![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/ak-9-1024x512.jpg)
বাজারে যেন আগুন লেগেছে। টম্যাটো ১৫০ টাকা। কাঁচা লঙ্কা ৩০০ টাকা। করলা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। আদা ৩৫০ টাকা। বিনস ২০০ টাকা। ক্যাপসিকাম ২৫০ টাকা। ঢ্যাড়শ ১০০ টাকা। বেগুন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। গাজর ১০০ টাকা। ঝিঙে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। পটল ৮০ টাকা। এমন কি গরিবের গাঁটি কচু, সেটাও ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাকি বেশির ভাগ সবজির দামও উর্ধমুখী। ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। দামের সব হিসাবই কেজিতে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T093757.578.png)
এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ কি? সেই কারণ খুঁজতে গর্তে ঢুকে শীত ঘুমে চলে যাওয়া মমতা ব্যনার্জি সরকারের টাস্ক ফোর্স নাকি ফের নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু বাঘের ঘরেই ঘোগের বাস। তাই টাক্স ফোর্স কাঁচকলাটি করবে। আসল কাহিনী তো লুকিয়ে আছে দুটি জায়গায়। প্রথমত, দেশের শাসক নরেন্দ্র মোদী সরকারের কারসাজিতে। সেই কাহিনী কৃষকমারা সর্বনাশা নীতির কাহিনী। যার ফলে সারা দেশ জুড়েই কাঁচা সবজি এবং ফসলের দাম বাড়ছে। মোদীর রাজত্বে কাঁচা সবজির সেই মূল্যবৃদ্ধির হার কখনো কখনো ৪০ শতাংশের সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। তা নিয়ে খবরও হয়েছে সর্বভারতীয় সমস্ত পত্রিকায়। আর দ্বিতীয়ত, জাতীয় স্তরে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির এই নজির ভেঙে আমাদের রাজ্যে রকেটের গতিতে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কাহিনী আবার লুকিয়ে আছে গ্রাম বাংলার হাটে মাঠে। ঠকে যাওয়া কৃষকের ঘরের দাওয়ায় আর গ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতে। সেই কাহিনী আসলে ফড়েদের দাপটের কাহিনী। সেই কাহিনী হলো তৃণমূলের জমানায় তোলা আদায়ের জুলুমবাজির কাহিনী। সেই কাহিনী তৃণমূলের রাজত্বে ‘‘দিদি ট্যাক্স’’-য়ের কাহিনী।
অনেকে দেশজোড়া মূল্যবৃদ্ধির যাবতীয় দায় থেকে মোদী সরকারকে আড়াল করতে মরিয়া। অনেকে আবার এই ফড়েদের আড়াল করতে এবং তৃণমূলের বেলাগাম তোলাবাজি-দুর্নীতির যথেচ্ছাচারকে ধামাচাপা দিতে নানা রকম গল্প ফাঁদছেন। কেউ অজুহাত দিচ্ছেন বর্ষার। বলছেন, বর্ষায় সবজি পচে যায়, তাই চাহিদার তুলনায় জোগানে ঘাটতি পড়ে, তাই বাজারে সবজির দাম বাড়ে। কেউ বলছেন এ’রাজ্যে জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে মোদী সরকারের কি দায়? আবার অনেকে বলছেন, সারা দেশজুড়ে জিনিসের দাম বাড়ছে। আমাদের রাজ্যেও বাড়ছে। এতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার কি করার আছে? একমাত্র বামপন্থীরাই এই দুই দলের থেকে আলাদা। একমাত্র তাঁরাই সপাটে সমস্ত আনাচারের আসল কারনগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T093243.147.png)
একমাত্র তাঁরাই রাস্তায় নেমে কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করেন। যুক্তির ভিত্তিতে দ্বিধাহীন ভাবে আঙুল তুলতে পারেন শাসকের বিরুদ্ধে। তা সে মূল্যবৃদ্ধিই হোক, অথবা অন্য কিছু।
