তিস্তা শীতলবাদ কে গ্রেপ্তার তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের আইনি ষড়যন্ত্র-  এটা কোনো নতুন ব্যাপার নয় ।বিগত ২০১৪  সাল থেকে গোটা ভারত জুড়ে ফ্যাসিবাদের যে পদশব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে , তিস্তার উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস,  সেই ফ্যাসিবাদ  ই পায়ের তলায় যে জমি খুঁজে পাচ্ছে ,তারই একটা স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে।  তিস্তা ও তাঁর সমমতাবলম্বীদের উপর যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে এসেছে,  তার প্রেক্ষিতে হলো , এহেসান জাফরির  পত্নীর দেশের সর্বোচ্চ আদালত ,সুপ্রিম কোর্টে ,পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী কালের ঘটনাবলী। সুপ্রিম কোর্টে শ্রীমতি জাফরির আবেদন খারিজ হওয়ার ফলে , গুজরাট গণহত্যার  সময়কালের মুখ্যমন্ত্রী ,তথা  ভারতের আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গণহত্যায় ক্লিনচিট পাওয়ার শেষ পর্যায়ে অতিক্রম করবার পর,  গণহত্যার কালে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা ঘিরে যাঁরাই সোচ্চার ছিলেন ,তাঁরাই যে তিস্তার মত একের পর এক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বলি হবেন,  সেই অশনি সংকেত বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারা যাচ্ছে।গুজরাট গণহত্যা কালে সংখ্যালঘুর অধিকার ঘিরে যাঁরাই  সোচ্চার ছিলেন, তাঁরাই কিন্তু ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন ।

এই যে কার্যক্রম রাষ্ট্রশক্তি চালাচ্ছে ,সেই কার্যক্রম চালানোর পেছনে রাষ্ট্রশক্তির ক্ষমতা অর্জনের ধারাবাহিকতা র দিকে  আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার ।কারণ;  একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে , গুজরাট গণহত্যার  পরবর্তীকালে ভারত রাষাট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ২০০৪  সাল থেকে দীর্ঘ  ১০  বছর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ছিল। এই দীর্ঘ দশ বছরের গুজরাট গণহত্যা  সম্পর্কিত আইন-আদালতের  ক্ষেত্রগুলি সেভাবে ইতিবাচক দিকে পরিচালিত হয় নি। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা কেবলমাত্র  ভারত নয়, গোটা বিশ্বের চলমান সামাজিক জীবনের একটা বড় সমস্যা। তাসত্ত্বেও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে ,গুজরাট গণহত্যার মত একটা স্পর্শকাতর  বিষয় ঘিরে আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে  কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্যই একটা ভূমিকা থাকে। যে ভূমিকা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার দেখাতে সক্ষম হয়েছে  ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির তথাকথিত নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে এহসান জাফরি হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলো ঘিরে,  সেই কর্মতৎপরতার বিন্দুবিসর্গ কিন্তু ডঃ মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার তার দীর্ঘ দশ  বছরে র শাসনকালে  একটি বারের জন্য দেখায় নি ।

 সেই কারনেই  আজকে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের তথাকথিত জমি নিষ্পত্তির থেকে শুরু করে গুজরাট গণহত্যার  দায় থেকে দেশের বর্তমান  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দেওয়া এবং তার জেরে বিশ্বাসী তিস্তার মত সমাজকর্মী কে, তাঁর সহযোগী দের ,তাঁর সমাজ সেবামূলক সংগঠন কে ,সেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ,হেনস্থা করার এই যে পরিবেশ ,সেটি রচনা দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না কংগ্রেসকেও।                    যদি ইউপিএ সরকার  দীর্ঘ দশ  বছর শাসন কালে এই সমস্ত ব্যাপারগুলি র  নিষ্পত্তি ঘিরে যথাযথ অবস্থান গ্রহণ করত ,তাহলে কিন্তু আজকে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে গোটা যন্ত্রকে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে পরিচালিত করতে পারত না।                    তিস্তা শীতলবাদের উপরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আজ আর ভারতের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয় ।আন্তর্জাতিক স্তরে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ভারতের মান মর্যাদাকে  ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ফোরাম ইতিমধ্যেই তিস্তা  সহ তাঁর সহকর্মী ,সহমতাবলম্বীদের উপর ভারতের এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সোচ্চার।                 

