কথা ছিল নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকে দিয়ে দেওয়ার কথা, তা সে কুরবানি তো অনেকেই দিয়েছেন। স্বাধীনতার আগে মা বাবারা তার ছেলে মেয়েকে নির্বিশেষে কুরবানি দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতার নামে,দেশের অখন্ডতার নামে। নাহ: স্বাধীনতার আগে ওরা সংখ্যালঘু হননি আর আমরাও সংখ্যা গুরু হইনি। স্বাধীনতা নামক সমান চিহ্নের দাঁড়িপাল্লায় আমরা-ওরা মিলে মিশে একাকার হয়েছি। আসফাকউল্লাহ আর ভগৎ সিং এক মঞ্চে কুরবান হয়ে গেছেন।  হাসরত মোহানীর “ইনকিলাব জিন্দাবাদ ”আজও আগুন জ্বালিয়ে দেয় আমাদের মননে। স্বাধীনতা দিবস যে গানটি ছাড়া অচল সেই “সারে জাঁহা সে আচ্ছা” গানটির মূল রচয়িতা ছিলেন উর্দু কবি আল্লামা ইকবাল। কেউ মনে রাখেনি, এও এক কুরবানি ছাড়া কি?? এমনকি “জয় হিন্দ” স্লোগান টি যেটি “জয় হিন্দুস্থান কি” স্লোগানের অপভ্রংশ সেই স্লোগানটিও দিয়েছিলেন আবিদ হাসান সাফরানি। কিন্তু সেই স্লোগান স্রষ্টার কথা কেউ মনে রাখেনি, স্লোগান স্রষ্টা ও ইতিহাস কুরবান হয়ে গেছেন আমাদের কাছে।

আজকের হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের জিগিরে বেশ অবাক করা তথ্য হলেও সত্যি ১৯-২০ শতকে যতগুলো দেশাত্মবোধক সিনেমা তৈরী হয়েছে তার এক একটা কালজয়ী গান তৈরি হয়েছে উর্দু ভাষায় লিখেছেন ওরা, আর কুরবান হয়ে গেছেন আমাদের কাছে বারে বারে… আবার সাহিত্য সংগীত এর দিক থেকে দেখলে যত বেশি রবীন্দ্রনাথ চর্চিত হন তত বেশী চর্চিত হন না নজরুল। হ্যাঁ বিদ্রোহ নামক কবিতা আর কিছু গানে নজরুল উঠে এলেও, কতজন ই বা জানেন নজরুল কত সুন্দর সুন্দর শ্যামা সংগীত রচনা করে গিয়েছেন নিজের জীবদ্দশায়।

শাস্ত্রে বিশেষত শাক্ত সাধন পথের মদ্য মাংস মৎস মৈথুন বলে যা যা দিতে বলা হয় তা আসলে নীতি শিক্ষার পাঠ ওর সাথে না, কোনো ধর্মীয় বিষয় আছে না কোনো ধর্মান্ধতা, উদাহরণ হিসাবে বলা যায় দীর্ঘদিন যাবৎ সত্যি কথা বলার অভ্যাস কে মৎসসাধনা বলা হয়, আবার পাঁঠাবলি বলতে ছয় পাঁঠা মানে ষড় রিপুর কথা বলা হলেও আমরা গর্বিত ভেক ধারী সনাতনীরা নির্দিষ্ট একটি উৎসবে বেশ কষিয়ে রান্না করি পাঁঠার মাংস৷ মূলত:আশ্রমিক শিক্ষার মূল সিদ্ধান্ত গুলো বারে বারে বিকৃত করে আমাদের সামনে তুলে ধরা ধর্মের ব্যাবসায়ীরা শুধু চান আমরা- ওরা র দ্বন্দ্ব, কুরবান হয় নীতিবোধ, কুরবান হয় মূল্যবোধ, মৃত হয় সম্প্রীতি…

নির্বাচন আসলে এই ব্যাবসায়ীরা আসল সত্যি প্রকাশ করে ফেলে শাসকের ইচ্ছা অনুযায়ী। এক রাজ্যের একটি পর্যায়ে শাসক চান না বলে দাংগা হয় না। মানুষ নিরাপদে থাকতে পারেন।আবার সেই রাজ্যেরই অন্য একটি পর্যায়ে শাসক চান বলেই রাজ্যের গভীরে গৃহযুদ্ধের বীজ পোঁতা হয়ে যায় অলক্ষ্যেই। ক্ষুধা সূচকে আমার দেশের অবস্থান ভয়াবহ থাকলেও, কর্মসংস্থানের নিরিখে আমার রাজ্য তলানিতে পৌঁছে গেলেও, মদ বিক্রির রেকর্ড পরিমাণ লাভজাত আয় এর হার, আর একটা দুটো সার্জিকাল এর সার্কাস, বিভেদের আগুনে কুরবান হতে হয় ভাতৃত্ববোধ কে।