বাংলা নববর্ষ শশাঙ্ক না আকবর— কার তৈরি? 

বাংলার মানুষ মূলত চার ধরনের ক্যালেন্ডারের সঙ্গে পরিচিত। দুটি সৌর ক্যালেন্ডার, দুটি চান্দ্র ক্যালেন্ডার। সৌর ক্যালেন্ডার দুটি হল গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি ও বাংলা বর্ষপঞ্জি। চান্দ্র ক্যালেন্ডারদুটির একটি হল হিজরি বর্ষপঞ্জি, আরেকটি চৈতি নববর্ষের পঞ্জি যা বাংলানিবাসী মারোয়াড়িদের মধ্যেই মূলত দেখা যায়। গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার বাংলায় ইংরেজরা আসার আগে স্বভাবতই ছিল না। হিজরি ক্যালেন্ডারও ছিল না ইসলামি শাসন শুরুর আগে। অপর চান্দ্র ক্যালেন্ডারও যে বঙ্গজ, তা নয়। কিন্তু বাংলা ক্যালেন্ডার বলে আসলে আমরা যাকে চিনি তার হদিশ খুঁজতে গেলে অধিকাংশেই বলে থাকেন মুঘল বাদশা আকবরের কথা। চান্দ্র হিজরি সনে বাংলার চাষাবাদের তল পাওয়া মুশকিল যা মূলত সৌরচক্রকে অনুসরণ করে থাকে; ফলে নিয়মিত খাজনা আদায়ে অসুবিধের সৃষ্টি হচ্ছিল। তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে আকবরের নির্দেশে আমির ফতেহ উল্লাহ শিরাজী বাংলা সনের পরিকল্পনা করেন ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে আকবরের সিংহাসন আরোহণকে স্মরণে রেখে। ভিন্নমতে ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে শত্রুনিধনকে উদযাপন করতে বাংলা সন চালুর কাহিনি শোনা যায়। এ-ও বলা হয়ে থাকে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামানুসারে ১২টি বাংলা মাসের নামকরণ হয়েছিল। আবার শিরাজী-র পরিকল্পিত মূল ১২টি মাসের নাম বর্তমান ১২টি মাস ছিল না, বরং আরবি ও ফারসি নাম ছিল মাসগুলির, কালের ফেরে তা আজকের রূপ পরিগ্রহ করেছে, এ মত-ও প্রচলিত। আকবরের সময় মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা নাম ছিল শোনা যায়, যা শাহজাহানের সময়কালে এসে আজকের ৭দিনের হপ্তায় পরিণত হয়। 

অনেকের মতে আকবরের সময় বাংলা সন চালু হলেও বাংলায় তাকে প্রথম সার্থক প্রয়োগ করেন বাংলার সুবাদার ও প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। অনেকে আবার বাংলার পরাক্রমী হিন্দু রাজা শশাঙ্ককে বাংলা সন চালুর কারিগর মনে করে থাকেন। 

তুল্যমূল্য বিচার করলে দুই পক্ষেই সংগতি ও অসংগতি বিদ্যমান। কৃত্তিবাসী রামায়ণ যা আকবর-পূর্ব কালে তৈরি সেখানে মাঘ মাসে কৃত্তিবাসের জন্মের উল্লেখ পাওয়া যায়। ফলে শিরাজীর নক্ষত্রানুসারে বাংলা মাস পরিকল্পনার বহুপূর্বেই সমতুল মাস পরিকল্পনা বর্তমান। আকবর-পূর্ব বাংলা সাহিত্যে বিশেষত অনুবাদ ও মঙ্গলকাব্যগুলিতে কোথাওই বঙ্গাব্দের হদিশ মেলে না, মেলে শকাব্দের হদিশ। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে এসে অবশ্য শক দিয়ে কেউ অব্দ বিচার করে না বাংলায় আর। সে হিসেব কালের নিয়মে বাতিল হয়েছে।

শশাঙ্ক যদিও বা বাংলা সনের পরিকল্পনা করেও থাকে তা বাংলার সামাজিক জীবনে তেমন প্রয়োজনীয় রূপে অনুভূত হয়নি দীর্ঘকাল, আকবরের আমলে শিরাজীর বাংলা সন পরিকল্পনা মৌলিক কি না তা হলফ করে না বলা গেলেও, এটুকু নিঃসন্দেহে বলা চলে যে বাংলা সন তার পর থেকে সামাজিক জীবনে অনেক বেশি উপযোগী রূপে আবির্ভূত হয়, ফলে তার চল বাড়ে। কোনো কিছুর প্রয়োগে বা ব্যবহারেই আসলে সে জিনিসে মূল্য আরোপন ঘটে। 

নববর্ষ পালন কি হিন্দু আচার?

