনে জেতার বছর ১৯৮৪ সালের নভেম্বর মাস থেকেই  পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট বিরোধিতার আইকনে পরিণত হওয়া সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তর সম্পাদনায়  কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। মমতা ব‍্যানার্জীর জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লাগতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান পত্রিকা জননেত্রী ইমেজ তৈরি করার জন‍্য প্রায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে,যা বরুণ সেনগুপ্ত ও তাঁর সহোদরা শুভা দত্তের প্রয়াণের পরেও  বহমান  আজও। জ‍্যোতি বসুকে ব‍্যক্তিগত আক্রমণ করা ও সিপিআইএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারকে ব‍্যর্থ প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্রে মমতা ব‍্যানার্জীর সুরে সুরেই সুর মেলাত বর্তমান। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে আনন্দবাজার পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য একধাপ এগিয়ে চুপচাপ ফুলেছাপ শিরোনামে বই প্রকাশ করে আনুগত্যের সাংবাদিকতার নতুন দিশা দেখান যা সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় কুনাল ঘোষের নেতৃত্বে একুশ শতকের প্রথমভাগে আরও প্রকট হয়ে ওঠে বিশেষত সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম পর্বে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ১৯৯৮ সালের ৫ই অক্টোবর থেকে অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার দশ মাসের মাথায়  শুরু হওয়া বেসরকারি প্রযোজনা সংস্থার আয়োজনে দূরদর্শনে প্রচারিত “খাস খবর “নামে একটি সংবাদ অনুষ্ঠানও মমতা ব‍্যানার্জীর ভাষ‍্যকে অনুসরণ করেই বামফ্রন্ট ও সিপিআইএম বিরোধিতা করার লক্ষ্যেই নির্মিত হত। ইতিহাসের নির্মম পরিহাসে আবাপ র তৎকালীন কার্যনির্বাহী সম্পাদক এবং দূরদর্শনের সেই বেসরকারি প্রযোজক দুজনেই চিটফাণ্ড কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে কারাবাস করেছেন।

 সে সময় “বডি শেমিং” শব্দটি চালু ছিল না গণমাধ্যমে। নয়ত যুব কংগ্রেস নেত্রী ও সাংসদ হিসাবে মমতা ব‍্যানার্জী আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগেই তদানীন্তন মুখ‍্যমন্ত্রী জ‍্যোতি বসুর নামে কুকথা বলার জন‍্য সংবাদ শিরোনামে চলে আসতেন। সিপিআইএম এবং জ‍্যোতি বসুর বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে আক্রমণ করাই প্রথম থেকে  মমতা ব‍্যানার্জীর বক্তৃতার চেনা বৈশিষ্ট্য ছিল। কংগ্রেস বা যুব কংগ্রেস বা ছাত্র পরিষদের এমন কোন জনসভা ছিল না যেখানে মমতা ব‍্যানার্জী বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকলে জ‍্যোতি বসুকে ব‍্যক্তিগত আক্রমণ করতেন না।  এবং কংগ্রেসের মধ‍্যে বেপরোয়া  নৈরাজ্যবাদী ও অপেক্ষাকৃত কম রাজনৈতিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন কর্মী সমর্থকদের আকৃষ্ট করার জন‍্য এই কৌশল অবলম্বন করেই তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। অবশ্যই বৃহৎ পুঁজি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ১৯৭৯ সালে  মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের নিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে  ব‍্যর্থ হলেও  বামফ্রন্ট সরকার বিরোধী অবস্থানের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই দক্ষিণপন্থী রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ খুঁজতে খুঁজতে প্রায় দশ বছরের মাথায় তারা মমতা ব‍্যানার্জীর রাস্তায় নেমে আন্দোলনের নামে হঠকারী ও বিভ্রান্তি তৈরি করার মধ‍্যেই তথাকথিত প্রতিবাদী ভাবমূর্তির নেত্রীকে পেয়ে গেল এবং তাঁকে সিপিআইএম বিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দিল। অবশ‍্য  কংগ্রেসের সংগঠনে তাঁর এই উত্থান বেশ জটিলতা তৈরি করেছিল কিন্তু প্রধানত সাধারণ মানুষের একাংশের মধ‍্যে      ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থী সোমনাথ চ‍্যাটার্জীকে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর কংগ্রেস প্রার্থী মমতা ব‍্যানার্জী  ইংরাজি দৈনিক সংবাদপত্র শিরোনামে উঠে এসেছিলেন “জায়ান্ট কিলার” অভিধা নিয়ে। নিজেকে নিখাদ কমিউনিস্ট বিরোধী আরও স্পষ্ট করে সিপিআইএম বিরোধী হিসাবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য করে তোলারা জন‍্য তিনি তৎকালীন  পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে গোপন  বোঝাপড়া করে চলার অভিযোগ আনেন।  