এক ইউনিট বিদ্যুৎ ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে মনে মনে তৈরি হোন । মাঝরাতে আপনার স্মার্ট মিটারের একাউন্টে ব্যালেন্স ফুরিয়ে গেলে অন্ধকারে থাকতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত হোন । সন্ধ্যা-রাত্রিবেলা ঘরে আলো পাখা চালালে দিনের বেলার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ মাশুল দিতে রাজী হয়ে যান । কৃষিকাজ করলে পাম্পের জলের আশা ছেড়ে দিন । মাসে ২-৩০০০ টাকা বিল দিতে না পারলে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগের যুগে ফিরে যান, অন্ধকারে ফিরে যান ।

অথবা, রাস্তায় নামুন, নিজের বিদ্যুতের অধিকার রক্ষা করতে ; প্রতিবাদ করুন বহু কষ্টে গড়ে তোলা স্বাধীন ভারতের সরকারী বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে আদানি, টাটার হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ; গর্জে উঠুন আপনার ঘরে, আপনার টাকায়, আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসাতে এলে। আর আসুন আমরা একসাথে মিলে জানার ও খোঁজার চেষ্টা করি সরকারী বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এবং আমাদের মতো সাধারণ গ্রাহকের ওপর হামলার স্বরূপ ও প্রতিরোধের উপায় ।   

ভারতের সরকারী বিদ্যুৎ শিল্পের ওপর আক্রমণের প্রেক্ষাপটঃ ভারতের সরকারী বিদ্যুৎক্ষেত্র গত কয়েক দশক ধরেই ভয়ানক আক্রমণের মুখে । আজকের দিনে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইন্সটলড ক্যাপাসিটি ৪,১৮,০০০ মেগা ওয়াট, যার ৫০ শতাংশেরও বেশি চলে গেছে আদানি, টাটার মতো প্রাইভেট কর্পোরেট সংস্থার হাতে । যে ৫০% কোনোক্রমে এনটিপিসি, এনএইচপিসি বা রাজ্য সরকারী সংস্থাগুলোর হাতে টিকে রয়েছে, তারও ৫০% শেয়ার চলে গেছে প্রাইভেট সংস্থার হাতে । 

মোদী জমানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রের ভয়াবহ চিত্র – বোঝা বেড়েছে কয়লার ওপরঃ মোদী জমানায় রাজ্য সরকারী বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর অবস্থা হয়েছে ভয়াবহ । কেন্দ্রীয় সরকার চাপিয়েছে একের পর এক জনবিরোধী নীতি – কয়লার ওপর ১৪% রয়্যালটি ট্যাক্স, জিএসটি, জিএসটি কমপেনসেশন সেস, বিশাল পরিমাণ রেলওয়ের ফ্রেইট চার্জ বসিয়েছে মোদী সরকার। জোর করে কয়লা বিদেশ থেকে আমদানী করার ফরমান জারী করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার ওপর। ফল হয়েছে বিদ্যুতের ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধি। লাভ হয়েছে আদানীর, বোঝা বেড়েছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ওপর।

অপ্রচলিত শক্তি বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ, যাকে নাকি বলা হচ্ছে পৃথিবীর বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ, তা হুহু করে বাড়ছে আমাদের দেশে। ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই শক্তির প্রায় ১০০% প্রাইভেট সংস্থার হাতেই রয়েছে। বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশনের যে হাই টেনশন লাইন, তাও প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে মোদী সরকার, সোজা কথায় আদানির হাতে। আর এতসব কিছুর পর, কেন্দ্রের সরকারের নজর পড়েছে সরকারী বিদ্যুৎ বন্টন ক্ষেত্রের ওপর।  

দেশের সরকারী বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ওপর হামলাঃ দেশের বিদ্যুৎ কর্মীদের তীব্র বিরোধ স্বত্ত্বেও ২০০৩ সালে পাশ হয়েছিল নতুন বিদ্যুৎ আইন। নিঃসন্দেহে এই আইন দেশের বিদ্যুৎ বন্টন ক্ষেত্রকে পুরোপুরি বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার সব রাস্তাই খুলে দিয়েছিল। এই আইনে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র-রাজ্যের যুগ্ম তালিকা থেকে সরিয়ে রাজ্যের একার কাঁধে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি পারস্পরিক ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কথাও পাশ হয়ে গিয়েছিল।

