বাংলার বুকে শিক্ষক-শ্রমিক-কর্মচারী এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের সন্ধিক্ষণে

                             সুভাষ রায়

For your kind information…

হ্যাঁ ফান্ডের সমস্যা ছিল, কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার থেকে প্রায় সব সময়ই 2 থেকে ৩ পার্সেন্টে-এর পার্থক্য (এখন যেখানে পার্থক্যটা ৩৯ শতাংশের বেশি) থাকতো, আর এরই জন্য কিছুদিন আগেও যারা ধর্মঘট বিরোধী বলে লাফালাফি করেছেন, যখনই শ্রমিক কর্মচারী কৃষক নাগরিক সমাজ বন্ধ ডেকেছে, ঐক্যবদ্ধ সহমর্মী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, দিদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে তারা আগের দিন অফিসে পৌঁছে গিয়ে পিকনিকের মেজাজের সারা রাত জেগে উৎসব করে পরের দিন অফিস করে বাড়ি ফিরেছেন কর্মসংস্কৃতির ঝান্ডা তুলে, অথচ এই তাঁরাই সেদিন মহাকরণের রোটান্ডা কাঁপিয়ে মিছিল করে জ্যোতি বুদ্ধর কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও বলে স্লোগান তুলেছেন, প্রেস কর্নার করেছেন। বামফ্রন্ট সরকার তাদের অর্থাৎ কর্মচারীদের সেই অধিকার দিয়েছিল, কিন্তু কর্মচারীদের মাইনে না বাড়িয়ে তাঁরা কখনোই নিজেদের বেতন বাড়িয়ে নেন নি।

আগে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিধায়কদের গড় মাইনে ছিল ১৮ থেকে বাইশ হাজার টাকা সমস্ত রকম অনুদান নিয়ে, সেখানে বর্তমান সরকার নিজেদের মাইনে দু লাখ টাকার উপরে নিয়ে গেছেন।

আজ যে দেরিতে হলেও তারা বুঝতে পেরেছেন DA টা কোন অনুদান বা ভিক্ষা নয় এটা তাদের যোগ্যতা ও বাস্তবিক বাজার চাহিদা অনুযায়ী অধিকার। বাজার থেকে ২৫:৭৫ রেশিওতে যে পরিমাণ তোলা উঠেছে তার যেকোনো একটা ভাগের কিছু শতাংশ পেলেই বকেয়া DA দেওয়া সম্ভব। আর ধর্মঘট মানেই কর্মনাশা সংস্কৃতি নয়, গণতন্ত্র রক্ষার্থে , গণতন্ত্র এবং সংবিধান মেনে নিজের ন্যায্য দাবি-দাওয়া রাষ্ট্রের থেকে আদায় করে নিতে এটা যে একটি নাগরিক অস্ত্র, এবং এই অস্ত্র কেই যে স্বৈরাচারী শাসক ভয় পায়, কর্মচারী থেকে নাগরিক তাদের এই যূথবদ্ধ আন্দোলন যে সরকারের, শাসকের ক্ষমতার দম্ভ এবং ঔদাসীন্য কে যে নাড়িয়ে দিতে পারে সেটা আজ আবারও প্রমাণ হতে চলেছে। প্রায়, দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর পরে সম্ভবত স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে দল মত নির্বিশেষে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের, প্রশাসনিক কর্তাদের কর্মচারী সংগঠন গুলির আগামীকালের এই আন্দোলন এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের রূপ নিতে চলেছে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে তোষামোদি ছেড়ে সরকারের চোখে চোখ রেখে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করার জন্য, সমস্ত রকম হুমকি দমন পীড়নের পরেও একত্রিত হয়ে এই আন্দোলনকে সফল করার সরকারের ব্যাক বোন, অর্থাৎ কর্মচারীদের এই অদম্য জেদী মনোভাবকে কুর্নিশ। আন্দোলন সফল করার জন্য রইল অগ্রিম শুভেচ্ছা। একটা প্রবাদ আছে “night is darkest before the dawn” আর তাই সব অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উঠবেই।

ছবি তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট