জনগন ঈশ্বরচন্দ্রকে বিদ্যাসাগর বানায়, বিচারককে ঈশ্বর। কে জাস্টিস টম ডেনিং হয়ে উঠবেন, আর কাকে টম-ডিক-হ্যারি করবে, সে হিসাব ইতিহাসের পাতায়। কাউকে ঈশ্বর করে দিলে অসীম ঈশ্বরের সীমা নির্ধারিত হয়ে সঙ্কুচিত হতে পারে, তাই অগ্রগামী ব্যতিক্রমী নায়ক বলাই ভাল। নায়কের প্রথম শর্ত খলনায়কের উপস্হিতি। ধীর বিচার ব্যবস্হার এবং সেই সুযোগ গ্রহণকারী দুর্বৃত্তেরা খলনায়ক। যুগের প্রয়োজনে নায়ক সৃষ্টি করে খলনায়করা। ভারতের সংবিধান রচিত দলিত বি.আর.আম্বেদকারের নেতৃত্বে, তারপরে চিফ জাস্টিস কৃষ্ণ আইয়ারের প্রবাদ বাক্য, আইন সবাইকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে কিন্তু কামড়ায় ক্ষমতাহীন দরিদ্রকে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ। পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারো মাস। যেখানে ৭৭৫ দিন যোগ্য প্রার্থীরা আন্দোলন করছেন সেখানে। তিনি গেছেন অপার খাটের তলায় অপার গুপ্তধনের তল্লাশে। আপনি রূদ্ধ দেবালয়ের কোণে ভজন, পূজন, সাধন, আরাধনায় ছিলেন। তাই তিনি নায়ক হয়েছেন, আপনারা ঈর্ষাকাতর।

মানুষ চাক্ষুষ করেছে প্রবল ক্ষমতাধর সরকারের মন্ত্রী সহ চার বিধায়ককে গারদের ভিতর ঢোকাবার হিম্মৎ। পর্ষদ দপ্তরটাই আজ প্রেসিডেন্সি জেলে। ঠিক যে ভাবে তিনি সফল, টম-ডিক-হ্যারিও সফল হতে পারতেন। তবু ক্রিস্টোফার কলম্বাস হন একজন। থ্রিলারের নিয়ম অনুযায়ী শেষ দৃশ্যের আগে পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা মরিয়া আক্রমণ করবে নায়ককে। নায়কের পাশে থাকা অনেক অসাধুর মুখোশ খুলে যাবে অসাবধানে। অবশ্য একজনকে নায়ক হিসাবে দাগিয়ে দিলে লাগাতার আক্রমণ হবে বেশী। অন্য বিচারকের এজলাস এবং বাড়িতে পোষ্টার পড়েছে, অন্ধ নগরপাল আসামী দেখতে পাননি। না দেখতে পাওয়াটা প্রমাণ করছে দুর্বৃত্তদের পরিধি বড়। এজলাসের বাইরে দুষ্কৃতিরা ধর্না দিলেও পুলিশ দেখতে পায়নি, জনগন দেখেছে। একটা কোকিলের ডাকে বসন্ত আসেনি। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশীর অন্তরালে বলরাম, সুভদ্রারা আছেন। রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগররা বুঝেছিলেন, খুব কঠিন কাজ। জনগনের তেমন সহায়তা ছিল না। এই নাটকে জনগনের ভূমিকা থাকবে। কোন নায়কের বিজয় নয়, অসুর-নিধন যজ্ঞ।