ভারতের বিদ্যুৎ কর্মীদের একজোট লড়াই এবং বামপন্থী সাংসদদের হস্তক্ষেপের ফলে ২০০৭ সালে এই আইনে সংশোধন করে পারস্পরিক ভর্তুকি বজায় রাখা হয়, আর কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের ওপরেই ফিরিয়ে আনা হয় গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের দায়িত্ব। আমাদের দেশে এতো ঘরে যে আজও বিদ্যুৎ আছে তার একমাত্র কারণ হলো এই আইনের সংশোধন। 

মোদী সরকারের বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল – বিদ্যুৎ শিল্পের ওপর আক্রমণের এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টাঃ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার রাজ্য সরকারী বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা ধ্বংস করে বেসরকারী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশ করার চক্রান্ত শুরু করে। কিন্তু দেশজোড়া বিদ্যুৎকর্মী ও সাধারণ জনতার আন্দোলনের চাপে এখনও এই বিল সরকার পাশ করতে পারে নি। এই বিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো লাভজনক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের অধিকার বেসরকারী কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়া। মনে রাখা দরকার, এই বিদ্যুৎ বিতরণের পুরো পরিকাঠামো তৈরি করেছে রাজ্য সরকারী সংস্থা ও তাতে কর্মরত অগুন্তি শ্রমিক কর্মচারীরা।  এর সাথে সাথে এই বিলের মাধ্যমে বিদ্যুতের মাশুল ঠিক করার মেকানিজম পুরোপুরি বাজারের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ - এর যে ধারাগুলিতে রাজ্য সরকারের ন্যূনতম ক্ষমতা ছিল তা থাকবে না। সব ক্ষমতা কেন্দ্রিভুত হবে কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের গঠিত সংস্থার হাতে।

পারস্পরিক ভর্তুকি (ক্রস সাবসেডি) ব্যবস্থায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষরা বিদ্যুৎ বিলে কিছু ছাড় পেত। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, যাদের বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষমতা আছে, তাদের কাছ থেকে যে রেটে বিদ্যুতের দাম নেওয়া হয় তুলনামূলক ভাবে তার তুলনায় যারা আর্থিক ভাবে দুর্বল তাদেরকে কিছুটা কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে পারস্পরিক ভর্তুকি। কেন্দ্রীয় সরকার তা সম্পুর্ন ভাবে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে। ফলে বাড়বে গরীব মধ্যবিত্তদের বিদ্যুতের দাম।

সরকারী বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ওপর শেষ আঘাত - রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কীম (আরডিএসএস):  বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশ না করতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার এক ভয়ানক স্কীম নিয়ে এসেছে ২০২২ সালের জুলাই মাসে – রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কীম (আরডিএসএস)। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সরাসরি নির্দেশে নিয়ে আসা এই স্মার্ট মিটারিং স্কীম জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নির্লজ্জভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে সব চালু আর্থিক সহায়তা স্কীম। ৩ লক্ষ কোটি টাকার এই স্মার্ট মিটারিং স্কীমের ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার আর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ওপরে।  

কী হবে আরডিএসএস লাগু হলে? এই স্কীম লাগু হলে ধাপে ধাপে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে সব ধরনের ক্রস সাবসিডি তুলে দেওয়া হবে। আজকে রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের ফলে কি পরিমাণ দাম বেড়েছে তা সকলেরই জানা। একই ঘটনা ঘটতে চলেছে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে।

কস্ট রিফ্লেক্টিং টারিফের নামে যথেচ্ছ বিদ্যুৎ মাশুলের বোঝা বাড়ানো হবে। এখনই বাজার থেকে বিতরণ সংস্থাকে ২০-৩০-৫০ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। এই স্কীম অনুসারে বিদ্যুৎ গ্রাহককেও এই দামেই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।

সরকারী বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার হাত থেকে লাভজনক এলাকা ছিনিয়ে নিয়ে বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পথ বানানো হবে। আদানি, টাটা বিদ্যুতের ব্যবসা করবে লাভজন এলাকায় আর বাকি রাজ্য জুড়ে লাইন বসানোর কাজ করতে হবে সরকারী সংস্থাকে।

