৬ই ডিসেম্বর একটি কালো দিন। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির বর্বর আঘাতে ৪০০ বছরের পুরোনো সৌধ বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন। বিশ্বের দরবারে দেশের মাথা নত হবার দিন। সংখ্যালঘু মুসলিম ও অসাম্প্রদায়িক সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয় ভেঙে খানখান হবার দিন।


নিবন্ধের সূচনায় ‘মৌলবাদ’ কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে একটুখানি আলোচনা করে নেওয়া দরকার। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের মধ্যেকার অন্তর্গত সম্পর্ক অনুযায়ী মৌলবাদ হল সাম্প্রদায়িকতাবাদের মতাদর্শগত ভিত্তি। বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্দ্ধে ইউরোপে প্রোটেস্টান্টপন্থীদের আন্দোলন থেকে বাইবেলের ভাবার্থকেই খ্রিস্টানদের জীবন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে মৌলিক বলে দাবি করা হল। এর থেকেই আভিধানিক অর্থে মৌলবাদ কথাটি এসেছে।
মানব সমাজের বিকাশের নির্দিষ্ট পর্যায়ের জ্ঞানকে যখন একমাত্র বা চরম বলে মনে করা হয়, তাকেই মৌলবাদ বলা হয়। অর্থাৎ জ্ঞানের বিকাশ বা পরিবর্তনকে অস্বীকার করে মৌলবাদ। উদাহরণস্বরূপ-টলেমির সৌরধারণা (সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে) পরিবর্তন হয়ে এল গ্যালিলিও, কোপার্নিকাসের সৌরধারণা। এটাই জ্ঞানের অগ্রগতির ধারা বা গতিশীলতা। এই গতিশীলতাকে অস্বীকার ক’রে মৌলবাদীরা গ্যালিলিও, কোপার্নিকাসের ওপর আক্রমণ সংঘটিত করে। মৌলবাদ জ্ঞান-বিজ্ঞান, ঐতিহাসিক সত্যতাকেই অস্বীকার করে। এই পথেই আমাদের দেশের হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদী শক্তি একদিকে পুরাণ কাহিনী ও অন্যদিকে শরিয়তি বিধানকে অমোঘ ও চূড়ান্ত বলে মনে করে।


সমস্ত ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যকে অস্বীকার ক’রে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ ও তার আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর এস এস) তথা সমগ্র সংঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার পেছনেও কাজ করে চলেছে এই মৌলবাদী চিন্তা।
একটু অতীতের দিকে চোখ ফেরালে আমরা জানতে পারব যে, রামমন্দির-বাবরি মসজিদ ইস্যুতে যে সমস্ত দাবিগুলি আর এস এস, তাদের রাজনৈতিক শাখা বি জে পি ও সংঘ পরিবারের অন্যতম শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তুলেছিল সেগুলি হল ১) ‘রামায়ণ’ মহাকাব্যের ‘রাম’ অযোধ্যায় জন্মেছিলেন, ২) সেই অযোধ্যায় রামের জন্মস্থানে ছিল এক রামমন্দির, ৩) সেই মন্দির ভেঙে বা দখল করে অতীতে মুসলমান সম্রাট বাবরের শাসনকালে এখানে বাবরি মসজিদ গড়ে উঠেছিল, ৪) অতএব বাবরি মসজিদকে সরিয়ে এখানে রামমন্দির গড়তে দিতে হবে। পরবর্তীকালে যা ঘটেছে আমরা সবাই জানি। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ‘করসেবা’র নামে হাজার হাজার উন্মত্ত সাম্প্রদায়িক জনতা অযোধ্যায় জড়ো হয়ে তাবড় তাবড় বিজেপি নেতা ও সংঘ পরিবারের মাতব্বরদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে মাত্র একদিনেই বাবরি মসজিদের বিশাল ইমারতটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সুপ্রীম কোর্ট পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ রেকর্ডের ভিত্তিতে ওখানেই রামমন্দির হবে বলে রায় দেয়। আর মসজিদের জন্য ৫ কিলোমিটার দূরের একটি স্থান নির্দিষ্ট করে। যদিও বাবরি মসজিদ কমিটি সেই রায় মানতে পারেনি। তাই রামমন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে আগামী ২২শে জানুয়ারি,২০২৪ তারিখে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এই মন্দিরের ভিত পুজোও হয়েছে সাড়ম্বরে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতিতে। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত দেখা যায় নি।


