“হাতে হাত ধরে আয় কাঁটাতার ভেঙ্গে যায়,

ঢাকা শহরের মিছিল মিলেছে আমার কলকাতায়”

ভারতীয় উপমহাদেশ, ব্রিটিশ ভারত, পূর্ব পাকিস্তান, বাংলাদেশ। শুধুই নাম পাল্টেছে। পাল্টাইনি সামাজিক অবস্থা, পাল্টাইনি মেহেনতী মানুষের লড়াই, পাল্টাইনি রাষ্ট্রীয় যাঁতাকলের শোষণ। সময় বিশেষে হয়তো বেড়েছে বা কমেছে মাত্র। আজ বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবস। শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকারের চাকরি, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, মেয়েদের অধিকার থেকে সামাজিক সুরক্ষা সব কিছুই সাবকা সাথ সবকা বিকাশ, হার সাল দো কাড়োর নকরি, বেটি বাঁচাও বেটি পাড়াও এর মতো করেই চলছে। গণতন্ত্রের গলা টিপে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। এখানে যেটা UAPA ওদেশে সেটাই সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯। প্রতিদিন বিরোধী বামপন্থী দলের উপর নামানো হচ্ছে প্রবল আক্রমণ। এপার বাংলায় রাতের অন্ধকারে সরকারের পোষা পুলিশ বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে খুন করে ছাত্র নেতা আনিস খানকে আর ওপার বাংলায় মাঝরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ এর নেতাকে। চাপিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা, চলে জেলের মধ্যে অত্যাচার, প্রতিবাদী কন্ঠের পুলিশ কাস্টর্ডিতে মৃত্যু আর হকের দাবিতে রাস্তায় নামা বাকিদের প্রাণনাশের হুমকি।

বিজেপির মতই ওখানের শাসক ক্ষমতায় টিকে থাকা সুনিশ্চিত করতে কাজে লাগাচ্ছে সংখ্যাগুরু মানুষের ধর্মীয় আবেগ। আক্রান্ত উভয় দেশের সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসীরা। এপারে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় সরকারের মদতে তালা খুলে রাখা হয় আর ওপারে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয় পুজো মণ্ডপ থেকে। ফলে দেখতে হয় বাবরি মসজিদ ভাঙার তিরিশ বছর উদযাপন করছে সঙ্ঘ পরিবার আর দুর্গা পুজোর মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর পর উল্লাস নৃত্য করছে মুসলিম নামধারী মৌলবাদীরা। আমাদের দেশের কর্নাটকে জোর করে টেনে খুলে দেওয়া হয় হিজাব আর ওদেশের কুমিল্লায় চলে গায়ের জোরে হিজাব পরানোর কাজ।

দু দেশেই বারে বারে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বীর শহীদদের কথা। গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে প্রাণের দামে কেনা স্বাধীনতার সোনালী ইতিহাস। আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা চলছে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান। চাপানোর চেষ্টা চলছে মনুবাদী হিন্দু রাষ্ট্র। আর কাঁটাতারের ওপারে চাপানো হচ্ছে পরিবারতন্ত্র। এদেশের কংগ্রেসের মত করেই শোনানো হচ্ছে- কি করেছে আমার বাবা কি করেছে স্বামী।

সব শেষে আশা রাখি এতো সহজে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত, মুক্তি যোদ্ধার উত্তরসূরীরা হেরে যাবে না। কিছুতেই ছেড়ে দেবে না। ভুকা পেটের কসম করে পীরেন স্নালদের মতো নিজেদের হকের দাবীতে লড়াই চালিয়ে যাবে। রক্ষা করবে রক্তের বদলে আদায় করা স্বাধীনতা।