০৩৪-Exponential Growth

বহু কূট রাজনীতির পুরষ্কার স্বরূপ রাজ্যটা হাতের মুঠোয়। সম্ভোগ স্পৃহা জেগে ওঠা স্বাভাবিক। মাস ছয়েকের মধ্যে বুঝলেন, বিশ্বস্ত সহকারী ছাড়া একা দূর্নীতি সম্ভব নয়। ছয় মাস পর পার্থ যুক্ত হলেন। লোভের পারদ বাড়ছে। পরের ছয় মাসে ২জন ৪জন হলেন। সেই ৪জন বিশ্বস্ত ব্যক্তি খুঁজে পরিধি বৃদ্ধি করে দেড় বছরে ৮জন। তাহলে আজ কত জন দূর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত হবেন? Exponential Growth বিস্ফোরণ ঘটায়। চিটফান্ডের অঙ্কের মত। উপভোক্তা নিশ্চিন্তে শুরু করেন, পরে সামলাতে পারেন না।

প্রতি ৬মাসে দূর্নীতিগ্রস্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হলে ২০১১র ১৩ই মের পর আজ কত জন দূর্নীতিগ্রস্ত আন্দাজ করুন। তাহলে CBI, EDর অধুনা কর্মকান্ডের সূত্র খুঁজে পাবেন। প্রতি দুর্বৃত্তের পরিবার, আত্মীয়ের গড়ে ৪জন ফায়দা তুললে দূর্নীতির সুফল কত জন পেয়েছে? কেন এত দূর্নীতির পরেও তৃণমূল ভোট পাচ্ছে? উত্তরটা আছ Exponential Growthএর বিস্ফোরক জটিল ধাঁধায়। আজ কোন সুপ্রিমোর হাতে লাগাম থাকতে পারে না। তাঁকে চোরদের পাশে থাকতেই হবে, কারণ সেই চোররাই তাঁর বেঁচে থাকার রসদ।

উত্তরটা হল, ৬২লক্ষ ৯১হাজার ৪৫৬জন। প্রতি চোরের উপর ৪জন নির্ভরশীল হলে সংখ্যাটা ২কোটি ৫২লক্ষ। কেষ্টাদের মাথায় হাত রাখলেই আড়াই কোটি দুর্বৃত্তের ভোট নিশ্চিত। তিনি কেন দূর্নীতির প্রতিবাদ করবেন? পার্থর টাকার স্তূপ অস্বস্তিতে না ফেললে সমস্যা ছিল না। Exponential Growth সম্পর্কে দূর্নীতিগ্রস্তরা প্রথমে অনুধাবন করতে পারে না। সুদীপ্ত সেন বা গৌতম কুন্ডুও ভাবতে পারেনি বলে প্রবল ঢেউ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে জেলে। যা হয়ে গেছে তা আর ঢাকা যাবে না, বিস্ফোরণ হবেই।

দাবা আবিষ্কারককে রাজা উপহার দিতে চান। প্রথম খোপে ১টি শস্য দানা, ২য় খোপে ১ম খোপের দ্বিগুণ, ৩য় খোপে ২য় খোপের দ্বিগুণ হিসাবে ৬৪টি খোপ পূরণ করে দিতে অনুরোধ করেন। এত ক্ষুদ্র চাহিদায় রাজা অবাক। কিন্তু যখন সেই কাজ করতে গেলেন, দেখলেন এত শস্যদানা সমগ্র বিশ্বে নেই। Exponential Growth প্রথমে লালসায় নিরসন করা যায় না। মোদীও চিটফান্ড, নারদে কাটমানি খেয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু বিস্ফোরণে তিনিও অসহায়। মমতাকে চোর লালন করে ক্ষমতায় থাকতে হবে।

০৩৫- Winner’s Curse

নিলামে যে জেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেতার জন্য জেতে। মূল্য নির্ধারণ করলে দেখবেন ক্ষতি বেশী। এই প্রবণতাকে বলে Winner’s Curse। ইন্টারনেটের যুগে গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়। যেখানে স্হানীয় সংস্হাগুলো সুযোগ পেত, সেখানে ভিন রাজ্যের প্রতিযোগী চ্যালেঞ্জ জানায়। শাহজাহান যদি টেন্ডার ডেকে সবচেয়ে কম মূল্যে তাজমহল বানাতেন, তাহলে তাজমহল হত? টেন্ডার বিজেতার মাথায় হাত। ফলতঃ সরবরাহ করা দ্রব্য বা পরিষেবার গুণমান নিম্নমুখী হতে বাধ্য। চারপাশে প্রচুর উদাহরণ আছে।

খিদিরপুরের রাস্তা সারাইয়ের বরাত যে কোম্পানি পেয়েছে, তাকে সব কাউন্সিলার তথা সরকারী কর্মীর পেট ভরাতে হয়েছে, এটাই দস্তুর। ফলে কয়েক পশলা বৃষ্টিতে এক হাঁটু জল, ভাঙাচোরা রাস্তা। যে পরিবহণ সংস্হা সেখানে পরিষেবা দেয়, তাকেও ওভারলোডেড লরি নিয়ে যেতে হয়। সেই লরি উল্টে পড়ল কাউন্সিলারের ছেলের বহুমূল্য গাড়ির উপর। চিঁড়ে চ্যাপটা। Winner’s Curseএর নমুনা এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। এর পেছনে কেবল লোভ নয়, টিঁকে থাকার মরিয়া প্রয়াস আছে।

বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সদস্যদের প্রাসাদোপম অট্টালিকা দেখে আমরা ভিরমি খাচ্ছি। যে লোকগুলো টিকিট পেয়েছে, তাকে নগদ গুণে প্রার্থীপদ কিনতে হয়েছে। তার উপর আছে ভোটলুঠের মাস্তান সেলামী থেকে পুলিশের রাহা খরচ। সময় পাঁচ বছর। বিনিয়োগ তাকে উদ্ধার করে লাভের মুখ দেখতে হবেই। দূর্নীতির চূড়ায় কখন যে সেই ব্যক্তি পৌঁছে যায়, সে নিজেও টের পায় না। কারণ, পরের দফায় টিকিট পাওয়া থেকে গুড় বাতাসার খরচ তুলে রাখতে হবে। Winner’s Curseএর যাঁতাকলে পুরো সিস্টেম নাজেহাল।

কোন বৃদ্ধ আধ্যাপক অসংসদীয় কথা বলছেন। Winner’s Curseএর নিয়মানুযায়ী তাঁকে টিঁকতে গেলে বলতে হবে। সভ্যতা এক একটা করে ইঁট এরা খুবলে নিচ্ছেন। রঘু ডাকাতের বাপ অনুব্রত মন্ডলরা কিংবদন্তী দুঃশাসন। Winner’s Curseএ দলের সবাই ছোটবড় নৃশংস অনুব্রত কিংবা পার্থ। কখনও অর্থ লালসার ভান্ডার ভরতে পারে না, সহজে গরীবের লক্ষ্মীর ভান্ডার ভরা যায়। দলের সুপ্রিমো তাই জনতার সামনে লক্ষ্মী ভান্ডার সাজিয়ে লালসার ভান্ডারের ডিমে তা দিয়ে লক্ষ লক্ষ কেষ্ট ফলাচ্ছেন।

০৩৬- Fundamental Attribution Error

সততার প্রতীক। তার সাথে মমতার ছবি। তাৎপর্য পূর্ণ বিষয়। দলীয় অসততার বিস্ফোরণ ঘটবে জেনে প্রথমেই মুখোশ পরে নেওয়া। কিংবা বাম শাসনের পতনের মুখ মমতা। পেছনে চিটফান্ড, টাটার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিনিয়োগ, সন্ত্রাসবাদীদের মদত ও মিডিয়ার সহায়তা সহ বহু বিষয় ঢাকা পড়ে গেল মমতার মুখের ছবিতে। একে বলে Fundamental Attribution Error। হিটলার একাই কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক ছিলেন? কিংবা ফুটবল খেলার স্কোরশিটে গোলদাতার নাম লেখা হয়। এসব ভুল আমরা করি।

বিমূর্ত ভাবনা কঠিন। তাই যীশুর ক্রশ, ইসলামের চাঁদ বা হিন্দুর ওঁ প্রতীক অস্তিত্ব জাহির করে। রতন টাটা কোম্পানির মুখ। কোন কোম্পানির ব্যর্থতা CEOকে সরিয়ে মেরামত করা হয়, বা ফুটবল দলের কোচ। দক্ষিণপন্হী দলের প্রার্থী সেই প্রতীককে ব্যবহার করে ভোট ভিক্ষা করে। কারণ তার নিজস্বতা জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সে জানে। Fundamental Attribution Errorর কারণে মানুষ প্রতীকে ভোট দেয়, প্রার্থী জেতে। দেখবেন, হিন্দুত্ব ভাবনার সাথে মোদীকে মিশিয়ে দেওয়ার প্রয়াস সর্বত্র চলে।

আপনি স্বর্গের কথা বললেও, সেখানে কাল্পনিক ছবি আঁকেন। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভয়ঙ্কর নরকের চিত্রণে মানুষকে ভয় দেখান। কিন্তু শ্রেণীহীন সমাজের ছবি আঁকা যায় না, বলে মানুষ সহজে বোঝে না। শিক্ষা তাকে সেই চেতনা দেয়। চেতনা বিপ্লবের জন্ম দেয়। আটপৌরে মানুষ Fundamental Attribution Errorএ রাজার ছবিতে প্রণাম করে আবার ঘরের নারীকে রাজার হারেমে পাঠিয়েও তৃপ্ত হয়। মোসাহেব চাটুকাররা রাজ-বন্দনায় Fundamental Attribution Errorএর ফাঁদে ফেলতে সর্বদা জাগ্রত ও তৎপর।

কোন মানুষকে তাঁর ক্ষমতার চেয়ে বেশী মহান ও মহৎ করে দেওয়ার প্রয়াসকে বলে Fundamental Attribution Error। Larger than life বলতে পারেন। শেয়ালকে নীল রঙ করে দিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে ফায়দা তোলার মত। সাধুকে তাই নামাবলী পরতে হয়, কারণ নামাবলীটা প্রতীক। নামাবলী খুলে নিয়ে তার প্রজ্ঞার পরিমাপ করতে গেলে হাওয়া ছাড়া কিছু নেই। প্রকৃত প্রাজ্ঞের ছবি বা নামাবলী লাগে না। Fundamental Attribution Error বুঝে ছবিওয়ালাদের প্রত্যাখ্যান করুন, কারণ ছবি কেবল ছবি হয়।