০২৮-Base Rate Neglect

একমাত্র ডাক্তারি শাস্ত্রে Base Rate Neglect নামক সমস্যাটি পড়ানো হয়। গোপাল সোনালী ফ্রেমের চশমা পরে। ফুরসতে গোপাল মার্কেজ বোঝার চেষ্টা করে। বার্ধক্যের ভীতি কাটাতে Memories of My Melancholy Whores পড়ছে এখন। গোপাল কে? (ক) ক্যাব ড্রাইভার, (খ) সাহিত্যের অধ্যাপক এবং (গ) রাজনীতিবিদ। সবাই বলবেন, সাহিত্যের অধ্যাপক। একবারও ভেবে দেখলেন না, অধ্যাপক বা রাজনীতিবিদের চেয়ে ড্রাইভারের স্যংখ্যা হাজার গুণ বেশী, তত বিচিত্র মানের ক্যাব ড্রইভার আছেন।

আপনারা ভাবতেই পারেন না, একজন ক্যাব ড্রাইভার অবসর সময়ে মার্কেজ পড়তে পারেন। হ্যাঁ গোপাল ড্রাইভার কেবল নয়, ও অবাক হয়ে যায় কীভাবে রাজনীতিবিদ থেকে অধ্যাপকরা দূর্নীতির সপক্ষে টেলি-কোন্দলে গলা ফাটায়। একে বলে Base Rate Neglect। যেখানে সংখ্যাধিক্যে সম্ভাবনা প্রবল সেটাই নজরের বাইরে রয়ে যায়। সর্দি থেকে শুরু করে ক্যান্সার অবধি বহু কারণে জ্বর হয়। কোন ডাক্তার প্রথমেই ক্যান্সারের পরীক্ষা করান না, ফ্লুয়ের ওষুধ দেন। ওদের Base Rate বিষয়ে শেখান হয়।

যখন আপনি শুনছেন, কেউ তৃণমূল দরদী বা সমর্থক কিংবা কর্মচারী, তারপর যদি বিশ্বাস করে তার দুয়ারে টাকা পৌঁছে দেন, সেটা Base Rate Neglect করা হল। আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, অমূক বিখ্যাত মদ কোন দেশে তৈরী হয়েছে? আপনি ফরাসী দেশের কথা বলে চান্স নিতে পারেন, কারণ বিশ্বে তাবড় মদ কোম্পানীগুলো ফ্রান্সে। সে রকম আপনি প্রতারিত হয়েছেন, শুনে কেউ অনায়াসে প্রশ্ন করতে পারেন, প্রতারক কি তৃণমূলের সাথে যুক্ত? Base Rate Neglect না করলে এটা স্বাভাবিক প্রশ্ন।

Base Rate অনুযায়ী সাধারণ পদ্মপন্হীরা হিন্দুপন্হী। কিন্তু আম্বানি-আদানিপন্হী নয়। আম্বানি-আদানি যখন দেশ কিনছে, তারাও বিচলিত হয়, তবু হিন্দুপন্হায় অবিচল থাকতে গালি খায়। মোদী-বাহিনী জানেন জনগন Base Rate Neglect করবে। বহু কোম্পানি ঢাকঢোল বাজিয়ে শুরু করে Base Rate Neglectকে গুরুত্ব না দিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে দেয়, কারণ নির্দিষ্ট বাজারে সবার সাফল্য পাবার সুযোগ থাকতে পারে না। বিচার বিবেচনা করার আগে Base Rate Neglect হচ্ছে কিনা ভেবে দেখা কর্তব্য।

০২৯-Gambler’s Fallacy

বিশ বছর আগে, ২০০২সালের ২৩শে নভেম্বর সাপ্তাহিক বর্তমানে গল্প লিখেছিলাম- মহীনের কয়েন। প্রাসঙ্গিক বলে একাংশ উদ্ধৃত করছি, “একজন চাষী আর জমিদার। দুজনের হাতে দুটো লাঠি তুলে দে। তুই বলবি চান্স ফিফটি ফিফটি। আমি নিশ্চিত, চাষীটার কপাল ফাটবেই।” এই বোধটা কুড়ি বছর আগেও ছিল, কেবল বন্ধু চরিত্রটি যে Gambler’s Fallacyর দুর্বিপাকে ঘুরছে, তা বুঝিনি। তিন বার হেড পড়লে,পরের বার টেলে বাজী রাখে। কোনটা সম্ভাবনা আর সম্ভাবনার মুখোশে বাস্তব বুঝতে হবে!

