
সংকটের আগুনে জ্বলছে কৃষি ও কৃষক (চতুর্থ ও শেষ পর্ব)
ভাস্করানন্দ রায়
যে কৃষক ঝড়, জল, রোদ, বজ্রাঘাত, কাদামাটি, শুকনো মাটি ঘেঁটে,সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে দেশের মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয় — সেই অন্নদাতাদের জীবন আজ ওষ্ঠাগত। কিন্তু কেন!এর জন্য দায়ী কে ! দায়ী এই ব্যবস্থা। ২০১৪ সালে আরএসএস পরিচালিত বিজেপি, কেন্দ্রে সরকার গঠন করার পর কৃষকের জীবন যন্ত্রণা আরও বহুগুণ বেড়েছে। নরেন্দ্র মোদী নানান ঢঙে,নানান সাজে, বহুরূপীর অভিনয়ের পারদর্শিতায় ,মন ভুলনায় “আচ্ছে দিনের* স্বপ্নে জনগণকে মোহিত করে, কিছু ছিটে -ফোঁটা ও উচ্ছিষ্ট দিয়ে, পিছন থেকে স্বজন তোষণ পুঁজিবাদের( ক্রনি পুঁজি, )আধিপত্য বিস্তার করেছে। এক কথায় বলা যায়, ধান্দার ধনতন্ত্র। বি জে পি সরকারের আমলেই ২৮ জন শিল্পপতি ভারতীয় ব্যাংকের টাকা লুঠ করে নিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ হচ্ছে তাদের পাহারাদার। বিদেশে গচ্ছিত করা টাকা উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ঐ কালো টাকা উদ্ধারও হয়নি বরং আরো কালো টাকা কিভাবে বিদেশে পাচার করা যায় তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করেছেন। এখন পর্যন্ত ২৮ জন শিল্পপতি, ভারতীয় ব্যাংকের টাকা লুঠ করেছে। যার মূল্য প্রায় ১০- ট্রিলিয়ন টাকা( ১ ট্রিলিয়ন = ১ লক্ষ কোটি টাকা)।
যারা এখনো বিজেপিকে তোষণ করে, তোল্লা দেয়, এবং ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে,আর এস এস -কে সার্টিফিকেট দেয়, অন্দরমহলে মালপো খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে, বিজেপি সহ তারাই কিন্তু ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দেশবাসী যদি সচেতন না হন তাহলে আর একটি ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ উপহার পাবে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ৬০ লক্ষ মানুষ মরেছিল। ফ্যান দাও, ফ্যান দাও বলে গ্রাম শহরে কান্না আর কান্না। খিদের জ্বালায় ছটফট করতে করতে সেই সময়ে কত মানুষের জীবনদীপ অকালে নিভে গেছে। আমাদের দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি –যদি এই গতিকে ঠেকা দেওয়া না যায় তাহলে দেশ সেই দুর্ভিক্ষের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু এখন আর ফ্যান চাইলেও পাবে না, তার ব্যবস্থাও সরকার করে যাচ্ছে। “আচ্ছা দিনের *স্বপ্ন যারা দিনে দেখে, তাদেরও সব লুঠ হবে। তখন তারা বুঝবে নিজেদের পায়ে কুড়ুলটা কিভাবে মেরেছে। তখন আর পায়ের চিকিৎসার লোকও পাওয়া যাবে না। এখনো সময় আছে–ভাবুন ,জোট বাঁধুন। বি জে পি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়া টাকা, মদ, বেআব্রু নাচা গানাসহ নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, এবং এই দুই সরকারের কিছু খয়রাতিতে যে বা যারা মেতে যাচ্ছেন, তাঁদের হয়তো সাময়িক উপসম হতে পারে। কিন্তু জীবনধারনের সামগ্রিক উন্নয়ন হচ্ছে না।দরকার হল আসল রোগের চিকিৎসা। অর্থাৎ বিকল্প নীতি। যে নীতি শ্রমিক কৃষক সহ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। সেই বিকল্প নীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে পারলে তবেই শ্রমিক কৃষক সহ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষা হবে এবং জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে।তার জন্যই এই লুঠেরাদের পশু শক্তিকে হটাতেই হবে। এল আই সি,বিএসএনএল, বিমান, রেল, ব্যাংক, খনি বেসরকারিকরণ করে পুঁজির পাহাড় করেছে যারা, তারাই এখন দেশের কৃষি জমি ও কৃষিজাত পণ্যে থাবা বসিয়েছে। সুতরাং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও প্রতিরোধ একমাত্র বাঁচার পথ। রাষ্ট্রশক্তির তিনটি শোষণের যাঁতাকলে, কৃষককে ছিবরে করে রস খাচ্ছে একচেটিয়া পুঁজি, জমিদারগোষ্ঠী, ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি। (আখ মাড়াই কলের মতন) আসলে এখন যা হচ্ছে তা হল, নেপোয় মারে দই, কৃষক খায় ঘোল। স্বাধীন ভারতে কৃষকের দুর্দশা এবং কৃষিতে সংকট কেন সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। “তামিলনাড়ুর কুড্ডালোরে অনুষ্ঠিত সারা ভারত কৃষক সভার ৩৩ তম সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আলোচনাচক্রে পি সাইনাথ যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন”– , সেই বক্তৃতার কিছুটা অংশ পাঠক বর্গের জন্য সংকলন করলাম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বক্তৃতা আজও যেমন প্রাসঙ্গিক তেমনই এর প্রেক্ষাপট কৃষক আন্দোলনের কর্মীদের কাছে চলার পাথেয়। পি সাইনাথ হলেন “দ্য হিন্দু “পত্রিকার গ্রামীণ বিভাগের সম্পাদক। “আন্দোলন ছাড়া কৃষকরা যে বাঁচতে পারে না তা উনি বারেবারে এই ভাষণে উল্লেখ করেছেন”-,-” ২০১৩ সালের মার্চ মাসে পেশ করা শেষ জাতীয় বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট আয়কর, আমদানি শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক বাবদ মোট ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকার কর ছাড় দিয়েছিল। দেশের বৃহৎ পুঁজিপতিরা এবং বৃহৎ কোম্পানিগুলি হাজার হাজার কোটি টাকা কর ছাড় পেয়েছিল। বাজেট পুস্তকের সংযোজিত অংশে “কর ছাড়ের বিবৃতিতে “এই তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাজেট ঘাটতির থেকে এই কর ছাড়ের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা বেশি। কোন সংকটই তৈরি হতো না, যদি এই ধনীরা তাদের বকেয়া কর মিটিয়ে দিত। চলতি বাজেটে অন্যতম বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে আমদানি শুল্কে। সোনা আমদানিতেও এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড়ের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা ।শেষ তিন বছরে সোনা, হীরে, জুয়েলারিতে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার বেশি আমদানি শুল্ক মুকুব করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিজনিত সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারই এখন সোনা আমদানি বন্ধ করতে চাইছে। কিন্তু এবারই ২০০৬ সাল থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি কর ছাড় দিয়ে এইসব আমদানিতে উৎসাহ জুগিয়েছিল।
কৃষি সংকটের প্রথম বিষয়টি হচ্ছে কৃষিতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। যদি আমরা কৃষি এবং কৃষি সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলি ধরি, তাহলে দেখব ১৯৮৯ সালে ভি পি সিং সরকারের শেষ বাজেটে কৃষি, সেচ এবং সংযুক্ত কার্যক্ষেত্রে জি ডি পি -র ১৪ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে সেই বরাদ্দ ৬ শতাংশেরও কম হয়ে যায়। কেন ২০০৪ সালটা ধরা হচ্ছে ? ওই বছর দেশের বড় রাজ্যগুলির সরকারগুলিকে নির্বাচনে কৃষকেরা পরাস্ত করেছিল। যেমন কর্নাটকের এস এম কৃষ্ণা, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু। এঁরা কৃষকদের ভোটেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, কারণ তাঁরা কৃষকদের ক্ষতি করেছিলেন। সুতরাং কৃষকরা তাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাঁরা দুর্বলও নয়, তারা একাও নয়। তারা বর্তমান সরকারগুলিকে ফেলে দিতে সক্ষম।
কৃষি সংকটটা হল যে, দেশের শাসক শ্রেণী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষিকে ক্ষুদ্র কৃষকদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি হাতে তুলে দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ যে কেউই দেখতে পারে মহারাষ্ট্রের কারা নিজেদের কৃষক হিসেবে নথিবদ্ধ করছে। আইনসমূহ এমনভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে যাতে গ্রামীণ ঋণ, কৃষি ঋণ সমস্তটাই এখন দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলির কাছে চলে যাচ্ছে। ২০১০ সালে মহারাষ্ট্রে কৃষি ঋণ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাংকের এক অফিসার একটা বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছিল, ওই রাজ্যে কৃষি ঋণের ৫৩ শতাংশ মুম্বাই শহরের ব্যাঙ্কগুলির শাখা থেকে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে গ্রামীণ মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ শাখা থেকে কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৩৮ শতাংশ। শুধু যে কৃষির জন্যই তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খরচ যোগাতেও তাদের ঋণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে গ্রাম ভারতে একটি পরিবারকে যত ঋণ করতে হয় তার মধ্যে স্বাস্থ্য খরচ জোগাতেই তাকে বেশি পরিমাণ ঋণ করতে হয়। ঋণ, ঋণগ্রস্থতা, ঋণের অভাব, কৃষি ভেঙ্গে পড়া এবং কৃষির খরচ– এর সব কিছুর মিলিত ফল হল কৃষকের আত্মহত্যা। ২০১৩ সালের জুন মাসে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো জাতীয় যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ সাল –এই ১৮ বছরের মধ্যে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬৯৪ জন ভারতীয় কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।এর মধ্যে লক্ষাধিক কৃষক রমণী যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের ধরা হয়নি। পুলিশ এবং ভারত সরকার মহিলাদের কৃষক রমণী বলে গণ্য করে না। কৃষকের স্ত্রী হিসাবেই তাদের গণ্য করা হয়। সেই কারণেই সরকারি হিসাবে দেখানো হয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কৃষক রমণী আত্মহত্যা করেছেন, সেটা ঠিক নয়।
এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য জাতীয় কমিশনের সুপারিশগুলি যাতে কার্যকর হয়, তার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে।
২০০৪ সালে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধির কারণে ভারত সরকার অধ্যাপক এম এস স্বামীনাথনের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করেছিল। ২০০৭ সালে অধ্যাপক স্বামীনাথন এই সংক্রান্ত চার খন্ড রিপোর্ট তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বহু ইতিবাচক এবং মূল্যবান সুপারিশ তাতে আছে।তারপর থেকে ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গেল অথচ ওই রিপোর্ট নিয়ে সংসদে আজও কোন আলোচনা হলো না। এক মিনিটের জন্য আলোচনা করার জন্যও আমাদের মন্ত্রীমশাই সংসদে সেটি পেশ করলেন না। ওই কমিশনের অনেক সুপারিশের মধ্যে একটি হলো উৎপাদন খরচ। তার সাথে খরচের ৫০ শতাংশ যুক্ত করে যা হবে কৃষককে সেই দাম দিতে হবে। ওই রিপোর্টটি কম সুদে ঋণ দেবার সুপারিশ এবং খরা এলাকায় বিনা সুদে ঋণ দেবার সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদে বামপন্থী সদস্যরা এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বিশেষ অধিবেশন করতে শারদ পাওয়ার রাজি হলেও সেই অধিবেশন এখনো ডাকা হয়নি। এমনকি শারদ পাওয়ার অধ্যাপক স্বামীনাথনের সঙ্গে একবারও কথা বলেননি। শারদ পাওয়ার চেয়েছিলেন রিপোর্ট পেশ হোক সম্পূর্ণভাবে কর্পোরেট কৃষির স্বপক্ষে। সেই কারণেই কৃষকদের জন্য জাতীয় কমিশনের ওই রিপোর্ট কার্যকর করার দাবিতে আমাদের আন্দোলন করতে হবে।আমাদের দাবি জানাতে হবে শুধুমাত্র কৃষি সংকটের বিষয়ে আলোচনার জন্যই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে হবে। আমাদের এই দাবিও তুলে ধরতে হবে যে ,ভারতে কৃষিকে রাষ্ট্রীয় পরিষেবা হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। কমিশনের একটি সুপারিশে বলা হয়েছে ,শুধুমাত্র উৎপাদনের পরিমাণের ভিত্তিতেই কৃষির বিকাশকে দেখা চলবে না। কৃষকদের আয়ের ভিত্তিতেই কৃষির বিকাশ কে হিসাব করতে হবে।
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে নয়া– উদারবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। গত ২০ বছর ধরে যে নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে , সেই নীতি পরিবর্তনে তাদের বাধ্য করতে হবে। কৃষকরা যাতে প্রয়োজনীয় ঋণ পায়, গণ–আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। যদি আমরা দেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে শহরের নেতা এবং আইনজ্ঞরাই শুধু নন, দেশের কৃষকরাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিল। ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে কৃষকদের ভূমিকা আমরা স্মরণ করতে পারি। ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে নিজামের বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানার কৃষকেরা সংগ্রাম করে নিজামশাহীর পতন ঘটিয়েছিল। ১০ লক্ষ একর জমি দখল করে তারা ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করেছিল। পঞ্চাশের দশকে কেরালায় ভূমি সংস্কার হয়েছে। গত শতাব্দীর ৭০ এবং ৮০’র দশকে পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কার আমরা দেখেছি। এখনো অনেক কাজ অসম্পূর্ণ আছে।
