লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে বিজেপি দামামা বাজানোর চেষ্টা করেছে, যেন মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। মোদী মানেই সব সমস্যার সমাধান। জি-২০ ঘিরে এর জন্য স্বাভাবিকের চারগুণের বেশি খরচ করেছে। এখানে যেমন মমতা ব্যানার্জি মেলা খেলা উৎসব, দুর্গা পুজো, ইফতার সব ব্যবহার করেন নিজেকে বিজ্ঞাপিত করার জন্য। সেভাবেই একজন নেতার মুখ তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে ভক্তমণ্ডলী হিসাবে গড়ে তোলা হয়, দুর্গা প্রতিমার পিছনে যেমন চালচিত্র থাকে, তার পিছনে চালা তৈরি করা হয় এবং সবমিলিয়ে একটা পরিমণ্ডল তৈরি করা হয়। তেমনই এভাবে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি করে সেটাকে মার্কেটিং করা হয়। একাজে সরকারি যন্ত্র ও কর্মসূচি, সব রসদ ব্যবহার করে শাসকদল। এতে মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়ে, অসহায়ের মতো ভাবে অন্য কাউকে ভোট দিয়েই বা কী হবে। জিতবে তো ঐ মোদী কিংবা মমতাই।  

অন্যদিকে বামপন্থীদের রাজনীতি, শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি, মতাদর্শ, আমাদের রাজনৈতিক কৌশলগত লাইন নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হয়। এই অসম প্রচার যুদ্ধে আমাদের কাজটা কঠিন। মানুষের যে দৈনন্দিন চাহিদা, জীবনজীবিকার দাবি এগুলি ঐ বড় গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের আড়ালে অনেক সময়েই হারিয়ে যায়। আপাতভাবে এগুলি ছোটো ছোটো দাবি হলেও এগুলি আমরা তুলে ধরি কিন্তু ব্যাপকতর চালচিত্রের মাঝে এগুলি চোখে পড়ে না। মিডিয়া তো এগুলি দেখায় না, ফলে মানুষের মনে দাগ কাটে না। তাই আমাদের প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য যেসব দাবি তুলে লড়ছি সেগুলি লাগাতার এবং আরও তীব্রতার সঙ্গে করতে হবে। মানুষ এটাই চাইছে। তারা এই লড়াইকে আরও বড় করে দেখতে চাইছে। অর্থাৎ ওদের চালচিত্রের সঙ্গে মাপে তুলনীয়ভাবে দেখতে চাইছে। এটা রাতারাতি করা সম্ভব নয়, কিন্তু সেই লক্ষ্যেই এগতে হবে।

তাই চ্যালেঞ্জ যদি গ্রহণ করতে হয় তাহলে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে বিপুল সংখ্যক কর্মী বাহিনী আমাদের পাশে এসেছে, এবং এখনো ধারেকাছে অনেকেই রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে হবে, কাজে নিতে হবে। সঙ্গে নেওয়ার জন্য তাঁদের কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠক বা নেতা মানে তাঁকে পার্টিজান এবং আর্টিজান দুটোই হতে হবে। মেহনতি মানুষের মতাদর্শে দৃঢ় থাকতে হবে, তেমনই পার্টি সংগঠন, গণসংগঠন, আন্দোলন গড়ে তোলায় দক্ষ হতে হবে। আমাদের পার্টি বিপ্লবী পার্টি, কিন্তু তার গণলাইন আছে। গণলাইন মানে মানুষের মধ্যে গিয়ে তাঁদের দাবি নিয়ে তাঁদের সংগঠিত করা, তাঁদের মধ্য থেকে সমর্থককে কর্মীতে, কর্মী থেকে ক্যাডারে পরিণত করতে হবে, ক্যাডার থেকে নেতা তৈরি করতে হবে। মানুষ আমাদের কাছে যেচে আসবেন, এমন অভ্যাস ছাড়তে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। তার জন্যই ১৭ অক্টোবর পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে সংগঠনকে প্রস্তুত করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাহলে নভেম্বরের পরে আমরা ডিসেম্বরে বলতে পারবো লালঝান্ডা ঘরে ঘরে। সব বুথে আমাদের প্রতিনিধি না থাকলে, যোগাযোগ না থাকলে ভোটার তালিকাকে উপযুক্তভাবে ত্রুটিহীন করবো কী করে! নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবো কী করে! বাস্তবতা হলো, মানুষও এখন সিএএ এনআরসি শুনে শুনে সবরকম ডকুমেন্টেশন বা কাগজপত্র তৈরি করে রাখতে চাইছেন। ভোটার তালিকার মতো ডকুমেন্টে নিজের নাম রাখতে চাইছেন। বুথে গিয়ে সেই কাজে তাঁদের সাহায্য করতে হবে।