মিটার বসানোর বিপুল আর্থিক বোঝা পড়বে জনগণের ওপরঃ  গোটা দেশজুড়ে সমস্ত গ্রাহকের ঘরে গ্রাহকদের নিজস্ব টাকায় বসাতে বাধ্য করা হবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার। এই মিটারের আয়ু সর্বোচ্চ ৭-৮ বছর। মিটারের দাম ৮০০০-১২০০০ টাকা।  বিদ্যুতের বিলের মধ্যে দিয়ে প্রতি মাসে তা আদায় করা হবে। মিটার ভাড়া বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মাসিক ১০ টাকা ছিল। প্রীপেড স্মার্ট মিটারের ভাড়া বাবদ প্রায় ১০০ টাকা গুনতে হবে গ্রাহককে।

মিটার ইন্সটলেশনের পরে এখনও পর্যন্ত দেশের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ – বেড়ে গেছে বিলের পরিমাণ অনেকটা। বিশেষ করে কৃষি গ্রাহক ও দরিদ্র গ্রাহকদের ওপর বাড়ছে বোঝা। 

জনগণের টাকায় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ফিডার ও ট্রান্সফর্মার মিটারও বসানো হবে এবং মিটার রিডিং, বিলিং –এর সাথে যুক্ত গোটা দেশের লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ কর্মীর কাজ চিরতরে চলে যাবে।  এদের এক বড় অংশ ঠিকা শ্রমিক। 

টাকা ফুরোলে নিজে থেকেই কেটে যাবে বিদ্যুতের লাইন ! স্মার্ট মিটার বসানো এজেন্সি নির্ধারণ করবে কখন কোথায় বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। মিটারের টাকা শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ লাইন নিজে থেকে কেটে যাবে যেভাবে মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হলে মোবাইল কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর আগামী দিনে হয়তো প্রত্যেক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী, দিনের সময় অনুযায়ী, তার বিদ্যুতের দরও ঠিক হবে।

আর একবার লাইন কেটে গেলে, আবার লাইন জুড়তে গেলে দিতে হবে কয়েকশ টাকা ফাইন। ডিসকানেকশন- রিকানেকশন চার্জ বাবদ টাকা কাটা হবে গ্রাহকের রিচার্জ করা এমাউন্ট থেকে। 

গ্রাহকের উপর নেমে আসবে আরও নানাবিধ বিপদঃ যে সকল গ্রাহকের কন্ট্রাকচ্যুয়াল লোড কম আছে কিন্তু বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে যায়, তারা বিপদে পরবেন।  কানেক্টেড লোড কম দেওয়া থাকলে মিটার ঘন ঘন বন্ধ হয়ে যাবে। লোড বাড়াতে এক বার বন্টন কোম্পানী, এক বার প্রভাইডারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ফলে, গ্রাহককে ভয়ানক অসুবিধায় পড়তে হবে।

বিলের টাকা বেশি মনে হলে গ্রাহক কার্যত অভিযোগ করতেও পারবেন না। টাকা না ভরা অব্দি বিদ্যুৎ কানেকশন আসবে না। মোবাইল পরিষেবার ক্ষেত্রে দৈনিক ২ (দুই) জিবি নেট ব্যবহারের জন্য টাকা ভরবার পরে, দ্রুত টাকা শেষ হয়ে গেলে কি আমরা আদৌ কিছু করতে পারি !  সেরকমই দাঁড়াবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে।

সবচেয়ে বড় হামলা নামবে কৃষকের ওপরঃ সেচের পাম্পের লাইন আলাদা করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রকল্পে। কার্যতঃ বাজারের দামে কৃষককে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। এই দাম কৃষকদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। ৩.৫০ লক্ষের বেশি যে পাম্পের কানেকশন আমাদের রাজ্যে রয়েছে, তার ওপর নামবে বিপুল বিলের বোঝা। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে তুলে দেওয়া হবে সাবসিডি। বিদ্যুতের অভাবে কৃষকের তিন ফসলা জমি শুকিয়ে যাবে। খাদ্য শষ্য সহ সব জিনিসের উপর পড়বে এর ভয়াবহ প্রভাব।

