০৬১-The Law of Small Numbers

এক প্রমোদ ভ্রমণে ৮০জন পুরুষ, ২০জন নারী ছিলেন। তাদের ৮জন পরষ্পরের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। প্রমোদ ভ্রমণ সংস্হার মালিক পরের বছর ঘোষণা করলেন, ১০%পুরুষ ৪০%নারীর সাথে মিলিত হবার সুযোগ পেলেন। এটা The Law of Small Numbers। পরে বহু পুরুষ ভ্রমণে আগ্রহী হল। কিংবা ধরা যাক দুই ছাত্র। একজন ৬০পায়, অপরজন ৩০। শিক্ষকের কুশলতায় প্রথম জন ৮০পেল, দ্বিতীয় জন ৬০। খারাপ ছাত্রের বৃদ্ধি ১০০%হলেও ভালর বৃদ্ধি মাত্র ৩৩%। The Law of Small Numbers।

সরকারী পরিসংখ্যানের ধরণ এরকম। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, দেশের বেকার বৃদ্ধির হার ৪০% হলেও এই রাজ্যে বেকার ৪০% কমে গেছে। কোন শিল্প হয়নি, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি, কেবল কয়লা, গরু, বালি পাচার করে ৪০% বেকার কমে গেল? দেখবেন, এম্প্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের অফিসটাই এই সরকার তুলে দিয়েছে। ফলে বেকারদের নথিভুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তারমধ্যে লক্ষাধিক বেকার ভিন রাজ্য এমনকি ভিন দেশে নিম্নমানের কর্মসংস্হান জুটিয়ে খেয়ে বাঁচছে। তাই যা খুশী অঙ্ক বললেই হল।

দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হারের অঙ্কটাও সেরকম। গত বছর তলানিতে ছিল। সেই তুলনায় কত শতাংশ বাড়ল? সেখানেও জল। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে বলছেন অন্ততঃ ৭.৫% বাড়বে, আর বিশেষজ্ঞদের ধারণা ৭% কিংবা কম। যে ছাত্র দিনে ২ঘন্টা পড়ে, সে সময় দ্বিগুণ, চার গুণ করতেই পারে, কিন্তু যে ১৩ঘন্টা পড়ে তার পক্ষে দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়। তৃণমূল বলছে তাদের দলে ৯৯% চোর নয়। বিষয়টা ছিল সততার প্রতীকের অর্থাৎ ১০০%। আসলে বলতে চাইছেন ৯৯%চোর নেতারা এখনও ধরা পড়েনি।

মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ করেন, কখনও সংখ্যাগুলো যোগ করবেন না। দেশের জনসংখ্যা ফুঁড়ে ছাড়িয়ে যাবে। প্রেসিডেন্সি কলেজের পরিসংখ্যান রাজ্যের মেধা চিত্র দেবে না। এটাই The Law of Small Numbers। কোন গ্রামের পাঠশালার পরিসংখ্যানও রাজ্যের সার্বিক প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। সরকারের তাঁবেদার পরিসংখ্যানবিদরা বোকা বানাবার জন্য বিভ্রান্তিকর ফেক চিত্র উপস্হাপিত করেন। সামগ্রিক ভাবে অগ্র-পশ্চাৎ চালচিত্র বিবেচনা করে এবং অন্যান্য পরিসংখ্যান তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

০৬২-Expectation

তৃণপন্হীরা বাংলার উন্নয়নের জন্য মমতাকে ভোট দেয়নি, বামফ্রন্টকে পরাজিত করতে একত্র হয়েছে। ক্লাবে চুল্লুভাতা, সিন্ডিকেট, তোলাবাজী থেকে ধর্ষণের সুযোগ ওদের Expectation ছাড়িয়ে গেছে, ফলে তৃণপন্হীরা খুশী। আপনারা যদি ভাবেন, পার্থ-অনুব্রতর সম্পদ বা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে যোগ্য প্রার্থীদের রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে ধর্ণা দেখে কাঁদতে কাঁদতে তৃণপন্হীরা মমতার বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তা ভুল। তৃণপন্হী মানুষের মস্তিষ্কের গঠন আলাদা। আপনার Expectation, তৃণপন্হীর Expectation এক হবে এমন নয়।

নরেন মোদীর Expectation বাংলায় ক্ষমতা দখল করা, কিন্তু এতটা ঝাঁপানো নয়, যে মাঝখান থেকে বামেরা পুনর্দখল করে নেয়। এই Expectation মানুষের ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের মূল কারণ। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর এক বাড়িতে আনন্দ হচ্ছে কারণ ওদের সন্তান ৪০% নম্বর পেয়ে পাশ করে গেছে। পাশের বাড়ি স্তব্ধ কারণ সন্তান ৯৫% নম্বর পেয়েছে কিন্তু প্রথম ১০জনের তালিকায় নেই। কোন সাংবাদিক এসে কড়া নেড়ে প্রশ্ন করেনি, রায় ও মার্টিনের সহায়িকা পড়েছে কিনা। পুরোটা Expectation নির্ভর।

