প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আমরা আজ অতিষ্ঠ ।আইলা ,,আমফান, ইয়াস ,২০২১ এর বন্যা, চলতি বছরের তীব্র দাবদাহ কিম্বা বাতাসে আর্দ্রতার আধিক্যের কারণে দুর্বিষহ আবহাওয়া– এদের দাপটে মানুষের জীবন আজ বিপন্ন ।প্রতিবছরই এই ধরনের দুর্যোগ হচ্ছে ।প্রকৃতি ,–“উন্নত প্রজাতির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে ।”জীব বৈচিত্রের উপর চরম আঘাত নেমে এসেছে ।ফলে  জীববৈচিত্র্য আজ চরম সংকটের মুখে। আদিম কাল থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের নানান বৈচিত্রময় প্রজাতি সারা পৃথিবীতে অবস্থান করছে ।উভয়কুলের প্রজাতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ।কেউ বিচ্ছিন্ন হলে তাদের যেমন প্রতিক্রিয়া হয়,আর সেই প্রতিক্রিয়া আমাদের সমাজ জীবনেও পড়ে ।ইতিমধ্যেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে ।বিশেষ করে কৃষিতে পুঁজির অনুপ্রবেশের ফলে বহুমুখী কৃষি ব্যবস্থা আজ অবলুপ্তির পথে ।এর প্রভাব প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের মধ্যে পড়ছে।প্রকৃতি, পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য –আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় তিনটিই  অপরিহার্য ।

প্রকৃতি ও পরিবেশের নানা ধরন ,রূপ, জীবের জিনগত নানান দৃষ্টিনন্দন বৈচিত্র্যে ভরা সৃষ্টিশীল নানান প্রজাতি বাস্তুতন্ত্রের  (ইকোসিস্টেম) বৈচিত্রের মধ্যে মানুষ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ।ব্যালান্স যদি এদিক সেদিক হয়  ,তাহলে একে অপরকে আঘাত করে ।আর তার প্রভাব পরিবেশের সর্বস্তরে পড়ে ।বর্তমানে আমাদের সমাজে তাই ঘটে চলেছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ,  দৃশ্যদূষণ, নদীদূষণ,  সব মিলিয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থাপনায়  লক্ষ লক্ষ বনসৃজন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের পর এই গাছ কেটে নামমাত্র দামে বিক্রি হয়ে গেছে। বেশিরভাগ টাকা পঞ্চায়েত পরিচালকমন্ডীর  পকেটে ঢুকেছে । নতুন করে বনসৃজনের পরিকল্পনা করা হয়নি। আশার কথা ,কিছু কিছু ব্যক্তি,ক্লাবসংগঠন, সবুজের অভিযান নামে সংগঠন মিলিতভাবে  বনসৃজনও যেমন করছে ,তেমনি লু্প্ত হয়ে যাওয়া গাছগুলিও লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।আমাদের প্রাথ্যহিক জীবনে নদ–নদীর দূষণ ও নদী ভাঙ্গন আজ ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে ।তারপর আছে ফি বছর ঘূর্ণিঝড় আর প্রবল বৃষ্টিপাত। মানুষের জীবন আজ অতিষ্ঠ।  অসংখ্য নদ নদী  তার সাথে গঙ্গা নদীর দূষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। রোগের আঁতুরঘর এখন গঙ্গা। গঙ্গা নদীর দুই ধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারখানা, মন্দির, মসজিদ সহ নানান ধরনের তীর্থক্ষেত্র। এই সব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য বস্তুগুলি প্রতিদিন গঙ্গার জলে পড়ছে ,ফলে জল হয়ে যাচ্ছে দূষিত। এছাড়া আছে শহরের পয়ঃপ্রণালীর  জলের বর্জ্য বস্তূ নিত্যদিন গঙ্গার জলে মিশ্রিত হচ্ছে, ফলে গঙ্গার জল ভয়ঙ্কর ভাবেই দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গঙ্গার দুই পাড়ে বস্তিবাসী মানুষদের জন্য শৌচাগার আছে নামমাত্র। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।আর গরু ও মহিষের খাটাল অগুনতি। মানুষ ও পশুর মল গঙ্গার জলে দ্রবীভূত হচ্ছে।*এই মলেই থাকে,”ফিক্যাল কলিফর্ম”এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া*।এর প্রভাবে গঙ্গার জলে জলজ প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ যেমন বিপন্ন হচ্ছে তেমনি জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাচ্ছে।তার জন্যই আমাশয় , টাইফয়েড, হেপাটাইটিস –জাতীয় রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তারপর আছে শহরের জমা জল।ডেঙ্গু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে নাগরিকদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সরকারকেও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। 