এবং যুব কংগ্রেসের প্রধান সংগঠক হিসাবে সংবাদপত্রের নজর টেনে নিতে  একের পর এক বাম বিরোধী নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকেন যাকে বাজারি ” কাগজ জঙ্গি আন্দোলন ” হিসাবে চিহ্নিত করত। ১৯৮৭ সাল থেকেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী,সোমেন মিত্র সুব্রত মুখার্জির মত পোড় খাওয়া কংগ্রেসী নেতাদের পাশে তরুণ প্রজন্মের প্রধান মুখ হিসাবে মমতা ব‍্যানার্জী বাংলার রাজনীতিতে পরিচিতি পেতে থাকেন।

১৯৭৭ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ‍্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে অভাব দেখা গিয়েছিল মমতা ব‍্যানার্জীর মধ‍্যে বাম বিরোধী মিডিয়া সেই সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিল। ১৯৮৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রিগিং করে সিপিআইএম জেতে এই প্রচার করার চেষ্টা করেছিলেন মমতা ব‍্যানার্জী। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা ব‍্যানার্জী নিজের পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আরও জোরালোভাবে জাল ভোট ও রিগিংয়ের অভিযোগ আনেন। এবং  ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঐ একবারই মমতা ব‍্যানার্জী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। তারপরে নিজের রাজনৈতিক আধিপত্য নিশ্চিত করার জন‍্যই তিনি সায়ন্টিফিক রিগিং,সন্ত্রাস ইত‍্যাদি অভিযোগ মিডিয়াতে ভাসিয়ে দিলেও কার্যক্ষেত্রে সত্তরের দশকের পশ্চিমবঙ্গে আধাফ‍্যাসিস্ট সন্ত্রাসের রাজ কায়েম করার জন‍্য যাদের ব‍্যবহার করা হয়েছিল তাদের একটি অংশের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার “ডাকাবুকো”বাম বিরোধী পুরোন কংগ্রেসীদের কাজে লাগিয়ে নিজের সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয় দরিদ্র পরিবারের তরুণ প্রজন্মের বেকার যুবক যুবতীদের ক্ষোভ এবং গ্রামে সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়া পরিবারের বঞ্চনাবোধকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব‍্যবহার করা শুরু করেছিলেন। প্রয়োজনে আগুপিছু না ভেবে এলাকায় সিপিআইএম কর্মীদের সঙ্গে  সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না এমন তরুণ তরুণীদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এরই সঙ্গে সঙ্গে  ১৯৯২-৯৩ এ ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় প্রভাব দ্রুত বাড়তে থাকার পর অটলবিহারী বাজপেয়ী, এল কে আদবানি দুজনের সঙ্গেই রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়িয়ে নেন। আর এস এস বলাবাহুল‍্য সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার  সুযোগের সদ্ব‍্যবহার তিনি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওয়ের নেতৃত্বে  কংগ্রেসের মন্ত্রীসভার সদস‍্য হওয়া সত্ত্বেও  বিরোধী পক্ষের সঙ্গে “বিশেষ” সুসম্পর্ক রক্ষার করে চলতেন। তার ফলও তিনি হাতেনাতে পেয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করার সময় সেই কংগ্রেসী নেতা নেত্রীদের তিনি সঙ্গে  নিয়েছিলেন যাঁরা বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার জন‍্য এবং সিপিআইএমের জনভিত্তিতে আঘাত করার জন‍্য বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে দ্বিধা করবেন না। বলাবাহুল‍্য যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন সেই কংগ্রেসী নেতা নেত্রীদের অধিকাংশই মমতা ব‍্যানার্জীর থেকে অভিজ্ঞ ও বয়োজ‍্যেষ্ঠ হয়েও মমতা ব‍্যানার্জীর আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন কারণ তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষমতা দখলের জন‍্য যে কোন সুবিধাবাদী পদক্ষেপ নিতে পারেন।”সততার প্রতীক “- ভাবমূর্তি তৈরি করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন‍্যই। ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী  অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে  এন ডি এ সরকারের প্রথম রেলমন্ত্রী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে কিছু ট্রেন রুট চালু করিয়ে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার পরেই তিনি ২০০১ সালে তেহলকা স্টিং অপারেশনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী  জর্জ ফার্ণাণ্ডেজ ও এন ডি এ শরিক সমতা পার্টির নেত্রী জয়া জেটলির বিতর্কিত ভিডিও সামনে আসায় পদত‍্যাগ করেন। বলা বাহুল্য “বাংলা বাঁচাও” শ্লোগান নিয়ে   নিয়ে সে বছরই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেসের চেয়ে বেশি আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের  বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে  প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন মমতা ব‍্যানার্জী।

নতুন দল নিয়ে নির্বাচনী সাফল‍্যের কারণে ভোটের মাসখানেক আগে  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদ থেকে তাঁর ইস্তফা দেওয়া তখন সংবাদমাধ্যমে “ক‍্যালকুলেটিভ রিস্ক”নেওয়ার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। সেই সময় মমতা ব‍্যানার্জীর   সহযোগীদের মধ‍্যে অজিত কুমার পাঁজা যিনি মমতা ব‍্যানার্জীর সঙ্গেই অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন এবং একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন ক্ষমতার কাছাকাছি না থেকে মমতা হাঁপিয়ে উঠবেন তাঁকে ফিরতেই হবে বাজপেয়ীজির কাছে। মমতা ব‍্যানার্জী এন ডি এ তে ফিরেছিলেন  ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হয়ে এবং ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের মাস চারেক আগে কয়লা ও খনি দপ্তর পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেবল নিজের দক্ষিণ কলকাতা আসনে জয় এবং ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ত্রিশটি আসনে জয় দেখে মমতা ব‍্যানার্জী ক্ষমতায় আসার জন‍্য আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং নেতিবাচক আন্দোলন সংগঠিত করা শুরু করেন সিঙ্গুর  নন্দীগ্রাম কে কেন্দ্র করে নেতিবাচক আন্দোলন নৈরাজ্যবাদী ও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে এবং তখনই বোঝা যায় লাগাতার  মিথ‍্যা প্রচার বিধানসভা ভাঙচুর করা থেকে পুলিশ কর্মীকে খুন, ব‍্যক্তিহত‍্যায় বিশ্বাসী মাওবাদীদের সঙ্গে আঁতাত চিটফাণ্ডকে দিয়ে খবরের কাগজ এবং টিভি চ‍্যানেল চালু করিয়ে নিজের সপক্ষে প্রচার করা মমতা ব‍্যানার্জীর রাজনীতির অঙ্গ। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে নিজের পায়ে ব‍্যাণ্ডেজ বেঁধে সহানুভূতি কুড়িয়ে নিতেও তিনি দ্বিধা করেন নি  এই কারণেই।  এই পথের শেষ  দুর্নীতি ও ফৌজদারী অপরাধের অন্ধকূপে! তৃতীয়বারের জন‍্য বিপুল ভোটে জিতে সরকার গড়ার একবছরের মধ‍্যেই দুর্নীতিতে জেরবার হয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে যাওয়া সে কথাই প্রমাণ করছে।


প্রথম থেকে নিবিড়ভাবে মমতা ব‍্যানার্জীর রাজনৈতিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে একদা ঘোষিত সততার প্রতীকের দুর্নীতির পাঁকে ডুবে যাওয়া অস্বাভাবিক মনে হয় না। বেপরোয়া মেজাজে মমতা ব‍্যানার্জি প্রকাশ‍্যে নিজেদের দুর্নীতি স্বীকার করছেন এই ভাষায় “আমি দুর্নীতি করলে সিবিআই আর তুমি দুর্নীতি করলে সাধুপুরুষ?” লক্ষ্য বিজেপিতে যাওয়া তাঁর একদা স্নেহধন‍্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হলেও ভাষা ও ভঙ্গী অবশ‍্যই প্রণিধানযোগ্য।