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে যাবতীয় ফাঁকফোকর মেরামত করে পঞ্চায়েতের নির্বাচনী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন আসা শক্তিকে সংহত করতে হবে। যারা এসেছে তারা আমাদের শ্রেণির মানুষ, বারো বছরে যন্ত্রণাব্যথিত। বিপুল সংখ্যায় নতুন প্রজন্ম আছে এরমধ্যে। বারো বছর ধরে তারা তৃণমূল আর দশবছর ধরে বিজেপি’কে দেখছে। আগে তৃণমূল কথায় কথায় বামফ্রন্টের ৩৪ বছর দেখাতো। কারণ তখন নানা রকম প্রতিষ্ঠানবিরোধী মানসিকতা কাজ করতো। টিভি মিডিয়া তাতে ধুয়ো তুলতো। এখন ৩৪ বছরের কথা বললে, অনেকেই বলে সেটাই ভালো ছিল। তাই ওরা আর ৩৪ বছরের তুলনা টানে না, টানলে এখন ওদেরই অসুবিধা। আমরাই এখন প্রশ্ন তুলবো, পাড়ার যে স্কুলটা আছে সেটা কবে তৈরি হয়েছিল, গত দশ-বারো বছরে সেই স্কুলের কী দশা হলো। সাঁকো, সেতু, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সমবায় নিয়েও এরকম প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আমরা কী করেছিলাম আর এখন কী দাঁড়ালো সেটা ভূমিস্তর থেকে তুলে আনার দরকার আছে। শুধু সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে মানুষকে দিয়ে সামগ্রিকতা বোঝালে হবে না। মানুষের দৃষ্টিগোচরে থেকে নির্দিষ্ট কথা বলতে হবে, নইলে মানুষের মনে দাগ কাটবে না।

সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ চেহারা ‘ইন্ডিয়া’ দেখে বিজেপি রীতিমতো মুশকিলে আছে। তাই আবার এনডিএ’কে টেনে বের করতে হয়েছে। ওরা মনে করেছিল বিজেপি’র বিরোধী আর কেউ নেই। মোদী বনাম কে? রাহুল? কেজরিওয়াল? নীতিশ? খাড়গে? পাওয়ার? যখন বিরোধীরা সবাই মিলে এককাট্টা হলো, সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এই মুহূর্তে নেতা কে বড় কথা নয়, সর্বভারতীয় নির্বাচনী সমঝোতা হবে না, বরং সাংবিধানিক যে যে বিষয়গুলি আক্রান্ত সেগুলি রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে, তখন বিজেপি মুশকিলে পড়ে গেলো। নেতা নয় নীতির প্রশ্ন, বিরোধীদের বেঙ্গালুরু বৈঠকে সেই প্রস্তাবই এসেছে যা আমরা আমাদের পার্টির কংগ্রেসে আগেই বলেছিলাম। কিন্তু কোনো মিডিয়া ‘ইন্ডিয়া’র সেই ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলছে না। বামপন্থীদের বিকল্প ভাষ্য তুলে ধরছিল নিউজক্লিক। কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের খবর প্রচার করছিল। তাই দেশবিরোধী বলে দেগে দিয়ে প্রবীর পুরকায়স্থ সহ প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে। যারা এখনও বিজেপি কী বুঝতে পারছেন না তারা এগুলি দেখে বুঝে নিন, জরুরি অবস্থাকে ওরা কীভাবে ফিরিয়ে এনেছে।

বিরোধীরা এমন কাজেই ব্যস্ত থাকুক, যা আরএসএস চায়, এমন একটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। মোদী-শাহ মন্দিরে গেলে, রাহুলকেও যেতে হবে। ওরা রাম মন্দির করবে বললে মমতা ব্যানার্জিও বলছেন দীঘায় জগন্নাথ মন্দির করব। কেজরিওয়াল বলছেন বিনাপয়সায় তীর্থযাত্রীদের বাসের ব্যবস্থা করে দেবো। তাহলে ওদের অ্যাজেন্ডাই অন্যরাও রূপায়ণ করবে, আর দারিদ্র রুটি রুজি শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থানের প্রশ্ন পিছনে চলে যাবে। এই অবস্থায় ন্যারেটিভ চেঞ্জ বা ভাষ্য পরিবর্তন করতে হবে। একটা বিকল্প ভাষ্য তৈরি করতে হবে। ‘ইন্ডিয়া’ গঠনের মধ্য দিয়ে যে পথে রাজনীতি যাচ্ছিল তার থেকে একটা পরিবর্তন হলো। অর্থনীতি বেহাল, ক্ষুধা সূচকে ভারত এক বছর ১০৭ থেকে ১১১ নম্বর স্থানে নেমে গেছে, পিছনে শুধু সাহারা মরুভূমির দেশগুলি। এসব কথা বলার সুযোগ এসেছে।

