ধনকুবেরের তালিকায় প্রথম পঁচাশির হাতেই ‘অর্ধেক পৃথিবী’। দাভোগে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের কিছুদিন আগের এক সমীক্ষায় জানা যায়, আর্থিক বৈষম্যের ভয়াবহ ছবি। বর্তমানে এই ছবি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই সমীক্ষা করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক গোষ্ঠী অক্সফ্যাম।

এই সমীক্ষায়, আয়ের নিরিখে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষকে সমান দু’ভাগে ভাগ করেছেন সমীক্ষকরা। নীচুতলার ৩৫০ কোটি মানুষের হাতে যে পরিমাণ মোট টাকা পয়সা, সম্পদ রয়েছে, তার সমপরিমাণ অর্থ সম্পদ, অর্থ ভোগ করছে বিশ্বের প্রথম ৮৫ জন ধনকুবের। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল – সব দেশেই দ্রুত বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য। যে ৩০টি দেশের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে, তার ২৯টিতেই ১৯৭০ সালের শেষ থেকে ধনীদের করের হার কমেছে। রোজগার বেশী, কর কম। রাজনৈতিক ক্ষমতার

সাহায্য নিয়ে সম্পদ উত্তরোত্তর বেড়েছে। অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুযায়ী এর মধ্যে ভারত হল অন্যতম দেশ। অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুযায়ী গত দশকে ভারতে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১০ (দশ) গুণ। এর জন্য অনুন্নত কর কাঠামো এবং সরকারের কাছ থেকে ধনীদের অন্যায় সুবিধা পাওয়াকেই দায়ী করেছে তারা। তাদের দাবী, যেভাবে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দুরত্ব বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে এক মারাত্মক ও ভয়াবহ সামাজিক অশান্তির মুখে পড়তে পারে বিশ্ব। কারণ তরুণ প্রজন্মের এক বড়ো অংশের কাছে না থাকবে চাকরি, না থাকবে চাকরি পাওয়ার দক্ষতা।

এই সমীক্ষার রিপোর্ট আজ হুবহু মিলে যাচ্ছে। বর্তমানে ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সেই কথাই বলছে। এখনই ভারতে একদিকে বেকারত্বের ক্রমবর্ধমান গ্রাফ, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষুধাসূচকের অঙ্ক, আর অপরদিকে কর্পোরেট সংস্থা ও মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতির নেওয়া বিশাল অঙ্কের ঋণ, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক দ্বারা অনাদায়ী ঘোষণা ও তা অনুৎপাদক খাতে চালান করে দেওয়ার মধ্যে রয়েছে–

ভয়াবহ বিপদের গন্ধ। ভারতের গুটিকয়েক ধনকুবেরের হাতেই রয়েছে সমগ্র ভারতের সরকারী কোষাগারের থেকে অনেক বেশী অর্থ ও সম্পদ। আর তার ফলেই সেই সমস্ত ধনকুবেরদের হাতেই চলে গেছে সরকারের চালিকা শক্তি। দেশের সরকার আজ সেই সমস্ত একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠীর হাতের ক্রীড়নকমাত্র। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ক্রোনি পুঁজির দাপট ।তাদের অঙ্গুলি হেলনেই

তৈরী হয় দেশের স্বার্থবিরোধী কালা আইন, গণতন্ত্র বিরোধী দেশদ্রোহী আইন,পাশ হয় শ্রমিক ,কৃষক, কর্মচারী বিরোধী নানান আইনপ্রণালী।

তার উপরে রয়েছে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রতিযোগিতা। দেশের আপামর জনগণের জন্য কর আদায়ের এক আইন, আর মুষ্টিমেয় ধনীকশ্রেণির জন্য আলাদা আইন। যার সুফল নিয়ে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব করে দিয়ে দেশের ক্রীড়নক সরকারের মদতে দেশের বাইরে বহাল তবিয়তে রাজার হালে দিন যাপন করছে, আর মরছে দেশের আপামর জনগণ। তাদের শিল্প, সম্পদের ক্ষতি হলে তারা পাবে ক্ষতিপূরণ।আর দেশের কৃষক দের ফসল নষ্ট হলে তারা পাবে না কোন ক্ষতিপূরণ।ধার – দেনার জন্য হা-হুতাস করতে করতে জমির আলে বসে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। আমাদের রাজ্যে নিম্নচাপজনিত অকাল বর্ষনে ধান,আলু ,সবজী চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচ জন আলু চাষী আত্মহত্যা করেছে।এ বিষয়ে রাষ্ট্র উদাসীন। আর ভেকধারী কৃষক দরদী মমতা ব্যানার্জির কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।, কর্পোরেটমুখী অর্থনীতির মূল কথাই হল লাইনে দাঁড়াও, কর মেটাও আর মেরে খাওয়া ধনকুবেরদেব লুঠের ফলে ফাঁকা কোষাগার পূরণ করে দেশের ‘সুনাগরিকত্বের’ পরিচয় দাও। সাধারণ মানুষের রেহাই নেই এই নব্য অর্থনীতির যাঁতাকল থেকে। তাই এই গরীব,খেটে খাওয়া, বঞ্চিত মানুষজনকে ভুলিয়ে রাখার মোক্ষম অস্ত্র ধর্মীয় বিভাজন ।একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান রাজনীতির সাথে ধর্মকে ঢুকিয়ে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে।তার জন্যই,অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভেদ-বৈষম্যকে জিইয়ে রেখে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার জিগির তুলে,গীতা পাঠ ও চন্ডী পাঠে মানুষকে মাতিয়ে রাখার পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে মোদি ও শাহ জুটি। মমতা ব্যানার্জিও কমতি নেই।তিনিও চন্ডী পাঠ ও গঙ্গা আরতীর ব্যবস্থা করেছেন।আর সাধারণ মানুষ, লড়াই করবে পরস্পরের বিরুদ্ধে , সেই সুযোগে নেপোই দই মেরে খাবে সাবলীলভাবে।গদি মিডিয়া সত্যকে চাপা দিয়ে , মিথ্যাকে মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দিয়ে সব গুলিয়ে দিচ্ছে। শ্রমিক কৃষক সহ সাধারণ মানুষকে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে হবে যে, তাদের জীবন যন্ত্রণার জন্য দায়ী সরকারের নীতি।এই নীতি পরিবর্তনের সংগ্রামে শ্রমিক কৃষকের নেতৃত্বে শোষিত বঞ্চিত মানুষজনকে নিয়ে শ্রেণীসংগ্রামের মধ্য দিয়েই , নব্য অর্থনীতির আবর্ত থেকে মানুষকে বের করে আনতে হবে।বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি সেই কাজ করে চলেছে।

[তথা সংগৃহীত]