2019 সালে দ্বিতীয় বারের জন্য বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই দাঁত নখ বার করে আরো হিংস্র চেহারা নেয় বিজেপি। বুলডোজার চালাতে থাকে একের পর এক গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর, ধ্বংস করতে থাকে এই দেশের ঐক্য সম্প্রীতির পরিবেশ। আরো জোরে গলা টিপে ধরা হয় বিরোধী কন্ঠস্বরের। আসলে কি বিজেপি? মনে রাখতে হবে বিজেপি কে জন্ম দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তাই বিজেপি কেবল মুখোশ মাত্র আসল মুখ RSS।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নির্দিষ্ট ভাবে আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের ওপর। তবে শুধু কি মুসলিম? না একেবারেই না সাথে দলিত আদিবাসী আর যারাই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের উপরই আঘাত করা হয় হচ্ছে প্রতিদিন। তাই আফরিন ফাতিমার ঘরের উপর যেমন বুলডোজার চালানো হয় ঠিক তার পাশাপাশি ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন কেবলমাত্র উঁচু জাতের শিক্ষকের জলের বোতলে হাত দেওয়ার অপরাধে দলিত শিশুকে পিটিয়ে খুন করা হয় আর সিদ্দিক কাপ্পানদের মতো সাংবাদিকদের জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সত্যি কথা বলার অপরাধে।

প্রতিদিন গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশকে। মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে আমাদের ইতিহাস। কয়েকদিন আগে সিলেবাস থেকে মোগল ইতিহাসকে বাদ দেওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশদ্রোহী বলে। কারা দেশদ্রোহী আর করা দেশপ্রেমিক তার সার্টিফিকেট এখন বিজেপির থেকে আমাদের নিতে হবে! ব্রিটিশদের পায়ে ধরে যাঁরা মুচলেকা দিয়েছেন, স্বাধীনতা লড়াই তো দূরে থাক যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা দেশপ্রিমক?

নাকি ভগৎ সিং, লক্ষী সায়গলরা, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, কল্পনা দত্তরা দেশপ্রেমিক? ১৯১৩ সালের ১৪ই নভেম্বর ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে যাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় সেই আরজি জানানো বিনায়ক দামোদর সাভারকার দেশপ্রেমিক? নাকি ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভেল্লোর জেলে জাতীয় পতাকা তোলা কমরেড এ কে গোপালন দেশপ্রেমিক? এই প্রশ্ন করতে হবে তাদের যারা প্রতিদিন আমাদের উপর হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন করতে হবে তাদের যারা হিন্দু মুসলমান করে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে তাদের আর তাদের দালালদের।

যে দেশে হিন্দু বাড়িতে বিয়ের সময় মন্ত্র উচ্চারিত হয় “যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম” আর সানাই বাজে বিসমিল্লাহ খানের সুরে, যে দেশে কালি পুজো হয় কিন্তু মন্দিরে শ্যামা সঙ্গীত বাজে কাজী নজরুল ইসলামের। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আশফাকুল্লা খান আর রাম প্রসাদ বিসমিল সেই দেশকে শ্যামাপ্রসাদ সাভারকারদের উত্তরসূরীরা এতো সহজ ভাঙতে পারবে না আমরা কিছুতেই এতো সহজ ভাঙতে দেবো না।

সেন্সরশিপ চাপিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিবাদের আওয়াজকে আটকানো যাবে না। শিক্ষার দাবীতে ছাত্রের সংগ্রাম, চাকরির দাবি তে বেকারের সংগ্রাম, মজুরির দাবি তে শ্রমিকের সংগ্রাম, ফসলের দাবি তে কৃষকের সংগ্রাম আর দেশ বাঁচানোর লড়াইতে লাল ঝান্ডার সংগ্রাম চলছে চলবে।