৮ ই জুলাই ১৯১৪ সালে ভুমিস্ট হয়েছিল একরাশ সম্ভাবনার দ্বীপ শিখা, কমরেড জ্যোতি বসু যা পরিবর্তিকালে বাংলার মানুষকে মাঠক উঁচু করে কথা বলতে শিখিয়েছিল।উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্ম হওয়া জ্যোতি বসু শিক্ষার আরোহনের পাশাপাশি শ্রেণী হীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন।কিছুটা বাবার অমতেই রাজনীতিতে প্রবেশ, এমনকি ব্রিটেনে পড়তে গিয়েও কমিউনিস্ট পার্টির কাজকর্মে নিয়োজিত করেছিলেন।তিনি মনে করতেন সমাজের শোষিত শ্রেণীর ঐক্য সমাজ গঠনে তাদের অগ্রণী ভূমিকা দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।জীবনের প্রথম ধাপে রাজনীতির পাঠ নেওয়ার সময় সমাতন্ত্রের বিজয় রথ ইউরোপ থেকে আফ্রিকা অনেকটা ই প্রভাব বিস্তার করেছিল তার জীবনে।লন্ডনে থাকাকালীন একাধিক আলোচনায় মার্কসবাদের বাস্তব রূপায়ণের উপর জোর দিয়েছিলেন।প্রতিটি দেশের সংস্কৃতির সাথে মার্কসবাদকে ব্যাখ্যা করেই তার রূপায়ণ ঘটাতে হবে না হলে দেশের মধ্যেই মতাদর্শের বিরুদ্ধে বৈরিতা সৃষ্টি করবে।

মোটা মাইনের চাকরির প্রলোভন তাকে কাবু করতে পারেনি , দেশে ফিরেই মার্কসবাদের সফল রূপায়ণের লক্ষ্যে রাজনীতির আঙিনায় নেমে পড়লেন। ১৯৪০ সালে গ্রহণ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি রূপে নির্বাচিত হন। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন বসু। ড. বিধানচন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে তিনি হন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা।

১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা গেছে , দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যেমন মজবুত করার কথা বলেছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে দেশ কে আরেকটা যুদ্ধের পথে ঠেলে দেওয়ার প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।জাত জেরে রাষ্ট্র শক্তির রোষানলে পড়তে হয় ।বেশ কিছুদিন কারা বরণ করেন।কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন কংগ্রেসের সমর্থনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান কমিউনিস্ট পার্টির বৈপ্লবিক চরিত্রকে বাঁচাতে বসু যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) দলে।

১৯৬৭ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন জ্যোতি বসু।৭০ দশকে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলে রাজ্যের আধা ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, এই সময় তার উপর একাধিক প্রাণঘাতি হামলা হয়।অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক দিন ১৯৭৭ সালে মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়।বাংলার মানুষকে মুক্তির দিশা দেখিয়েছিলেন জ্যোতি বসু।রাজ্য জুড়ে স্বৈরতন্ত্রের পদধনি , তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের নরসংহার ।তারমধ্যেই উজ্বল প্রজ্বলিত শিখা হয়ে বাংলার মুক্তির পথ দেখালেন জ্যোতি বসু।তার নেতৃত্বে এক রূপকথার লড়াই লড়ছিলেন তার সতীর্থ কমরেড রা।১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারের সূচনা হয় যা বাংলার রাজনীতির নিরিখে এক মাইলস্টোন হয়ে থাকবে ।গণতন্ত্রের প্রসার কতটা গভীরতর হয় তার উদাহরণ তিনি হাতে কলমে দেখিয়েছিলেন মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফানুষে নয়।ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকবেন গ্রাম বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ধারক হয়ে।এ যেন এক ঐতিহাসিক ঘটনা গ্রাম বাংলার মানচিত্রে মুক্তির বহিঃপ্রকাশ। সেই সঙ্গে ভূমি সংস্কার আইন যা গোটা দেশের কাছেই উদাহরণ। জমিদার মহাজনদের শোষণের জাল ছিন্ন করে বাংলার ভূমিহীন কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জমির মালিকানা।এখানেই জ্যোতি বসু থেমে থাকেনি নি , ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটালেন শহরেও পুরসভার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।রাজ্যের প্রতিটি কোনায় গণতন্ত্রের উৎসব।তিনি একমাত্র নেতা যিনি বলেছিলেন শুধুমাত্র রাইটার্স থেকে সরকার পরিচালনা নয় পরিচালনা হবে মহল্লা থেকে ওয়ার্ড থেকে,পঞ্চায়েত থেকে।জন্মদিনে নতুন করে খুঁজে নেওয়া জ্যোতি বসুকে,এবং রাজ্যের মানুষের কাছে জন নেতা হয়ে ওঠার প্রবাহমান ধারায়।

দেশের রাজনীতিতে তিনি সবসময় ছিলেন স্পষ্টবাদী পার্টির সিদ্ধান্ত তার কাছে ছিল নির্দেশ যা পালনে তিনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম বিবেচিত হলেও, তিনি পার্টির সিদ্ধান্তে সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করে অবসর নেন বসু।অনেকেই অভিযোগ করেন কমিউনিস্ট রা দেহত্যাগ করে কিন্তু পদত্যাগ করে না সেই মিথ কে ভেঙে দিয়েছিলেন অবলীলায় পদ ছেড়ে দেন রাজ্য রাজনীতির আঙিনা থেকে কারণ তিনি মনে করতেন পার্টির গতিশীল ভাবধারা নির্ভর করে পরিবর্তনের পকদন্ডী বেয়ে।

১০৯ তম জন্মদিবসে পালন কেবল মাত্র দিন বদলের নয়, আগামীর শ্রেণী সংগ্রামে প্রেরণা দানের এক বিমূর্ত অঙ্গীকার।তিনি বেঁচে আছেন আপামর মানুষের মধ্যে মুক্তির দিশারী হয়ে।