এই অভিযোগ তুলে বাংলা নববর্ষকে ইসলাম-বিরোধী হিসাবে দাগতে চায় বাংলাদেশের ধর্মান্ধ ঐস্লামিক মহল। তাদের যুক্তি মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মনুষ্যেতর প্রাণীর মুখোশ বা রাখিবন্ধনের মতন আয়োজন আসলে শরিয়ত বিরোধী। মূর্তিপূজার ছুপা রূপ এগুলি। কোনো সাচ্চা মুসলমান এ জিনিসে শামিল হতে পারে না। তারা দেখায় পশ্চিমবাংলায় এইদিনে হিন্দু দেবদেবী লক্ষ্মীগণেশের পূজা হয় বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানে। ফলে নববর্ষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ হিন্দু সংস্কৃতির। 

নববর্ষে হালখাতা ও মিষ্টিমুখের ব্যাপক প্রচলন এমনিতে পশ্চিমবাংলায় রয়েছে। পুরনো বছরের সমস্ত হিসাব চুকিয়ে নতুন বছরে নতুন খাতা ব্যবসায়িক বর্ষপূর্তিকে নির্দেশ করে থাকে। লক্ষ্যণীয় হালখাতা শব্দটা মূলগতভাবে ফারসি। হাল অর্থে নতুন। 

নববর্ষ পালন কি ইসলামিক আচার? 

এই বাংলায় নববর্ষের মুঘল আমলের শিকড়কে মনে রেখে বহু গোঁড়া হিন্দু বলেন যে এটি আদত নববর্ষই নয়। আদত নববর্ষ চৈতী নববর্ষ যার সঙ্গে বাংলা সনের পার্থক্য ১২ বা ১৩ দিনের। মহারাষ্ট্রে এবং গোয়ায় এই চৈত্র নববর্ষের নাম গুঢ়ি পড়বা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা আর কর্নাটকে উগাড়ি, সিন্ধিদের চেইতি চাঁদ, পার্সি ও কাশ্মীরিদের নওরোজ এবং বেশ কিছু মাড়োয়ারি গোষ্ঠীদের ঠাপনা। হিমাচলিরা এই দিনটিকে চৈত্তি বলে। 

কিন্তু এর বিপরীতে পাওয়া যায় বাংলা নববর্ষকে। পাঞ্জাবে এই একই দিনে পালিত হয় বৈশাখি, কেরালায় ভিষু, আসাম বিহু, তামিলনাড়ুতে পুথান্দু, উড়িষ্যায় পান সংক্রান্তি। লাওস, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নানান সংস্কৃতির মধ্যে এই সময়কালে বাংলা নববর্ষের সমতুল্য পরব পালিত হয়। অঞ্চলের নিজস্বতা ও স্বকীয়তাকে ভর করে, যা মূলত লোকসমাজ নির্ভর, ধর্মীয় সংস্কৃতি নির্ভর নয়। 

গত কিছু বছর ধরে পশ্চিমবাংলায় যখন মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রসারের সংগঠিত উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে তখন ‘ও বাংলাদেশের জিনিস, ফলে ওতে ইসলামি ছোঁয়া আছে’— এই যুক্তিতে দুচ্ছাই করবার প্রবণতাও হামেশায় চোখে পড়েছে। 

নববর্ষ কি আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি? 

বাংলা নববর্ষ নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের গোঁড়ামি বর্তমান। কিন্তু বাংলার নববর্ষ কি তাই বলে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে আদৌ? সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন চরিত্রের দিক থেকে বাংলা নববর্ষ অসাম্প্রদায়িক সন্দেহ নেই, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ তা বলা চলে না। এখানে সহমত পোষণ করতেই হয়। হিন্দু ও ইসলাম এই দুই ধর্ম এক মুলুকে সংখ্যাগুরু তো অন্য মুলুকে সংখ্যালঘু। যে মুলুকে যে সংখ্যাগুরু সে মুলুকে তার ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বা দখল হয়েছে নিশ্চিতভাবেই। 