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ভারতে  বামপন্থী দলগুলি , ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল মানুষেরা ছাড়া আর কেউ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিস্তা শীতলবাদের  উপর এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ঘিরে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এহসান জাফরির পত্নীর প্রতি যে অবিচার ভারতের সর্বোচ্চ আদালত করেছে ,সেই অন্যায় কে ঘিরে সি পি আই(এমে)র পলিটব্যুরো সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির  সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, যে  দ্রুততার সঙ্গে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ ধ্বনিত করেছেন ,তা সাম্প্রতিক ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় ।জাতীয় স্তরে সি পি আই(এমে) র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি থেকে শুরু করে মহম্মদ সেলিম যেভাবে গুজরাট গণহত্যার দায় থেকে প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদিকে অব্যাহতি দিয়ে মিথ্যে অভিযোগে তিস্তা সহ তাঁর সহকর্মীদের হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন , তা কেবল সি পি আই(এম)  দলটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে শক্তিশালী করছে না। আজকে গোটা ভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িক আরএসএস ও তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি যে সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদ কায়েম করছে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম রত ,দলমত নির্বিশেষে, সর্বস্তরের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বিবেককে শক্তি যুগিয়েছে।                   

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে  সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপি বিরোধী বলে সাম্প্রতিককালে প্রচার করে থাকেন ।যদিও গুজরাট গণহত্যার  কালে এই বিজেপির সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অবস্থান করেছিলেন। এহসান জাফরি  হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া ক্লিনচিট ঘিরেও  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তিস্তা শীতলবাদ  বা তাঁর সহকর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়েও কিন্তু এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি ।                 

তিস্তার উপরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে এসেছে ,তার নামিয়ে আনার জন্য বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের ভূমিকা যে সর্বাধিক,  তা নতুন করে বলার কোন প্রয়োজন নেই ।আর একথা আমরা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে ,মমতা তাঁর সামাপ্রতিক বিজেপির বিরোধিতা যতই দেখান না কেন ,আরএসএসের একটি অবস্থান ঘিরেও আজ পর্যন্ত তিনি কোনো রকম প্রতিবাদ করেন নি ।আরএসএস রেগে যেতে পারে, ক্ষুণ্ন হতে পারে, আরএসএসের স্বার্থহানি হতে পারে –এমন কোনো বিবৃতি মমতা তাঁর গোটা রাজনৈতিক জীবনে আজ পর্যন্ত দেন নি। তাই আরএসএসের বারা ভাতে ছাই দেওয়া তিস্তা র  উপরে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ঘিরে স্বভাবসুলভ রাজনৈতিক অবস্থানের দরুনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শব্দও উচ্চারণ করেন নি।                   

সাম্প্রতিককালে হতভাগ্য সংখ্যালঘু সমাজের কথা বলার জন্য অন্নদাশঙ্কর রায় পরবর্তী প্রজন্মের যে কয়েকজন হাতেগোনা মানুষ আছেন, তাঁদের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য নাগরিক হলেন তিস্তা। তাঁর গোটা জীবনটাই সংখ্যালঘুর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মনিবেদিত। সংখ্যালঘুর উপর সামাজিক ,সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- সমস্ত ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর দীর্ঘদিনের লড়াই যে  হিন্দু সাম্প্রদায়িক ,মৌলবাদী শিবিরের স্বরূপ  শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের কাছেই মেলে ধরেছে তা নয়।আন্তর্জাতিক স্তরে তিস্তার কাজ ঘিরে   বিশ্বসভ্যতা  বিশ্বসভ্যতা জানতে পেরেছে   অসভ্য বর্বর আরএসএস ও তাঁর রাজনৈতিক সংগঠনের স্বরূপ টিকে। তাই কমিউনিস্টদের মতই হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শিবিরের কাছে অন্যতম  ঘোষিত শত্রু হলেন তিস্তা। তিস্তার পত্রিকা’ কমিউনালিজম  কমব্যাট ‘ গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু সমাজের উপর ভারতে, অসভ্য-বর্বর হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির কি ধরনের নারকীয়  অত্যাচার চালায়, কি ধরনের সামাজিক বীভৎসতা চালায় ,কি ধরনের অর্থনৈতিক শোষণ চালায় ,তার সুসংবদ্ধ বিবরণ প্রকাশ করেছে। সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক শিবির, নানা ধরনের আইনি জাঁতাকলে ভেতর দিয়ে ওই পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। তিস্তার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে ,সংখ্যালঘুর স্বাধিকার রক্ষার  পক্ষে যে সংগঠন, সেই  সংগঠন ঘিরেও নানা ধরণের অসত্য অভিযোগ এনে, তিস্তা সম্পর্কে অসত্য ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করেছে জনমানসে।               