২৮শে এপ্রিল, সংবাদ মাধ্যমের একাংশ ইচ্ছাকৃত উড়ো খবর করল, সুপ্রীমকোর্ট নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা থেকে কার্যকারী বিচারককে সরিয়ে দিচ্ছে। জনতা অবাক হয়ে দেখল, উল্লুক-বেল্লিকের উল্লাস। তখন আর কোন মুখোশের কারবার নেই। হয় আপনি দুর্নীতির পক্ষে, নয়ত বিপক্ষে। দুটো পক্ষই কিন্তু বলছে, তারা অপরাধীদের শাস্তি চায়, দল জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী বা আইন আইনের পথে চলবে। চোরদের প্রচলিত শব্দগুলো প্রথমে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। ওরা মুখোশ বদলাতে পারে বলেই তো প্রতারণা করতে পারে। পরিবর্তন চাইয়ের হোর্ডিং-এর জীবিত সুশীলদেরও এই তালিকার শীর্ষে রাখতে হবে। এবং বিজ্ঞাপন লোভী মিডিয়া, চাটুকার সম্প্রদায়, কামচোর অনুদানাশ্রয়ী ধান্দাবাজরা। কামচোররা কাজ করে না, শিক্ষা, দক্ষতা বা ইচ্ছা কোনটাই নেই। অনুদান, তোলা, নবজোদ্দার যাত্রাই জীবিকা। সবচেয়ে বিপজ্জনক অসাধু উপায়ে মাইনে পাওয়া চাকুরিজীবী। নেত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর ভাষায় ব্যতিক্রমী। কেবল শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, বহু ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রমীরা গিরগিটির মত রঙ মিলিয়ে ঘাপটি মেরে বসে।

সাধারণ মানুষ কেতাবী আইন বোঝে না। সাফল্য ও ব্যর্থতাকে সাদা-কালো হিসাবে চেনে। কলকাতা হাইকোর্ট কোন সাহসী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেই আতঙ্কিত হয়, সুপ্রীমকোর্টের স্হগিতাদেশ চলে আসবে এবং আসে। সেই কালো মেঘ সরে সূর্যকিরণ ওঠার মধ্যবর্তী দীর্ঘ সময়ে মানুষ মামলাটাই ভুলে যায় কিন্তু অপরাধীরা তথ্য লোপাট করে ফেলে। এই খলনায়করাই আজকের নায়ক সৃষ্টি করেছেন। মানুষ দিনের শেষে দুর্বৃত্তের নিধন চায়, আইনের মারপ্যাঁচ নয়। যে বাধা দেয় সে সন্দেহের তালিকায়। তালিকা বাড়তে থাকলে সেটাই স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হয়ে যায়। বিগত ৯বছর শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে চিটফান্ডের তদন্ত হচ্ছে। ফলাফল, সেই বিন্দুরা সিন্ধু হয়ে ও লাভলি হয়ে গেছে। ৭বছর নারদের তদন্ত হচ্ছে। ফলাফল, দুজন জীবনের সীমা অতিক্রম করে আইনের এক্তিয়ারের বাইরে। মহার্ঘ ভাতার আন্দোলনে কর্মচারীরা পথে বসে আছে। আর সেই হিন্দী সিনেমার ডায়ালগের মত তারিখ পে তারিখ। তারপর মানুষকে চাপ দিয়ে বলাতে হবে, বিচার ব্যবস্হার উপর ভরসা আছে? মানুষ ব্যতিক্রম খোঁজে।