একথা মানতে দ্বিধা থাকবার কথা নয়, এ বাংলায় হিন্দু বাঙালির নববর্ষের উদ্দীপনায় মুসলমান বাঙালি তাল মিলিয়ে উঠতে পারে না। ১৯১৭ ও ১৯৩৮এ বাংলা নববর্ষকে ব্রিটিশদের পরাজয় কামনা করে পূজোপাঠ সম্বলিত এক দিন হিসাবে পালনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। বর্ষবরণের প্রথম সফল চেষ্টা হয় বাংলাদেশে ১৩৭২ বঙ্গাব্দে রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথকে আশ্রয় করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। তারপর থেকে রমনার বটমূল ধর্মনির্বিশেষে বর্ষবরণের এক সাংস্কৃতিক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৩৮৭ বঙ্গাব্দে জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রশাসনের বিরুদ্ধে অপশাসন ঘোচানো ও শান্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে চালু হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরমধ্যে প্রভাতী অনুষ্ঠান চালু হয়েছে ব্যাপক সাড়ায় ক্রমে ক্রমে। পয়লা বৈশাখের এই সাংস্কৃতিক বিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসাবে বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শাহাদাত কাজ করেছে ব্যাপকভাবে। 

পশ্চিমবাংলায় পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশের কাছে ঋণী, সন্দেহ নেই। যদিও নতুন বছরে নতুন পোশাক, চৈত্রে ঘর ঝাড় দিয়ে সাফ করা নতুন করে বৈশাখের জন্যে ইত্যাদি নানান কিছু চুপিসাড়ে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাংলায় নববর্ষ মূলত ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক উদ্যোগকে নবপ্রাণে সিঞ্জিত করবার প্রয়াসই বেশি। কিন্তু কোথাওই সাম্প্রদায়িক উশকানি লক্ষ্য করা যায় না। হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে গত এক দশকের এপ্রিল মাসে নবরাত্রি ও রামনবমীর সম্প্রদায়গত ঘৃণাবৃক্ষ যেভাবে বেড়ে উঠেছে পশ্চিমবাংলার মাটিতে, তার শিকড় চেষ্টা করেও ছুঁতে পারেনি পয়লা বৈশাখকে সেভাবে এখনও৷ 

মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সব্বার।’ এই আহ্বান আবেগমথিত। কিন্তু হিন্দু হোক বা মুসলমান— ধর্মের গোঁড়ামির প্রস্থানের কারণেই প্রকৃতভাবে সকলের জন্য উদার উৎসব হিসাবে পয়লা বৈশাখ নিজেকে এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারেন,  তা কার্যত অসম্ভবও। দক্ষিণ এশিয়ায় এই সময়টা নতুন বছরকে বরণ করবার, হিন্দু বা ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে নয় ঠিকই, লোকজ ভিন সমাজের ভিন আচার যে তাতে স্থান পায়নি তা নয়। আর এই লোকজ স্বাতন্ত্র্যগুলিকে গিলতে গিলতেই হিন্দু ও ইসলাম তার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। 

স্মর্তব্য রাজশাসনের অন্ধতার বিরুদ্ধে পয়লা বৈশাখ ও তার অধুনা ট্রেডমার্ক মঙ্গল শোভাযাত্রা পা চলা শুরু করেছিল। ফলে অসাম্প্রদায়িকতাকে পাথেয় করেই সর্বধর্ম সমন্বয় নয়, বরং পয়লা বৈশাখের ধর্মনিরপেক্ষ অক্ষলাভের অসম্ভবকে সম্ভব করবার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও, বাস্তব।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কি নববর্ষকে গিলে খাচ্ছে? 

ব্রিটিশ উপনিবেশের মোকাবিলা করতে গিয়ে আমরা আগেও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্মরণাপন্ন হয়েছি। বাংলা লোকসাহিত্য সংকলন তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আজকালকার পাশ্চাত্যব্যাপী নিউ ইয়ার পালন ও তার ব্যাপক জৌলুশ ও চটকদারিতা বাঙালিকেও বশ করে রাখে। এমনিতেই শিক্ষিত বাঙালির ইংরেজি শিক্ষার বহর দেখেই তার রুচি সামাজিক স্থান বিচার হয় আজকাল। কেউ ফটর ফটর করে ইংরেজি বললেই সে বিস্ময়প্রতিভা ও কাল্টিভেশনের যোগ্য। বাংলায় বানান ভুল বা ভাবপ্রকাশের অক্ষমতা জরুরি সমস্যা হিসাবে গ্রাহ্য হয় না। পাশ্চাত্যের গ্লোবাল ভিলেজের প্রকল্পে কেবল ইংরেজি টাইমলাইন ও ভাষার আধিপত্যকে মেনে নেওয়াটাই দস্তুর। 

