টেবিল নং ২১ পরেশ রাওয়াল অভিনীত একটি হিন্দি ছায়াছবি, এই ছায়াছবিটিতে দেখা যাবে র‍্যাগিং এর কারণে নিজের সন্তানের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভয়ংকর প্রতিশোধ নিচ্ছে তার বাবা। র‍্যাগিং একটি সামাজিক ব্যাধি এই বলেই কী আমরা দায় সারব? নাকি এই সামাজিক ব্যাধি নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন?

কেউ কেউ বলেন র‍্যাগিংর প্রথম শিকার হয়েছিলেন ১৮৭৩ সালে নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম সেমেস্টারের শিক্ষার্থী মর্টিমার লেগেট। খাড়া পাহাড়ে দেওয়াল থেকে শক্ত পাথরের ওপর পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্যর বিষয় হলো এই যে বিগত ১৫০বছরে সমাজ সভ্যতার এতো অগ্রগতি হলেও সেই র‍্যাগিং নামক ব্যাধি দূর তো হয়ইনি, উল্টে ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। 

এক শ্রেণীর বিকৃত মনস্ক মানুষের ব্যক্তিগত আনন্দ লাভের জন্য কেন মরতে হবে স্বপদ্বীপ দের। র‍্যাগিং’ বর্তমান সমাজে একটি ভীষণ প্রচলিত শব্দ। অভিধানে যার অর্থ হচ্ছে ‘নগ্নাবস্থায় উৎকট ও কুৎসিত কৌতুক ক্রীড়া’। বাস্তবে এটি আধুনিক তরুণ সমাজের কাছে এক জ্বলন্ত কলঙ্ক। এমন এক লজ্জা, ঘেন্না, অস্বস্তিতে ঘেরা অনুভূতি যার মোকাবিলা প্রতিনিয়ত বহু শিশু ও তরুণদের করে যেতে হচ্ছে। প্রতিক্ষণে এমন হাজারটি ছাত্র মানসিক অত্যাচারের বশবর্তী হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

আজকের দিনে স্কুল ও কলেজে ‘র‍্যাগিং’ শব্দটি খুবই পরিচিত। এখনকার ছেলেমেয়েরা কোনো শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের নিরাপদ মনে করে না কারণ তারা সবসময় কোনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় থাকে। শিক্ষা, জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করে কিন্তু তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা যদি অভিশাপে পরিণত হয় তবে তাদের সন্তানদের জীবনে ঘোরতর দুর্দিন নেমে আসে। একটি শিশু মন যদি সারাক্ষণ বিপদের আসন্নতায় শঙ্কিত হতে থাকে বা ‘র‍্যাগিং’ নামক অত্যাচারের শিকার হয় তবে কীভাবে তার শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে?

আসলে মূল দোষ আমাদের সৃষ্টি করা এই পরিবেশের, এই সমাজ ব্যবস্থার। বাস্তবের কুরুচিমূলক পরিবেশই অপরাধীদের অপরাধ করতে উৎসাহ দেয়। স্বাভাবিকভাবে উল্লাস বা আমোদের ছলে কিছুজন র‍্যাগিংটাকে উপভোগ করতে চায় আর শিকার হিসেবে বেছে নেয় কোনো এক নিরপরাধ ছাত্রকে। মানুষের রুচি আর মানসিকতা আজ এতটাই নীচ যে তারা অন্য একজন মানুষকেই মানসিক এবং শারীরিকভাবে অত্যাচার করে তৃপ্তি পায়।

ভারত সরকার কর্তৃক র‍্যাগিং-এর জন্য অবশ্য বিশেষ আইন চালু করা হয়েছে, সেটি নিম্নলিখিত— “UGC Regulations On Curbing The Menace of Ragging in Higher Educational Institutions,2009.” আইন চালু করার খাতিরে র‍্যাগিং-এ যুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ কিছু শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের তরফে তাদের ভর্তি বাতিল করে দেওয়া হয় এবং যাবতীয় পরীক্ষা, ক্লাস ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত প্রকার কর্মসূচী থেকে তাদের বিরত রাখা হয়। এ ছাড়াও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যাতে সেই নিম্ন মানসিকতা সম্পন্ন ছাত্রটি সুযোগ না পায় তার ব্যবস্থাও সুনিশ্চিত করা হয়।

আইন থাকলেও তার প্রয়োগে রয়েছে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর সেই উদাসীনতার সুযোগ ই তো নিয়েছে সৌরভ চৌধুরীর মতো নরকের কিটরা। কোন প্রভাবশালীর স্নেহধন্য হওয়ার কারণে দুবছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করবার পরেও সৌরভরা কলেজের ছাত্রাবাসে থেকে যায় বহাল তবিয়াতে। আজ স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যু সৌরভদের কুৎসিত কার্যকলাপ সামনে আনলো যদি স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যু না হতো। তাহলে আরও কতো ছাত্রের উপরে এই নরপিশাচের পাশবিক অত্যাচার চলতো। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় ধরে চলা সৌরভ চৌধুরীদের এই জঘন্য অপরাধের সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল একথা মোটেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। এই সৌরভ ই তো কিছুদিন আগে সায়েন্স ফ্যাকালটিতে এস এফ আইয়ের স্টুডেন্ট হেলথ ডেক্সে আক্রমণ চালিয়েছিল কোনও মদত ছাড়া একজন প্রাক্তন ছাত্রের পক্ষে একাজ করা সম্ভব। এরা খুনে এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রয়োগ করা উচিত । কেন এদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হবে না। সৌরভদের মতো নরপিশাচদের শায়েস্তা করতে টেবিল নং ২১ র পরেশ রাওয়াল এর মতো একজন বাবার প্রয়োজন ।

যে তৃণমূল বিজেপি স্বপ্ন দ্বীপের মৃত্যু নিয়ে কুমিরের কান্না কেঁদে এই জঘন্য ঘটনার দায়ভার সিপিআই (এম) এস এফ আইয়ের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে তারা কিন্ত রোহিত ভেমুলা,আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছিল।