০৭৩-Primacy and Recency Effects

তৃণমূলের নীতি দূর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, রাজনৈতিক সংগ্রামে ক্ষমতায়, দলে গণতান্ত্রিক নীতি আছে, কিছু দূর্নীতিগ্রস্ত নেতা সিবিআই তদন্তের মুখে, মমতা-মোদীর সেটিং তৃণমূলের দূর্নীতি আড়াল করে ক্ষমতায় টিঁকিয়ে রেখেছে, সাম্প্রদায়িক। বিজেপির নীতি সাম্প্রদায়িকতা, মোদী-মমতা সেটিং তৃণমূলের দূর্নীতি আড়াল করে ক্ষমতায় টিঁকিয়ে রেখেছে, কিছু দূর্নীতিগ্রস্ত নেতা ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার, দলের ভিতর গণতান্ত্রিক ভিত্তি আছে, দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে ক্ষমতায়, দূর্নীতিতে না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।

তুলনামূলক ভাবে কোন দল ভালো? বেশীর ভাগ মানুষ বলবেন, তৃণমূল ভালো। নোভোট্টু পদ্ম শিবির। কিন্তু উভয় দলের ক্ষেত্রে একই কথা বলা হয়েছে। তফাৎটা কেবল বিন্যাসে। তৃণমূলের ক্ষেত্রে মিথ্যা হলেও ভালো কথাগুলো আগে বলা হয়েছে, বিজেপির ক্ষেত্রে পরে। একে বলে, Primacy Effects। যে ধারণা মানুষ প্রথম দর্শনে করে থাকে। তৃণমূলের দাবী কেন্দ্র প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। বিজেপির বক্তব্য সব রাজ্যকে সমান ভাবে প্রাপ্য বকেয়া দেওয়া হয়। উভয় সরকার পূর্ণ নথি নিয়ে মানুষের সামনে বসে না।

মোদী-মমতা গোপনে বকেয়া সম্পর্কে কী বলেন, কেউ জানে না। তরজা শোনে। কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের অর্থ সচিবরা কখনও স্পষ্ট করেন না। যদি রাজ্যের হাতে টাকা না থাকে তাহলে কর্মচারীরা ন্যায্য প্রাপ্য ডিএ থেকে বঞ্চিত কেন? পুজোর চুল্লুভাতা কেন? মানুষ আগে পেটের কথা ভাবে, নাকি ব্যাঙ্কক, দুবাই থেকে সোনা আনে? ফলে রাজ্য সরকারের উপর যে ধারণা ধাপে ধাপে স্পষ্ট হয় তা Recency Effects। অর্থাৎ রাজ্য সরকারের আচরণ যুক্তিহীন অবিবেচক punch line উপহার দিচ্ছে। তদুপরি মোদী ভালো।

যে মোদী বিশ্ব ক্ষুধা তালিকার ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতকে ৫৫থেকে ১০১এ নিয়ে গেছেন সেই ব্যক্তি মমতার সাথে সেটিং করে দূর্নীতির তদন্ত করেননি বলে ভালো? টাকার মূল্যে সর্বকালীন গভীর পতর, বেকারত্ব, মূদ্রাস্ফীতির বিস্ফোরণ। তাহলে মোদীর Recency Effects কী বলছে? সর্বদা Primacy and Recency Effects মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। আপাতদৃষ্টিতে অনুদানের উন্নয়নের ঢাক বাজিয়ে দুর্বৃত্তরা একে এপরকে ভালোর মুখোশ পরাচ্ছে। উন্নয়ন বা বিকাশ প্রতিদিন নিশ্চিত রসাতলের দিকে এগোচ্ছে।

০৭৪-Not Invented Here Syndrome

আমার কবিতা বোঝ না? শেক্সপীয়র পড়নি? আমার ছবি সমালোচনা? ভ্যাটিকান সিটি যাওনি? আমার সুরারোপে ব্যাঙ্গ? বিঠোফেন শোননি? এই ব্যাধি Not Invented Here Syndrome বা NIH। অ্যাই বুঢ্ঢা, তুই চুরি করতে চাস, কচি মেয়ের সাথে স্ফূর্তি করতে পরাণ কান্দে? তাহলে বল কবিতা বিতান যেন পাখির কলতান। শুভপ্রসন্ন, কাশ ফুলের মত দাড়ি। ওটা দিয়ে বালিশ বানাই। আমি অপ্রসন্ন হলে বিষন্ন হয়ে যাবি। নীলকান্ত, ফালতু গান গেয়ে কী হবে? আমার গান গাইবি, তোকে মন্ত্রী বানিয়ে দেব।

আজকের বাংলায় NIH Syndrome খুব পরিচিত। গোঁফ চুরির বড়বাবুকে সবাই মিলে বুঝিয়ে বলেছিল, সামনে ধরে আয়না। সরকারে আয়না ধরার ভদ্রলোক নেই, বন্ধ হবে মায়না। এক ভদ্রলোক ইউ-টিউব দেখে চিংড়ির ধিংড়ি বানিয়েছেন। বউ মুখে দিয়ে আঁতকে উঠেছেন, কিন্তু ভদ্রলোকের রেসিপি খারাপ লাগে নি। পরদিন বউ চিংড়ি পরিবেশন করলেন। ভদ্রলোক মুখে দিয়েই চিৎকার করলেন, এটা তোমার রান্না? কিস্যু জান না। বউ হেসে বললেন, তোমার গতকালের চিংড়ির ধিংড়ি স্রেফ গরম করে দিয়েছি।

আমাদের ভাবনায় আমরা এত মশগুল হয়ে যাই যে সমালোচনা শুনতে চাই না। NIH Syndromeকে অধঃস্তনরা যখন ব্যবহার করে, তখন সেই সংস্হায় লালবাতি জ্বলে। মানুষ পদাধিকার ভুলে ঘোষণা করে যেন নাসার আবিষ্কারের কথা। কাশ ফুলের বালিশ আবিষ্কার করেন, কচুরিপানার ব্যাগ, থালা। কোন অর্থনীতিবিদ তো মুড়ির সাথে একটু বাদাম, ছোলা মিশিয়ে বিক্রী করে কোটিপতি হবার স্বপ্ন বিক্রী করে। জেল হয় বেচারা সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুন্ডুর। NIH Syndromeর সীমানা বলে কিছু নেই।

চা আর মায়ের ঘুগনি বেচে যদি কোটিপতি হওয়া যেত, তাহলে ভাইপো সমাজসেবী হয়ে কোটিপতি হতেন না। NIH Syndromeর রোগীদের সবাই চেনে তবু ধান্দাবাজ দুষ্কৃতিরা চুপ করে থাকে। অসুস্হ ব্যক্তির আশেপাশের মাসোহারা প্রাপ্ত খোসামুদেরা আগুনে ঘৃতাহূতি দেয়। এই সমস্যা কম বেশী প্রায় সমস্ত আবেগ নির্ভর মানুষের আছে, রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় তার প্রভাব জনসাধারণকে পথে বসিয়ে দেবে। এরা পথে যেতে যেতে কেবল নিজের ছবি দেখতে চায়। তার চেয়ে বিশ্বসুন্দরী হয় বলে বিশ্বাস করে না।

০৭৫-The Black Swan

জানা অজানার তিনটি অংশ। (ক) আমরা জানি, জানি, (খ) আমরা জানি, জানি না, (গ) আমরা জানি না যে আমরা জানি না। ক-এর চেয়ে খ অনেক বড়, আর গ ব্রক্ষ্মান্ডের মত ব্যাপক। যেহেতু আমরা জানি না তাই মাথা ব্যথা নেই। ইউরোপিয়ানরা সর্বদা হাঁসকে বংশ পরম্পরায় সাদা দেখেছে। অষ্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর প্রথম যেদিন কালো হাঁস দেখল, সেটা ইতিহাস। অসম্ভবের বাস্তবায়নকে বলে The Black Swan। জীবদ্দশায় সাম্প্রতিক উদাহরণ, করোনা, নোটবন্দী, ২০০৮এর বিশ্বমন্দা।

ইরাণের মহিলারা হিজাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন ভাবা গিয়েছিল, কিংবা শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হয়ে যাওয়া? ইউক্রেনের মানুষের কাছে রুশ আক্রমণ The Black Swan। পঞ্চাশ বছরের আশেপাশে যত মানুষ আছে, তাদের বৃহদাংশ দূর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে ভোট দেন। কারণ জন্মাবধি তারা বাম জামানা দেখেছে। অগভীর মানসিকতার বহু মানুষ সেই জামানার ভারিক্কি সংস্কৃতিতে তেমন কল্কে পায়নি। তারা যেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, বেমক্কা কথার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়ের সুযোগ এসেছে, বড় পাওয়া।

অনেকে ৩৪বছরের কথা অহরহ বলেন। মূলতঃ যাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ভাবে রোয়াকে বসে গুন্ডামি করা ছেলেটা কাউন্সিলার হয়ে গেল তাদের কাছে The Black Swan। সেমিনারে কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগে প্রগতিশীল বইগুলোর হাত থেকে রেহাই। পূজোর সময়ে ঢাকের বাদ্যির সাথে না নেচে বুকস্টল দেওয়া অপরিচিত সংস্কৃতির থেকে টাক ডুমা ডুম ডুম ডুমা ডুম ডুম মুক্তি। তখন ওরা দূর্নীতি দেখছে না, অর্থনৈতিক ভরাডুবি নিয়ে ভাবছে না, পাচারে নজর নেই। নিজের উদোম জীবন সামলাতে ব্যস্ত।

যে RSS বুঝিয়েছে, কম্যুনিষ্টদের জন্য হিন্দু রাষ্ট্র অধরা থাকছে। সেই RSSর দুর্গা জুজু দেখিয়ে মুসলিম ভোট একত্রিত করছেন মমতা। অনুদানের সরকার The Black Swanএর স্বপ্নের মোড়ক। মূলতঃ যে অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা। মানুষ গোষ্ঠী কেন্দ্রীক। ওরা সত্যসাধন চক্রবর্তীর মত শিক্ষিত মার্জিত মানুষকে ব্রাত্য করে পার্থ চ্যাটার্জীর মত নারীলোভীকে আত্ম-সর্বস্ব আত্মার নিকটস্হ মনে করছে। The Black Swanএর মনস্তত্ত্ব জনমানসে দূর্নীতি, চোরাচালানের চালচিত্রকে অটুট রাখছে।