এর প্রতিবাদে কেউ কেউ বাংলা নববর্ষকে হাতিয়ার করতে চান অসহায় জাতির হারানো অস্মিতা ফেরানোর আশা নিয়ে। পাশ্চাত্যের গ্রাস এক আশু বিপদ সন্দেহ নেই, কিন্তু তার মোকাবিলা করতে গিয়ে বাংলা নববর্ষকেও পাশ্চাত্যের ঢঙেই ঠিক রাত ১২টাতেই নতুন হয়ে উঠতে হবে— এ মূর্খামি। বৈশাখের প্রথম আলো, প্রথম সকালই বাংলা নববর্ষের সূচক হতে পারে। পাশ্চাত্যের বিপদ চিন্তায় এ যেন আমরা ভুলে না যাই। 

নববর্ষ কি আদতে সার্বজনীন? 

এমনিতে শ্রমিক শ্রেণির একমাত্র আন্তর্জাতিক ‘হলিডে’টিও ভারতে অন্তত অধিকাংশ শ্রমিকের হাতের নাগালের বাইরে। বহু ধর্মীয় ছুটির ভিড়ে মে দিবসের ছুটি আর থাকে না। বহু কোম্পানি, কারখানা এই ছুটি দেয় না। ফলে নববর্ষ-ই বা যে শ্রেণিনির্বিশেষে সার্বজনীন হবে তা আশা করা অনর্থক। আমরা আগেই দেখেছি যথেষ্ট উপাদান থাকা সত্ত্বেও নববর্ষ ধর্মের বেড়াজাল সম্পূর্ণ দুরমুশ করে সার্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি। 

পশ্চিমবাংলার মেট্রপলিটনে তো নববর্ষ পালন ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠেছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বর্ষবরণের যেটুকু ধুম চোখে পড়ে তার বৃত্তে আনাগোনা করছে কেবলই শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী অংশ। মফস্বল ও গ্রামে হালখাতা, মেলা ও মিষ্টিমুখ এখনও দেখা গেলেও মহানগরের পট থেকে এরা প্রায় বিদায় নিয়েছে ক্রমে। 

ধর্মের ভেদ মানে না পয়েলা বৈশাখ, প্রকাশ্যে শ্রেণিভেদও মানে না; কিন্তু শ্রমজীবী অংশের অংশগ্রহণ পয়লা বৈশাখে থাকে নগণ্য। এই তর্ক তুলেছিলেন সিরাজুল বাবু। আমরাও এতে আপত্তির বিশেষ জায়গা পাই না। 

নববর্ষ ও সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ

নববর্ষ নানা যুগে সেই যুগের আর্থসামাজিক আকাঙ্খাকে পরিস্ফুট করেছে। কখনও কখনও তা রাজনৈতিক ভাষ্য হয়ে উঠেছে। কৃষি খাজনা থেকে ব্যবসার হিসাব— সমকালীন সমাজ অর্থনীতির সাংস্কৃতিক প্রকাশ হিসাবে ধরা দিয়েছে বাংলায় নববর্ষ। এই সরণটি আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় না। 

তাই সাম্প্রাদায়িকতা ও ধান্দার পুঁজির আঁতাতের কালে বাংলা নববর্ষকে যখন তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা রিক্ত করবার পুরোদস্তুর চেষ্টা চলছে দুই দেশে দুই ভিন্নপথে, তখন ভাষাভিত্তিক বাঙালিয়ানার সংস্কৃতির প্রতিবাদী আধুনিক ভাষ্য হিসাবে হাজির হতে পারে বাংলা নববর্ষ। যা ধর্মচেতনার বশ হয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে যুঝবে না, বরং বিজ্ঞানচেতনাসম্পন্ন আধুনিক যুক্তিনির্ভর ধর্মনিরপেক্ষ গণচেতনার বশ হয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে যুঝবে এবং সেই প্লাটফর্মে ভদ্রেতর শ্রেণিদের উপস্থিতিকে নিশ্চিত করতে পারে।