আবার বোমাবাজি। গত ২৮।০৫।২৩ তারিখে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞাতে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে একজন নিহত। বাজি কারখানাতেই তৈরি হওয়া এই বোমা। বাজি কারখানা থেকে বিস্ফোরণ আর বিস্ফোরণ। বিগত কয়েক মাসে অনেকগুলি বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। মূলত বাজি কারখানা থেকেই এই বিস্ফোরণ গুলি হয়েছে। আবার নাশকতার জন্য কোথাও কোথাও বিস্ফোরণ হচ্ছে। বিস্ফোরণের পর মন্ত্রী পরিষদেরা , গোয়েন্দা সংস্থা,পুলিশ কিছুদিন ছোটাছুটি করতে থাকে, তারপর কোন এক অজানা কারণে সব চুপ হয়ে যায়।এগরার বিস্ফোরণের পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অনুপ্রেরণাসৃস্টিকারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজ্ঞের মত বলিয়াছেন,” ঘরের পাশে বাজি কারখানার কাজে মানুষ যায় পেটের দায়ে। বাজি কারখানায় মাঝেমধ্যে আগুন লাগছে”(এই সময় দৈনিক পত্রিকা,২৩।০২।২৩)।বাজি কারখানায় আগুন লাগার কথা বলেছেন কিন্তু বিস্ফোরণ কথাটি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ এটা হতেই পারে এইরকমগোছের একটা ভাবভঙ্গি মুখ্যমন্ত্রীর। অবৈধ বাজি কারখানাকে একপ্রকার স্বীকৃতি দিয়ে বাজিশ্রী ও বোমাশ্রী প্রকল্প চালু ক’রে এটাও এক ধরনের শিল্প বলে চালিয়ে দেবার সম্ভাবনা বেশী। যেমন চপ শিল্প ,কাশফুলের বালিশ শিল্প, আর এইসব শিল্পে পেটের দায়ে গরিব মানুষ কাজ করবে ,আর তারা মরবে –তারপর জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে উনি ক্ষতিপূরণ দেবেন। ধর্ষিতা হলে ক্ষতিপূরণ দেবেন, বিষমদ খেয়ে মরে গেলেও ক্ষতিপূরণ দেবেন, তেমনি বিস্ফোরণে মরে গেলে তাদেরকেও টাকা দেবেন। এই ভাবেই সমস্ত অবৈধ কাজকে বৈধ হিসেবে সমাজে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তারমধ্যে আবার সর্বক্ষেত্রে “দুর্নীতিশিল্প” তো আছেই। রাজ্যে এখন কাজের হাহাকার,জব কার্ডের কাজ বন্ধ , গ্রামে খেতমজুরদের কাজ নেই,পশ্চিমবঙ্গের ছেলেরা ভিন রাজ্যে কাজ করতে চলে যাচ্ছে । রাজ্যে শিল্প নাই। তবে পাতি শিল্প রমরমিয়ে চলছে। বাংলায় শিল্পের বেহাল দশা, পাঁচ বছরে বন্ধ ২১ হাজার শিল্প কেন্দ্র । স্টেট অফ এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট, ২০২১ প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। তাতে জানানো হয়েছে- ২০১৬ –২০২১ এই পাঁচ বছরে রাজ্যে বড় ,মাঝারি ,এবং ক্ষুদ্র মিলিয়ে মোট ২১,৫২১টি শিল্প কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে বৃহৎ শিল্প কেন্দ্র আছে ২৭১ টি । স্বাভাবিকভাবেই সস্তার রাজনীতিতে ,কিছু খয়রাতি দিয়ে কর্মসংস্থানের দায়িত্বটা মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে চাইছেন। যার ফলেই তিনি বলেছেন পেটের দায় , আর পেটের দায়ের জন্য পেট ভাতায় অবৈধ বাজি কারখানায় কাজ করবে ।পশ্চিমবঙ্গে এখন বিস্ফোরণ ,শুট আউট,ডাকাতি , ধর্ষণ, নারী পাচার দৈনিক লেগেই আছে। চরম নৈরাজ্য চলছে রাজ্যে।সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই।আর অভিষেকের নিরাপত্তার জন্য সব থানা খালি করে পুলিশ চলে যাচ্ছে দলীয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে পিসি ভাইপোর প্রতি আনুগত্য পোষন করতে। এসবই হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে।
খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের মনে আছে? ওই ঘটনাই সমানে ঘটে চলেছে গত কয়েক বছরে। শত শত বোমা কারখানার হদিস মিলেছে, বিস্ফোরক দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে উদ্ধার হচ্ছে , বাজি কারখানায় বিস্ফোরক দ্রব্য থাকবে কেন –এটাই সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাস্য। চলছে বেআইনি কারবার শাসকদলের মদতে ।