রামচন্দ্র হিন্দু ধর্মবিশ্বাসী অনেক মানুষের কাছে ভগবান রূপে পূজিত হন। যুগ যুগ ধরে মহাকাব্যের নায়ক রামচন্দ্রের দেবতার আসন অনেক মানুষের মনে পাকাপোক্ত হয়ে আছে। এটা বিশ্বাসনির্ভর অনুভূতি। কিন্তু নির্মম সত্য এটাই যে, রামচন্দ্র কোনও ঐতিহাসিক চরিত্র নন। অর্থাৎ রক্তমাংসের মানুষ নন। মহাকাব্যের নায়ক। হিন্দুবিশ্বাসীদের কাছে আরাধ্য দেবতা। এহেন রামচন্দ্রের জন্মস্থান, সেখানে থাকা অতীতের রামমন্দির, সেই রামমন্দির পুনর্নির্মাণে ও উদ্বোধনে মোদী-অমিত শাহ তথা সমগ্র সংঘ পরিবারের সাজ সাজ রব আসলে ঐতিহাসিক সত্যতাবিহীন মৌলবাদী ভাবনার ফল। সংক্ষেপে এই সত্যকে তুলে ধরার বিনম্র প্রয়াসেই এই নিবন্ধের অবতারণা।


পরাধীন ভারতে ইংরেজ সরকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসটিকে স্বদেশীয়ানা প্রচারের অজুহাতে নিষিদ্ধ করেছিল। ওই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘সব্যসাচী’ সেই সময় দেশপ্রেমিকদের মনে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। এখন যদি কেউ ‘সব্যসাচী’ চরিত্রটিকে বাস্তব ভেবে দাবি তোলেন যে, ‘সব্যসাচী’র জন্মস্থান খুঁজে বার করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য, এই কাজে বাধা দেওয়া আসলে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের দালালি করা। তবে সেই পাগলের প্রলাপকে কি আমরা মেনে নেব দেশদ্রোহিতার কলঙ্কের ভয়ে? রামায়ণের ‘রাম’ চরিত্রে কেউ যদি কোনও ন্যায়নীতির প্রেরণা খুঁজে পান কিংবা ‘পথের দাবী’র ‘সব্যসাচী’ চরিত্র থেকে কেউ যদি দেশপ্রেমের প্রেরণা খুঁজে পান, তাতে আপত্তির কিছু নেই। এমনকি কেউ যদি মহাকাব্যের নায়ক বা উপন্যাসের নায়কের বাস্তব জন্মভূমি খোঁজার জন্য খননকার্য চালাতে চান,তাও তাঁদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এইরকম বিষয় নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করার বেলেল্লাপনা, যা মোদী-শাহরা করছেন, তা আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে যুক্তিবাদী মানুষের পক্ষে কি মেনে নেওয়া সম্ভব?


যে রামমন্দির বিতর্ক ঘিরে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে বিশ্বহিন্দু পরিষদ-আর এস এস-বিজেপি আগুন জ্বালিয়েছে, দাঙ্গায় মানুষ মেরেছে, যে নবনির্মিত রামমন্দিরের আসন্ন উদ্বোধনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে হিন্দু ভাবাবেগ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে এবং সেই ভাবাবেগে ভর ক’রে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হবার চেষ্টা করছে বি জে পি, তার পশ্চাৎপটে সারবত্তা ও ঐতিহাসিক সত্যতা আছে কিনা তা দেখে নেওয়া যাক।


প্রশ্ন হল অযোধ্যা কি রামের জন্মভূমি? এই প্রশ্নের পাশাপাশি রয়েছে আর একটি প্রশ্ন-আজকের অযোধ্যা কি রামায়ণের অযোধ্যা? রামের কথা ও কাহিনির আদিগ্রন্থ ‘রামকথা’। যা আর এখন পাওয়া যায় না। বাল্মীকি এই রামকথাকেই দীর্ঘ মহাকাব্যিক কবিতার ছাঁচে পুনর্লিখিত করেন রামায়ণে। যেহেতু এটি একটি কবিতা এবং বর্ণিত ঘটনাগুলি হয়তো বা কবির কল্পনা, তাই যতক্ষণ না কোনও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রমাণাদি মেলে, ততক্ষণ কোনও ঐতিহাসিকের পক্ষে রামায়ণের চরিত্রগুলিকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব রূপে বা ঘটনাস্থলগুলিকে ঐতিহাসিক স্থান রূপে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই ঐতিহাসিক তথ্যাদি আর প্রচলিত ধারণার মধ্যে বিরোধ থাকে। এই অভিমতটি হল সর্বপল্লী গোপাল, রোমিলা থাপার, বিপান চন্দ্র, হরবন্স মুখিয়া, সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রমুখ ঐতিহাসিকদের।


