![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/gorber-34.jpg)
সম্প্রতি একটি রিপোর্টে জানা গেছে এরাজ্যের গ্রামীণ এলাকার ৪৩% পড়ুয়া মাধ্যমিক দিয়েই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছেন। যে পশ্চিমবঙ্গে একসময় গ্রামীণ গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে বামফ্রন্ট একাধিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সেই পশ্চিমবঙ্গে এখন উন্নয়নের জোয়ারে ৪৩% গ্রামীণ পড়ুয়া মাধ্যমিক দিয়েই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছেন। বামফ্রন্টের আমলে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের স্কুল মুখী করতে মিড ডে মিল চালু করেছিল বামফ্রন্ট, যাতে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সাথে সাথে পেটও ভরানো যায়। গ্রামীণ এলাকায় পিছিয়ে পড়াদের জন্য হোস্টেল চালু করে, পড়ুয়াদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বামফ্রন্ট। ১৯৭৭ এর পর শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল, আগে অষ্টম শ্রেণী অব্দি পড়তে হলে দিতে হতো বেতন। ফলে লাখো লাখো পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণীর আগে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতো না। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/11.jpg)
১৯৭৭ এর আগে এরাজ্য উচ্চশিক্ষার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ ছিল, কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এরাজ্যে বামফ্রন্টের উদ্যোগে ১৪ টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ডিমড বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছিল। রাজ্য জুড়ে ২০০ র বেশি নতুন কলেজ, শুধুমাত্র সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ৭৩ টি নতুন ডিগ্রি কলেজ চালু হয়েছিল এরাজ্যে। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। বামফ্রন্টের আমলে রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে বরাদ্দ করেছিল ৬১০ কোটি টাকা। শিক্ষাক্ষেত্রে বামফ্রন্টের নানান যুগান্তকারী পদক্ষেপে ৩৮.৮৬ শতাংশ (১৯৭৭) থেকে বাংলার সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭% (২০১১) যা সর্বভারতীয় হারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। সাক্ষরতার সাফল্যে ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর বিখ্যাত “নোমা পুরস্কার” পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু দশবছরের পর ২০২১ এ দাঁড়িয়ে পশ্চিমবাংলার সাক্ষরতার হার ৭৮.২৬ শতাংশ , বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর অর্থাৎ তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে দীর্ঘ দশবছরে মাত্র ১.২৬ শতাংশ সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের আমলে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289339240_584474303039010_8621820319750889119_n.jpg)
বামফ্রন্টের আমলে শিক্ষিত যুবদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষিত যুবদের কাজের চাহিদা বাড়তে থাকে, শিক্ষিত যুবদের চাকরি দিতে প্রত্যেক বছর এসএসসি – টেটের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হতো। ১৯৭৭ এর আগে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ছিল নামমাত্র , সেই বেতন দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল ছিল। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা দিয়ে বেতন বাড়িয়ে দেয় বামফ্রন্ট সরকার। শিল্পায়নের উদ্যোগ নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যজুড়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। সিঙ্গুরে মোটর কারখানা, হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা, নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল কারখানা, শালবনিতে ইস্পাত কারখানা, দক্ষিণ বঙ্গের উন্নয়নের সাথে সাথে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিল বামফ্রন্ট। কলকাতায় আইটি হাব তৈরি করে, উইপ্রো সহ একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের বাংলায় এনেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ২০০৪ থেলে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষেত্রে সারাদেশে মোট নতুন কর্মসংস্থানের ৪০% হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে (২৪ লক্ষ) , গুজরাটের থেকে ১০ লক্ষ বেশি কর্মসংস্থান হয়েছিল বাংলায়। ২০১০ সালে ‘ পশ্চিমবঙ্গ নাগরিক কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ২০১০-১১ সালে এর জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল ২৫০ কোটি।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289436549_584473713039069_7529493220099769780_n.jpg)
১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার সাথে বামফ্রন্ট বুঝেছিল প্রান্তিক মানুষের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়ালে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হবে না। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের জমি দিয়ে বামফ্রন্ট গ্রামীণ মানুষের জীবন জীবিকার উন্নতি করেছিল।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289425940_584474116372362_1550113980729947583_n.jpg)