সীমান্ত জেলাগুলিতে অবাধে চলছে বোমা পিস্তলের কেনাবেচা । তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রাস্তায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে অনেক। তার মধ্যে হেভি ওয়েট তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাও আছে । দলীয় কর্মীদের হাতেই দলীয় কর্মী খুন হচ্ছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। বামপন্থীদের উপরে আক্রমণের ঘটনাতো আছেই। তবে বামপন্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মেজাজ হারিয়ে সি পি আই(এম)কে সপ্তাহে একদিন পেটানোর নিদান দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এই ধরনের কথা বলা যায় কি ?? বাংলার মানুষকে ভেবে দেখার সময় এসেছে। না হলে স্বৈরতন্ত্রের থাবা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তবে ইঁট মারলে এবার পাটকেল খাবার জন্য ওনাদের তৈরি থাকতে হবে। আসলে সরকার আর দল নিয়ে এখন উনি ল্যাজেগোবরে। তার জন্যই পেটানোর নিদান। উন্নয়ন তো থমকে গেছে। উন্নয়নের নামে এলাকা দখল আর লুঠ, ঘুষের টাকা নিয়ে সংঘর্ষ ও খুনের রাজনীতি এ সবই হচ্ছে ওনার অনুপ্রেরণায়। সাধারণ মানুষ বিপন্নবোধ করছে। দুর্নীতির মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে, উচ্চন্যায়ালয় আজ তা নিয়ে বিচলিত ও বিরক্ত। ঠিকাদাররা কাজ করতে পারছেন না পার্সেন্টেজের ঠ্যালায়। অনলাইনেও টেন্ডার জমা পড়ছে না। পুলিশও মার খাচ্ছে তৃণমূলীদের হাতে। পুলিশের গাড়িও ভাঙছে। সেই ভয়ে পুলিশ কখনো টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে, কখনো আবার হেলমেট- বন্দুক নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। কি লজ্জা বলুন তো! গত কয়েক বছরে বোমা বাঁধতে গিয়ে এবং বিস্ফোরণে কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষের জীবন কি সস্তার! মুখ্যমন্ত্রী হয়তো তাই ভাবেন। কোনো কড়া পদক্ষেপ সরকারকে নিতে দেখেছেন? মানুষের জীবনের দাম কি টাকায় পূরন করা যায়! এত অহংকার ভালো নয়। অহংকারের পতন অনিবার্য। স্বজনহারা পরিবার পরিজনদের বুকফাটা আর্তনাদ, চোখের জল বৃথা যাবে না। সব মনে রাখছে,রাখবে।
বাংলা এখন বারুদের স্তূপে খড়্গ ও পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে। বিস্ফোরণ — আগুন এখন প্রায় হয়ে রোজগার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো বেআইনি কাজ কারবারে মদত দিতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটছে, আবার কখনো নিজেদের অপকর্ম- দুর্নীতি -লুটতরাজের প্রমাণ ঢাকতে পঞ্চায়েত অফিসে বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া –এ এক অরাজক অবস্থা চলছে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। গত কিছুদিন আগে হুগলি জেলার গোঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরা সহ কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ মূল্যবান নথি চুরির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৬ শেষ মে’২৩ তারিখে হুগলির খানাকুল এক নম্বর ব্লকের অরুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসের দোতলায় আগুন লেগে ছাই হয়ে গেল বিভিন্ন অপকর্মের নবুদ, কম্পিউটারের তথ্যসহ আরো কত কিছু। এই ভাবেই নষ্ট করে দেওয়া হলো কাটমানির, তোলাবাজি এবং কোটি কোটি সরকারি টাকার তছরূপের প্রামাণ্য দস্তাবেজ। কিন্তু এত আগুনে কি তৃণমূলের ঘরটা শেষ পর্যন্ত আস্ত থাকবে? কারণ প্রবাদ আছে , “গ্রামে আগুন লাগলে ঠাকুরের মন্দির বলে সেটাও ওই লেলিহান শিখার আঁচ থেকে রেহাই পায় না। “সেটাও পুড়ে যায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যত কি? বিস্ফোরণের রোজ নামচা :–ভগবানপুর –মৃত্যু হয় এক তৃণমূল নেতা সহ তিনজনের। খেজুরি –তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ,বেশ কয়েকজনের মৃত্যু । পাঁশকুড়া –তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু। পুন্দা — তৃণমূল নেতা নারায়ণ জানার বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলাও ছেলের। তারপর এল সেই বিভীষিকাময় এগরার ঘটনা।১২ জনের মৃত্যু বিস্ফোরণে।