এই প্রক্রিয়া আসলে গ্রাহক ও বন্টন কোম্পানীর চালু এগ্রিমেন্ট বিরোধীঃ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় এগ্রিমেন্টে উল্লেখ আছে যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরই গ্রাহক বিদ্যুতের দাম মেটাবে। এই এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য গ্রাহককে বাধ্য করা যায় না। গ্রাহক রাজি না হলে কেউ জোর করে মিটার বদলাতে পারবে না। 

প্রিপেড মিটারে গ্রাহকেরা আগাম টাকা জমা করে তবেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। চালু নিয়মে ডিউ ডেটের পর ১৪ দিন সময় পাওয়া আইনি অধিকার। তা আর থাকবে না। যারা আগাম টাকা ভরতে পারবে না তাদের ঘরে আলো পাখা চলবে না।

কার্যত থাকবে না বিল যাচাই করার সুযোগঃ পোস্ট পেড-এর ক্ষেত্রে বিল সঠিক কিনা যাচাই করা যায়। প্রয়োজনে অভিযোগ করা যায়। কিন্তু প্রি-পেড-এর ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। স্মার্টমিটার খারাপের অভিযোগ পেলে বন্টন কোম্পানী প্রভাইডারকে খবর দেবে, তারা মিটার চেক করে বন্টন কোম্পানীকে ব্যবস্থা নিতে বলবে। তারপর তাদের সময়মতো সুরাহা হবে।

আদানি টাটার হাতে যাবে সরকারী বিদ্যুৎ পরিকাঠামোঃ প্রাইভেট বন্টন সংস্থা এই স্মার্ট মিটারের তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে লাভজনক এলাকার প্যারালাল বন্টন লাইসেন্সের আবেদন করবে। অর্থাৎ একই এলাকায় একাধিক কোম্পানি বিদ্যুৎ দেবে। সরকারী সংস্থার লাইন, সাবস্টেশন সব ব্যবহার করবে আদানি, টাটা। বিদ্যুৎ বন্টন পরিকাঠামো বানানো সরকারী সংস্থার হাতে পড়ে থাকবে সবচেয়ে অলাভজনক গ্রামীণ ও কৃষি এলাকা। সরকারী পরিকাঠামো ব্যবহার করে প্রাইভেট কোম্পানি বাজার দখল করবে। একবার বাজার দখল হয়ে গেলে বিদ্যুতের দাম চড়া হবে কর্পোরেটের ইচ্ছেমত, যেমন হয়েছে জিও নেটওয়ার্ক আসার পর।

বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির রূপরেখা – বিদ্যুতের খোলা বাজারঃ এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের সাহায্যে প্রত্যেক গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের তাৎক্ষণিক চিত্র চলে যাবে স্মার্ট মিটার বসানো এজেন্সির কাছে, বিদ্যুৎ বাজারের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যাবে কখন কোন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বেশি। লাভজনক এলাকা চিহ্নিত করে বাজারে বিদ্যুৎ যোগানকারী প্রাইভেট সংস্থা হাঁকতে পারবে যথেচ্ছ দর। অভাবনীয় বোঝা পড়বে গ্রাহকদের ওপর। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত চেষ্টা করছে রাজ্য সরকারী বিদ্যুৎ পর্ষদ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার মাঝের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো তুলে দিতে। গত ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে বিদ্যুতের জন্য বাজারের ওপর নির্ভরশীল হতে। তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুতের ভার্চুয়াল বাজার – পাওয়ার এক্সচেঞ্জ মার্কেট। এই মার্কেটে বিদ্যুতের প্রতি মিনিটের দাম ঠিক হয় অজ্ঞাত এক সফটওয়্যার দিয়ে। একে বলে ডায়নামিক প্রাইসিং, অর্থাৎ চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে। যদি দ্বিপাক্ষিক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেনা হতো, তাহলে তার দাম আগে থেকে ঠিক থাকতো। বাজারর ওপর নির্ভর করা মানে চাহিদা অনুযায়ী দাম যখন খুশি যা-তাই হতে পারে।

১ বছরের মধ্যেই এই বাজারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ দাম ১২ টাকা/ কিলো ওয়াট ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা/ কিলো ওয়াট ঘন্টা করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশন। কিন্তু তাও উৎপাদনকারী সংস্থা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ যোগান দেয় নি। কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে বিদ্যুতের দাম। গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে এক প্রাইভেট বিদ্যুৎ সংস্থার চাপে পড়ে রেগুলেটরি কমিশন এই সিলিং ৫০ টাকা/ কিলো ওয়াট ঘন্টা করে দিয়েছে ! চেষ্টা চলছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত করে দেওয়ার।

