মাত্র পঁচিশ মিনিট। আদালতে হাজির হলেন বেহদিশ আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। দীর্ঘ পঁচিশ মাস ধরে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর সিবিআই মলয়ের দরজায় কুঁহুঁ কুঁহুঁ ডাক দিয়ে ফিরেছে। হাওয়া মোরগের দিক বদল হয়নি। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর দখলে দিল্লীর মসনদ। নিরাপত্তা ও ভোগের আয়োজন করতে দেশবাসীর কোটি কোটি টাকা গুনাগার দিতে হয়। ধৈর্য ধরে অশ্রাব্য বাগাড়ম্বর শুনতে হয়। দুর্নীতির প্রসঙ্গে সরল নীতি- নেহি শুনুঙ্গা, নেহি বলুঙ্গা। আম, দই, নয়া কুর্তা-পাজামা, পদিপিসির বর্মী বাক্স দুয়ারে হাজির হয় গোপনে। কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের দরজায় আম-দই নিয়ে দুর্বৃত্তরা কড়া নাড়তে হিম্মৎ পাবে না। একজন নির্ভীক বিচারপতি হবার যাত্রাপথ আর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সীমুখী সুড়ঙ্গ পথ ভিন্ন। ফলে প্রকৃত সংবিধান প্রেমী সেই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সীতে পৌঁছাতে পারবেন না। বৃদ্ধ, অথর্বকে আমাদের মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। সিবিআই জরদগব, ইডি ইডিয়েট তা প্রকাশ্যে প্রতীয়মান। ভয় লাগে, বৃদ্ধের হাতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঠিক আছে তো? অজান্তে নরক গুলজার সেটিং?

যাঁর হাতে দেশের সেনাবাহিনী, সুরক্ষা বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, মন্ত্রীসভা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়, তিনি পারেন না, অথচ সেই কাজটা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মাত্র পঁচিশ মিনিটে করে তাক লাগিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, তাঁর বার্ধক্য, শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক সমস্যা আছে, পরবর্তী যোগ্যতর ব্যক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন। দশ বছর ধরে তিনি চিটফান্ড বা আট বছরে নারদ কান্ডের তদন্ত সারতে পারলেন না। ২০২৯এ ভারত কোথায় পৌঁছাবে, সেই রূপকথা না শুনে খতিয়ে দেখব ২০২৩ সালে ভারতকে কোন রসাতলে হাজির করেছেন। তাঁর দলের কার্যকর্তাদের কেন বলতে হয়, “কোন সেটিং নেই!” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন বুঝলেন, ‘সততার প্রতীক’ শব্দটা জনগনের হাস্যরস উদ্রেক করছে, নীরবে সরিয়ে নিয়েছেন। সেই দাবীতে জনগনকে মিছিল মিটিং বা নবান্ন অভিযান করতে হয়নি। তাহলে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী- ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’র মত ঘৃণ্য জুমলা প্রত্যাহার করছেন না কেন? ভাষণে ভোট হয় না। ভোট হয় ইভিএম ও ইলেকশন মেশিনারিতে।

কয়লা পাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুষ্কৃতিদের কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেননি, পাচার আমি রুখব এবং পাচারের সাথে যুক্ত সব দুর্বৃত্তের ঠিকানা তিহাড় জেল করে দেব। এই প্রতিজ্ঞা যে করতে হবে, তেমন মাথার দিব্যি এনটায়ার পলিটিকাল সায়েন্সে লেখা নেই। হোটেলের কোন কর্মীর কর্তব্যে গাফিলতি হলে ম্যানেজার দৌড়ে আসেন। পরিস্হিতি বেসামাল হলে মালিক নিজে ফয়সালা করেন। ইডিয়েট ইডিকে ভরা এজলাসে মাননীয় বিচারপতি ভর্ৎসনা করলেও সরকারের মালিক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ভাবলেশহীন। তিনি জানেন, লজ্জা দেখিয়ে লাভ নেই কারণ লজ্জা ছোঁয়াচে রোগ। ভবিষ্যতে আরো অর্জন করতে হবে। কর্মীরা জানেন, আম, দই, নতুন কুর্তা-পাজামা থেকে পদিপিসির বর্মী বাক্সে লেনদেন হয়ে যাবে। সতীদাহে ঢাক ঢোল পিটিয়ে হতভাগী সদ্য বিধবার মরণ আর্তনাদ ধামা চাপা দিত। ধার্মিকবৃন্দ পথে খোল করতাল নিয়ে ভজন করতে বেরিয়ে পড়বে, ‘সেটিং নাই! সেটিং নাই!’ ভয়ের কারণ নাই, কারণ ব্যর্থতার জন্য সর্বোচ্চ পদাসীন এনটায়ার পলিটিকাল লোকটির লজ্জাও নাই।