কলিযুগ শুরু খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩১০২ থেকে, ত্রেতাযুগ আরও কয়েক হাজার বছর আগে। বাল্মীকির রামায়ণ অনুযায়ী অযোধ্যার রাজা রাম জন্মেছিলেন সেই ত্রেতাযুগে।


অযোধ্যা সম্পর্কে সবচাইতে প্রাচীন উল্লেখ রয়েছে অথর্ব বেদে। অথর্ব বেদ এক হাজার থেকে আটশত খ্রিষ্টপূর্বাব্দ কালের মধ্যে রচিত। এই বেদ মতে অযোধ্যা একটি পুরাণ-কল্পিত নগর। এটি দেব-নগরী বলে বর্ণিত হয়েছে। তিনশত খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বৌদ্ধ পালি গ্রন্থ ‘সংযুক্তিনিকায়’-এ (তৃতীয় খন্ড, পৃঃ ৩৫৮ ও চতুর্থ খন্ড, পৃঃ ১৬২ ফুটনোট সহ, নালন্দা সংস্করণ) উল্লেখিত অযোধ্যা গঙ্গার তীরে অবস্থিত, যার সঙ্গে ফৈজাবাদ জেলার সরযূ তীরে অবস্থিত অযোধ্যার কোনওরকম সম্পর্ক নেই।
আজ যেখানে অযোধ্যা, সেখানে ওই পুরাকালে জনবসতির কোনও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ মেলে না। ওই অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসতি গড়ে ওঠার সম্ভাব্য কাল খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী। পুরাতাত্ত্বিক চিহ্নগুলি সে সময়ের যে জীবনযাত্রার ইঙ্গিত দেয়, তা অতি সাধারণ এবং রামায়ণের বর্ণনার চাইতে অনেক বেশি আদিম। অযোধ্যার অবস্থিতি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। পুরনো বৌদ্ধ পুঁথিতেও অযোধ্যার যেটুকু উল্লেখ রয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, অযোধ্যার অবস্থিতি গঙ্গার তীরে, আজকের অযোধ্যার মতো সরযূর তীরে নয়।


পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দী এবং এর পরের পর্যায়ের শিলালিপিগুলিতে অযোধ্যাবাসীদের উল্লেখ থাকলেও, অযোধ্যাকে রামপূজার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে কোথাওই বর্ণনা করা হয় নি। (এপিগ্রাফিক্স ইন্ডিকা, ১০ পৃঃ ৭২; ১৫ পৃঃ ১৪৩ ; ১ পৃঃ ১৪) হিউয়েন সাঙের বর্ণনায় অযোধ্যা বৌদ্ধদের এক অন্যতম কেন্দ্র। যেখানে রয়েছে প্রচুর স্তূপ, মঠ এবং অল্পসংখ্যক অবৌদ্ধ মানুষ। কথিত আছে, বুদ্ধদেব অযোধ্যায় কিছুকাল ছিলেন। তাই এই শহর বৌদ্ধদের এক পীঠস্থান ছিল।


জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও অযোধ্যা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথম ও চতুর্থ জৈন তীর্থঙ্করেরও জন্ম এখানে। প্রাচীনতম জৈন মূর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ-তৃতীয় শতাব্দীর জৈন মূর্তির টেরাকোটা এই অঞ্চলেই আবিষ্কৃত হয়েছে। অর্থাৎ অযোধ্যার পরিচিতি ছিল কেবল রামভক্তদের নয়, আরও অনেক ধর্মেরই পীঠস্থান হিসেবে। রামপূজার কেন্দ্র হিসেবে এর উত্থান বরং অপেক্ষাকৃত অনেক পরে। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে রামপূজা জনপ্রিয় হতে থাকে, মূলতঃ রামানন্দী সম্প্রদায়ের উত্থান ও হিন্দিতে রামায়ণ রচনার কারণে। পঞ্চদশ, ষোড়শ শতাব্দীতেও শৈব্যদের প্রাধান্য ছিল বেশি এবং রামানন্দীদের সে সময়ে অযোধ্যায় খুব বেশি ডেরা বাঁধতে দেখা যায় নি। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে রামানন্দী সাধুদের বিপুল সংখ্যায় অযোধ্যায় বাস করতে দেখা যায় এবং তার পরের শতাব্দীগুলিতেই সাধুরা অযোধ্যায় তাদের অধিকাংশ মন্দিরগুলি গড়ে তুলতে থাকে। সুতরাং আর এস এস-বি জে পি’র পুরোনো মন্দির ভেঙে সেই জমিতে বাবরি মসজিদ গড়ে ওঠার ভাষ্য এখনও পর্যন্ত কোনও ঐতিহাসিক তথ্য দ্বারা সমর্থিত নয়।


