প্রকৃতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।পৃথিবী জোট বাঁধছে। গাছেদের অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। মানুষের বিপক্ষে। এবার আমার আপনার পক্ষ নেওয়া পালা। কোন দিকে আপনি আমি থাকব? প্রকৃতিকে বাঁচাতে প্রকৃতির অবরোধে সামিল হব নাকি কর্পোরেট পুঁজিপতিরা যারা প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় মেতেছে তাদের পক্ষ নেব? একদিকে মানুষের হাতে যুগ-যুগ ধরে অত্যাচারিত গাছ, মেঘ, বৃষ্টি, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র সবাই একজোট, অন্যদিকে পুঁজিবাদের প্রতিদিন মানুষের উপর থাবা বসানো।
প্রতিদিনই আমাদের চোখের সামনে এরকম অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। এই শহর কলকাতাতেও একের পর এক পুকুর বুজিয়ে প্রোমোটারদের ফ্ল্যাট করার ছবি আমাদের হামেশাই চোখে পড়ে। রাস্তা হয়, মেট্রোরেলের পথ তৈরি হয়, ব্রিজ হয়, শপিং মল তৈরি হয় – মানুষকে স্মার্ট সিটি উপহার দিতে গিয়ে প্রশাসন ভুলতে বসেছে পরিবেশের সাথে মানুষের বেঁচে থাকার ভারসাম্যের কথা। শুধু এ শহর কেন, এই সময়পর্বে আমাদের চোখের সামনে এসছে লাদাখের ঘটনা। জল,জমি,জঙ্গল, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন লাদাখের মানুষ। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিভাজনের ব্লু-প্রিন্ট কে রুখে দিয়েই ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাচ্ছে লাদাখের মানুষ। লাদাখ বাঁচানোর, জীবন বাঁচানোর, দেশ বাঁচানোর লড়াইতে আমরা সামিল না হলে এ দেশ বাঁচবে কেমন করে!! ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবী না মেনে ৩৭০ প্রত্যাহার করে গোটা গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থারই সর্বনাশ করে বিভাজন চাইছে মোদী সরকার। ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করে গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরানো, বাস্তুতন্ত্র রক্ষাই মানুষের মূল দাবী।

বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরী ডুয়ার্সের সবুজ…

লাটাগুড়ি। এই জায়গার নাম সকলেরই চেনা জানা। উইকএণ্ড কাটাতে নিমেষেই টিকিট কেটে রওনা দেয় পর্যটকেরা। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু বা ঘুরতে ভালোবাসি তাই ঘুরে বেড়াই শুধু এই বাক্যালাপে সীমাবদ্ধ না থেকে সচেতন পর্যটক হওয়ার পাঠ নিতে হয় ভিতর থেকে। আত্মস্থ করতে হয় জল জীবন জঙ্গল জমির প্রাণকে। আত্মস্থ করতে হয় পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্ককে। উপলব্ধিতে আনতে হয় কেমন করে বেঁচে থাকবে জঙ্গল প্রাণীরা কেমন করে বেঁচে থাকব আমরা! জঙ্গলের গাছ কেটে রাস্তা তৈরি, ব্রিজ তৈরি – পরিবেশের জীববৈচিত্র্যর ভারসাম্য নষ্ট করে তাকে বেচে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা একদল অর্থলোলুপ মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। জল জমি জঙ্গল জীবনের স্বাভাবিক বিকাশের ধারাকে যে কোন উপায়ে বন্ধ করে মুনাফা করতে গেলে তা আসলে মানুষের বেঁচে থাকাকেই প্রশ্নচিহ্ণের সামনে দাঁড় করায়।
লাটাগুড়ি তে জঙ্গল কেটে সাফ করে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ওভারব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা করছে পরিবেশ ধ্বলসকারী শাসক। সারা দিনে দুটো ট্রেন যায় যে অঞ্চলে সেখানে ওভারব্রিজের নাম করে গাছ ধ্বংস আসলে বেআইনি কাঠ চোরা চালানকারীদের স্বার্থই রক্ষা করে। এই দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত শাসক দলের কর্তা ব্যক্তিরা। গাছ কাটা হয়েছে কয়েক লক্ষ, গোটা পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র তীব্র সংকটে। জঙ্গলের প্রাণীদের অসহায়ত্ব বাড়িয়েছে এই সবুজের নিকেশ অভিযান। বন্যপ্রাণীদের অসহায়ত্ব হিংস্র করে তুলেছে তাদের। জঙ্গলের অধিবাসীদের ওপর আক্রমণ করছে তারা। জঙ্গলের অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা কর্মসংস্থান সংকটের মুখে পড়ছে রোজ। সরকারী বাংলোয় কন্ট্রাকচুয়াল ওয়ার্কার রা বেতন পান না মাসের পর মাস। উন্নয়নের নাম করে একের পর এক রিসর্ট যা কিনা তৃণমূল নেতাদের মুনাফার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তার ফলশ্রুতিতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের। সংকটে পড়ছে লাটাগুড়ির মানুষের সাথে বন্যপ্রাণী দের সহাবস্থানের চিত্র।

