১৯৩৩সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দিনটি পৃথিবীর ইতিহাসে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ।এই দিন জার্মানির আইনসভা যা রাইখস্ট্যাগ হিসেবে খ্যাত সেই আইনসভায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং এই আগুন লাগানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয় কমিউনিস্টদের।শুরু হয় একেবারে তালিকা ধরে ধরে কমিউনিস্টদের গ্রেফতার করা। হিটলার হুঙ্কার ছাড়লেন” আর কোনো দয়া দেখানো হবে না প্রত্যোক কমিউনিস্ট পান্ডা যেখানে দেখা যাবে গুলি করে মারা হবে কমিউনিস্ট ডেপুটিদের আজ রাতেই ফাঁসিকাটে ঝোলানো হবে”।হিটলারের এই নির্দেশ পালন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার নাৎসি বাহিনী।এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা কমরেড জর্জ দিমিত্রভকে।


ফ্যাসিস্ট শাসকের কোর্ট ব্যবহার করে কমরেড দিমিত্রভ সেদিন ফাঁস করেছিলেন এই কমিউনিস্ট বিরোধী ষড়যন্ত্রের।হিটলারের কাঠগড়ায় সেই সময় দিমিত্রভের জেরায় হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবেলস হয়ে উঠেছিল দিশাহারা। ইতিহাসের পাতা থেকে দেখা যাক সেই ঐতিহাসিক সাওয়াল জবাবের কিছু অংশ ।

দিমিত্রভ:রাইখস্ট্যাগের আগুন লাগানোর ঘটনা তৎক্ষনাত কমিউনিস্ট পার্টি ,সোস্যাল ডেমোক্র্যাট আর অন্যান্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কি না।

গোয়েবেলস:আমায় খুলেই বলতে হচ্ছে পুলিশ যা করা দরকার করেছে ।কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম যে চলছে রাইখস্ট্যাগের অগ্নিকাণ্ড তাকেই সমর্থন করছে।কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।

দিমিত্রভ:১৯৩২-র শরতে ভন প্যাপেনের চ্যান্সেলারশিপের এবং পরে শিলিচারের চ্যান্সেলারশিপের সময় জার্মানিতে পরপর বেশকিছু আক্রমণ এবং বোমা নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে ।কয়েকজন ন্যাশনাল সোস্যালিস্টের বিচার হয়,চরম শাস্তি হয়।আমার প্রশ্ন ১৯৩২-র এই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কি নাৎসিদের কাজ নয়?

গোয়েবেলস:নিশ্চয়ই ।আমার জবাব বোধহয় উস্কানিদাতা চরদের ঐ সব আক্রমণ করতে পাঠানো হয়েছিল ।তারা এস .এস.ডি.এ.পি চক্রের কেউ নয়

প্রেসিডেন্ট: আপনার কি আরো প্রশ্ন আছে?
দিমিত্রভ:মিস্টার প্রেসিডেন্ট ,আমার প্রশ্ন শেষ হয়নি ।এই শেষ প্রশ্নে আমি উস্কানিদাতাদের কথা বলব না ।বলব এমন নাৎসিদের কথা যারা তাদের একজন শত্রুকে হত্যা করেছে এবং পরিণামে প্রাণদণ্ডে দন্ডিত হয়েছে।রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে মুক্তকন্ঠে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে ।করেছেন বর্তমান রাইখচ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলার।
গোয়েবেলস:এই মানুষেরা তাদের মত করে বিশ্বাস করতো তারা ন্যায্য কাজই করেছে।সেই বিশ্বাস থেকেই তারা জল্লাদের মুখোমুখি হয়েছিল।ফুয়ারের(হিটলার)মনে হয়েছিল এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঠিক নয়।এই কারণেই তিনি তাদের অভিনন্দন জানিয়ে টেলিগ্রাম করেছিলেন ।
দিমিত্রভ:নাৎসি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে করা যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মকে ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট সরকার ক্ষমা করেছে একথা সত্যি?


গোয়েবেলস:এই সব মানুষ নিজেদের জীবন আর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়েও কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ।নাৎসি সরকার এদের জেলে পচতে দিতে পারে না।


যেমনভাবে ফ্যাসিস্ট হিটলার তার সহযোগী যারা কমিউনিস্টদের খুন করেছে হত্যা করেছে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস কায়েম করেছে তাদের ক্ষমা করে কমিউনিস্ট বিরোধীতার পুরস্কার দিয়েছেন তেমন ভাবেই এ রাজ্যে তৃণমূল সরকার পুরস্কৃত করেছে জঙ্গল মহলের সেই সব মাওবাদী নামধারী ভাড়াটে খুনিদের যারা জঙ্গলমহলে চারশো হত্যা কান্ড সংগঠিত করেছে এই মানুষগুলির অধিকাংশই ছিলেন শ্রেণীগত ভাবে ছিলেন প্রান্তিক দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ ।তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা ছিলেন সিপিআই(এম)পার্টির কর্মী সমর্থক।ভেবে দেখুন যে ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে এন আই এ তদন্ত করছে ছত্রধর যে সংগঠনের নেতা সেই জনসাধারণের কমিটির বিরুদ্ধে জ্ঞানেশ্বরি এক্সপ্রেসের নাশকতা ঘটিয়ে অতগুলো প্রান কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সেই সংগঠনের নেতা কমিউনিস্ট বিরোধীতার জন্য পেলো যথাযোগ্য পুরস্কার।তৃণমূলের কোন কমিটিতে কে গেল তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই কিন্তু যারা নিজেদের বিশুদ্ধ বাম বলে দাবি করে সিপিআইএম কে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলে তারা কী ফ্যাসিস্ট শাসকের অতীত কার্যকলাপের সঙ্গে বর্তমান শাসকের মিল খুঁজে পান না,নাকি উপযুক্ত পারিতোষিক পেয়ে নিজেদের মুখ এবং কলম দেবীর চরনে সমর্পিত করে নিজেদের বিপ্লবী চরিত্র বজায় রাখবার জন্য সিপিআই এম কে গাল পারবেন আর নিজেদের বিপ্লবী বলে প্রচার করবেন।ঘৃণা লাগে আপনাদের দেখে,ছিঃ আপনারা নাকি কমিউনিস্ট বিপ্লবী????

দিমিত্রভের ফ্যাসিবাদ বিরোধী তত্ত্বের অনেক আলোচনা করেন আপনারা কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে এই অংশটা এরিয়ে যান।

লেখকঃ বিপ্লব ব্যানার্জী

লেখকের নিজস্ব মতামত