“বাজিলে জোরে ঢাকসকলে দেখি হয় অবাক!ঢাক ,কিসের যে দেয় ডাককেন লাগে এসবেতে তাক?কারা ঢাক বাজয়?এ কাজ কারা করে মজায়!অবশ্যই আছে এর কারণ ঢাক বাজে না অকারণ কিসের যেন করায় স্মরণ”।


      মাননীয়া আপনার বাজানো ঢাকের বোল আমাদের স্মরণ করায় আনিসের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা।আপনার বাজানো ঢাক আমাদের মনে করিয়ে দেয় সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ন্যায্য চাকরি দাবিতে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অনশনে বসা চাকরি প্রার্থীদের করুন মুখগুলি।আপনার ঢাকের আওয়াজ চাপা দিতে পারবে না আপনার অত্যন্ত আস্থাভাজন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চাকরি বেঁচার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া এবং পার্থবাবু ও তার বান্ধবীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা।       

২০২২সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি আমতা থানার পুলিশ হানা দেয় আনিসের বাড়িতে রাতের বেলায়।আনিসের বাবা সালেম খানের বক্তব্য অনুযায়ী সেদিন এক পুলিশ কর্মী তার দিকে বন্দুক তাক করে আটকে রাখে।আর অন্য পুলিশ কর্মীরা আনিস কে ছাদে নিয়ে খুন করে।প্রথমে আনিসের মৃত্যুকে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে কখনও বা বলা হচ্ছিল আনিসের নামেও কেস ছিল আবার কখনও মুখ্যমন্ত্রীর দালাল কলকাতা টিভির কর্নধার কৌস্তব পাঁজা পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে কিনতে চায় আনিসের পরিবারকে।কিন্ত এত কিছু করেও কেনা যায় না আনিসের পরিবারকে।তাদের পাশে দাঁড়ায় বাম ছাত্র যুবরা।আন্দোলনে নামে তারা ,আন্দোলন দমন করতে তৃণমূলের পুলিশ গ্রেফতার করে যুব ফেডারেশনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ অন্যান্য কমরেডদের। জেলে ভরা হয় তাদের। শুরু হয় রাজ্যে জুড়ে উত্তাল আন্দোলন। আন্দোলনের চাপে রাজ্যে সরকার সিট গঠন করে এবং সিট জানায় যে সেদিন রাতে থানা থেকেই পুলিশ গেছিল। নাম মাত্র শাস্তি পুলিশ বিভাগের থেকে ওই দিন রাতে আনিসের বাড়িতে যাওয়া পুলিশ কর্মীদের দেওয়া হয়েছে।       

কিন্ত ইনসাফ পায় নি আনিস।যে আনিস বারবার পুলিশ প্রশাসন কে জানিয়েছিল যে তৃণমূলের গুন্ডারা তাকে খুনের হুমকি দিচ্ছে।কেন খুনের হুমকি আসছিল তার কাছে ,তার অপরাধ ছিল তৃণমূলের মাতব্বরদের ফতোয়া উপেক্ষা করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে যাওয়া।     আলিয়ার প্রতিবাদী ছাত্র নেতা আনিস খান ছিলেন এন আর সি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ।নিজের গাঁয়ের মানুষের বিপদ আপদে সব সময় পাশে থাকা আনিস ছিল তার গ্রামে ও খুব জনপ্রিয়।আর এই জনপ্রিয়তাই ঈর্ষার কারণ হয় তার। খুন হতে হয় তাকে।    আনিস খুন হলেও লাখো আনিস রাস্তায় আছে আনিসের মৃত্যুর ইনসাফ চাইতে।গত ২০\০৯\২২র ধর্মতলার মোড়ে ইনসাফ সভায় ছাত্র যুবদের রেকর্ড সংখ্যক জমায়েত এবং  সমাবেশের প্রতিস্পর্ধী গর্জন সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল নবান্নের চোদ্দতলা।মাননীয়া আপনি যতই ঢাক বাজান পারবেন না আনিসের মৃত্যুর ইনসাফ চাইতে ছাত্র যুবদের আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন কে আটকাতে।     গত  সাড়ে তিন বছরের  সময় ধরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান করে নিজেদের ন্যায্য চাকরির দাবিতে অবস্থান আন্দোলন করে চলেছেন এ রাজ্যের হবু শিক্ষকেরা।তাদের হকের চাকরি ডাকাতি করে  এখন জেলে রয়েছে এই রাজ্যের মন্ত্রীসভার দু নম্বর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। টাকার পাহাড় নিয়ে ধরা পড়েছে পার্থ অর্পিতা জুটি।হদিস মেলেছে অপা জুটির কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ও (থাইল্যান্ডে)এই জুটি চাকরি বেঁচা টাকায় বাংলো কিনেছে।   

আর চাকরি প্রার্থীরা  বুকভরা যন্ত্রণা আর চোখের জল নিয়ে তারা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দিনের পর দিন ধর্ণায় বসে রয়েছেন।যাদের জীবন থেকে বিগত মূল্যবান ছয়টি বছর চলে গিয়েছে। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের অধিকাংশই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।   আপনার সুমধুর ঢাকের বোল কোনও ভাবে পারবেনা চাকরি প্রার্থীদের এই বুকফাঁটা কান্নার আওয়াজ ঢাকতে।  মাননীয়া চরাম চরাম ঢাকের বোল তুলে আপনার স্নেহধন্য কেষ্ট যখন গোটা বীরভূমে ভয়ংকর সন্ত্রাস চালিয়ে আপনাকে বিরোধী শূন্য বীরভূম উপহার দিয়েছিল। সেদিন নিশ্চয়ই আপনি উপভোগ করেছিলেন সেই জয়।আর আজ সেই কেষ্টা যখন গরু চুরির দায়ে জেলে।সিবিআইয়ের তদন্তে যখন উঠে আসছে অনুব্রত মন্ডলের সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস। আর বাহুবলী নেতা অনুব্রত কে রাস্তার দুদিকে দাঁড়ানো জনগণের গরু চোর গরু চোর বলে বিক্ষোভ দেখানো ।আপনি আপনার ঢাকে চরাম চরাম বোল তুললেও পারবেন না প্রতিবাদী জনগণের আপনার নেতা মন্ত্রীদের দেখে চোর চোর আওয়াজ ঢাকা দিতে।   

মাননীয়া  সেপ্টেম্বরের ১লা তারিখ থেকেই আপনি এই রাজ্যে উৎসবের ঢাকে কাঠি দিয়েছিলেন। খুব ভেবে চিন্তেই জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে বাংলার মানুষ কে উৎসবের আনন্দে ডুবিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।আপনি চেয়েছিলেন আনিসের হত্যা,শিক্ষকদের চাকরি চুরির দায়ে তৃনমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার, গরু পাচার কান্ডে আদরের কেষ্টর জেল হেফাজত, আপনার নয়নের মনি অভিষেক বাবুর কয়লা পাচার কান্ডে  ম্যারাথন জেরা,যুবরাজের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে পুলিশ কে উৎসাহিত করা।সবই আপনি উৎসবে আর ঢাকের তালে ভুলিয়ে দেবেন।    না মাননীয়া পারবেন না আপনার ঢাকের আওয়াজের সেই জোর নেই যা দিয়ে আপনি ঢাকা দেবেন প্রতিবাদী জনগণের কন্ঠস্বর। আপনি নিজেও তা জানেন। যখন রোম জ্বলছিল সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিল আর আজ যখন বাংলা জ্বলছে তখন আপনি ঢাক বাজাচ্ছেন।