
পাড়ার দুগ্গাপূজোর প্যান্ডেল ফি বছর বানাতেন আবাদদা; লাইট – মাইকের দায়িত্ব থাকত ভিক্টরদার ওপরে। মন্ডপের পিছনে বিড়ি ভাগ করে খাওয়ার সঙ্গী ছিলেন নির্মল বাদ্যকর আর মন্ত্রোচ্চারণ নকল করলে বাবাকাকাদের কাছে নালিশ করার হুমকি দিতেন যিনি, সেই শিবুদাকে ঠান্ডা করা যেত কেবলমাত্র “রাশিয়ান সিগারেট” ঘুষ দিয়ে ।
কয়েক মাস পরে কলেজে সরস্বতী পূজোয় রাতজাগার সময়ে ঠান্ডা পালিয়ে যেত রঘুবীর সিং -এর “সর্দার জোকসের” দমকে।
১৯৮৪ বা ১৯৯২ ও এসেছে তার মাঝে, চলেও গেছে কিছু ক্ষতচিহ্ন দিয়ে। কিন্তু পাশাপাশি থাকার ইচ্ছের সামনে সে ঘা দগদগে হয়ে উঠতে পারে নি। লুম্পেনবাজির সামনে সাময়িকভাবে কুঁকড়ে গেলেও আমাদের বাবাকাকারা তাদের মাথায় করে রাখা দূরের কথা, বেশিদিন মাথা তুলে থাকতেও দেন নি।
এমনকী, নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ হিসেবে পাড়ায় পরিচিতি ছিল যে কাকুর ,তাঁর নির্দেশে ছোটবেলায় অব্রাহ্মণসন্তান আমি প্রতি পূজোয় কলাবৌ স্নান করাতে নিয়ে যেতাম। আঙুল ওঠা দূরস্থান , কারুর কোঁচকানো ভুরুও তো দেখি নি।
খুব ছোটবেলায় দাঙ্গাও দেখেছি। কিন্তু আমার মা-ঠাকুমা কখনও মনে করেন নি , তাঁদের ধর্ম “সংকটে ” রয়েছে। একতারা হাতের গেরুয়া পোশাকের বাউল আর চামরদোলানো নানারঙের তাপ্পিদেওয়া আলখাল্লাপরা দরবেশের সঙ্গে আমার ঠাকুমা নির্ভেজাল বাঙালভাষায় গল্প জুড়তেন। জানি না, সে অপরাধে ঠাকুমাকে নরকবাস করতে হচ্ছে কি না; তবে এটা নিশ্চিত দুবেলা নিষ্ঠাভরে পূজাহ্নিক করা আমার ঠাকুমা আজ জীবিত থাকলে স্বেচ্ছায় ” টুকরে টুকরে গ্যাঙ” এ নাম লেখাতেন ।