কিছু ব্যতিক্রমী বিচারক কেবল কলকাতা হাইকোর্টে নয়, সমগ্র দেশে সোচ্চার হয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবৃন্দ, প্রশাসন ও সংবাদ মাধ্যম যখন পদলেহী তখন ভারতীয় বিচার ব্যবস্হা দৃষ্টান্ত মূলক পদক্ষেপ নিয়ে জনগনের আস্হা অর্জন করছেন। ইডিয়েট ইডির সিটের মিথিলেশ কুমার মিশ্রাকে আদালতের ভর্ৎসনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঝড়, জল, বৃষ্টিতে যোগ্য চাকুরীপ্রার্থীরা খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে, আর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এই আধিকারিক কি সত্যই তদন্তে অপটু নাকি সুইচ অফ করে রাখা হয়েছে, সেটাই বিষয়। নির্মলাদেবীরা মোদী-দিদির কুস্তির রাজনীতি চান, কোন সুরাহা চান না। আজ দেশে মধ্যবিত্তের সঞ্চয় বিগত পাঁচ দশকে সর্বনিম্ন এবং ঋণের বোঝা সর্বোচ্চ। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত গরীব হচ্ছে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর যুগে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গোষ্ঠ মামার মত লক্ষ্মী ভান্ডারের ঝুড়ি হাতে খপ করে ধরবেন। নরেন্দ্র মোদী রোবটের সাথে কথা বলবেন, চা খাবেন। রোবটরা নির্বোধের মত হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নের কোডিংএ মশগুল।

অনুব্রত মন্ডলের রাস্তার দাঁড়িয়ে থাকা উন্নয়ন আর নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদীর বিকাশের ডিএনএর ফারাক নেই। কংগ্রেসের আমলে কালাধন বিদেশে গচ্ছিত হত, এখন সেই কালাধনের মালিককেও নরেন্দ্র মোদী সরকার প্যাকিং করে বিদেশে চালান করে দিচ্ছেন। না রহেগা বাঁশ, না বাজেগা বাঁশরী। বিশ্ব ঘুরে কীর্তনীয়া নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদী একজন পলাতক প্রতারক বানিয়াকেও দেশমুখী করতে পারেননি, বা আনেননি। অর্ধেকের বেশী ভারতবাসী দলিত, আদিবাসী কিংবা অনগ্রসর জাতিভুক্ত। ব্যবসা বা জমিতে তাঁদের মালিকানা কত শতাংশ? হিন্দু রাষ্ট্রে তাঁদের পেট ভরবে না। বর্ণ হিন্দুদের তুলনায় দলিতরা মালিকানায় এক তৃতীয়াংশের কম। এই ফারাকটা দিনে দিনে বাড়ছে। কোন নির্মলা সীতারমণ বা রামরাজ্যের স্বপ্নে তা মিটবার নয়। দারিদ্রে ১২১টি দেশের মধ্যে ভারতের স্হান ১০৭এ। হ্যাপিনেস ইনডেক্সে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্হান ১২৬তম। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত ১৬১তম। নরেন্দ্র মোদীর কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ তারপরেও জনগন তাঁর কথা শোনেন।

এই তথ্যগুলো পরিবেশন করার মত বলিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম দেশে নেই। সেখানেও মালিকানা বানিয়া শ্রেণীর হাতে। জওহরলাল নেহেরু কালোবাজারীদের ল্যাম্পপোষ্টে বেঁধে শাস্তি দেবার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ইতিহাস তেমন কোন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি, কিন্তু কালোবাজারীরা বহাল তবিয়তে ছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনকারী বানিয়ারা দেশে ফিরবেন না। ফিরবে না বিদেশে সঞ্চিত ভারতীয় কালাধন। আপনি তালিবানী শাসনের চেয়ে কোন নিরিখে ভালো আছেন? ফ্রিজে গোমাংস আছে অনুমান করে মানুষকে হত্যা করা হয়। দলিতের মুখে সরকারী দলের নেতা প্রস্রাব করে। ধর্ষণ করে মৃতপ্রায়কে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাফাই দেন, ওদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভোটের মুখে কয়েক জন সেনার লাশ দেখিয়ে বারবার নির্বাচনী বৈতরণী পার করা যায় না। বিরোধী জোটের ভিতর মীরজাফর ঘাপটি মেরে বসে বিশ্বাসযোগ্যতা বিনাশ করছে। সনিয়া বা রাহুল গান্ধীরা শুনেও শুনছেন না, বুঝেও বুঝছেন না। আপনাদের ধর্মের আফিংএ রোবট বানিয়ে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী রোবটের সাথে ফস্টিনস্টিতে মত্ত।