Expectation একটা বিমূর্ত ভাবনা হলেও শরীর ও মনে গভীর কাজ করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক সময়ে রোগীকে ধন্বন্তরী ওষুধ বলে মিথ্যা ওষুধ খাওয়ানো হয়। Placebo Effectএ রোগীর সুস্হ হবার নমুনা আছে। একটি স্কুলে বিখ্যাত সংস্হা বাছাইয়ের নামে এলোমেলো ভাবে কিছু ছাত্রকে প্রতিভাশালী বলে চিহ্নিত করে। পরের বছর দেখা যায়, সেই ছাত্রেরা আগের বারের চেয়ে ভালো ফল করেছে। একে বলা হয় Rosenthal Effect। কাছের মানুষের ভালবাসা ও Expectationএ হতাশাগ্রস্তও জীবনে ফেরে।

অনেক সময়ে কাছের মানুষ পাশে না দাঁড়ালেও অচেনা ব্যক্তি উপকার করেন। দুজনেই মানুষ। তাহলে তফৎটা কোথায়? ফারাক আপনার Expectationএ। যে দল শূণ্য হয়েছে সেখানে মানুষের Expectation শূণ্য, কিন্তু আপনার সংগ্রাম ও Expectation শূণ্য নয়। সেখানেই আগামীকালের সাফল্যের চাবিকাঠি। মনে রাখবেন Expectationএর উপর ফল করলেই আপনি সফল। বিজেপি ৭৭টি আসন জিতে ২০০র Expectationকে টপকাতে না পেরে ব্যর্থ। সেতারের তারের মত Expectationর tuning অত্যন্ত জরুরী।

০৬৩-Simple Logic

চোরকে ভোট দেব না। এটা Simple Logic। বাস্তবে চোর ভোটে জেতে। আপনার Simple Logicএ ব্যখ্যা করা গেল না। আসলে Simple Logic অনুভূতি আর যুক্তির মিশ্রণ। সাধারণতঃ আবেগ, অনুভূতি অনেক বেশী হয়, ফলে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। আবার কিছু মানুষ আবেগ, অনুভূতিকে পাশে সরিয়ে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এটা নির্ভর করে চারিত্রিক গঠন ও শিক্ষার উপর। আপনি কোন সমস্যায় পড়লে আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত মস্তিষ্ক দখল করে নেয়। ধীরে তাকে যুক্তির জাল দিয়ে অপসারিত করাটাই মুন্সিয়ানা।

(ক) এক ব্যক্তি ১০০কিমি গতিতে অফিস গেল ও ৫০কিমি গতিতে ফিরল। তাঁর গড় গতি কত? (খ) কচুরিপানা প্রতিদিন বংশবৃদ্ধি করে দ্বিগুণ হয়। ২সপ্তাহে পুকুরটা ভরে গেল। অর্ধেক পুকুর কত দিনে ভরবে? (গ) একটি বল ও মার্বেলের দাম একত্রে ১টা ১০পয়সা। বলটা মার্বেলের চেয়ে ১টাকা দামী। মার্বেলের দাম কত? (ঘ) ৫মিনিটে ৫টি মেশিন ৫টি শার্ট তৈরী করে, ১০০টি মেশিনে ১০০টি শার্ট কত মিনিটে তৈরী হবে? উত্তরগুলো লিখে ফেলুন। আপনার মস্তিষ্ক চটজলদী সব কিছু উত্তর দিয়ে দিয়েছে।

একে বলে Cognitive Reflection Test বা CRT। এই পরীক্ষা বলে দেয় আপনি অনুভূতি ও আবেগে সিদ্ধান্ত নেন না Simple Logic ব্যবহার করেন। ডান বা বামপন্হী নির্বিশেষে প্রায় সব মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা তাৎক্ষণিক সুখ-দুঃখ বা স্বপ্নে উদ্বেলিত হওয়া। তারা বিপক্ষের Simple Logic বুঝতে পারে না, ফলে আশাহত হয়। দাবা খেলার প্রথম নিয়ম বিপক্ষকে বুঝে নেওয়া ও সেই মোতাবেক ঘুঁটি সাজানো। যারা আবেগে বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তাদের সাফল্যের হার কম। Simple Logic সঠিক উত্তর দেয়।

(ক) সহজ উত্তর ৭৫কিমি প্রতি ঘন্টায়। (খ) ১সপ্তাহ। (গ) ১০পয়সা এবং (ঘ)১০০মিনিট। এবার যুক্তি দিয়ে ভেবে দেখুন। (ক)ওই ব্যক্তির ফিরতে ২ঘন্টা লেগেছে। ফলে ৩ঘন্টায় ২০০কিমি। গড় গতি ৬৬.৬ কিমি প্রতি ঘন্টায়। (খ) ১৩ দিনে অর্ধেক হলে ২ সপ্তাহে বা ১৪ দিনে পুরো হবে। (গ) ৫ পয়সা। (ঘ) ৫ মিনিট। এটা কিন্তু দাদাগিরির গুগলি নয়, নিপাট যুক্তি-তর্ক। আপনি নিজেই নিজেকে বুঝলেন, কতটা ভাবপ্রবণ ও কতটা যুক্তিবাদী। Simple Logic কিন্তু সরল নয়, Simple Logic ব্যবহার করলে Simple।