তিনি কমিউনিস্ট পার্টির লড়াকু নেতা, এটা নতুন কোন তথ‍্য নয়,তাঁকে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বাম ও গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান কাণ্ডারীর ভূমিকায় থাকছেন এ খবরেও চমক নেই,কিন্তু কয়েক দশক পর ৭ ই মে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বে  পশ্চিমবঙ্গ মহম্মদ সেলিম নামে  একজন বামপন্থী প্রার্থীকে যেভাবে  দেখল,মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে, যিনি লাল ঝাণ্ডার কর্মী সমর্থকদের মতো  ভোটারদের সাহস যোগালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে – তা রীতিমতো সংবাদ শিরোনামে উঠে এলো। তৃণমূল কর্মীদের অক্ষম ক্রোধের গো ব‍্যাক শ্লোগান উপেক্ষা করে মহম্মদ সেলিমের বুক চিতিয়ে বুথের দিকে হেঁটে যাওয়ার ছবিটাই পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বুঝে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার প্রতীক হয়ে রইল। এবং মিডিয়ার প্রিয় প্রধান বিরোধী পক্ষ বিজেপিকে বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে ছাড়া আর দেখাই গেল না।

মুর্শিদাবাদ,জঙ্গীপুর ছাড়া মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের ভোটগ্রহণপর্ব সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার  ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭ই মে। নির্বাচনী প্রচারে মানুষ প্রশ্ন করেছেন, ভোট দিতে পারা যাবে তো? মহম্মদ সেলিম সহ সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বলেছিলেন প্রতিরোধ করার কথা। বলেছিলেন তাঁরা পাশে থাকবেন। বাস্তবেও তাই ঘটল।

করিমপুরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে অস্ত্র মজুত ছিল। সেখান থেকেই ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল সাধারণ মানুষকে। কিন্তু পিছু হটতে হয়েছিল শাসকদলের দুষ্কৃতীদেরই। কতকটা জেদের বশেই যেন মুর্শিদাবাদের মানুষ বুথে বুথে অধিকার বুঝে নিয়েছেন। পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দিলে ছুটে গেছেন মহম্মদ সেলিম। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করেছেন। ডোমকল , রানীনগর থেকে করিমপুর কার্যত চষে ফেলেছেন তিনি । প্রথম ঘন্টায় সিপিআই (এম) এর এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হলে তাঁকে ফেরত এনে বুথে বসানোর কাজটা যেমন নিজে করলেন তেমনই গোপীনাথপুরে শিশু বিদ্যালয়ের বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের বসানো সিপিআই (এম) প্রার্থীর নাম লেখা ব্যাজ পরা জাল এজেন্টকে ধরে বার করে পুলিশের হাতে মহম্মদ সেলিমই তুলে দিয়েছেন। ফলে নতুনপুরের নওদাপাড়ায় তাঁর পথ আটকানোর চেষ্টা করবে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা সেটা স্বাভাবিক। যদিও সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক পরোয়া করেন নি সেই প্রতিবন্ধকতার। তাঁকে রোখা যায় নি। বরং তৃণমূলের জনৈক স্থানীয় নেতা টি ভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যখন বলেছেন ” আমি হিটলার সরকার আমাকে মহম্মদ সেলিম মেরেছে”। সেই ভিডিও সোশ‍্যাল মিডিয়াতে ঘুরেছে এই শিরোনাম নিয়ে “হিটলার কে তো কমিউনিস্টরাই আঘাত করবে। “

বস্তুত মুর্শিদাবাদ জেলার দুটি আসন এবং মালদা জেলার দুটি আসনের ভোট গ্রহণ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে  মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণেই। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মোট ভোট দানের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ।  ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোট দানের হার ৭৩.৬৮ শতাংশ।

মালদা দক্ষিণে কালিয়াচকের  সিলামপুরে ৩ নং বুথে  ইভিএম মেশিনের ৩০০ ভোট হয়ে যাওয়ার পর অভিযোগ আসে যে বোতাম টেপা হোক ভোট পড়ছে বিজেপিতে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করলে ইভিএম বদল করা হয়। কিন্তু বদলানোর আগে যে ভোট পড়েছে তার কি হবে। এ বিষয়ে বামফ্রন্ট সমর্থিত জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী বলেছেন” ইভিএমের সমস্যার কথা বিরোধীরা প্রথম থেকেই বলে আসছে। আজ আবার প্রমাণিত হল আমরা ভুল বলিনি। নির্বাচন কমিশনকে এই বুথ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” অন্যদিকে এই কেন্দ্রের সমশেরগঞ্জে কংগ্রেসের এজেন্ট সহ কয়েকজন কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে । তেমনই মালদা উত্তর কেন্দ্রের বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ক্যাম্পে তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। রতুয়ায় পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবুও সামগ্রিকভাবে প্রায় সব বুথেই বামফ্রন্ট এজেন্ট বসাতে পেরেছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ,বেশ কিছু বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও এজেন্ট ছিল না।