রাজ্যবাসী হিসেবে লজ্জা করে আমরা কোথায় বাস করছি। সরকারের কোন উত্তর নাই। তারপরই বজবজ এবং দুবরাজপুর। আরো আছে বিস্ফোরণের তালিকা — ১১-১০ ২০২২ পাঁশকুড়া রাধাবল্লভচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধুয়াপোতা গ্রামের উত্তর পাড়ার একটি বাড়িতে অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু। ১।১ ২।২০২২ তাং ভূপতিনগর থানার অর্জুননগরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে প্রবল বিস্ফোরনে তিনজনের মৃত্যু। ২৫।৪।২৩ তারিখে এগরা এক নম্বর ব্লকের ঋষি অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরুন্দা গ্রামে অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজন আহত । বাজি কারখানায় বাজি তৈরির মশলায় এইরকম বিস্ফোরণ কি হতে পারে! বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। তবে উনি নিজেই তো বিশেষজ্ঞ। তার জন্যই তো বলেছেন,” পেটের দায়ে বাজি কারখানায় কাজ করতে রায়। “পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং নব দত্ত বলেন আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাজি কারখানা বন্ধের দাবি করে আসছি। কিন্তু মৃতদের সংখ্যা গোনা ছাড়া আর কোন কাজ হচ্ছে বলে দেখতে পাচ্ছি না “। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে বৈধ বাজি কারখানা রাজ্যে মাত্র ২১ টি। গত বুধবার হাওড়ার পাঁচলা থানায় শাঁখখালি গ্রামে পাঁচ ট্রাক –১৬ হাজার কেজির বেশি বাজি উদ্ধার হয়েছে । শুধুই কি বাজি –নাকি ওর মধ্যে অন্য কিছু আছে, তা নিয়ে গ্রামবাসীরা সংশয়ান্বিত। কারণ, ওই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পদার্থ খোলা আকাশের নিচে জনবহুলস্থানে রাসিকৃত করে রাখা হয়েছে। তা নষ্টের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে যে কোন সময় তাতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে এবং তার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্তু সরকার তথা প্রশাসন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে রয়েছে । এতেই সরকারের মানসিকতা স্পষ্ট বোঝা যায়।বোঝা যায় যে তারা এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিতেই বেশি পছন্দ করে, যাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়। পুলিশ কি এই সব অবৈধ কারখানার হদিস জানত না? সব জানে, টাকার বিনিময়ে গোটা বাংলা জুড়ে এই ধরনের অবৈধ বাজি কারখানা চলছে ,অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ অশান্ত থেকে অশান্ততর হচ্ছে, আর এইসব কারখানায় অভাবের তাড়নায় পেট ভাতায় কিংবা স্বল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুকে অবধারিত জেনেও শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা। তারাই মরছে বেশী আর তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র গন তারা শুধু বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে এ সবই হচ্ছে শাসক দলের ক্ষমতার আস্বাদ গ্রহণ করার জন্য গরীব মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করার প্রবণতা । বোমাবারুদের গন্ধেই , রক্তস্নাত পথে, মাও-ফাউদের হাত ধরে আর কিছু আঁতেল বুদ্ধিজীবীদের প্রেরণায় ২০১১ তে মহাকরনের অলিন্দে প্রবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই বারুদের গন্ধ, বিস্ফোরণ,খুন,আর মেরুদন্ডহীন পুলিশ প্রশাসন, বেশীরভাগ চাটুকার আমলা নিয়ে রাজ্য চলছে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। তবে এর মিলিত প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে এই দুর্বিসহ অবস্থার অবসানে বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে এবং আগামী দিনে এই স্বৈরতান্ত্রিক শক্তিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে হটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। অন্নাভাবে প্রজাগণ যাতে না মরে তা বামপন্থীদেরই দেখতে হবে। এ বিষয়ে খনার বচন কি বলছে দেখা যাক:– দাবানল ,শস্যহানি, ঝড়, মহামারী একত্রে ঘটিলে জেনো রাজা দুরাচারী,
রাজা যদি পাপমতি প্রবঞ্চক, হয় রাজপাপে দেশময় বহে মৃত্যুভয়। অধর্ম কুধর্ম যদি কভু রাজা করে দেখিবে অন্নাভাবে প্রজাগণ মরে।

[তথ্য সংগৃহীত]