রানাঘাট:  ১লা মে,২৩। বদলা নয়, বদল চাই বলে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল, কিন্তু সারা রাজ্যের সাথে রানাঘাট পৌরসভা তথা পৌরসভার বামপন্থী কর্মী ইউনিয়নের সদস্যরা  সম্মুখীন হয়েছিল এবং প্রত্যক্ষ করেছিল বদলা এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি। সবেমাত্র তখন ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল, প্রথম বছর বামপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা মে দিবসের অনুষ্ঠান পালন করতে পারলেও, ধীরে ধীরে শাসকদলের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখলের এবং প্রতিহিংসার দাঁত মুখ বেরিয়ে এলো, এক পৌর কর্মচারী জানালেন প্রথম প্রথম আরে ইশারায় ভালোভাবে বামপন্থী ইউনিয়ন ছাড়ার পরামর্শ এলেও, তারপর থেকে পরিষ্কার ফতেয়া –  হয় ইউনিয়ন থেকে বসে যাও না হলে তৃণমূলের ইউনিয়ন করতে হবে। আর এর বাইরে হলেই অফিস ক্লার্কদের নামিয়ে দেয়া হবে ড্রেন পরিষ্কার রাস্তা ঝাঁট  দেওয়ার কাজে ক্যাজুয়ালদের চলবে ছাঁটাই।  শুধু তাই নয় যে ক’জন এত কিছুর পরেও মাথা উঁচু করে বামপন্থী পৌর কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন করছিলেন তাদের মূল অফিস থেকে সরিয়ে বাইরে বিভিন্ন অফিসে ট্রান্সফার করা হলো আটকে দেয়া হলো প্রোমোশনও। ১৯৮০ সালের ৪ঠা জুন রানাঘাট পৌরসভার পৌর কর্মচারী ইউনিয়ন রুমের উদ্বোধন হয়েছিল বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের পশুপালন মন্ত্রী অমৃতেন্দু মুখার্জির হাত ধরে, উপস্থিত ছিলেন পৌরমন্ত্রী প্রশান্ত সুর রানাঘাটের দীর্ঘদিনের বিধায়ক এবং পৌরপিতা কমরেড গৌড় কুন্ডু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বহু ইতিহাস এবং বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাক্ষী সেই পৌর কর্মচারী ইউনিয়ন অফিসেও পড়লো তালা। তারপর সময় যত এগিয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শাসকের বেপরোয়া দুর্নীতি এবং তার প্রতিবাদ করলে শাসন শোষণ যত তীব্র হয়েছে ততো তলায় তলায় জোট বেধেছেন কর্মীরা। এরই মধ্যে এলাকায় পার্টির পক্ষ থেকে একাধিকবার ডেপুটেশন দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের কাছে পৌরসভার স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে। মূলত তাদের আন্দোলনের চাপেই পৌরসভা বাধ্য হয়েছে ক্যাজুয়াল কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করতে এবং পুরুষ মহিলা কর্মচারীদের বেতনের বৈষম্য দূর করতে। তার মধ্যে চলেছে পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি, শিক্ষিত বেকার ছেলেরা যখন রাস্তায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক সামলেছে, তখন ঘুষ দিয়ে বয়স ভাড়িয়ে রানাঘাটের শিক্ষিত যুবকদের বঞ্চিত করে বাইরের বিভিন্ন এলাকার লোক পৌরসভায় স্থায়ী চাকরির পদে নিয়েছে। দীর্ঘদিনের ক্যাজুয়াল লেবাররা পার্মানেন্ট হতে না পারলেও পিছন দরজা দিয়ে তৃণমূল নেতাদের সুপারিশে সবে মাত্র যোগদান করা কর্মীরা স্থায়ী হয়েছেন।  ফলত বেড়েছে শ্রমিক অসন্তোষ মূলত ক্যাজুয়াল লেবারদের মধ্যে, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের ডিএ নিয়ে টালবাহানা, নিয়োগ দুর্নীতিতে রানাঘাট পৌরসভার নাম জড়িয়ে যাওয়া, অনিয়মিত বেতন স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মচারীদের, বিভিন্ন ইস্যুতে বেড়েছে শ্রমিক অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ হয়েছে রানাঘাট পৌরসভায়।  প্রকাশ্যে না আসতে পারলেও ধীরে ধীরে তাঁরা সংযোগ স্থাপন করেছে পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এবং পার্টির সঙ্গে। অবশেষে কিছুদিন আগে কমরেড গৌড় কুন্ডুর 95 তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে পুনরায় খোলা হয় পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের ঘর। একদিকে যেমন আবার ফিরে  এলেন বহু পুরনো ইউনিয়নের সদস্যরা, সদ্য প্রাক্তন পৌর কর্মচারীরা, তেমনি বর্তমানে এখনো যারা শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পৌরসভার অভ্যন্তরে লাল ঝান্ডাকে ধরে রেখেছেন তারাও এলেন সামনের সারিতে, প্রকাশ্যে না এলেও বহু শ্রমিক কর্মচারী আবারো যুক্ত হলেন ইউনিয়নের সাথে।  অবশেষে আজ পয়লা মে, সকাল ১০:৩০টায় ইউনিয়ন রুমের সামনে দোতলার বারান্দায় মহান মে দিবসের শ্রমিকের রক্তে রাঙা লাল পতাকা উত্তোলিত হয়। পতাকা উত্তোলন করেন পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব কমরেড সমর সিংহ চৌধুরী, উত্তোলন শেষে শহীদ বেদীতে মাল্যদান পর্বে পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সমর গোস্বামী জানালেন প্রতিদিন নতুন করে শ্রমিক কর্মচারী থেকে শুরু করে সদ্য প্রাক্তন, প্রাক্তন পৌর কর্মচারীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে তাই আমরাও সাহস পাচ্ছি আগামী দিনে এ লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। , রানাঘাট আঞ্চলিক ট্রেড ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটির সম্পাদক সুবল দাস চৌধুরী জানান তৃণমূলের সার্বিক দুর্নীতি এবং বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ থেকে শ্রমিক কর্মচারীরা ক্রমশ লাল ঝান্ডার তলায় জড়ো হচ্ছেন,  আজকের এই ঘটনা তারই প্রমাণ। আজকের পতাকা উত্তোলনে উপস্থিত ছিলেন CITU আঞ্চলিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি সনৎ গোস্বামী, জেলা নেতৃত্ব কৌশিক ব্যানার্জি, সোমনাথ বিশ্বাস, রেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অয়ন মিত্র, কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃত্ব কার্তিক বোস কাজল রায়, নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক কার্তিক পাল সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।  

 পয়লা মে, শ্রমিক দিবসে, শ্রমিকের অর্জিত অধিকার টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে আরও এক মাইল স্টোন হয়ে থাকলো রানাঘাট পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের আজকের এই কর্মসূচি।