লোকসভার ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। উঠোনে, মাঠে, ঘাটে মানুষ আলোচনা করছে এবার ভোটে কি হবে। এদিকে দুটি সরকারের পক্ষ থেকে শিলান্যাস ও প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে। প্রধানমন্ত্রী ও  মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই ব্যস্ত শিলান্যাস করা ও প্রতিশ্রুতির গালভরা বুলি আওড়াতে। এ বলে আমাকে দেখ, আর ও বলে আমাকে দেখ। বিভাজনের রজনীতিতে দুজনই সিদ্ধহস্ত। উনি রামমন্দির উদ্বোধন করছেন – তো ইনি জগন্নাথদেবের মন্দির উদ্বোধনের কাউন্ট ডাউন শুরু করেছেন। যদিও মানুষের একটা বড় অংশ মন্দির মসজিদ এ খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। জনগণের করের টাকায় দুজনেরই ছবির বিজ্ঞাপনের হুড়োহুড়ি লেগে গেছে। রেশন দোকান থেকে মোদির ছবি সম্বলিত ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। আরও কত কি হচ্ছে। রোজকার সংবাদপত্রের পাতা জোড়া বা স্ক্রীনজোড়া শুধুই ওনার গ্যারেন্টীর ছবি। আর রেডিও টিভিতে বিজ্ঞাপন,” হম মোদি গ্যারেন্টী হ্যায়। “আর রাজ্যে মমতা ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণায় নাকি সবই হচ্ছে। উনিই সব দিচ্ছেন। বলছেন, মনে রাখবেন –মাথায় রাখবেন,” আমি সব দিচ্ছি, ভোটটাও মাথায় রাখবেন”। পরোক্ষভাবে একপ্রকার হুমকি। আর ওনার ছবির’তো শেষ নেই। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে, সরকারী দপ্তরে,রাস্তা, ঘাটে এমনকি রাস্তার টয়লেটেও কেবল ওনার ছবি। ছবিতেই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী খুব খুশি। লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নেই। গুগলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রচার খরচ হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী তার প্রশাসনিক সভা করেন রিভলভিং চেয়ারের মত। জেলা ঘুরে ঘুরে এই ধরনের সভা করার প্রয়োজন ছিল কি! কোটি কোটি টাকা খরচ। জনগণের করের টাকায় এই খরচ কি ন্যায়সঙ্গত? একদম না। আমজনতা প্রশ্ন তুলবেন না ? প্রশ্ন করুন। জানতে চান কার টাকায় এত আমাপা খরচ হচ্ছে। আমলারাও ওনার পিছনে পিছনে ছুটছে। প্রধানমন্ত্রী র মিটিং ও সফরেও দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। এই গরীব দেশে এত বিলাসবহুল খরচের কোন প্রয়োজন নেই। জবাব একদিন না একদিন দিতেই হবে।

এদিকে দলবদলের খেলাও জমে উঠেছে সমানতালে। ৩ জন বর্তমান বিজেপি বিধায়ককে, তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেন। এর থেকেই বুঝে নিতে হবে বিজেপি+তৃণমূল= বিজেমূল। কোটি কোটি টাকার কারবার। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী জোরকদমে নিজেদের ঢাক পেটাচ্ছে, আর দল বদলের খেলার প্রতিযোগিতা জোর কদমে শুরু হয়েছে। মানুষ কিন্তু এসব দেখছে — বুঝছে। তৃণমূল বলছে জনগর্জন আর বিজেপি বলছে জনপ্লাবণ। গদি মিডিয়াও উঠে পড়ে লেগেছে। দুই দলের হয়ে বাজনায় সঙ্গত দিচ্ছে গদি মিডিয়া। মুকেশ আম্বানীর মালিকানাধীন ৭২টি টিভি চ্যানেল, যার দর্শক সংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি, তারা দিনরাত আদাজল খেয়ে লেগেছে মোদির মহিমাকীর্তনে। আর বামপন্থীরা ভিতরে ভিতরে তৈরী হচ্ছে — জোর লড়াই করার জন্য। গদি মিডিয়া বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আর অস্বীকার করতে পারছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আম জনতার কী হবে? আমজনতাও হিসাব নিতে শুরু করেছে। তার জীবনের অভিজ্ঞতায় মেলাচ্ছে শিলান্যাস ও প্রতিশ্রুতির কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বছরে দু’কোটি বেকার যুবকের চাকরী হবে। চাকরী তো হয়-ই নি, উল্টে গত ১০ বছরে নিজস্ব কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন প্রায় ছ’কোটি মানুষ। তিনি গ্যারান্টী দিয়েছিলেন দেশের ‘কালাধন’ বিদেশ থেকে উদ্ধার করে প্রত্যেক ভারতবাসীর এ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা করে দেবেন। সেই গ্যারান্টির দগদগে ঘা বুকে নিয়ে নিজেদের এ্যাকাউন্টের তিল তিল করে জমানো ঘাম-রক্ত জল করা টাকাও মোদির হাতে চলে গেছে নোটবন্দীর চক্করে পড়ে। বিনিময়ে কয়েক হাজার হতদরিদ্র মানুষ নোট বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে অকালে প্রাণ দিয়ে মোদির কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই তো মোদির গ্যারান্টি। বলেছিলেন ,”কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম ও তাদের আয় দ্বিগুণ করার কথা”। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতিও আজ ভোটবাক্সের প্রতিশ্রুতিই হয়ে রয়ে গেছে। পরিবর্তে লোকসানের দায়ে কৃষকরা একে একে আত্মহত্যার চরম পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের কৃষকরা আজ পথের ধূলায়, শাসকের ডাণ্ডাগুলির মুখে দাঁড়িয়ে। কৃষক আন্দোলনে দিল্লির উপকন্ঠে হরিয়ানা পুলিশ ২৪ বছরের তরতাজা যুবক কৃষক শুভ করন সিং কে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। শুভ করন সিং ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এতদসত্ত্বেও মোদিজি বুক ফুলিয়ে ভাষন দিয়ে যাচ্ছেন আর বিদেশ ভ্রমন করছেন। দেশটাকেই বিক্রি করে দেবেন। নারী সুরক্ষার গ্যারান্টির কথা যখন বলছেন, তখন দেশে নারীরা বিপন্ন, লাঞ্ছিত, ধর্ষিত।