সারা দেশে লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির জন্য তো মোদী সরকারই দায়ী। এতে কি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকা উচিত? না, উচিত নয়। সুনির্দিষ্ট কারনেই উচিত নয়। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ ঘটিয়ে বেসরকারি মালিকদের অবাধ লুটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশজুড়েই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। কেন্দ্রের এই সর্বনাশা নীতির ফলে চাষে সেচের খরচ মারাত্মক বেড়ে গেছে। কৃষকের পেটে লাথি মেরে মোদী সরকার সারে ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় আরো বেড়েছে সারের দাম।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T093236.215.png)
একই রকম ভাবে বীজ সহ সমস্ত কৃষি উপকরণেরও দাম বেড়েছে। এর ফলে চাষের খরচ মারাত্মক বেড়ে গেছে। তাই দেশজুড়ে সমস্ত কৃষিপণ্যের দামই উর্ধমুখী। আলু, টম্যাটো, পিঁয়াজ থেকে শুরু করে ধান, গম সব কিছুর দামই চড়চড়িয়ে বাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর সরকারের কোন কোন অপকর্মের জন্য আমাদের রাজ্যে কাঁচা সবজি সহ সমস্ত ফসলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই আলোচনায় একটু পরে আসছি। আর আগে আসি বর্ষার প্রসঙ্গে। বর্ষায় সবজি পচে যায়, তাই চাহিদার তুলনায় জোগানে ঘাটতি পড়ে, তাই বাজারে সবজির দাম বাড়ে- এই কথাগুলো সত্যি। এটা অনেকটা চিরন্তন সত্যের মতো। এই চিরন্তন সত্যের বাইরেও অনেক সময় অনেক কিছু থাকে, যা কিনা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটকের মতো কাজ করে। যে অনুঘটক কোনো প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। অস্বাভাবিক গতিতে কোনো প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আমাদের রাজ্যে সেটাই ঘটেছে। সেই অনুঘটকই আসলে তৃণমূলের তোলাবাজির কারবার। গ্রাম বাংলার ‘‘দিদি ট্যাক্স’’। সেই ‘‘দিদি ট্যাক্স’’-য়ের কথা বলার আগে বর্ষার প্রসঙ্গটা নিয়ে আরো একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। আমাদের রাজ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বর্ষার যুক্তিটা আংশিক সত্যি। অর্ধ মূর্খের মতোই অর্ধেক সত্যি। কারন, এখনো তো ভালো করে বর্ষাই শুরু হয়নি। লাগাতার এমন বৃষ্টিও শুরু হয়নি যে ফসল পচতে শুরু করে দিয়েছে। তাই এই বর্ষার যুক্তিটা পুরোপুরি সত্যি নয়। এখনই সবজির এতো দাম। বর্ষা ভালোভাবে নামলে সবজির দামটা তবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আর বর্ষা কি শুধু তৃণমূলের আমলে হচ্ছে? বামফ্রন্টের আমলে বর্ষা হতো না? বামফ্রন্টের আমলেও বর্ষায় অনেক সময় লাগাতার বৃষ্টি হতো। কই, তখন তো বাজারে এমন আগুন লাগতো না।
তাহলে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণটা কি? আসলে পশ্চিমবঙ্গে এখন ফড়েদের রাজত্ব। কৃষক ফসলের যে দাম পাচ্ছেন তার তিন থেকে চার গুন বেশি দামে বাজারে সবজি বিকুচ্ছে। কৃষক আর বাজারের ক্রেতাদের এই মাঝের অংশটাতেই ফড়েদের খেলা। নিজেদের আখের গোছাতে তারা ইচ্ছা মতোই কাঁচা সবজি সহ সব ফসলের দাম বাড়িয়ে চলেছে। যেমন আলুর কথাই ধরুন। এবারে আলু চাষের মরসুমে মাঠ থেকে কাঁচা আলু বিক্রির সময় কৃষক কেজিতে পাঁচ টাকা দাম পেয়েছেন। গণশক্তি সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে কৃষকের চাষের খরচই ওঠেনি। ফড়ে এবং হিমঘরের মালিকরা কম দাম দেওয়ায় কৃষকের চরম সর্বনাশ হয়েছে। অথচ সেই আলুই এখন বাজারে ১৬ টাকা (জ্যোতি) এবং ২২ টাকা (চন্দ্রমুখি) কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T093227.167.png)