ভূমি সংস্কারের ফলে রাজ্যের ৮৪% জমির মালিক হন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা। ৩০ লক্ষাধিক কৃষক পেয়েছিলেন ১১ লক্ষ ২৭ হাজার একরের জমি। তাছাড়া বামফ্রন্ট সরকারের “চাষ ও বসবাসের ভূমিদান ” প্রকল্পে খেতমজুর, গ্রামীণ কারিগর ও মৎস্যজীবীদের ৫ কাঠা পর্যন্ত জমি দেওয়া হয় বিনামূল্যে। প্রায় ২ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন। ফলে মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে নানান বানিজ্যিক ব্যবস্থা বাড়তে থাকে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের হাতে শাসন ব্যবস্থা তুলে দিয়েছিল বামফ্রন্ট।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289273152_584473939705713_820981946721544258_n.jpg)
ফলে নিজ গ্রামের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, সেচ ব্যবস্থা সহ গ্রামের নানান সমস্যার সমাধান করতে পারেন গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আধুনিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গোটা দেশকে পথ দেখিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সরকারী খরচের প্রায় ৩৫ শতাংশ টাকা খরচ হতো ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত মারফত।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289489466_584473766372397_8118837076733263538_n.jpg)
চাষাবাদে সেচ ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল বামফ্রন্ট সরকার, ১৯৭৭ সালের আগে মাত্র ৩২% জমি ছিল সেচসেবিত। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তা ৭৩% ছাড়িয়ে যায়। ফলে এক ফসলের জায়গায় সেচের মাধ্যমে তিন ফসলি চাষ হয়। কৃষিতে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সূচক শস্য চাষের নিবিড়তা। অর্থাৎ, একই জমিতে একাধিকবার ফসল চাষ। এক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে ছিল।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289400455_584473826372391_3306428239745419880_n.jpg)
১৯৭৭ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য শস্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল, ১৯৭৬-৭৭ সালে রাজ্যে মোট খাদ্য শস্যের উৎপাদন হত ৭৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১০-১১ সালে সালে তা দাঁড়ায় ১৭০ লক্ষ মেট্রিক টন।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই চাল উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্যে পরিণত হয়। সবজি, পাট উৎপাদনে বামফ্রন্ট আমলে বাংলা শীর্ষে ছিল। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ এবং ভরতুকি দিত বামফ্রন্ট সরকার। ২০০৯-১০ সালে আলুচাষিদের ৪০০ কোটি টাকার ভরতুকি দেয় বামফ্রন্ট সরকার।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289364973_584474783038962_2849990068155242262_n.jpg)
বামফ্রন্ট আমলে বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়, প্রতিটি ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭ সালে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩২৬ টি , বামফ্রন্ট আমলে ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/06/289355718_584473973039043_2689921158661022520_n.jpg)
মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার , সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য সরকারে পৃথক একটি দপ্তর চালু করেছিল -স্বয়ম্ভর ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প দপ্তর। কেন্দ্রীয় সরকারী স্বনিযুক্তি প্রকল্পে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ উঠে আসে এক নম্বরে। সংখ্যালঘু মহিলা ক্ষমতায়ন কর্মসূচি বামফ্রন্ট সরকারের অসামান্য উদ্যোগ। পশ্চিমবঙ্গেই একমাত্র সংখ্যালঘু মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ৫০% শতাংশ ভরতুকি দেওয়া হত।
বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনকালে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে পশ্চিমবঙ্গের বহু ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, শুধুমাত্র আক্ষেপ এটাই যে বামফ্রন্ট যেখানে যেখানে শিল্প, কর্মসংস্থান করতে গেছে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তার তীব্র বিরোধীতা করায় সিঙ্গুর থেকে টাটা, নন্দীগ্রাম কেমিক্যাল কারখানা, শালবনি থেকে ইস্পাত কারখানা সহ একাধিক শিল্প রাজ্যে এসেছেও সফল হতে পারেনি। তৃণমূলের ১০ বছরের শাসনকালে একটাও শিল্প আসেনি, উইপ্রোর মতো কম্পানি জায়গা না পেয়ে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন ‘ কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। বামফ্রন্টের আমলে শিল্প গুলি যদি এরাজ্যে হতে পারত তাহলে বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাল হকিকত পাল্টে যেত। বাংলার যুবদের ঘর সংসার ছেড়ে ভিন রাজ্যে কাজ করতে হতো না।