  তার সঙ্গে চলছে দেশের মূল শক্তি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কে ভারতের সংবিধান থেকে মুছে দেবার এক ঘৃণ্য, জঘন্য প্রয়াস। গত রবিবার (ইং-১০-৩-২০২৪) কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে এক জনসভায় এই মারাত্মক দাবী করে ঝুলি থেকে বেড়ালটি বের করেছেন। তিনি এর জন্য ২৪তম লোকসভা নির্বাচনে ‘হিন্দুত্ব রক্ষা’র সংকল্প নিয়ে “হিন্দু রাষ্ট্র” গড়ার শপথ নিয়েছেন। এর আগেও তিনি একই দাবী করেছিলেন প্রায় ছ’বছর আগে। এমনিতেই গত দশ বছরে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে বিভেদ-বিভাজন, ধর্মীয় মেরুকরণ, হিংসা-অসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ, এক অভূতপূর্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর পর যদি দেশে তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে তা হবে দেশের পক্ষে এক ভয়ঙ্কর পরিণতি। দেশ আর অখণ্ড থাকবে কিনা, কিংবা দেশের মানুষ আর আদৌ সুরক্ষিত থাকবেন কিনা তার কোন গ্যারান্টি নেই। ১৭৯ টি দেশের উপর সমীক্ষা করা ভি. এম. (গণতন্ত্রের বৈচিত্র্য) রিপোর্টে জানা যাচ্ছে বিশ্বের দরবারে ঐতিহ্যমণ্ডিত গণতন্ত্রের পীঠস্থান ভারত এখন দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রথম দশটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের মধ্যে মোদির ভারত ঠাঁই করে নিয়েছে (গণশক্তি-৯-৩-২০২৪)। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে তা আরও ভয়াল আকার ধারণ করবে,তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ভোটের প্রাক্কালে সেই কারণেই মিথ্যের গ্যারান্টির গোয়েবলসীয় প্রচারের ঢক্কানিনাদ চলছে।

বিশ্বের যেকোনো স্বৈরতান্ত্রিক নেতার যাবতীয় গুণাবলী আজ মোদির মধ্যে প্রভৃত পরিমাণে বিদ্যমান। যাবতীয় কৃতিত্ব নিজের নামে নেওয়া, সমালোচনা সহ্য করতে না পারা এবং সমালোচনাকারীদের মিথ্যে নানা অজুহাতে নানা এজেন্সি লাগিয়ে বা রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা অত্যাচার করা-গ্রেপ্তার করা, বিরোধীদের ধমক-চমক অথবা প্রলুব্ধ করে নিজের দলে টেনে আনার অদম্য প্রয়াস, নিজেকে লার্জার দ্যান কান্ট্রি প্রমাণ করার অপচেষ্টা – কোন কিছুই আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদি বাকী রাখেননি। তবুও দিনের শেষে ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে, কোনও স্বৈরতান্ত্রিক নেতার পরিণতি সমগ্র বিশ্বে কোথাও ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ হয়নি। তাঁদের চরম পরিণতিই ভোগ করতে হয়েছে, তিনি যত শক্তিধরই হোন না কেন। তবে এটা ঠিক যে, স্বাধীনতার পর   ইলেক্ট্রোরাল বন্ডের দুর্নীতি সর্ববৃহৎ দুর্নীতি। সুপ্রিম কোর্টের এক ধাক্কায় বিজেপি খানিকটা হলেও বিচলিত। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কারা কারা টাকা দিয়েছে,তার তালিকা দিতে বলেছে। কত বড় ঔদ্ধত্য ও প্রশ্রয় থাকলে এসবিআই তার ওয়েবসাইট থেকে সমস্ত তথ্য মুছে দিতে পারে। সেই প্রশ্রয় কার?? ভাবুন,দেশটা কারোর জমিদারী নয়। আমার আপনার, সর্বোপরি আমাদের গর্বের দেশ এই ভারত। সকলকেই এই বৃহৎ কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেই হবে। বামপন্থীরাই পারে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে,করছেও তাই।