স্বাভাবিক ভাবেই স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থা এই বাজারী এজেন্সিগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ ডেটা তুলে দেবে যা দিয়ে এলাকা বা গ্রাহক ভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী যা খুশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করার বন্দোবস্ত করবে প্রাইভেট সংস্থাগুলি, যেমন ভাবে রেলের টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে তৎকাল আর প্রিমিয়াম তৎকাল করে ! আর এই ক্রমাগত বাড়তে থাকা বিদ্যুতের দামের কারণেই বন্টন সংস্থা ক্রমাগত লোড শেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে। 

দিনের সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ মাশুল - গ্রাহকের সর্বনাশ, কর্পোরেটের পৌষমাসঃ এই স্মার্ট মিটার বসানোর মাঝেই কেন্দ্রের সরকার নিয়ম চালু করেছে যে যেই ঘরে যবে থেকে স্মার্ট মিটার বসবে, সেখানে তখন থেকেই চালু হয়ে যাবে দিনের সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ মাশুল।

এতে সারা দিন রাতের বিদ্যুতের দামকে তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা, সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ১১ টা এবং রাত ১১টা থেকে সকাল ৫ টা পর্যন্ত।  সন্ধ্যার সময় বিদ্যুতের চাহিদা ও দাম দিনের বেলার চেয়ে অনেকটা বেশি হবে। সরকার বলেছে যখন দাম বেশি, তখন বিদ্যুৎ ব্যাবহার কমিয়ে নিলেই হলো ! আসলে দাম এতটাই বাড়বে যে আপনাকে সন্ধ্যাবেলা লাইট ফ্যান বন্ধ করে অন্ধকারে থাকতে হবে।

রাজ্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের ভয়াবহ দৃশ্যঃ গত ১২ বছরে রাজ্যে তৈরি হয়নি একটিও নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। রাজ্যের বর্তমান চালু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৯০ শতাংশের বেশি তৈরি হয়েছে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে । কিন্তু বাড়ছে চাহিদা। রাজ্যের বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেক কম আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা আর উল্টোদিকে বাজারে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। বাজার থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে দুগুণ, তিনগুণ দামে । রাজ্যের সরকার কৌশল নিয়েছে লোডশেডিং করে ঘাটতি মেটানোর। ভয়ানক গরমে দুর্বিপাকে রাজ্যবাসী। আর হামলা চলছে বিদ্যুৎ কর্মীদের ওপর।

আমাদের রাজ্য সরকারের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণঃ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে কোনো নজর নেই, এদিকে ভয়াবহ স্মার্ট মিটার স্কীমকে লাগু করতে উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্য সরকার। গত ২০ শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে আরডিএসএস প্রকল্প বণ্টন কোম্পানীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে শুধুমাত্র স্মার্ট মিটারিংয়ের জন্যই ১২,৬২৩.১২ কোটি টাকার বোঝা বাংলার জনগণের ওপর চাপানো হবে।   পুরো নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হচ্ছে থার্ড পার্টির হাতে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে। বাংলা জুড়ে মোট ২.০৭ কোটি গ্রাহককে এই স্মার্ট মিটারের জালে জড়িয়ে ফেলতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই স্মার্ট মিটারের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করবে প্রাইভেট কোম্পানী। 

এছাড়াও ৩ লক্ষ ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারের এবং ১২ হাজার ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি ফীডারের যথেষ্ট ভালো অবস্থায় থাকা মিটারগুলি জোর করে বাতিল করে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বোঝা চাপানো হবে রাজ্যের গ্রাহকদের ওপর। নির্দেশ এসেছে, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে হবে ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে।  টেন্ডারও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যে চড়া বিদ্যুৎ মাশুলঃ অন্যদিকে রাজ্যের বিদ্যুতের মাশুল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশির দিকে। কলকাতায় তো আরও অনেক বেশি। প্রিপেইড মিটারে কম-বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সব গ্রাহকের ওপরেই লাগানো হয়েছে একই মাশুলের বোঝা। মারা পড়বে গরীব খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত।