আজকের নায়ককে নায়ক বানিয়েছে এই খলনায়করা। চেয়ার ছেড়ে পথে নেমে দেখতে হবে। আইন কেবল কিছু ধারায় নেই। যে ক্যান্সারের রোগী শেষ পর্যন্ত চাকরিটা পেয়েছেন, তিনি ভগবান বলবেনই। যে বৃদ্ধা পেনশনের টাকা উদ্ধার করতে পেরেছেন, তিনি মন্দির দেখেছেন। আপনার এজলাসটাকে আপনি মন্দির না বানাতে পারলে সে দোষ বিচার ব্যবস্হার নয়। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, যোগ্য চাকুরিপ্রার্থীরা হতাশ। কী বলবেন? উত্তর, ধৈর্য রাখতে হবে। ফিরতি স্বাভাবিক প্রশ্ন, কত দিন? অর্থাৎ কত মাসে এদের বছর হয়? তারপর চরম সত্য, হয়ত মৃত্যুর দিন পর্যন্ত। মানুষ জানে দুর্বৃত্তদের পাশে যাদের দেখা যাচ্ছে, তা হিমশৈলের চূড়া। সাউথ ব্লক থেকে নবান্ন হয়ে চাকরি চোরের রিসর্টের নিশি যাপন অবধি আগাধ তার পরিধি। তাই প্রতিটি মানুষ ফেলুদা বা ব্যোমকেশ বক্সী। কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখছে না। সেখান থেকে আস্হা ফিরিয়ে আনা দুঃসাহসিক কাজ। মনে রাখবেন, জনগন কোন বিচারকের জয় দেখতে চাইছে না, তারা জিততে চাইছে। যে কারণে হিন্দী সিনেমার হিরোকে দেখে।

ইতিহাস যে কালিতে ঘটনার জলছবি আঁকে তা আজ দেখা যায় না। যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে সেদিন রোমান রাজা পিলাত জেতেননি, তা তিনি জানতেন না। আজ চোরদের সপক্ষে যে উল্লুক-বেল্লিকরা উল্লাস করছে, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মীরজাফরের বংশধরের মত লজ্জা পাবে। চাকা গড়াতে শুরু করেছে, এবার থামালে কেয়ামৎ হয়ে যাবে সংসারে। কয়েক বছর আগে বীরভূমের বাহুবলীর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারত না জনতা। তিনি (সকন্যা) সুকন্যা সহ তিহাড়ে। যেদিন তিনি মিথ্যা গাঁজা কেস বা পুলিশের মাথায় বোম মারার নিদান দিতেন, সেদিন কোথায় ছিল প্রশাসন বা বিচার ব্যবস্হা? পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ অনুধাবন করতে হবে। হলুদ কালো ডোরাকাটা দাগ কেটে আর বাঘ বানানো যাবে না। এই খলনায়করা স্বপ্নে অরণ্যদেবের জন্ম দিয়েছে। কোন ছোকড়া ঢাকী সহ বিসর্জন দেবার হুঙ্কার দিচ্ছে তো আরেক ছোকড়া বিচারপতিকে দাদা বলে সম্বোধন করছে। এরাই আসলে দুর্বৃত্ত রাজের কফিনের পেরেক পুঁতছে। দুর্ভাগ্য, জেলখাটা অভিযুক্ত ভবিষ্যদ্বাণী করে আত্মতৃপ্তি লাভ করছে।

দুর্বৃত্তদের সমর্থকরা চোরকে চোর বললে আপত্তি করে বলছে, আইনতঃ বিচার চলাকালীন অভিযুক্ত। ঠিক কথা। মানুষ দ্রুত চোর বলতে চাইছে, এটাও ঠিক কথা। দুর্বৃত্তদের সমর্থকদের দাবী, দ্রুত বিচার হোক। পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে বারংবার শীর্ষ আদালতে গিয়ে বিলম্বিত করছে কেন? যে লোকটার চাকরি চুরি গেছে তার কাছে প্রতিটি দিন একটি বছর। নায়ক বিচারপতি বলেছেন, তিনিও বেকার ছিলেন। চোখের জলে বালিশ ভেজানো তিনি জানেন। একজন ডাক্তার যদি বোঝেন হার্ট অ্যাটাক হলে অত্যন্ত দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে, তাহলে বিচার ব্যবস্হা বোঝে না কেন? বিলম্বিত চিকিৎসা আর বিনা-চিকিৎসার মানে এক। বিলম্বিত বিচার বিচারের নামে প্রহসন। যোগ্যদের অধিকার যেমন প্রয়োজন, সমাজের ক্ষেত্রে চোরদের আইনানুগ চিহ্নিতকরণটাও দরকারী। যিনি সময় বেঁধে দিচ্ছেন এবং তার সুফল তদন্তে আসছে তাঁকে তো জনগন বাহবা দেবেই। যে কাজটা শীর্ষ আদালত ৯বছর হাতে নিয়ে বসে আছে, সেটাই ৩ঘন্টায় করে ফেলাটা নায়কোচিত। আবার বলি খলনায়করাই নায়ক সৃষ্টি করে।

রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলা গুঁটি ছিঁড়ে মেটামরফোসিসের পথে। পাখনা গজিয়েছে। এপ্রিলেই কেবল বিয়ার বিক্রী করে সরকারের মুনাফা ৪০০কোটি। আনন্দ মানে শান্তনুর রেসর্ট। সত্তরের পার্থ থেকে সতেরোর যৌন স্বার্থ, কেউ ব্যর্থ হতে চায় না। নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন আস্তিনে লুকানো গোপন ব্যথার কথা। বঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির বিচার সফল হলে ব্যাপমের রঙ্গকথা উঠবে। ম্যাঁয় খাউঙ্গা, আপ ভি খাইয়ে। রাজ্য গেরুয়ার বারফট্টাই শুনে মোদীজীকে মাপবেন না। মনে রাখবেন চিটফান্ড, নারদের তদন্ত মোদী করেননি। পাচার তদন্ত কবে শেষ হবে ভগবানও জানেন না। বিচারপতি বললেন, কত দিন? ছ মাস না ষাট বছর, সেটা আসল। আপনারা monkey বাত শুনতে থাকুন। শুধু হাইকমান্ড-গীত, ক্যারিওকর্তার ভজন গাওয়া বাঙালীর একটা সুভাষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সমগ্র ভারত খুব সহজে গিলে নেবে না। ওরা চায় বাঙালীকে পিসি-ভাইপোর রসিকতার রসাতলে নামিয়ে উপহাস করতে। বাঙালীকে আবার প্রমাণ করতে হবে, শাসক আদ্যান্ত চোর মানেই জাতিটা চোর নয়। আমাদের সৎ অরণ্যদেব নায়ক আছেন।

 সুজেট মামলায় দময়ন্তী সেনকে ছোট করে দময়ন্তী বা পাপ কিছুই ছোট হয়নি, নেত্রী ছোট হয়েছেন। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ডাঃ শ্যামাপদ গড়াইকে ছোট করতে গিয়ে রাজ্যকে মুচলেকা দিতে হয়েছে। এরকম বহু উদাহরণ আছে। যে চাটুকার তিনশ বছর পর নেত্রীর মন্দির বানাবেন, তার ভরসায় থাকা মূর্খের স্বর্গে বাস। চোদ্দ তলা থেকে নেমে আসলে একটা চাটুকারও থাকবে না। হাওয়াই হাওয়া হয়ে যাবে। লোকমুখে থাকবে বীর বাঙালীর বিকাশের কথা। চোরের দিনলিপির কালো দিনগুলি। নেত্রীর প্রিয় ভাষণ ছিল যা গেছে, তা গেছে। পার্থ-অনুব্রতও ভেবেছিলেন, মানুষ তাই ভাববে। একজন প্রেমিকা সহ প্রেসিডেন্সিতে আরেকজন কন্যা সহ তিহাড়ে। আজ কী ভাবছেন, কাল পাল্টে যেতে পারে পাশার দান। নায়ক কেবল এই আকাঙ্খাটাই বঙ্গবাসীকে ফেরি করেছেন। বন্দুক, গুলি, পুলিশ, প্রশাসন সহ দুষ্কৃতিদের কৌরব পক্ষের নারায়ণী সেনা বনাম বঙ্গবাসী পান্ডবদের শ্রীকৃষ্ণ। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে অন্যায়ের গোড়া থেকে উৎপাটন করতে হবে। সে সুযোগ দিয়েছে নেত্রী ও তাঁর খলনায়করা।