দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান কর্মসূচি নিয়ে প্রচার চলাকালীন ১৭ ই ফেব্রুয়ারি বিকালে  বিশ্ববিদ্যালয়ের  আলিপুর  ক‍্যাম্পাসে তৃণমূল কংগ্রেসের মদতপুষ্ট গুণ্ডাদের আক্রমণে  আহত রক্তাক্ত এস এফ আই নেতা  আতিফ নিসারের ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ‍্যাল মিডিয়ায়। এই আক্রমণে আহত মেহেবুব, আক্কাস,অরুণিমা সহ আরও কয়েকজন এস এফ আই নেতা নেত্রী। মনে পড়ছে কি শহীদ ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের কথা? দশ বছর আগে এস এফ আই নেতা সুদীপ্তকে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে মিছিল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ভ‍্যান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয় রাস্তার ধারের ল‍্যাম্পপোস্টে মাথা ঠুকে যাওয়ার ফলে মৃত্যু হয় সুদীপ্তর। সেই খুনের উর্দিধারী অভিযুক্তরা  স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হাতযশে  সাজা না পেলেও আমরা ভুলিনি কিছুই। গত ১৭ তারিখেও আধঘন্টা ধরে আক্রমণ চলেছে এস এফ আই এর পতাকা নিয়ে  আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপরে। ছাত্রীদের লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও বাদ যায় নি।

গাত্রদাহ ও বিবমিষার উদ্রেককারী হলেও এমন ঘটনা এখন আমাদের রাজ‍্যে মোটামুটি স্বাভাবিক।  পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। গায়ের জোরে ভোটে জেতা থেকে শুরু করে হেরে যাওয়া পঞ্চায়েত জেলা পরিষদ দখল করা এমনকি একটিও আসন না জেতা জেলাতে বিধায়ক কিনে নেওয়ার মত স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শন তৈরি করতে তৃণমূল কংগ্রেস এক মুহুর্তও ভাবেনি। যে অভিষেক ব‍্যানার্জীকে আইকন সাজাতে বাজারি মিডিয়া ব‍্যস্ত,তৃণমূল কংগ্রেসের  সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মণ্ডহারবারের সাংসদ নিজেই ডায়মণ্ডহারবারে বিরোধীশূন‍্য পঞ্চায়েত তৈরির প্রধান কারিগর। ২০১৬ সালের পর থেকে নিবিড়ভাবে গোটা রাজ‍্য জুড়ে সেই পথেই গণতন্ত্র ধ্বংস করার রাস্তায় হেঁটেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেমনভাবে বিজেপির হাতছাড়া হওয়া রাজ‍্যে সরকার ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন এই রাজ‍্যে তৃণমূল কংগ্রেসও সেই পরিকল্পনাই করতে অভ‍্যস্ত, মুকুল রায় শুভেন্দু অধিকারীদের হাত ধরে। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে  গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলে হাহাকার করলে তাই কুমীরের কান্নার বেশি কিছু মনে হয়না।

আসলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক‍্যাম্পাসে নিজেদের প্রভাব না থাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নিঃসন্দেহ।২০১১ সালে  রাজ‍্যে পটপরিবর্তনের পরে যেটুকু প্রভাব তৈরি হয়েছিল চিটফাণ্ড দুর্নীতি, নারদা ঘুষ কাণ্ডের পর থেকে তা ক্রমশ কমতে থাকে। অতি সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি,কয়লা পাচার গরু পাচারে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতানেত্রীদের নাম যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তার ওপর পার্কসার্কাসে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হাতবদলের চক্রান্ত সামনে চলে আসা এবং  আনিস খানের হত‍্যার পর এখন ছাত্রছাত্রীদের ভরসায় ক‍্যাম্পাসে  দখলদারির রাজনীতি করতে পারছে না শাসকদল। সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় মস্তানবাহিনীকে ক‍্যাম্পাসে বামপন্থী ছাত্রদের দমিয়ে রাখবার জন‍্য ব‍্যবহার করা হয়। কারণটা অবশ‍্য শুধু রাজনৈতিক নয়। অর্থনৈতিকও। ছাত্র সংসদের জন‍্য বরাদ্দ অর্থে ফেস্টের নামে বিচিত্রানুষ্ঠান ও মোচ্ছবকে সামনে রেখে টাকা লুঠ করার মুক্তাঞ্চল বানানোর পথে কোন বাধাই রাখতে চায় না তৃণমূল কংগ্রেস। তাই যতই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্ঘন্ট নিয়ে জেলে যাওয়ার আগে পার্থ চ‍্যাটার্জী এবং নাটকের মঞ্চ থেকে ক্বচিৎ কদাচিৎ মন্ত্রীত্ব করা ব্রাত‍্য বসু বিবৃতি দিন না কেন তার সিকি পয়সা দাম নেই। এস এফ আইয়ের কাছে নেই তো বটেই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও নেই। ফলে তৃণমূল কংগ্রেস চাইবে ক‍্যাম্পাসের দখলদারি ধরে রাখতে এবং এস এফ আই চাইবে সেখানে  গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে ছাত্রসংসদ নির্বাচন করাতে। সন্ত্রাস আক্রমণ আসুক  এই সংঘাত আরও তীব্রতর হবে কারণ এস এফ আই এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।