আদালতের মাননীয় বিচারক পঁচিশ মিনিটে যে কাজ করতে পারেন, দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পঁচিশ মাসে করতে পারেন না কেন? জনগন বিশ্বাস করেন, মাননীয় বিচারক দৃঢ়চেতা ও সৎ। তিনি না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গার মত ভাষণ করেন না। খাবার প্রশ্ন উঠছে কোথায়? সততার জলছাপ মারার প্রয়োজন পড়ছে কেন? কেবল চোররা বলে, এখন আর চুরি করছি না। সৎ মানুষকে তেমন কথা বলতে হয় না। অর্থাৎ দুর্নীতি রোগগ্রস্ত নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী যত দিন আম, দই, নয়া কুর্তা, পাজামা আর পদিপিসির বর্মীবাক্স গ্রহণ করবেন, তত দিন মিথিলেশ শর্মাদের মত আধিকারিকদের ভরা আদালতে ভর্ৎসিত হতে হবে। মাননীয় বিচারপতি যেমন রায় দেন, তেমনই জনগনকে সময় নির্দিষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে কাজ সম্পন্ন করার সীমা বুঝিয়ে দিতে হবে। নচেৎ গামছা, টুথব্রাশ নিয়ে তিনি আহমেদাবাদের ট্রেনে উঠে বসুন। ভারতের মত ঐতিহ্যশালী দেশ কেবল ভাষণে চলবে না, প্রকৃত জ্ঞানী, সৎ, সংস্কৃতিবান, কর্মবীর কান্ডারীর প্রয়োজন। ভারতের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলার দুর্নীতির মহাসাগর কি নির্মলা সীতারমনণ জানেন না? তবে ইডির হাতে ন্যস্ত ১৩১টি কেসের জন্য কেন মাত্র ৬জন তদন্তকারী আধিকারিক নিয়োগ করলেন? আরো ৪জন আধিকারিক পরিচালনা করেন। ইডির আইনজীবী আদালতে আক্ষেপ করেন, প্রতি তদন্তকারী আধিকারিকের মাথা পিছু গড় কেসের সংখ্যা ২২। তাঁদের কোন নিরাপত্তার ব্যবস্হাও কেন্দ্রীয় সরকার করেনি। সুতরাং না খানে দুঙ্গার মত ভাষণের বিষয়ে মোদী সরকার কতটা যত্নশীল পরিষ্কার। আদালত তদন্তকারী সংস্হা নয়, তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। কিন্তু আদালতকে প্রতি পদক্ষেপে দিকনির্দেশ করতে হচ্ছে। আদালত বুঝে গেছেন, নরেন্দ্র দামোদরদাসের সরকারের ১৮০মাসে বছর। এই দুর্নীতিগ্রস্ত, বৃদ্ধতন্ত্র থেকে দেশকে সুরক্ষিত করতে হবে, নয়ত দুর্নীতিগ্রস্তরা ভারতের সম্পদ লুঠে মোদীর সহায়তায় যথারীতি বিদেশে পলায়ন করবে। আদালতের পঁচিশ মিনিটে সাফল্য নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে লজ্জা দেয়নি, দিতে পারবে না। লজ্জা ধারণ করার জন্যও শিক্ষার পরিসর প্রয়োজন। নাটকীয় বক্তৃতায় নাটকীয় পরিবর্তন সম্ভব নয়।

“Stop me if you can”- একজন অভিযুক্ত যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন বুঝতে হবে দেশ খতরেঁ মে হ্যাঁয়। সেটিংএর ঘুণ পোকা তদন্তকারী আধিকারিকদের আত্মবিশ্বাসের কবর রচনা করেছে। পাচার চক্র কতটা সীমা সুরক্ষা বলকে ক্ষতি করেছে জানা নেই। অর্থনীতিতে ব্যর্থতা অঙ্কে ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের তেমন কোন সূচক নেই। ধ্বস্ত আধিকারিককে আদালত কেবল নির্দিষ্ট কেস থেকে নয়, রাজ্য থেকে দূর করতে আদেশ দিয়েছেন। ঝুঁকে পড়া কাঁধ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর চেহারা এঁকে দেয়। সেই ব্যর্থতার বলি রেখার প্রভাব পড়বে আগামী প্রজন্মের আধিকারিকদের উপর। ঠিক তখন অভিযুক্তরা দিনের আলোয় দেশকে চ্যালেঞ্জ করবেন। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী পরাজিত হতে পারেন, কিন্তু ভারতবাসী রাষ্ট্রের সংবিধানের সম্মান রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী। কেবল কলকাতা হাইকোর্ট নয়, দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টের ব্যতিক্রমী বিচারকরা সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মত এনটায়ার পলিটিকাল রাজনৈতিক মুখোশ।