গঙ্গার দুই তীরে বসবাসকারী মানুষের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, , উৎসব অনুষ্ঠানের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ,থার্মোকল সবই ফেলা হচ্ছে গঙ্গার জলে।আর এই সব বর্জ্য পদার্থ দীর্ঘদিন ধরে পচতে পচতে  বিষাক্ত গ্যাসে জলবায়ু আরও দূষিত হচ্ছে।শব্দদৈত্য আজ পাড়ায় পাড়ায়, অলিগলিতে, ডিজের দৌরাত্ম্য, বেআইনিভাবে উচ্চঃস্বরে মাইক বাজানো,ও শব্দবাজীতে সাধারণ মানুষ যেমন অতীষ্ঠ তেমনি ভীত সন্ত্রস্ত। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে থাকেন। কান ফাটানো শব্দে  তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে যান। শিশুরা পর্যন্ত বাদ যায়নি। যে শিশু তিল তিল করে  মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে তাদেরও একটা অংশ বধির হয়ে জন্মায়। আবার অনেক শিশুও বধির হয়ে যাচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। পশুপাখিও আজ  বিপন্ন । প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে ।প্রশাসন এ সম্পর্কে প্রায় উদাসিন থাকে।এসব বিষয়ে আইন থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার। অনেক ক্ষেত্রে টাকাতে রফা হয়ে যায়। আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বার মাসে তের পার্বন, নানান অনুষ্ঠান, এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিলে ও নানা কর্মসূচিতে ডিজের শব্দে  মানুষ নাজেহাল।তারপর আছে দৃশ্য দূষণ।নেতা নেত্রীদের কাট আউটের ছবি, যত্রতত্র  বিজ্ঞাপনের জৌলুস, রাজনৈতিক দলগুলোর ফ্লেক্স — পতাকায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তার দুধার।রাস্তায় আসা যাবার পথে মাঝে মাঝেই চোখ বন্ধ রাখতে হয় বিশ্রামের জন্য। *নতুন করে আর একটা দূষণ গ্রাম -বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে।তা হল –নাড়ায় আগুন ।তার থেকেও ভয়ানক দূষণ বেড়ে গেছে।আগে কাস্তে দিয়ে ধান কাটা হত।ধানের গড়া জমিতেই পড়ে থাকত।কম্বাইন হারভেস্টর যন্ত্র ধান কাটার জন্য যখন গ্রামে এল তখন থেকেই নাড়া পোড়ানো শুরু হল আর দূষণের মাত্রা বেড়ে গেল।

জমিতেই ধান কাটা হচ্ছে,ঝাড়াই হচ্ছে,আর সেই খড়ে আগুন ধরিয়ে দ্রুত জমি পরিষ্কার করা হচ্ছে পরবর্তী ফসলের জন্য।খড়ে আগুন লাগানোর পর কুন্ডলী পাকিয়ে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারিদিক।এর ফলেই দূষণ ছড়াচ্ছে। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড মিশে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা শক্তি এবং  মাটির নিচে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত যে জীবানু থাকে তা সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এ বিষয়ে কৃষি দফতরকে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে না পারলে আমরা ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হবো।এ এক মারাত্মক দূষণ।*বর্তমানে উদারীকরণের যুগে ও ধান্দার ধনতন্ত্রে বাণিজ্যিক স্বার্থে ,মুনাফার জন্য কর্পোরেট সংস্থাগুলি ঢুকে পড়েছে প্রকৃতি ,পরিবেশ ও কৃষিসহ জীববৈচিত্র্য পরিধির মধ্যে ।সরকারের মদতে তারা ধ্বংস করছে আমাদের জীব বৈচিত্রের সমারোহকে। এইভাবেই জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে ।বিশ্বের উষ্ণায়নের প্রভাবে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া,  অত্যধিক গরম অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, তার সাথে আছে দূষণ। ফলে বজ্রপাত বাড়ছে। গত বছর পাঁচটি জেলায় একদিনে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছিল ২৮ জনের।পরিসংখ্যান বলছে ,২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০ –২১ সালে বজ্রপাতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ।এ সবই হচ্ছে মানুষের কৃতকর্মের জন্য ।ফলে বজ্রপাত বাড়ছে , এভাবে চলতে থাকলে বজ্রপাতের অনুপাত আরও বাড়বে। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন,—প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে,। উষ্ণতা যত বাড়বে,  বজ্রপাতও  তত বাড়বে।  আর গ্রাম ও শহরতলীর গরিব–গুরবো মানুষ মরবে বেশি। কারণ তারাই থাকে মাঠে-ঘাটে রাস্তায় ।সরকার সামান্য কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়িত্ব-কর্তব্য শেষ করবে ।যার গেল তার গেল ।সরকার ঠান্ডা ঘরে বসে রইলো ।আসল প্রশ্ন হল গ্রীন হাউসের তাপ নির্গমন কি কমানো যাবে? বিশ্বের উষ্ণায়ন কমানোর জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যারিস চুক্তি যা নিদান দিয়েছে তা পুঁজিবাদী উন্নত দেশগুলি কোন মতেই মানছে না যার ফলেই আজ সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়েবিজ্ঞানীরা অনেক আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন ,এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যা নিদান দিয়েছিল তা হল, বিশ্বের উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। নিয়ন্ত্রনতো হল না।