কিছুদিন যেতে দিন, শারদোৎসবের সময় এই জ্যোতি আলুর দামই কেজিতে ২৫ থেকে ২৮ টাকা এবং চন্দ্রমুখী প্রায় ৪০ টাকা কেজিতে গিয়ে ঠেকবে। গতবছরও তাই হয়েছিলো। ভাবুন একবার! কোথায় কৃষক পেলো কেজিতে পাঁচ টাকা। কোথায় এখন সেই আলুই আপনাকে ১৬ থেকে ২২ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। আর কিছুদিন বাদে কোথায়ই বা আপনাকে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে ২৮ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে সেই আলু কিনতে হবে। ফারাকটা একবার দেখুন! কোথায় ৫ আর কোথায় ৪০। আকাশ জমীন ফারাক। পরিভাষায় ‘‘হেল অ্যান্ড হেভেন ডিফারেন্স’’। অন্যান্য সবজি, তরিতরকারি, ধান এসবের ক্ষেত্রেও কৃষকের ঠকে যাওয়ার কাহিনী কিন্তু সেই একই।
রাজ্যের অনেক কৃষকই মহাজনের থেকে ধার নিয়ে খেতে আলু ফলিয়েছিলেন। যেমন অনেকেই মহাজনের থেকে ধার নিয়ে ধান চাষ করেন, অন্যান্য সবজি চাষ করেন। এই অবস্থায় ফসলের লাভজনক দাম না পেয়ে দেনার দায়ে অনেক কৃষকেরই চরম সর্বনাশ হয়ে গেছে। সর্বস্বান্ত হয়ে তাঁদের মধ্যে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের রাজ্যে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা যার ফলে খুব বেড়েও গেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর সরকার কৃষক আত্মহত্যার এই ঘটনাগুলি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা আজগুবি অজুহাত খাড়া করছেন।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T094116.890.png)
মিথ্যে গল্প বানিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, পারিবারিক গোলোযোগ, প্রেমে দাগা খাওয়ার মতো বিষয়গুলিই নাকি কৃষকদের আত্মহত্যা করার কারন। সেটা অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। এখন ফড়ে আর ‘‘দিদি ট্যাক্স’’-য়ের বিষয়টাতেই ফিরে আসা যাক।
কৃষকদের ঠকিয়ে, সর্বস্বান্ত করে যে ফড়েরা পকেট ভারি করছে সেই ফড়েদের থেকেই আবার তোলাবাজির টাকা আদায় করছে গ্রামাঞ্চলের তৃণমূলী পান্ডারা। চালু কথায় সেটাই “দিদি ট্যাক্স”। কৃষকের সর্বনাশ। মানুষের সর্বনাশ। কিন্তু ফড়ে আর তৃণমূল নেতাদের পৌষ মাস। কৃষককে ঠকানোর টাকায়, মানুষের পকেট কাটা টাকায় তৃণমূলের নেতা আর ফড়ে দুই দলেরই পকেট ভরছে। তোলাবাজ-লুটেরা তৃণমূল এবং ধান্দাবাজ ফড়ের দল তাতে মহানন্দে বগলও বাজাচ্ছে। আর এখন তো আবার পঞ্চায়েতের ভোট। গ্রামে গ্রামে ভোট লুটের বাহিনী সাজাতে তৃণমূলের দেদার টাকা প্রয়োজন। তাই এই ‘‘দিদি ট্যাক্স’’ বা তোলাবাজির জুলুমটা আরো বেড়েছে। ফড়ের দলও তাই এক হাতে তৃণমূল নেতাদের ‘‘উপরি দাবি’’ মেটাচ্ছে, আর অন্য হাতে সবজির দামও দেদার বাড়িয়ে চলেছে। লেনা আর দেনা। পরিস্কার হিসাব। একদিকে দলের স্বার্থে সাধারণ মানুষের পাশে না থেকে মমতা এবং তাঁর সরকার এই ফড়েদেরই স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। আর অন্যদিকে, বাজারে সবজি, মাছ সবকিছুর দামও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে। যে কোনো চিন্তাশীল মানুষই বুঝবেন, কাঁচা সবজির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ নিছক বর্ষা নয়।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2023/07/image-2023-07-06T093210.895.png)
আমাদের রাজ্যে সবজি এবং ফসলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তাই মোদী আর ‘‘দিদি’’ দুই সরকারই দায়ী। এই ফড়েরাও আবার ‘‘দিদি’’ আর মোদী দু’দলেরই বন্ধু। তাই কেন্দ্রের মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বা রাজ্যের মমতা সরকারের পক্ষ থেকে আইন করে এই ফড়েদের দাপট কমানোর কোনো চেষ্টাই করা হয় না। মোদী এবং “দিদির” এই যাঁতাকলে পিষেই আমাদের রাজ্যের গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। বাড়ছে সবজি, মাছ সবকিছুর দাম।