ভারতে গত শতাব্দীর ‘৫০ ,’৬০ এবং ‘৭০ এর দশকে কৃষকদের অনেক গণ সংগ্রাম আমরা দেখেছি। কিন্তু ‘৯০ এর দশকের পর থেকেই আমরা দেখছি কৃষকদের গণআত্মহত্যা। এটা সমাধান নয়, এটা আত্মসমর্পণ। সেই কারণেই সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই গড়ে তুলতে হবে। কৃষিক্ষেত্র যাতে কৃষকদের হাতেই থাকে তার জন্য লড়তে হবে। আমাদের দেখতে হবে ভারতের কৃষিক্ষেত্র যাতে কর্পোরেটদের হাতে না যায় “”। সারা ভারত কৃষক সভার ৩৩ তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে আলোচনা চক্রে পি সাইনাথের যে ভাষণ, তা আজ বাস্তবে মিলেও যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে কৃষক আন্দোলন আরো জোরদার হচ্ছে।সম্প্রতি “পেঁয়াজের দাম সহ অন্যান্য ফসলের দামসহ ১৪ দফা দাবিতে নাসিক থেকে মুম্বাই হাজার হাজার কৃষকের যে লংমার্চ শুরু হয়েছিল সেই লংমার্চের কৃষকদের মেজাজ ও অনমনীয় মনোভাব দেখে মহারাষ্ট্র সরকার পিছু হটে এবং ১৮ ই মার্চ ‘২৩ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী,”কৃষকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার “ঘোষণা যেমন করেছেন তেমনি “প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি জারি” করেছেন। দাবী আদায় করে,জয় নিশ্চিত করে হাজারে হাজারে কৃষক আনন্দের উন্মাদনায় বাড়ি ফিরছেন। এইভাবেই আগামীদিনে আমাদের লড়াই–এর প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ডঃ স্বামীনাথন কৃষি কমিশনের সুপারিশগুলি নিয়ে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে আমার মনে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত ডঃ স্বামীনাথনের নেতৃত্বাধীন কৃষক কমিশনের সুপারিশ গুলি হল:-
১) যেখানেই সম্ভব ভূমিহীন পরিবারগুলিকে এক একর করে জমি দেওয়া।
২) সকলের কাছে রেশন পৌঁছে দেওয়া
৩) ফসলের ক্ষতি হয়েছে, এমন কৃষককে সহায়তা দেবার জন্য বিপর্যয় তহবিলের মতো একটি সরকারি তহবিল গঠন করা
৪) কৃষি ঋণের সুদের হার চার শতাংশ সরল সুদে নামিয়ে আনা। বকেয়ার ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ না নেওয়া। খরা, বন্যার এলাকা অথবা রোগপোকার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ঋণ মুকুব করা
৫) শস্য বীমার আওতায় সারা দেশের সমস্ত ফসল কে নিয়ে আসা
৬) ফসলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি তহবিল গঠন
৭) কৃষিপণ্যের আমদানির ওপর ফের পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ চালু করা
৮) কৃষকের দূরবস্থা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পেতে এবং ত্রাণের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা বুঝতে দেশজুড়ে সরকারি উদ্যোগে ‘কৃষক আত্মহত্যা ‘সুমারি করা
৯) সরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে ঋণ সমীক্ষা করা
১০) কৃষকদের সমস্যাগুলি সমাধানে দ্রুত হস্তক্ষেপের স্বার্থে সব রাজ্যেই কৃষক কমিশন গঠন করা।
এক কথায় বলা যায়, ডঃ স্বামীনাথন কৃষি কমিশনের সুপারিশগুলি কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকর করেনি রাজনৈতিক কারনেই। কারন কেন্দ্রীয় সরকার তার শ্রেণিস্বার্থ বজায় রাখার জন্যই এই সুপারিশ কার্যকর করেনি। তীব্র কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সুপারিশকে কার্যকর করতে হবে তবেই এ দেশের কৃষক বাঁচবে।
[তথ্য সংগৃহীত] ২৩।০৩।২৩ (পি সাইনাথের ভাষণ প্রকাশিত হয়েছে,–পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার মুখপত্র “কৃষক সংগ্রাম পত্রিকা”- এপ্রিল- জুন জুলাই -সেপ্টেম্বর ২০১৩)