রাজ্যে অ্যাডেনো ভাইরাসসহ বিভিন্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে গত মাসাধিক কালে। শিশুদের একাংশ এই সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে তা প্রাণঘাতী হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে এই সংক্রমণ অধিকাংশ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে যায়। যে অল্প কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট হয় তাদেরকেই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হয়। সুতরাং আতঙ্কের কোন কারণ নেই, কিন্তু সতর্ক থাকা জরুরী।

এরাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গত এক দশকে প্রায় ভেঙ্গে পড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু না পেয়ে অনেক অভিভাবক আক্রান্ত শিশুকে সরাসরি বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বড় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম, পরিকাঠামো অপ্রতুল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সরবরাহ অপর্যাপ্ত। ফলে একই শয্যায় গাদাগাদি করে অনেক শিশু ভর্তি এবং সরঞ্জামের অভাবে তারা উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না। নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলো নামেই মেডিক্যাল কলেজ, পরিকাঠামো দুর্বল বললেও কম বলা হয়। জেলায় ভাইরাল প্যানেল পরীক্ষার সুযোগ নেই। কোলকাতায় দু’একটি হাসপাতালে সুযোগ থাকলেও কিটের আকাল। সংক্রামক রোগের উপর নজরদারীর ব্যবস্থা লাটে উঠেছে। প্রায় দু’মাস ধরে ধীরে ধীরে এই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও সরকার কার্যতঃ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে ছিল। প্রতিদিন সরকারের অপদার্থতার বলি হচ্ছে ছোট ছোট শিশুরা। রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচীকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মজবুত করার পাশাপাশি মাঝারি ও বড় হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে না পারলে এধরণের মহামারী মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এধরণের রোগ ছড়ায়। রাজ্যের মানুষের কাছে তাই আবেদন –

১) পাঁচ বছরের বেশী বয়সী শিশুরা বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক পড়ান।

২) হাঁচি-কাশি-জ্বর হলে শিশুদের স্কুলে বা কোচিংয়ে পাঠাবেন না। পুকুরঘাটে কিম্বা সুইমিং পুলে স্নানে পাঠাবেন না।

৩) বদ্ধ, ভিড় স্থানে শিশুদের নিয়ে যাবেন না।

৪) বড়দের হাঁচি-কাশি-জ্বর হলে শিশুদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন।

৫) বাচ্চাদের দু’দিনের বেশী জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ‌ নিন। বাড়াবাড়ি হলে তবেই হাসপাতালে ভর্তি করুন। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, বুকে ঘড়ঘড় আওয়াজ হলে, শ্বাসের গতি বেড়ে গেলে, শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত বড় হাসপাতালে নিয়ে যান।

৬) ছোট-বড় সকলে রুমাল, আঁচল বা কনুইয়ে নাক-মুখ চাপা দিয়ে হাঁচি ও কাশি এবং সাবান-জল দিয়ে কচলে বারবার হাত ধোওয়ার সু-অভ্যাস বজায় রাখুন।

৭) জ্বর থাকলে শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ান। জল বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।

৮) বড়দের সরাসরি দিনে তিন/চারবার গরম জলের ভাঁপ নাক-মুখ দিয়ে নিতে হবে এবং উষ্ণ জলে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিন বার কুলি করতে হবে।

৯) বাচ্চাদের জন্য পরোক্ষভাবে ঘরের মধ্যে কেটলি বা প্রেসার কুকারের ছিপি খুলে গরম জলের ভাঁপ ছাড়লে উপকার হবে।