কর্মী ছাঁটাই – এর হামলাঃ আমাদের রাজ্যে মিটার রিডিং-এ নিযুক্ত কর্মী সংখ্যা প্রায় ৬,০০০ । সরাসরি  এক ঝটকায় এদের কাজ চলে যাবে । এছাড়া কেন্দ্রীয় SCADA কন্ট্রোল রুম থেকে যে সকল সাবস্টেশনের অপারেশন নিয়ন্ত্রিত হবে, সেগুলোতে কর্মীদের প্রয়োজন থাকবে না। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে বিল সংক্রান্ত কাজ প্রায় থাকবে না বললেই চলে। ক্যাশ কালেকশন কর্মীদের প্রয়োজন থাকবে না। স্মার্টমিটার সফটওয়্যার কোম্পানি যে সার্ভিসসেন্টার খুলবে সেখানে গ্রাহকেরা সমস্যা নিয়ে যাবে। ফলে বিরাট সংখ্যক কর্মীদের কাজ চিরতরে চলে যাবে যাদের একটা বড় অংশ  কন্ট্র্যাক্ট ওয়ার্কার।

জাতীয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের নিরাপত্তা হবে বিপন্নঃ আর সবচেয়ে ভয়ানক হলো এই প্রযুক্তি থেকে জন্ম নেওয়া জাতীয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের নিজস্ব এই প্রজেক্ট সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক নিজেই তার ডকুমেন্টে লিখেছে যে যেকোনো মুহূর্তে সাইবার এটাকের মুখে পড়তে পারে এই ডিজিটাল মিটার – গ্রিড ব্যবস্থা। বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে, হতে পারে সামগ্রিক ব্ল্যাক আউট, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রের সরকার কোনো রাজ্যের বিরূদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল ব্যবহার করতে পারে। কোটি কোটি গ্রাহকের ডেটা চলে যেতে পারে কোনো বিপজ্জনক সংস্থার হাতে। এমনকি গ্রাহকের ঘরের নেটওয়ার্কেও হানা দিতে পারে এই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকেরা। 

গ্রাহক বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, শ্রমিক-কর্মচারী বাঁচাও, সরকারী বিদ্যুৎ পর্ষদ বাঁচাওঃ নিশ্চিতভাবেই বিদ্যুৎ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যা এখনও কিছুটা রেগুলেটরি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, যাতে রাজ্য সরকারগুলোর ভূমিকা রয়েছে, এবং যে পরিষেবা আজকের দিনে বিরাট মূল্যের রাজস্ব উৎপাদন করছে। এই বিরাট বাজার দখল করে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি আর তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী মোদী সরকার। আমাদের রাজ্যের সরকার এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে হয়েছে কেন্দ্র সরকারের পার্টনার। আদানির মুনাফা লোটার পথ বানিয়ে দিতে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে সঁপে দিতে এতো তোড়জোড়।

আর তাই আমাদের রাজ্য সরকার এই জনবিরোধী, শ্রমিকবিরোধী এবং রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা বিরোধী মিটারিং ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে । রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ এতে পুরোপুরি খর্ব হবে, বিদ্যুতের জন্য রাজ্যের নাগরিকেরা কেন্দ্র সরকারী এজেন্সি ও প্রাইভেট কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

এটাই সময়, আমাদের সামনে - সরকারী বিদ্যুৎ শিল্পকে ধ্বংসকারী আর বিদ্যুতের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার এই চক্রান্তকে বুঝতে হবে গভীর ভাবে, সমস্ত গ্রাহকের সামনে এর ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে, এর ভয়ানক জনবিরোধী দিক গুলো নিয়ে যেতে হবে জনগণের কাছে, গড়ে তুলতে হবে সার্বিক প্রতিরোধ – গ্রাহক বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, শ্রমিক-কর্মচারী বাঁচাও, সরকারী বিদ্যুৎ পর্ষদ বাঁচাও, বেসরকারী বহিরাগত কোম্পানির হাতে মিটারিং ব্যবস্থা তুলে দেওয়া বন্ধ কর।  রাজ্য জুড়ে বিরাট আন্দোলনের মাধ্যমেই রক্ষা করতে হবে আমাদের বিদ্যুতের অধিকার – দায়িত্ব আমাদের।