এতে বিজেপি’র তাল একটু কেটে গেছে, ওরা যেমন ভেবেছিল তেমন তো হচ্ছে না। এতে বিজেপি’র প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে। আরএসএস ওদের উগ্র রাজনীতির যা যা অস্ত্র ছিল ঝুলি থেকে একে একে বের করে সব প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। মহিলা বিল, ইউসিসি, হিন্দুরাষ্ট্র, রামমন্দির সব প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। গত তিন মাসে বিজেপি’র তার চরম দক্ষিণপন্থী অবস্থান প্রকাশ করেছে। সাংগঠনিকভাবেও ওরা পুরনো বন্ধুদের আবার ডেকে আনছে। তার সঙ্গে রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার প্রচার করছে। দেশের ভিতরে মণিপুরে আরএসএস সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ চালিয়েছে, বাইরে ইজরায়েল নৃশংস এথনিক ক্লিন্সিং চালাচ্ছে, বিজেপি তাদের সমর্থন করছে। এভাবে বহু সংখ্যকবাদের রাজনীতি চাপানো হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ এভাবেই ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে যায়। আর সংখ্যালঘুবাদ তখন হাতিয়ার তুলে প্রায়ই সন্ত্রাসবাদের পথে যায়। কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয়, কিন্তু দুটোই পরস্পরের পরিপূরক। রাজনীতিতে এই বাইনারি চাপানো হচ্ছে। হয় তুমি এদিকে নয় তুমি ওদিকে- ইরাক যুদ্ধের সময় বুশ একথা বলেছিলেন। এর জন্য ‘আমাদের মতো’ খুঁজে বের করে ‘আমাদের মতো নয়’দের আক্রমণ শানানো হয়। কখনো পোশাক, কখনো খাদ্য দেখিয়ে কারা ‘আমাদের মতো নয়’ চিহ্নিত করা হয়। এভাবেই হিন্দু মুসলিম ভাগ করা হচ্ছে। প্যালেস্তাইনেও ইহুদি বনাম মুসলিম দেখানো হচ্ছে। এখানে বিজেপি নাচতে নাচতে বলছে, কাশ্মীরেও এরকম করতে হবে। আমরা কেউ ইহুদি বিরোধী নই। আমরা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কারণ ইজরায়েল জায়নবাদী রাষ্ট্র। ইহুদিরাও রাস্তায় নেমেছে, তারাও যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে কথা বলছেন। হিন্দু হচ্ছে ধর্ম। কিন্তু হিন্দুত্ব হচ্ছে একটা রাজনৈতিক প্রকল্প। জায়নবাদও তেমনই একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। এতে অন্যদের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। এই জন্যই বিজেপি তাদের সমর্থন করছে। তাদের আইটি সেল মিথ্যা প্রচারও চালিয়েছে। কিন্তু বাংলার যুদ্ধবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহ্য থাকায় এখানে সফল হতে পারছে না। আমরা কেউ হামাসকে সমর্থন করছি না, কিন্তু একটা অবরুদ্ধ জাতি সারা বিশ্বকে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই পথ বেছে নিয়েছে। অত্যাচারীর ভাষ্য আর অত্যাচারিতের ভাষ্য এক হয় না। হামাসকে নিয়ে মিথ্যাপ্রচার চলছে। আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মরিচঝাঁপি, সাঁইবাড়ি থেকে মমতা ব্যানার্জিও নন্দীগ্রাম নিয়ে এরকম অনেক মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন। দক্ষিণপন্থীরা মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রচার করে। এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে এতে বিভ্রান্ত না হয় তার জন্য দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি করে রাখতে হবে।