মূর্তি নদীর পার ভ্রমণপিপাসু মানুষের দর্শনীয় স্থান। সেই মূর্তি নদীর ওপর ব্রিজ সংস্কারের নাম করে ব্রিজ ভাঙায় গোটা মূর্তি নদীর জলে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। শুকিয়ে আসছে মূর্তি নদীর জল। নদীতে জল খেতে আসা বন্যপ্রাণীরা সংকটে পড়ছেন রোজ। নদী সংলগ্ন বিভিন্ন রোজগারের মাধ্যম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের। এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সংকটে পড়ছে সুন্দরী ডুয়ার্সের সবুজের অভিযান। পরিবেশকে মুনাফার স্বার্থে ব্যাবহার করা আটকাতে এই পরিবেশ ব্যাবসায়ী দের পরাস্ত করতে হবে।
এবার সমস্ত অন্যায়ের শোধ নেওয়ার সময়। প্রকৃতি ফিরিয়ে দিতে চায় মানুষকে। একদিকে প্রকৃতির লড়াই আর একদিকে কর্পোরেট পুঁজিপতি হিংসুটে মানুষের দল।
অশুভের সাথে আপোসবিহীন দ্বন্দ্বের লড়াই। প্রকৃতিকে বাঁচাতে আমাদের এ লড়াই জিততে হবে। কারণ আমাদের মন্ত্রীরা খনি থেকে মহাকাশের বেসরকারিকরণ করে দেবেন, আর সেই সুযোগে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যথেচ্ছাচার চালাবেন অর্থলোলুপ পুঁজিপতিরা। মাশুলটা গুনতে হবে আমাদের। কিন্তু কটা ঘটনা আমাদের সামনে আসে! মিডিয়া আর এই ব্যবসায়ীরা হাতে হাত ধরে আমাদের বেঁচে থাকার পথকে প্রতিদিন সংকুচিত করছে৷
আসুন, জরুরি খবর এটাই, হারিয়ে যাওয়া নয়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নয়, তার আগেই আসুন, প্রকৃতির সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করি। আর যারা প্রকৃতির উপর জুলুম চালায়, তাদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ারও এটাই সময়। একটা দিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস কিংবা একটা বিশ্ব জলবায়ু দিবস এসব দিন পালন না, বছরের প্রতিটা দিন হয়ে উঠুক বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিয়ে শুধু নয়, সারা বছর পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের আশু কাজ।

ট্যাক্সের টাকায় রাজভবনে থাকা এবং ট্যাক্সের টাকায় চর্বি জমানো ধনখড়-এর চোখে “ন্যূনতম” মনে হলেও প্রচুর মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান সহ জীবন-জীবিকা সংকটে। কলকাতা শহরের এক-তৃতীয়াংশ আগামী ৩০ বছরের মধ্যে জলের তলায় চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। দূষণের পরিমাণ বাড়তে থাকায় কলকাতা শহরে প্রতি বছর ১৭০০০ মানুষ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, গাছ কাটা পুকুর ভরাটে সিদ্ধহস্ত তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। সিণ্ডিকেটরাজ কায়েম করে কর্মসংস্থানের সুযোগ কেড়ে নিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মেতেছেে য়াসক দল। বিল বুজিয়ে প্রোমোটারি রাজ কায়েম চলছে হাওড়ার বুকেও। প্লাস্টিক ব্যাবহার রোধে বিকল্প পরিবেশ বান্ধব ক্যারিব্যাগ বাজারে আনে নি সরকার। গোটা দেশ গোটা রাজ্যের জল জমি জঙ্গল আকাশ মুনাফার স্বার্থে কর্পোরেট কে বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদী মমতার সরকার। সংকটে পড়ছে আমাদের প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার অধিকার, সংকটে পড়ছে কর্মসংস্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য। তাই পরিবেশ আর কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। আমাদের রুটি রুজি হক আদায়ের স্বার্থেই পরিবেশকে রক্ষা করতে আন্দোলনের গতিমুখ বিস্তার করতে হবেই আমাদের। পরিবেশ ধ্বংসকারী এই তৃণমূল বিজেপি র সরকারকে পরাস্ত করেই রক্ষা করতে হবে আগামীর বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ, হক রুটি রুজি।

  • লাটাগুড়ি সহ ডুয়ার্সে গাছ কাটা পরিবেশ ধ্বংস৷ বন্ধ করে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।
  • ডুয়ার্সের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ স্কীম নিতে হবে।
  • গোটা রাজ্যে গাট কাটা, পুকুর ভরাট বন্ধ করতে কড়া আইন আনতে হবে।
  • পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি ওয়ার্ডে/পঞ্চায়েতে পরিবেশ সচেতনতা স্কোয়াড তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত হবে বেকার যুবদের।
  • সুন্দরবন সহ সমুদ্র ও গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে নদী ভাঙন রুখতে বিশেষজ্ঞ দের পরামর্শ নিয়ে নদী ভাঙন রোধ প্রজেক্ট বাস্তবায়িত করতে হবে।
  • লাদাখ সহ গোটা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কর্পোরেটের হাতে বিক্রি করা চলবে না। জল জমি জঙ্গল বাঁচাতে সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে।
  • প্লাস্টিক ব্যবহার রোধ করে পরিবেশ বান্ধব ক্যারিব্যাগ বাজারে আনতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এতে ক্ষুদ্র কুটীর শিল্পে কর্মসংস্থানও তৈরি করা যাবে।