০৪৬-Hedonic Treadmill

একটা বড় অঙ্কের লটারি পেয়ে গেলে, ঠিক কত দিন আনন্দ থাকে? কিংবা মনে করুন, আপনার বন্ধু কোন দুরূহ ভবিষ্যদ্বাণী মিলিয়ে দিল, অথবা আপনার বন্ধুর মারাত্মক দুর্ঘটনার শোক? বিষয়গুলির প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ দিন থাকলেও উচ্ছ্বাস বা বিহ্বলতা খুব বেশী হলে পাঁচ/ছয় মাস স্হায়ী হয়। তাকে বলে Hedonic Treadmill। মনের মত বাড়ি করলেন। কিছু দিন বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মীদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। কয়েক দিন পরে বাড়িটা প্রাত্যহিক শোবার ঘর, খাবার ঘর, বাথরুম ছাড়া আর কিছু নয়।

২০১১সালে মানুষ বিরাট পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। তারপর থোড়-বড়ি-খাড়া। উত্তেজনা যোগাতে সরকার সামাজিক প্রকল্পের নামে ভোট কেনার দেখনদারি দানছত্রের মেলা বসিয়েছে। চিটফান্ড, নারদে দূর্নীতির চেয়েও রসালো হয়ে উঠেছিল তার সপক্ষে যুক্তি ও মোদীর সেটিং। চোর জিতল, সেটিং উচিৎ শিক্ষা পেল। মানুষ স্বল্প-মেয়াদী উত্তেজনায় ভরপুর থাকতে চায়। পার্থ-অর্পিতা বা অনুব্রতর জেল যাত্রা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। সে আনন্দ মিইয়ে যেতে যেতেই নতুন মুখ চাইছে। এটা Hedonic Treadmill।

সরকার স্বল্প-মেয়াদী তুবড়িতে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত। কখনও মোদী তালি-থালি বাজিয়ে করোনা তাড়ান বা নোটবন্দীতে সব কালো টাকা উদ্ধারের ফানুস জ্বালান। সে বাজী নিভতে ৩৭০ জ্বালিয়ে দিলেন বা রামমন্দির। সরকারী সম্পদ যে বিক্রী হয়ে যাচ্ছে, সে খবর তেমন উত্তেজনাকর নয়, জনগন ফিরেও তাকায় না। Hedonic Treadmillএ সরকার জানে আনন্দের মত ব্যর্থতা ভুলতে মানুষের বেশী সময় লাগে না। যা সামনে নড়াচড়া করছে, তাই জীবন, যা খেয়ে ফেলেছে, তা মৃত। জীবনের ভিতরে রসদ।

Hedonic Treadmill থেকে বাঁচাতে তিনটি বিষয় মাথায় রাখুন। (১) অপছন্দের বিষয় থেকে বিরত থাকুন। যেমন একঘেয়ে মানসিক চাপ। (২) সাফল্য স্বল্প মেয়াদী আনন্দ দেয়। বাড়ি, গাড়ি, প্রমোশন, প্রেম ইত্যাদি। (৩) দীর্ঘ মেয়াদী আনন্দ তাৎক্ষণিক আনন্দ না দিলেও সবচেয়ে বেশী সাফল্য দেয়। যেমন দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক যোজনা বা শিক্ষার আয়োজন। বন্ধুত্বে বিনিয়োগ করুন। ব্যর্থতা ভোলার জন্য নেশার প্রয়োজন নেই, সময় সে কাজ করে দেয়। সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে বিচার করুন।

০৪৭-Self-Selection Bias

“The government you elect is the government you deserve.”- Thomas Jefferson. একের পর এক নেতা মন্ত্রী জেলে যেতে দেখে আমরা চমকে উঠছি। যেখানে দলনেত্রী নিজে বলছেন, আগে জানলে টিকিট দিতাম না, সেখানে মানুষ চোরকে ভোট দিচ্ছে। এক বার নয় তিন বার। এটা অস্বীকার করতে পারবেন না, যে দল সর্বাধিক ভোট পায়, তারাই জেতে। তাহলে সমাজে চোরের সংখ্যা বেশী?

এটা Self-Selection Bias। সময় বদলায়, বদলায় মানসিকতা। আপনি দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই সময়ের।

খেয়াল করে দেখবেন, টিকিটের লাইনে আপনি যে কাউন্টারে দাঁড়ালেন, সেটাই সবচেয়ে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। আপনার দ্রুত বিমানবন্দরে পৌঁছাবার দরকার। সেদিন রাস্তায় জ্যাম, কিন্তু উল্টো দিকের গাড়ি বিদ্যুৎবেগে ছুটে যাচ্ছে। এসব পরিস্হিতিকে সাধারণতঃ ভাগ্যের দোষ বলে থাকি। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে হিসাব করলে দেখবেন, প্রতি ১০বারে এমন দুর্ভাগ্যের পরিস্হিতিতে পড়তে হয়। স্বাভাবিক অবস্হায় Self-Selection Biasএর বিষয়টা মাথায় আসে না। খারাপ-ভালো মিশিয়েই জীবন প্রবাহিত হয়ে থাকে।