এই মসজিদ যে মুঘল সম্রাট বাবরের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে মসজিদের দরজার দুপাশে পারশি ভাষায় লেখা উল্লেখ ছাড়া কোনও প্রমাণ ছিল না। বাবরের আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’র প্রথম অনুবাদিকা শ্রীমতী বেভেরিজ ওই গুরুত্বপূর্ণ অংশটির অনুবাদ করেছেন বইয়ের শেষে। সেখানে লেখা আছে—‘যাঁর ন্যায়ের শাসন স্বর্গদ্বার স্পর্শ করেছে, সেই সম্রাট বাবরের আদেশে মহামতি মীর বাকী এই দেবদূতাবাস নির্মাণ করেছেন’। এই পারশি খোদাই থেকে কেবল এইটুকুই বোঝা যায় যে, বাবরের অনুগামী জনৈক মীর বাকী এই মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। এই লেখাতেও কোথাও মন্দিরের জমিতে মসজিদ গড়ে তোলার কথা বলা নেই এবং বাবরের স্মৃতিকথাতেও অযোধ্যায় মন্দির ভাঙার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। শ্রীমতী বেভেরিজ তুর্কি ভাষা থেকে ইংরেজিতে ‘বাবরনামা’র তর্জমা করেছেন ১৯২১ সালে। তিনি তাঁর তর্জমায় একটি পরিশিষ্ট সন্নিবেশিত করেন। সেখানে মসজিদের বাইরের দেওয়ালে উৎকীর্ণ একটি লেখার উল্লেখ করা হয়েছে। যেটি অনুযায়ী মসজিদটির নির্মাণকাল ৯৩৪ থেকে ৯৩৫ হিজরি অব্দ অর্থাৎ ইংরেজি ১৫২৮ সাল থেকে ১৫২৯ সাল পর্যন্ত। উৎকীর্ণ লেখাটির কোনও অংশে কোনও মন্দিরের উল্লেখ নেই। সুতরাং একটি রামমন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল এই জাতীয় আন্দাজ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।কোনওরকম ঐতিহাসিক সত্য অনুসন্ধান না করেই মন্দির ভাঙার কাহিনি ওই অঞ্চলের ব্রিটিশ রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


তাহলে দেখা যাচ্ছে বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে আর এস এস-বিশ্বহিন্দু পরিষদ-বি জে পি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পিত তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে দেশজুড়ে মানুষ খেপিয়েছে করসেবার নামে, সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বেলেছে, মসজিদ ভেঙেছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে সেই একই ভিত্তিহীনতা ও সত্যহীনতার ওপর ভর করে নবনির্মিত রামমন্দিরের আসন্ন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ভাবাবেগ তৈরিতে নেমেছে। মৌলবাদী মতাদর্শের ভিত্তিতে কেবলমাত্র বিশ্বাসের ওপর তারা মিথ্যার বিনির্মাণ করে চলেছে। মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা ও বিষয়গুলি থেকে নজর ঘুরিয়ে দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করেই তারা ক্ষমতায় এসেছে, আবারও সেই ভাবেই ক্ষমতাসীন হতে চাইছে। দুঃসহ মূল্যবৃদ্ধি, বিপুল কর্মহীনতা, ভয়াবহ কৃষি সংকট, শিক্ষার অধিকার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাওয়া সহ জনজীবনের অপরাপর সমস্যাগুলো নিয়ে ওদের কোনও মাথাব্যথা নেই। ওরা বিজ্ঞান ও ইতিহাসের বিকৃতি সাধনে তৎপর। কারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাস সত্যকে উন্মোচিত করে। তাই ইতিহাসকে অস্বীকার করে মৌলবাদী পথে ওরা ভাবাবেগে ধার্মিক মানুষকে ভাসিয়ে দিয়ে কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের কাছে দেশটাকে বিকিয়ে দিতে চায়। সেটাই ওদের ‘রামরাজ্য’। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে তিনটিতে বি জে পি-র জয়লাভে একথা প্রমাণিত হয় না ওদের নীতি সঠিক ও জনমুখী। এহেন ফলাফলের পশ্চাতে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। সে আলোচনার পরিসর এখানে নেই। ওদের স্বরূপ উন্মোচনই আজকের প্রেক্ষিতে প্রকৃত ধর্মাচরণ, প্রকৃত দেশপ্রেমিক কাজ।