রাষ্ট্রশক্তির এহেন বিরোধিতা সত্ত্বেও তিস্তা  কিন্তু তাঁর লড়াই থেকে একচুলও সরে আসেন নি ।এতোটুকু নীতির প্রশ্নে সমঝোতা করে চলেন নি রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে। ন্যুনতম  সমঝোতা করে চলেন নি কায়েমী স্বার্থের সঙ্গে। তিস্তার পিতা  তিস্তার পিতা এম,সি, শীতলাবাদ ছিলেন দেশের সর্বপ্রথম এ্যটর্নি জেনারেল।তিস্তার বৃদ্ধ পিতামহ  ছিলেন চিমনলাল হরিলাল শীতলাবাদ।চিমনলাল  ব্রিটিশ ভারতের  বিশিষ্ট্য উকিল ছিলেন।। জালিয়ানওয়ালাবাগে  ভারতীয়দের  হত্যাকারী জেনারেল ডায়ারের  বিরুদ্ধে মামলা লড়েছিলেন তিনি। চিমনলাল শীতলাবাদের ই  দীর্ঘ লড়াইয়ের কারনে  লন্ডনের ব্রিটিশ  সরকার জেনারেল ডায়ারের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল করতে বাধ্য হয়েছিল ।বাধ্য হয়েছিল  ডায়ারকে পদাবনতি  ঘটাতে। তিস্তার  পিতামহ  ছিলেন ভারতীয় সংবিধান প্রনেতা  বি আর আম্বেদকরের বিশেষ সহযোগী। ডঃ আম্বেদকরের “বহিস্কৃত হিতকারিনী সভা” সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিস্তার পিতামহ  ।                      

তিস্তার পিতা পরবর্তী জীবনে যেভাবে ইন্দিরা গান্ধীর সময়কালের জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে ভারতের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ,ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে লড়াই কে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম কে প্রসারিত করেছিলেন, সেই ধারাতেই কিন্তু তিস্তা রাষ্ট্রশক্তির সমস্ত ধরনের বিরোধিতা কে অগ্রাহ্য করে, তার লড়াইকে জারি  রেখেছেন ।ভাবতে খুব কষ্ট হয় এই কারণে যে, আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি যখন যে রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেছে বা যখন রাষ্ট্রশক্তিকে করায়ত্ত করেছিল নয়ের দশকে, তখন তিস্তার  কে কমিউনিস্টদের মতোই পয়লা নম্বর দুশমন নির্ধারিত করে ,তাঁর উপর নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা কংগ্রেস কিন্তু অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রীত্বকালের  পরে কেন্দ্রে দশ  বছর ক্ষমতায় থেকেও, তিস্তার সংগঠন ঘিরে বিজেপি আরএসএসএর অপবাদ , বা তাঁর পত্রিকা ঘিরে আইনি সমস্যা ,এগুলি দূর করবার জন্য বিন্দুমাত্র কোন অবস্থান গ্রহণ করে নি ।                 

হয়ত বা তিস্তা তাঁর গোটা সামাজিক কার্যক্রমে কখনো কংগ্রেস দলের সঙ্গে কোনো রকম আপস করেন নি , ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে কংগ্রেস দল বা তৎকালীন ভারতের প্রধান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের ভূমিকা ঘিরে  কঠোর সমালোচনা করেছেন, তাই হয়ত  কংগ্রেস দল কখন ও  এই আত্মনিবেদিত, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষটি ,বা তার আশেপাশে থাকা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষজন ঘিরে কোন প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন নি।                     