চোর সরকার বদলাতে হলে আপনার মানসিকতা, পরিবেশ, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীকে বদলাতে হবে। কেউ যেন মেধাবী ছাত্রকে প্রতারিত না করে স্বজনকে অর্থের বিনিময়ে চাকরি না পাইয়ে দেয়। সমাজে চোরের সংখ্যা যত কমবে, ততই চোর সরকার কোণঠাসা হয়ে যাবে। Self-Selection Bias থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনীতির সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগ্রামটাও জরুরী। চোর সরকার অবশ্যই সুশীল নামক চোরদের ভাড়া করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় প্রথমে ঘটিয়ে ফেলবে।

এক যুবক আক্ষেপ করে বলল, আমার পাশের সিট খালি থাকলেও কোন সুন্দরী বসে না। অন্য সিটে চলে যায়। ভাবলাম Self-Selection Bias। নিশ্চিত হলাম, যখন শুনলাম, ওর স্ত্রীর সাথে আলাপ বাসে এবং মহিলা ওর পাশে বসেছিল। আমি পাল্টা প্রশ্ন করতে, যুবক বলল, আমি বলেছি কোন সুন্দরী বসে না। এবার বিষয়টা আরো গুলিয়ে গেল। তাহলে কি বিয়ে হয়ে যাবার পর নারী আর সুন্দরী থাকে না? Self-Selection Bias আরো নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। চোর ধরো, জেল ভরো। নতুন সরকার করো।

০৪৮-Association Bias

Mark Twain বলেছেন, একটা বেড়াল যদি গরম স্টোভের ঢাকনার উপর বসে পড়ে, তাহলে বেড়ালের অভিজ্ঞতা কেমন হবে? উত্তর যদি হয়, আর গরম ঢাকনার উপর বসবে না, তাহলে ভুল। ওই বেড়াল আর কোন ঢাকনাতেই বসবে না, তা ঠান্ডা হলেও নয়। স্টোভের সাথে বেড়ালের যে সম্পর্কটা হল তা Association Bias। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়। গরুর লাল রঙের সাথে আগুনের Association Bias সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি দিন আমরা Association Biasএ আক্রান্ত।

বাবরি মসজিদ থেকে নোটবন্দী সর্বত্র বিজেপি। চিটফান্ড, নারদ, নিয়োগে দূর্নীতি, কয়লা-গরু-বালি-মাটি পাচারে তৃণমূল Association Biasএ যুক্ত। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম বললেই মমতা। যতই শিল্পের কফিন রচিত হোক, মমতা কিন্তু অযথা এই Association Bias থেকে মুক্ত হবার চেষ্টা করেননি বা অসম্ভব ছিল। এমনকি সিন্ডিকেট, তোলাবাজী, ভোটলুঠ মানব জমিনে যে সন্ত্রাসের ভীতির জন্ম দিয়েছে সেই Association Bias থেকে তিনি মানুষকে মুক্তি দিতে চান না। ফলে আজ কেষ্টকে বীর কেষ্ট বলতে হয়।

এমনি বরষা ছিল সেদিন, শিয়রে ছিল প্রদীপ মলিন, তব হাতে ছিল অলস বীণ, মনে কি পড়ে প্রিয়? গানে, কবিতায় Association Bias খুব স্মৃতিমেদুর ভূমিকা পালন করে। দু দিন কালো ছাতা নিয়ে কোন কাজে ব্যর্থ হলে মানুষ কুসংস্কারে কালো ছাতা এড়িয়ে যায়, কিংবা লাকি জামা পরে পরীক্ষা দেয়। Association Bias মনের গভীরে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নিজেই সৃষ্টি হয়, যা মানুষ বুঝতে পারে না। এক ভদ্রলোক কদম গাছের দিকে তাকান না, তাঁর প্রথম হারানো প্রেমিকা কদম ফুল খুব ভালবাসত।

রাজনীতিবিদরা Association Bias তৈরী করতে চায়। যেমন বামামলে মমতা কাকের পালক খসে গেলেও সিবিআই ডাকতেন। এখন বারবার বলে জনমানসে সিবিআই, ইডিকে হেয় করার প্রয়াসে ব্রতী। এই তদন্তকারী সংস্হা থেকে মানুষের আস্হা যাতে চলে যায় বা কেন্দ্রীয় সরকারের আঙ্গুলি হেলনের বিষয়টি মনে পড়ে। নরেন মোদীর চিটফান্ড, নারদে সেটিং Association Bias সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। স্মৃতি রোমন্হনের জন্য হলে মধুর কিন্তু কুসংস্কারের জন্ম দিলে Association Bias পরিত্যাজ্য।