রাজনীতিতে জনগনের Gambler’s Fallacy খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কুরে। বর্তমানে শাসক দলের দূর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর দুটি মাত্র ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে ভোটাররা কোন দিকে যাবে তা বিলক্ষণ আন্দাজ করতে পেরেছে ক্ষমতাসীন দল। ফলতঃ নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে, পুলিশ প্রশাসন, স্হানীয় দুষ্কৃতিরা মানুষকে ভোটমুখো হবার সুযোগটাই দিল না। শাসক দলের কালসাপদের সাথে যুঝতে গেলে অ্যান্টি-ভেনাম ইঞ্জেকশন নিয়ে নামতে হবে। ওরা পূর্বেই Gambler’s Fallacy বুঝেছে।

Gambler’s Fallacyতে জনগন বিশ্বাস করে সামঞ্জস্যের জন্য পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বিরোধীরা সেই ধারণাকে কীভাবে কতটা ব্যবহার করতে পারবে, তার উপর নির্ভর করে। যাকে সাধারণতঃ প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বলা হয়। Gambler’s Fallacyর ফ্লোটিং ভোটারের হাত থেকে বাঁচার জন্য শাসক দল মুখ পরিবর্তনের নাটক করে। অখিলেশ যাদব, রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব, উদ্ভব ঠাকরে থেকে ভাইপো বাঁড়ুজ্যে সেনাপতি সেজে উঠে আসেন। দলের ক্রীতদাসরা খোল করতাল বাজিয়ে কার্তিক পূজো করে।

২০১১র সেই বিখ্যাত কলরব নিশ্চই মনে আছে, একবার দিয়েই দেখা যাক না। Gambler’s Fallacyর সুকৌশলে প্রচার। সেই লোকগুলো কি এখন একই কথা বিকল্প শক্তির জন্য বলছে? না। কথিত আছে দলের সুপ্রীমো জনগনের চাহিদা পড়তে পারেন। ভাইপো বাঁড়ুজ্যে তাই বিজ্ঞাপনে বলছেন, নয়া তৃণমূল হবে জনগনের মাপ বুঝে। বারো বছরে দুষ্কৃতিদের পেট যতটা ফুলেছে, গরীবের বুক ততটা বসে গেছে। দুষ্কৃতি তার পেটের জন্য, গরীব তার বুকের মাপে Gambler’s Fallacyতে এক বাক্সে সেই ভুল করবে।

০৩০-The Anchor

আমাদের গৃহস্হলী কাজের সহায়িকাকে মাসি বলি। মাসি বললেন, তাঁর ছেলের কাজ করে খাওয়ানোর বয়স হয়নি। বয়স কত জানতে চাইলে বললেন, জ্যোতি বসুর বন্যার সময় হামাগুড়ি দেয়। এই তথ্যটা Anchorএর কাজ করল। ১৯৭৮এ বন্যা হয়েছিল, তখন যদি এক বছর হয়, তবে এখন ৪৬। স্নেহশীলা মা বলছেন, এখনও কাজের বয়স হয়নি। মনে করুন, অফিসের পরীক্ষায় মিসেস চ্যাটার্জী ৬০% নম্বর পেয়েছেন। আপনি টার্গেট করলেন ৮০%, তখন মিসেস চ্যাটার্জীর বুদ্ধিমত্তা আপনার কাছে Anchor।

এক প্রমোটার তাঁর এক বন্ধুর কেনা নতুন ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলেন। সেই বন্ধু বলেন, দাম ৪০লাখ। তারপর আপনি প্রমোটারের ফ্ল্যাট দেখে বুঝলেন, অবস্হান, আয়তন বেশ ভালো। আপনি ৫০লাখ অবধি ওঠার কথা ভাবলেন। আসলে প্রমোটারের বন্ধুর ফ্ল্যাটটা ছিল Anchor। রাজনীতিতে সততার প্রতীক একটা Anchor। টালির বাড়ি, হাওযাই চটি, সাদা শাড়িতে সততার একটা ছবি রাজ্যের মানুষের মনে গেঁথে দেওয়াটাই উদ্দেশ্য। এই আঁচলের তলে কেষ্টবিষ্টুরা অপার্থিব সম্পদ ভোগ করে চলে গেল ধোঁকা দিয়ে।

ঠিক যেমন, অনেকে বলেন, আগেকার দিনের বামপন্হীরা কাঁচা পাকা দাড়িতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে বিড়ি খেতেন। ওনারাই প্রকৃত বামপন্হী। আসলে সেই Anchorটাকে সামনে রেখে আজকের ছাত্র রাজনীতির তরুণ তুর্কী নেতাকে অস্বীকার করতে চাইছেন। দক্ষিণপন্হীরা চুরি করবে, তাতে জনগন খুব বিষ্মিত হয় না, কারণ অভিজ্ঞতা সেই Anchor সৃষ্টি করেছে। গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের ফুটপাথে আপনাকে দাম করতে হবে, বড় দোকানে অনায়াসে তারচেয়ে বেশী দামে কেনা যায়। Anchor ধারণা সৃষ্টি করে।

মোদী দেশ বিক্রী করলেও ধার্মিক। দেশের সম্পদ রক্ষা করার আন্দোলন করলে দেশদ্রোহী। কত দিন চিটফান্ডের তদন্ত স্তব্ধ হয়ে আছে? ২০১৪ সাল থেকে। মোদীর রাজত্ব কালে। সেই Anchorকে সরাতে তদন্তকারী সংস্হাগুলি ছোটাছুটি করলেও, দিলীপ ঘোষের মত বঙ্গ-বিজেপি খুশী নন, কারণ মোদীর যে সেটিং-এর Anchor জনমানসে প্রতিষ্ঠিত, তার থেকে দিলীপও মুক্ত নন। Anchor প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে সহায়ক হয়, বিক্রেতা মিথ্যা Anchor সামনে ঝুলিয়ে ঠকায়। Anchor ব্যবহার করুন, ব্যবহৃত নয়।