প্যারিশ চুক্তিকে  অমান্য করেই সাম্রাজ্যবাদের পান্ডা আমেরিকা বিশ্বের উষ্ণায়ন বাড়িয়েই চলেছে মুনাফার জন্য।বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে চলেছে।করোনা মহামারীর জন্য মানুষই তো দায়ী।তার বিপদ এখনো কিন্তু কাটেনি ।এই ভয়ঙ্কর করোনাতে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কিভাবে মানুষ না খেয়ে মরেছে, চিকিৎসাসহ অন্যান্য পরিষেবা থেকে অসহায় মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে ।সরকার এ বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি। মূলত এর জন্য দায়ী মানুষ। একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে দিয়ে সরকার যেভাবে প্রসাধনী উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর যে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তাতেই বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকুল।  তার সাথে যুক্ত হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।স্বাভাবিকভাবেই বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের সংস্পর্শ বাড়ছে। আর এইসব বন্যপ্রাণী বয়ে নিয়ে আসছে ভয়ংকর সব জীবাণু। প্রায়ই সংবাদপত্রে দেখা যায় বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ।বিরল প্রজাতির প্রাণীও লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে ।খাদ্য ও জলের অভাবে তারা আজ দিশাহারা, দিকভ্রান্ত।অবাধ বিচরণের জন্য তাদের যে জঙ্গল ও পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল তা আজ মুনাফাখোরদের দখলে।মূলত বসবাস, খাদ্য ও জলের জন্যই  বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে। তাদের জন্য চায় অবাধ জঙ্গল ,পর্যাপ্ত খাদ্য, ও জল।সরকারকেই তার জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে ।তবেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে। সারা পৃথিবীতে অরণ্য, বাস্তুতন্ত্র এবং বন্যপ্রাণ রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ,”বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং তার প্রভাবে মহামারীর সংক্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি– এই দুই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।সমস্যা সমাধানে ত্রিমাত্রিক গবেষণা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।”প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৫ সালের প্যারিস শহরে ২০শে নভেম্বর থেকে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।ঐ সম্মেলনে কিয়োটি চুক্তি বাতিল করে মূল সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে,”পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প বিপ্লবের আগের (অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ) মাত্রা থেকে কোনমতেই ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি না হয়।কিন্তু উদ্যোগ নিতে হবে যাতে এই বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে বেঁধে রাখা যায়——–“। আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে আমেরিকা স্বাক্ষর করে। ওই সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বারাক ওবামা। ২০১৭ সালের ১ জুন প্যারিস চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে আসে। সমস্ত বিধি নিষেধ ভঙ্গ করে গ্রীনহাউস তারা বাড়াতেই থাকে।লক্ষ্য করার বিষয় হলো যে, ১৯১৩ থেকে ২০১৩ –এই ১০০’ বছরে আমেরিকার গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন, ভারত ও চীনের যা নির্গমন হয়, তার দশ গুণ।বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি ,পরিবেশ ,জলবায়ু সর্বোপরি বাস্তুতন্ত্রের উপর এবং জীব বৈচিত্রের উপর ক্রমান্বয়ে আঘাত নেমে আসছে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রোগভোগ বেড়ে চলেছে।  পরিণতি– গরিবের চালে বীর লড়াই হচ্ছে। মারা যাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ।রাষ্ট্রযন্ত্রের মাথায় যারা বসে আছেন তারা পুঁজির দালালি করছেন। নিজস্ব শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। নিত্য নতুন প্রতিশ্রুতি আর কিছু কেমন খয়রাতি, তাতেই তারা মানুষকে সন্তুষ্ট করে তাদের অধিকার বোধকে দূর্বল করতে চায়। প্রবাদ বাক্যে আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।করোনা কালে আমরা দেখেছি ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণ যেভাবে প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। করোনা রোগীরাও দিশাহারা,। চিকিৎসাও ছিল অপ্রতুল। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল কম।তারপর ছিল পরিকাঠামোর অভাব ।

সর্বোপরি করোনা রোগী সহ পরিবার পরিজন তাদেরকে বিপন্ন করে তুলেছিল রাষ্ট্র। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো করোনা মহামারী মোকাবিলায় যখন ব্যর্থ তখন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি নিজের দেশের করোনা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।আবার অন্যান্য দেশকে সাহায্য করেছে। আসলে পুঁজিবাদী দেশগুলিতে যা হয়েছে আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।ক্ষমতার দম্ভে যারা মত্ত ,দলবদলের নেশায় যারা ব্যস্ত, টাকা কামানোর রাস্তা পরিষ্কার করতে যারা গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ধর্মীয় বিভাজনের মেরুকরণকে কাজে লাগিয়ে যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা তাদের শ্রেণীর স্বার্থকে উপেক্ষা করে এই সব কাজ করবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাই যে , করোনা পর্বে,ন্যাশনাল ওশিয়নিক এন্ড এ্যাটমোস্ফোরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য খুবই ভয়ঙ্কর। তথ্যে যা দেখা যাচ্ছে তা হল এই,”লকডাউনের মধ্যেও গত এপ্রিল ,২০২০ তে বাতাসে কার্বন- ডাই -অক্সাইডের  ঘনত্ব সর্বকালীন রেকর্ড ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে ৪১৬.১৭ পার্টস পার মিলিয়নে।”প্রসঙ্গত জলবায়ু আন্দোলনের নেতা জ্যোমি মারগোলিয়া কিছুদিন আগে বলেছিলেন,”জলবায়ুর আরোগ্যের জন্য দুর্বল মানুষের মৃত্যু কামনা আর যাই হোক জলবায়ুর প্রতি ন্যায় বিচার হতে পারে না কখনোই।” এঙ্গেলস কত যুগ আগে লিখেছিলেন,” আমাদের অবস্থান প্রকৃতির সীমারেখার বাইরে নয়, বরং রক্ত -মাংস, মেদ- মজ্জা, মেধা- মননসহ আমরা প্রকৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ,প্রকৃতির মধ্যেই আমাদের অস্তিত্ব।”প্রকৃতি সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ প্রায় একশ” বছর আগে সাত দফা সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সরকার ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে।তার মধ্যে প্রধান তিনটি এখানে উল্লেখ করা হলো –১ )আমাদের প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করা নয়, প্রকৃতিকে ভোগ করা নয় ,প্রকৃতির সঙ্গে সম্ম্মিলন। ২ ) প্রকৃতির সঙ্গে কোন বিরোধ নয় ,তার কাছে আমাদের জন্মকালের ঋণ, প্রকৃতির মধ্যে আমাদের স্বাভাবিক অস্তিত্ব। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে রয়েছে নাড়ীর রক্ত চলাচলের একাত্মতা অনুভবের স্বাভাবিক  যোগ। ৩ )প্রকৃতির দিকে মানুষ যত কানা হচ্ছে, প্রকৃতি তাকে মৃত্যুবাণ মারছে। 

গভীর একাত্মতার সঙ্গেই কবি অনুভব করে আরও বলেছিলেন,” দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।” ভোগবাদের দুনিয়ায় ধান্দার ধনতন্ত্র ও পুঁজিবাদ,নখ – দাঁত বের করে পুঁজিবাদীরা প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় নেমেছে। পরিবেশকে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, জীব বৈচিত্র্যকে যেভাবে লোপাট করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। অবশ্যই প্রধান দায়িত্ব কর্তব্য  বামপন্থীদের।সি পি আই (এম )এর ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে বাম ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অধ্যায়ে, পরিবেশ সংক্রান্ত কলমে আহ্বান জানানো হয়েছে যে ,”বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন, নবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহারকে উৎসাহদান, প্রত্যেকের জন্য প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার সুনিশ্চিত করা, অরণ্য জলাভূমি সংরক্ষণ, দূষণের মাত্রা চিহ্নিত করে আইনি বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ “।আসুন আমরা সকলে এই মহান কাজে ব্রতী হই।
 {তথ্য সংগৃহীত}