২০২৪-এর এই ভোটের আবহে রাজ্যের মাননীয়াই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? তিনিও যথাসাধ্য প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। নানা গিমিক আর কথার জাদুতে তিনি রাজ্যের মানুষের আসল সমস্যাগুলোকেই ভুলিয়ে দিতে চাইছেন তাঁর সস্তা জনমোহিনী প্রকল্পের মধ্যে দিয়েই। তাতে আর চিঁড়ে ভিজবে না। সন্দেশখালিই তার উদাহরণ। সন্দেশখালি আজ শুধু ভূগোলের মানচিত্রে একটা স্থান নয়, বরং তা আজ রাজ্যের অপশাসনের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখ শাজাহান আজ শুধু সন্দেশখালিতেই নেই, তারা আজ গোটা রাজ্যকেই নিজেদের খাসতালুক বানিয়ে মা-বোনেদের কাছে আতঙ্কের এক প্রতিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারাই আজ রাজ্যকে পরিচালনার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলছে, আর প্রশাসন কার্যত ম্যাজিশিয়ানের পুতুলে পরিণত হয়েছে। আগে মণিপুর, হাথরাস, উন্নাও-এর কথা শুনলে আমরা শিউরে উঠতাম কিন্তু আমরা আজ এমনই এক প্রশাসনের অধীন, যেখানে ওইসব আতঙ্কের নামের সঙ্গে এক সারিতে উচ্চারিত হচ্ছে সন্দেশখালি, কামদুনির নাম। ভাবতেও লজ্জা হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। অথচ সেই বিষয়ে ভোটের আগে কোন কথা নেই আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশাসনের সর্বত্র আজ দুর্নীতির পোকার উপদ্রব। তারা কুড়ে কুড়ে খেয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে সমগ্র প্রশাসনের সুষ্ঠু কাঠামোকে।  কিছু টাকা পাইয়ে  দিয়ে সমাজের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায় না। কেবলমাত্র খয়রাতি দিয়ে গিমিকবাজি করা যায় কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের কোন স্থায়ী সমাধান করা যায় না। আর উভয় সরকারের গিমিকবাজিতে মানুষ আর বিশ্বাস করতে চাইছে না। তারা চায়, কাজ, মজুরি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সস্তায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, ঔষধ। মানুষ এবার বুঝে নিতে চাইছে।

দুয়ারে ভোট এলেই শাসক দলগুলোর দেওয়া নানা প্রকল্পের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তথা ‘গ্যারান্টি’তে ভুলে না গিয়ে আসুন আমরা যথাযথ এবং সুচারুভাবে চিন্তা করি যে, কে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন তথা জীবনের মানোন্নয়ন করে আমাদের রাজ্যকে তথা দেশকে সুগঠিত করে তুলতে পারবে। এই কাজে বামপন্থীদের জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর বামপন্থীরা সরকার পরিচালনা করে  মানুষের অধিকার বোধকে জাগ্রত করেছিলেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেচের ব্যবস্থা, ফসলের বৈচিত্রকরন, ফসলের দামের কিছুটা গ্যারান্টি করা, ভূমি সংস্কার করে মানুষের হাতে জমি দিয়ে যেভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিলেন তা কিন্তু মানুষ মনে রেখেছে। তার জন্য মানুষ বলছে বামপন্থীদের চাই। কেরলে আজও যেভাবে মানুষের জীবনধারণের উন্নত মান দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে, তার ভিত্তিতেই দেশের পুনর্গঠনের কাজেও তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো ছাড়া উপায় নেই। এই বাস্তব সত্যটাকে নিয়ে মানুষের কাছে গেলে মানুষই এইসব জুমলাবাজ স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাৎ করে, বাম ও  ধর্মনিরপেক্ষ- গণতান্ত্রিক শক্তিকে সামনে আনতেই হবে। এই শক্তিই পারে দেশের আক্রান্ত গণতন্ত্র কে রক্ষা করতে, দেশের সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধানকে রক্ষা করতে। শ্রমিক কৃষক সহ সাধারণ মানুষের রুটি রুজি, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণসহ, জীবনের গ্যারান্টি দিতে পারে একমাত্র বাম, গনতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। তাই আসুন সকলে এই শক্তিকে শক্তিশালী করি। বিভাজন সৃষ্টিকারী তৃণমূল কংগ্রেসএবং বিজেপি এই দুই শক্তিকে, যারা প্রতি নিয়ত মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদেরকে হঠাতেই হবে। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে স্টেট ফরওয়ার্ড খেলতেই হবে। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।