আমাদের এখানে বামপন্থীদের দুর্বল করে দক্ষিণপন্থীরা কেবল কর্পোরেট লুটে ব্যস্ত, মানুষের জীবনজীবিকা নিয়ে চিন্তিত নয়। শুধু লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকেই নয়, স্কুল কলেজ হাসপাতাল, প্রাকৃতিক সম্পদ, জমি, পুকুর জঙ্গল, যা কিছু সামাজিক তা কুক্ষিগত করা হচ্ছে। এরজন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে। বিষয়টা এরকম যে প্রথমে একজন নেতানেত্রীর নামে ব্র্যান্ড তৈরি করা হয়, তারপর তারা স্থানীয় কিছু মাতব্বর তৈরি করে তাঁদের নাম ছবি ব্যবহার করে। নেতাকে মার্কেটিং করে এই স্থানীয় ম্যানেজাররা প্রাকৃতিক স্থানীয় সম্পদ গিলে খায়। এরাই খনি নদী বেচে দিচ্ছে, এরা জেলা পরিষদে লুটেরা কর্মাধ্যক্ষ বানাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাকে দখলে রাখতে এরা শুরুতে জলসার আয়োজন করে দেয়, তারপরে ধীরে ধীরে সামাজিক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকের চেহারা নিয়ে লুটতন্ত্র কায়েম করে। এভাবে শুধু সামাজিক সম্পদ নয়, এমনকি ছোটো ছোটো ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বৃহৎ হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে। আরএসএস’এর তন্ত্র আর তৃণমূলের যন্ত্র এখানে এক হয়ে কাজ করছে। সেই জন্যই দুর্নীতি মামলায় কেবল রেইড হচ্ছে, কিন্তু কাউকে ধরা হচ্ছে না। দুর্নীতি আর দুষ্কৃতীতন্ত্রের যোগে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভয় মানুষের একাংশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখে, একাংশকে তাঁবে নিয়ে আসে, মানুষ অসহায় বোধ করে। কিন্তু ক্ষোভে থাকা মানুষকে নিয়ে লাগাতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন পরিসর তৈরি করতে পারে কমিউনিস্ট পার্টিই। এরজন্যই সংগ্রামে নতুন যে অংশ আসছে তাকে সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। মূর্তি গড়তে হলে আগে মাটি সংগ্রহ করতে হবে। যে কাঁচা মাটি এলো তাকে মেখে উপযোগী করে নিতে হবে। নতুনকে নিয়ে আসায় বাছাই করার নামে সংকীর্ণতা দেখালে চলবে না। জনগণকে বিশ্বাস করতে হবে, ভরসা করতে হবে। তবে সাঁকো তৈরি হবে মানুষের সঙ্গে সংগঠনের। বিড়ি শ্রমিকের মধ্য থেকে, ইটভাঁটার শ্রমিকের মধ্য থেকে, খেতমজুরের থেকে, আদিবাসী, অনগ্রসর, সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে নেতা তৈরি করতে হবে। তাদের অংশগ্রহণের জায়গা করে দিতে হবে। আমাদের সংগঠনের ভিতরেও তাঁদের এমনভাবে নির্ভয়ে কাজ করতে দিতে হবে যাতে সে কোণঠাসা বোধ না করে। নইলে সংগঠন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাবে।

কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন হলো পার্টির রাজনীতি রূপায়ণের হাতিয়ার, সংগঠনকে রাজনৈতিক বোধে শানিত করে রূপায়ণের উপযোগী করতে হবে। শাখা, এরিয়া, রাজ্য, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমাদের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি প্রয়োগ করতে হবে, কিন্তু কৃত্রিম শৃঙ্খলার কথা বলে শৃঙ্খল বানানো চলবে না। তাহলে নতুন প্রজন্ম আসতে চাইবে না। শৃঙ্খলা আসে মতাদর্শ থেকে, বিপ্লবী চেতনা থেকে নিজেকে স্বেচ্ছায় নিয়োজিত করে। নতুন অংশের ওপর খবরদারি চলবে না, তাদের ভালোবেসে ভুলত্রুটি সংশোধন করে বিপ্লবী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এসব কাজ না করে ‘কর্মী নেই’ বলে আক্ষেপ করলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, বারো বছরে এরাজ্যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যাদের মধ্যে বঞ্চনার ক্ষোভ আছে, কিন্তু বামপন্থীদের প্রতি বিদ্বেষ নেই। এত মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাস সত্ত্বেও নতুন প্রজন্ম থেকে আমাদের কর্মীরা উঠে আসছে, তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে, শ্রমিক কৃষক খেতমজুর মহিলা সব অংশ থেকে ডেমোগ্রাফি অনুযায়ী নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে হবে।

বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী সমস্ত শক্তিকে এককাট্টা করে স্থানীয় আদায়যোগ্য দাবিতে মানুষকে জড়ো করতে হবে। একদিনে সাফল্য আসে না। ধারাবাহিক লাগাতার প্রয়াসে জয়কে ছিনিয়ে আনতে হবে। আমরা অবশ্যই সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে আছি। গোটা রাজ্য লালঝান্ডার জয় দেখতে চাইছে। মানুষকে সেই জয়ের সম্ভাবনা দেখাতে হবে।

সৌজন্যে: গণশক্তি