সুভাষ রায়,রানাঘাট: “আমার ছেলের বিচার দিন দাদা, আমার ছেলের বিচার দিন” বার বার একই কথা বলে চলেছেন স্বপ্নদীপের মা, আর মাঝে মধ্যে সংজ্ঞা হারাচ্ছেন, রানাঘাটে এসে এরকমই মর্মান্তিক দৃশ্যের মুখোমুখি হলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সুজন চক্রবর্তী সুমিত দে সহ জেলা নেতৃত্বরা। আজ বেলা ১১:৩০টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কান্ডে মৃত প্রতিভাবান ছাত্র স্বপ্নদীপের পরিবারের সাথে দেখা করতে আসেন সুজন বাবুরা স্বপ্নদীপের মামারবাড়ী রানাঘাটের মিল পাড়ায়।

বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরেই গাড়ী রেখে পায়ে হেঁটে তার বাড়িতে প্রবেশ করেন নেতৃত্ব রা, সাংবাদিক দের ও আসতে বারণ করে দেন, তিনি বার বার বলেন প্রচার বা রাজনীতির জন্য আমরা এখানে আসিনি, মূলত স্বপ্নদীপের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এবং যাতে আর কোনো স্বপ্নের অকাল মৃত্যু না হয় তা নিশ্চিত করতেই এখানে আসা, তাই আমরাও যেমন বিরাট দলবল বা চোখ ধাঁধানো গাড়ির কনভয় নিয়ে আসিনি, আপনারাও হট্টগোল করে এই মর্মান্তিক পরিস্থিতে পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত বা তারা বিরক্ত হন এমন পরিবেশ দয়াকরে সৃষ্টি করবেন না, এর পর নির্দিষ্ট প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি বাড়িতে প্রবেশ করেন, দেখাকরেন মৃত স্বপ্নদীপের বাবা এবং মামার সাথে। প্রায় সারাক্ষণ ই মাথা নিচু করে পুরো পরিবারের সবার বক্তব্য শোনেন, ইতিমধ্যে স্বপ্নদীপের মা উপস্থিত হন এবং সুজনবাবু, সুমিত বাবুকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরিবারের লোকেরা সুজন বাবুর কাছে অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে – বিষয় টা নিয়ে অনেকেই রাজনীতি করতে চাইছে, আমরা শুধু অপরাধীর বিচার চাই, যাতে এই ঘটনা আর না ঘটে, পরিবারের কথায় বার বার উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও এসএফআই নেতা, বর্তমানে ছাত্রদের অত্যন্ত প্রিয় অধ্যাপক কাফী স্যারের কথা, জানালেন স্বপ্ন দীপ কে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন। ভরসা দেবার মত মানুষদের কাছে পেয়ে তার বাবা ও মামা স্বপ্নদীপ এর ছোট থেকে বড় হওয়া, সাংসারিক অনটনের মধ্যেও জেলার মধ্যে তার অসাধারণ রেজাল্ট, ম্যাথমেটিক্স এ অনার্স পাওয়া সত্ত্বেও সাহিত্য কে ভালবেসে অনার্স নেওয়া ইত্যাদি বহু ছোট ছোট স্মৃতি , ঘটনার কথা বলেচলেন, এবং শেষ অবধি যে তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য সে কথাও জানান। সুজন বাবুও বলেন শেষ অবধি তাঁরা এ্যাই লড়াইয়ের পাশে থাকবেন।


এরপর বাইরে বেরিয়ে এসে অপেক্ষারত সাংবাদিক দের উদ্দেশ্যে জানান “আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, স্বপ্নখুনের বিচার চাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, রাজনীতি করার অনেক বিষয় আছে, এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন তারা বিরত থাকুন, আর কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে বহিরাগত দের দাপাদাপি বন্ধ হোক, তিনি আরো প্রশ্ন তোলেন পাশ হওয়া সত্বেও হোস্টেলের ভেতরে এতদিন ধরে প্রাক্তনীরা কি করছিল? কেন এখনো পর্যন্ত কলেজে হোস্টেলে সর্বক্ষণের হোস্টেল সুপার নেই? কাসুয়াল লোক দিয়ে চালানো হচ্ছে? সাংবাদিক দের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন স্বাধীন সংগঠনের ছদ্মবেশে, বা অতিবাম বলে পরিচয় দিয়ে যারা ক্যাম্পাস দাপাচ্ছে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, এই ধরনের হরেককিসিমের রাজনীতির লোকেরা আসলে বাইরে তৃণমূল বা বিজেপির রাজ্য সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে, তাদের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক এটা আজ প্রমাণিত সত্য। অভিযুক্তরা কোথায় গেলো, কোন মন্ত্রীর বাড়িতে লুকিয়ে আছে?! সবটা প্রকাশ্যে আনতে হবে, তাদের কে আড়াল করে সব কিছু গুলিয়ে দেবার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবেনা, আমরা, আমাদের ছাত্র সংগঠন sfi এর শেষ দেখে ছাড়বে। তিনি আরো বলেন যাদবপুরের মত এত ভালো ইউনিভার্সিটি এত কম পয়সায় পড়ার সুযোগ সারা দেশের মধ্যে আর কটা আছে?? গরিব মেধাবী ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশোনা করবে!? আসলে যাদবপুরের বদনাম এর মধ্যে দিয়ে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রমরমা করার একটা চক্রান্ত চলছে, এর পেছনেও আরো অনেক গভীর ষড়যন্ত্র আছে সেগুলো ক্রমশ প্রকাশ্যে আসবে। ফেরার পথে এলাকার বহু মানুষ এবং কচিকাঁচা পড়ুয়ারা এগিয়ে আসেন সুজন বাবুর দিকে এবং তারাও আবেদন জানান যাতে ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়, দোষীরা যাতে শাস্তি পায়। তিনি আশ্বাস দেন, এবং এলাকার মানুষদেরও পরিবারের পাশে থাকার জন্য আবেদন জানান, এবং ছোট ছোট ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো পাশাপাশি সবার জন্য বিনামূল্যে উচ্চ শিক্ষা ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গঠনের লড়াই চালিয়ে যাও।


আজকের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সহ নদীয়া জেলা নেতৃত্ব সুকুমার চক্রবর্তী, মৃণাল বিশ্বাস, সায়ন ব্যানার্জী সহ নেতৃবৃন্দ এরিয়া সম্পাদক কমল ঘোষও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।