তিস্তা শীতলবাদ  বা তাঁর সহকর্মীদের উপর এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ব্যক্তি তিস্তা বা , ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সহকর্মীদের উপর কোনো মামুলি আক্রমণ, অত্যাচার নয় ।আজ তিস্তা  আক্রান্ত হয়েছেন,  কাল আপনি আক্রান্ত হবেন। পরশুদিন আমরা আক্রান্ত হব। তিস্তার উপরে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস,  সামগ্রিকভাবে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ,যে কোন স্তরে আন্দোলনরত, প্রতিরোধরত  মানুষের উপরে আঘাত । তিস্তাকে দিয়ে যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নয়া অভিমুখ উন্মোচিত হল,  সেই অভিমুখ আগামী দিনে কমিউনিস্টদের উপরে নেমে আসবে ।বামপন্থীদের উপরে নেমে আসবে এবং সমস্ত ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ভারতীয় নাগরিকদের উপর নেমে আসবে। তিস্তা রাষ্ট্রযন্ত্রের হিন্দু সম্প্রদায়িক, মৌলবাদী অবস্থানএর বিরোধিতা করেছেন বলে আজ রাষ্ট্রযন্ত্রের কারাগারে নিক্ষিপ্ত। তিস্তার পথ ধরে যে  ভারতীয় নাগরিক আজ রাষ্ট্রযন্ত্রের হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী অভিমুখের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত হবেন ,তাঁদের প্রত্যেকের পরিণতি আগামী দিনে তিস্তার মতো ঘটবে। যে বামপন্থী ভাবধারা ,যে প্রগতিশীল মতাদর্শের তাগিদ তিস্তা কে সংখ্যালঘুর স্বাধিকার রক্ষায় সংগ্রামী বিবেকে পরিণত করেছে ,সেই বামপন্থী ভাবধারার যারা ধারক-বাহক হবেন, তাঁদের পরিণতি অচিরেই  ঘটবে তিস্তা র আদলে ।               

ফ্যাসিবাদ এইভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে করায়ত্ত করে নিজেদের মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ।সমস্ত ধরনের বিরোধিতাকে দূর করতে চায় মতাদর্শকে সমাজের বুকে চাপিয়ে দেওয়ার  লক্ষ্যে ।এই কাজে তাদের টার্গেট হলো সমস্ত ধরনের বিরোধী শিবিরে থাকা রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা। হিটলার ঠিক এই ভাবেই তার মতাদর্শের বিরোধী সমস্ত রকমের মানবিক শক্তির টুটি টিপে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিল।মুসোলিনিও এই পদ্ধতি তেই এগিয়েছিল। এই পদ্ধতিতেই  একদিন এগুনোর চেষ্টা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার কালে।এই পথ ধরে হেঁটে ছিলেন আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান,  জিয়াউল হক। এই পথেরই পথিক খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান,এইচ এম  এরশাদ কিংবা খালেদা জিয়া ।আজ সেই পথেরই পথিক নরেন্দ্র মোদী ।এই পথের বিস্তার ঘটিয়েছেন অটলবিহারি বাজপেয়ি ।এই পথকে ভারতের বুকে দেগে দিতে তিনি পারেননি ।কারন,  সংসদে একক গরিষ্ঠতা তাঁর ছিল না। কিন্তু অটল বিহারী কে এই পথ নির্মাণে সেদিন সাহায্য করেছিলেন  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জয়রিম জয়রাম জয়ললিতা র মত আঞ্চলিক রাজনীতির কুশীলবেরা ।আজ যখন এই অটলবিহারি বাজপেয়ির উত্তরাধিকারী, আরএসএসের প্রচারক নরেন্দ্র মোদি, আরএসএস রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রিত্বের ইনিংস শেষ করে তৃতীয় বারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, ঠিক সেইসময় তাঁর এই  প্রস্তুতিপর্ব কে সুগম করার জন্য এবং অবশ্যই সফল করার জন্য আরএসএসের  অতি  বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সহযোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে নেমে পড়েছেন। সেই কারণেই আজ এহসান জাফরি হত্যার  বিচার না পাওয়া সত্বেও তা নিয়ে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে একটি শব্দ উচ্চারিত হয় না। সেই কারণেই আজ তিস্তা শীতলবাদ বা তাঁর  সহযোগীরা সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ অবলম্বন করে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর সহ মতাবলম্বী মানুষজনেরা একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না।