নব্বই দশকের শেষ ভাগ রাজ্যে কংগ্রেস উত্তাল হয়ে উঠেছে মমতা সোমেন দ্বন্দ্বে ।সোমেন মিত্রর সাংগঠনিক ক্ষমতার কাছে হেরে মমতার প্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী আর হয়ে ওঠা হলো না।অতঃপর রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য আদবানি,রাজনাথ সিং,উমা ভারতীদের হাত ধরে কংগ্রেস ভেঙ্গে গড়লেন তৃণমূল কংগ্রেস। আর এস এসের একনিষ্ঠ কর্মী লালকৃষ্ণ আদবানি বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং তার পরবর্তী সময় দেশজুড়ে দাঙ্গার অভিজ্ঞতায় খুব ই ভালোই বুঝেছিলেন যে কমিউনিস্টরাই হচ্ছে ভারতবর্ষে সেই শক্তি যারা বিজেপি তথা আর এস এসের সাম্প্রদায়িক মেরুকরনের রাজনীতির পথে প্রধান বাধা।আর কমিউনিস্টদের শক্তিশালী ঘাঁটি হচ্ছে বাংলা সেই ঘাঁটি ভাঙতে মমতার মতো এক নৈরাজ্যর পূজারিনীর প্রয়োজন। যে ক্ষমতার জন্য সব কিছুই করতে পারে। বিজেপির পূর্ণ মদতে তৈরি হলো তৃণমূল দল এমনকি তার প্রতীক থেকে নির্বাচন কমিশনে রেজিস্ট্রেশন সব কিছুই হয়েছে সংঘপরিবারের সহায়তায়।

বাংলায় বিজেপির হাত ধরেই ১৯৯৯র লোকসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল সংসদীয় রাজনীতির সবথেকে ভালো ফল করে।তারপর থেকেই শুরু হয় কমিউনিস্টরাই ঘাঁটি বাংলা ভাঙার আর এস এস বিজেপির নীল নকশা কার্যকর করা। প্রথমেই জঙ্গলমহল, হুগলির মতো জায়গাগুলিতে বিজেপি তৃণমূল যৌথ সন্ত্রাস শুরু করে গ্রাম দখল শুরু করে।পাঁশকুড়া লাইন মানে গ্রাম বন্দুকের জোরে বিরোধীদের খুন গ্রাম ছাড়া করে গ্রামের পর গ্রাম দখল করে ভোটে জেতা এই ছিল পাঁশকুড়া লাইন। সাময়িক ভাবে সফল ও হলো এই খুন সন্ত্রাস আর গ্রাম দখলের রাজনীতি পাঁশকুড়া লোকসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল বিজেপির প্রার্থী সিপিআই প্রার্থীকে হারিয়ে জিতলো।উজ্জীবিত হয়ে উঠলো আদবানি, রাজনাথ সিংহ এর মতো মমতার প্রশয়দাতা আর এস এসের মাতব্বরেরা। কিন্ত শেষ পর্যন্ত আর সেই যাত্রায় বিজেপির মমতার হাত ধরে বাংলা দখলের খোয়াব পূর্ণ হয়নি ।

মাঝের কিছু সময় বিরতির পর আবার মমতাদেবীর আর এস এসের শিবিরে প্রত্যাবর্তন এবং আর এস এসের নেতার বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দেবী দুর্গার খেতাব লাভ আর সেই অনুষ্ঠানেই মমতার বিখ্যাত উক্তি আর এস এস প্রকৃত দেশপ্রেমিক সংগঠন তাদের সহায়তা পেলে বাংলা থেকে কমিউনিস্টদের শাসন সে অবসান করবে।

অনেকেই ভেবে থাকেন ১১র নির্বাচনে বুঝি কংগ্রেস তৃণমূল জোট ক্ষমতা দখল করেছিল, না ওই জোটে সবথেকে বেশি সহায়তা করেছিল বিজেপি আর এস এস। ১১র নির্বাচনে কটা আসন পেয়েছিল বিজেপি সম্ভবত শূন্য। একদিকে লাল পতাকা হাতে মাওবাদীরা অন্যদিকে গৈরিক পতাকা হাতে আর এস এসের ক্যাডারা উভয় শক্তিই সেদিন নেমেছিল বাংলা থেকে বামফ্রন্ট কে হঠাতে।

সারদা থেকে নারদা এই যে বিপুল দুর্নীতি আর এই যে দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা পড়া বিজেপির সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব হতো। নারদা কান্ডে সংসদের এথিক্স কমিটির সভাই ডাকেন নি লালকৃষ্ণ আদবানি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদের বাঁচাতে।

এই হচ্ছে প্রবল কমিউনিস্ট বিরোধী মমতার আর এস বিজেপির সখ্যতার ইতিহাস।যে ইতিহাস মনে রেখেই তৃনমূলের শুরুর দিন থেকে মমতার ছায়া সঙ্গী মুকুলের মন্তব্য ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল, আর তৃণমূল মানেই ভারতীয় জনতা পার্টি।এ হেন আর এস এসের মিত্র শক্তি তৃনমূল আজ হঠাত জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটে কেন? আর বামেরাই বা সেখানে কেন? এই নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে বাংলার রাজনীতি। দেশে ফ্যাসিস্ট বিজেপির শাসনের অবসান ঘটনানোটা কমিউনিস্টদের প্রধান লক্ষ্য সেই দায়বদ্ধতা থেকে তারা এই সভা এবং জোটে গেছে। না গেলে প্রচার হতো রামেদের হারাতে চায়না বামেরা। রাম বাম তত্ত্বের প্রচারকরা ঝাঁপিয়ে পড়তো।

বৈঠকে গেছে জোটে গেছে সিপিআই(এম) কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক বাংলাতে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোটের সম্ভবনাই নেই। আর তৃণমূল খুব বেশিদিন কী বিজেপি বিরোধী জোটে থেকেছে। কমরেড জ্যোতিবসু বলতেন “বিজেপি একটি অসভ্য বর্বর দল”। যে দলের অতি বিশ্বস্ত শরিকের ভূমিকা পালন করে গেছে তৃণমূল। গুজরাতের সংখ্যালঘু নিধন পর্বের পর নরেন্দ্র মোদী যখন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন তখন মমতাদেবী তাকে অভিনন্দন জানিয়ে গোলাপ পাঠিয়েছিলেন।মমতা নিজে একাধিকবার স্বীকার করেছে যে আর এস এস ভালো দেশ প্রেমিক সংগঠন। মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে কর্নেল সভ্যসাচী বাগচী র মতন আর এস এস অন্ত প্রাণ মানুষ আছেন। আর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ রাজ্যে আর এস এস এবং বিজেপির সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ঘটেছে মমতার শাসনকালে তার সহযোগিতাতেই।

তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের একটাই সম্পর্ক তা হচ্ছে রাস্তার লড়াইয়ের। যারা আমাদের খুন করেছে ,ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে সর্বস্ব লুঠ করেছে সেই ঘৃনিত তৃণমূল কে বুঝে নিতে হবে লড়াইয়ের ময়দানে।