এক ঝলকেঃ কেন আমরা স্মার্ট মিটারের বিরোধিতা করছি

১) এই মিটারিং-এর ফলে ব্যাপক অবৈদ্যুতিকরণ হবে। প্রিপেইড মিটারে টাকা ফুরিয়ে গেলে নিজে থেকে বিদ্যুৎ কানেকশন কেটে যাবে । এমনকি মিটারিং কোম্পানির ভুলে টাকা শেষ হয়ে গেলেও কার্যত কিছু বলা যাবে না। যে সকল গ্রাহকের কন্ট্রাকচ্যুয়াল লোড কম আছে কিন্তু বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে যায়, তারা বিপদে পরবেন।  কানেক্টেড লোড ঠিক না করা অব্দি মিটার ঘন ঘন বন্ধ হয়ে যাবে।

২) সকল গ্রাহকের সাবসিডি সরিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে এই মিটারিং ব্যবস্থায় । বিশেষ করে কৃষি গ্রাহকদের লাইন আলাদা করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তাদের ক্রস-সাবসিডি তুলে নেওয়া । বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে বহুগুণ । ৩.৫০ লক্ষের বেশি যে পাম্পের কানেকশন আমাদের রাজ্যে রয়েছে, তার ওপর নামবে বিপুল বিলের বোঝা । ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে তুলে দেওয়া হবে সাবসিডি ।

৩)  প্রিপেড মিটারে গ্রাহকেরা আগাম টাকা জমা করে তবেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে । চালু নিয়মে ডিউ ডেটের পর ১৪ দিন সময় পাওয়া আইনি অধিকার । তা আর থাকবে না । যারা আগাম টাকা ভরতে পারবে না, তাদের ঘরে আলো পাখা চলবে না ।

৪) স্মার্ট মিটার বসালেই চালু হবে দিনের সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ মাশুল । সন্ধ্যার সময় বিদ্যুতের চাহিদা ও দাম দিনের বেলার চেয়ে অনেকটা বেশি হবে । দাম এতটাই বাড়বে যে আপনাকে লাইট ফ্যান বন্ধ করে অন্ধকারে থাকতে হবে ।

৫) গত এক দশক ধরে সমস্ত রেগুলেটরি মেকানিজম সরিয়ে ক্রমাগত বিদ্যুৎ গ্রাহককে বাজারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে । সর্বোচ্চ ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম গ৩ ১ বছরে ১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা ! স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থা একজন গ্রাহককে সরাসরি খোলা বাজারের মুখোমুখি ফেলে দেওয়ার এক টেকনিক্যাল পদ্ধতি চালু করবে । আর তুলে দেবে এদের হাতে বিদ্যুতের চাহিদার-যোগানের এক বিপুল ডেটা সম্ভার বাজারের প্রাইভেট মালিকদের হাতে ।  তাঁদের ইচ্ছেমত বদলে যাবে যোগান আর বিদ্যুতের দাম ।

৬) রাজ্য সরকারী বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে বিদ্যুৎ কিনে নিজের পরিকাঠামোর মাধ্যমে গ্রাহককে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে, অথচ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ নিজের সরবরাহ করা বিদ্যুতের টাকা আদায়ের জন্য এক থার্ড পার্টির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে ।

৭) রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ আর্থিক ভাবে আরও দূর্বল হয়ে পড়বে, বেসরকারী বন্টন সংস্থা একে একে সবচেয়ে লাভজনক এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বিদ্যুৎ বন্টনের ব্যবসা শুরু করবে, ভেঙে পড়া রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ হয় পুরোপুরি বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থার হাতে চলে যাবে, নয়তো খারাপ হয়ে যাওয়া পরিকাঠামো গ্রামীণ ও দরিদ্র অঞ্চলে ব্যপক অবিদ্যুতায়ণ করবে ।

৮) সাইবার হামলা হলে গোটা দেশের গ্রিড ব্যবস্থা বসে যেতে পারে । যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নির্দেশে এই ব্যবস্থা চাপানো হয়েছে, তারা পর্যন্ত বলছে এই প্রযুক্তি বিপজ্জনক এবং কেন্দ্রের সরকার কোনও রাজ্য সরকারের বিরূদ্ধে এই কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে ।

৯) এই ব্যবস্থা দেশের ও জনগণের সার্বভৌমত্ব ও রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে ।