হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন,তারপরেই আগামী ২০ নভেম্বর থেকে মধ‍্য প্রাচ‍্যের কাতারে  পেশাদারি ফুটবলের বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পরস্পরের মুখোমুখি হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যোগ‍্যতা অর্জন করা বত্রিশ টি দেশ। প্রতিযোগিতা শেষ হবে ১৮ শে ডিসেম্বর।

এই প্রথম শীতকালে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।  স্টেডিয়ামের সংখ‍্যা মাত্র আট। সব স্টেডিয়ামই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। গতবারের চ‍্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং রানার আপ ক্রোয়েশিয়া থাকছে এই প্রতিযোগিতায়। আমরা বাঙালিরা প্রধানত ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে সমর্থনের মাপকাঠিতে দু ভাগে ভাগ হয়ে যাই বটে কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে ব্রাজিল বা ১৯৮৬ সালের পর আর্জেন্টিনা কোন পক্ষই বিশ্বকাপ ফুটবলে চ‍্যাম্পিয়ন হয় নি। যে কারণেই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন মনোমুগ্ধকর ফুটবল খেললেও দক্ষিণ আমেরিকার প্রধান দুই ফুটবল রাষ্ট্র এ বছরের বিশ্বকাপে  বিরাট সাফল‍্য পাবে না। 

কিন্তু বিশ্বের দুই শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার আর্জেন্টিনার  লিওলেন মেসি ও ব্রাজিলের  নেইমার জুনিয়র কাতার বিশ্বকাপেই সম্ভবত শেষবারের মত নামবেন বলেই মরীয়া চেষ্টা করবেন নিজের দেশকে চ‍্যাম্পিয়ন করতে। যদিও বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে ইউরোপের ফুটবলের ধরণ এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায়  অনেক বেশি কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। মেসি ও নেইমারের মতো বিরল প্রতিভার অধিকারী ফুটবলাররা ব‍্যাতিক্রম, কিন্তু ইউরোপের প্রধান প্রধান ফুটবল প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলারদের সাফল‍্য চোখে পড়ার মতো নয়। 

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, বুন্দেশলিগ,লা লিগা  এমনকি উয়েফা চ‍্যাম্পিয়নশিপে নজর কাড়ছেন ইউরোপের ফুটবলারেরা। অথচ বেশিরভাগ ক্লাবেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া চিলি,পেরুর ফুটবলারদের খেলতে দেখা যায়। তাঁরা টিকে থাকছেন প্রেসিং ফুটবলের সঙ্গে নিজেদের আপ্রাণ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে। দ্রুত গতির সঙ্গে শক্তির মিশেল দেখতেই এখন দর্শক অভ‍্যস্ত। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের পাসিং এবং ড্রিবলিং এখন ইউরোনের ফুটবলারদের সহজে পর্যূদস্ত করতে পারে না। কোপা আমেরিকায় সাফল‍্য পাওয়া ফুটবলারারাও ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। এই মুহূর্তের পারফরমেন্সের হিসাবে দক্ষিণ আমেরিকার যে ফুটবলারকে মেসির চেয়েও এগিয়ে রাখেন বিশেষজ্ঞরা ব্রাজিলের সেই ভিনিসিয়াস জুনিয়র খেলেন রিয়াল মাদ্রিদের উইংয়ে। ব্রাজিলেরই  গোলকিপার অ‍্যালিসন বেকার খেলেন লিভারপুলে। মেসি ছাড়া যে ফুটবলারের ওপর আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বেশি ভরসা করে সেই এঞ্জেল ডি মারিয়া খেলেন জুভেন্টাসে।

আবার আফ্রিকার যে তারকা নিশ্চিতভাবেই কাতারে নজর কাড়বেন সেনেগালের স্ট্রাইকার  সাদিও মানে খেলেন বায়ার্ন মিউনিখে। কাতার বিশ্বকাপে ইউরোপের সেরা হিসাবে ফ্রান্সের করিম বেঞ্জিমা, পোল‍্যাণ্ডের রবার্ট লিউডোনস্কি এবং বেলজিয়ামের কেভিন ব্রুয়েনের নাম উঠে আসছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পাশাপাশি।

 গত বিশ্বকাপে যাঁকে দেখে অনেক প্রবীণ ফুটবলপ্রেমীর পেলের কথা মনে পড়েছিল সেই কিলিয়ান এমবাপে এবারও থাকছেন কাতার বিশ্বকাপে। থাকবেন জার্মানির সতেরো বছর বয়সী তরুণ স্ট্রাইকার ইউসুফা মৌকাকু। মিশরের মহম্মদ সালাহ্ বা নরওয়ের আর্লিং হাল‍্যাণ্ডের  মত সেরা প্রতিভার বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠে না থাকা অবশ‍্যই ট্র‍্যাজিক।

 কে হবেন এই বিশ্বকাপের  মহাতারকা? নজর থাকবে এমবাপে, ব্রুয়েনদের দিকেই। যাঁরা তিরিশ বছরের কোঠায় পা রেখেছেন তাঁরা প্রতিটি ম‍্যাচ ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার চাপ নিতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু ফ্রান্সের করিম বেঞ্জিমা লিউনডোস্কি, এবং সব হিসাব উল্টে দিয়ে আট বছর পর ত্রিশ বছরে জার্মান ফুটবল টিমে ঢুকে পড়া মারিও গোৎসের ব‍্যাপারে এমন সরল ভবিষ‍্যদ্বাণী করা যায় না। এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ বলেই অনেকে জাপানের একুশ বছর বয়সী টেকফুসা কুবো র কাছে ভালো পারফরম্যান্স আশা করছেন। কুবো খেলেন বার্সিলোনায় মিডফিল্ডার হিসাবে।

গতবার ক্রোয়েশিয়া রানার্স আপ হওয়ার কারণে যেমন অনেকে সম্ভাব‍্য চ‍্যাম্পিয়নের দৌড়ে কালো ঘোড়া হিসাবে স্পেন বা বেলজিয়ামের ওপর বাজি ধরছেন 

  বাইশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসছে এশিয়ায় কিন্তু আয়োজক কাতার সহ  ইরান,সৌদি আরব জাপান দক্ষিণ কোরিয়া খেললেও প্রাথমিক বাছাই পর্বেই বিদায় নিয়েছে আমাদের দেশ ভারত। ১৮৮৮ সালে ডুরাণ্ড কাপ প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের হিসেব ধরলে  অথচ একশো চৌত্রিশ বছরের কাছাকাছি পুরোন এ দেশের ফুটবলচর্চার ঐতিহ্য। এবং ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। 

কিন্তু  পঁচাত্তর বছরের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর থেকে একবারের জন‍্যও বিশ্বকাপ ফুটবলে যোগ‍্যতা অর্জন করতে পারেনি ভারতীয় ফুটবল দল। কিংবদন্তি কোচ রহিম সাহেবের প্রশিক্ষণে  অলিম্পিকে সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছেছিলেন ভারতীয় ফুটবলারেরা সদ‍্য প্রয়াত সমর (বদ্রু ) ব‍্যানার্জীর অধিনায়কত্বে ১৯৫৬ সালে। তার পনেরো বছরের মধ‍্যেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্রমে ক্রমে তলানিতে ঠেকে ভারতের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স। কারণ বাকিরা এগিয়ে গেছে আর আমরা ক্রমশ পিছিয়ে গিয়েছি।